শেখ মুজিব হত্যার পরে কে কি বলেছিলেন

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৩৮:৪৪ সকাল

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভীষিকাময় দিন। এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের নির্মাতা, স্থপতি ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রাহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে এক দল উশৃংখল সেনা সদস্যরা। শেখ মুজিবের হত্যার পরে সারা দেশে অনিশ্চয়তা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়ে যায়। দেশবাসি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন শেখ মুজিবেরই সাবেক সহচর ও তারই মন্ত্রিসভার তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। শেখ মুজিবের হত্যার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, সামরিক, বেসমারিক প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। ব্যক্তি স্বার্থ ও নতুন সরকারের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য তারা বিভিন্ন মন্তব্য করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণে সে সময় যারা বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন তাদের বক্তব্যগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল।

বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী যিনি ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবের সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের পরে তিনি খন্দকার মোস্তাকের সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের প্রয়াণের পর তিনি ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট লন্ডনে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনপ্রতিষ্ঠিত করতে চান’।

তাজউদ্দিন আহমেদ যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি শেখ মুজিবের সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে শেখ মুজিবের নির্দেশে ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২৩ আগস্ট নিজ বাসভবন থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে যায় তখন খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান প্রসঙ্গে দ্য সানডে টেলিগ্রাফের করা প্রশ্নের বিপরীতে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় না। এই মুহূর্তে আমাকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’।

শেখ মুজিবের হত্যার পরে বাংলাদেশের প্রবীন নেতা, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে ন্যাপ আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরু মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন ভিন্ন কথা। ১৬ আগস্টে খন্দকার মোস্তাক সরকারকে সমর্থন দিয়ে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানান তিনি। মাওলানা ভাসানী বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আল্লাহ আপনার (মোস্তাকের) সহায় হোন’।

জেনারেল জিয়াউর রহমান যিনি শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের সাহায্য কে এম শফিউল্লাহকে সরিয়ে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতা বিপ্লবের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্যদের অনুরোধে অস্থায়ীভাবে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হচ্ছে’।

খন্দকার মোস্তাক হোসেন যিনি শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভার বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন। খন্দকার মোস্তাকের সমর্থনে সেনবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যরা শেখ মুজিবকে হত্যা করে তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। ৩ অক্টোবর রেডিওতে দেওয়া জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে সেই বিপথগামী সেনাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এই সদস্যরা সেনাবাহিনীর সুর্য সন্তান’।

প্রধান বিচারপতি এএসএম সায়েম যিনি ৬ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খন্দকার মোস্তাককে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন। ৭ নভেম্বর পূর্বসুরীদের প্রশংসা করে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার সত্বেও খন্দকার মোস্তাক আহমেদ আমার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যেটি অনেক উন্নত বিশ্বেও খুব কম দেখা যায়। এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়’।

আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খান যিনি শেখ মুজিবের হত্যার পরে খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বিএনপির সাংসদদের করা কটূক্তির প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘অস্ত্রের মুখে আমাদের খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় জোর করে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়’।

আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ যিনি দুই দুইবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি ১৭ আগস্ট খন্দকার মোস্তাকের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতির মূলৎপাটন করে দেশে আইনের শাসন, শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য খন্দকার মোস্তাককে অভিনন্দন। আল্লাহ তার প্রতি সহায় হোন’।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান সভাপতি ও তৎকালীন ডাকসু এবং সিপিবির ঢাকা শহর ইউনিটের সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত একটি র‌্যালিতে বলেন, ‘গণআন্দোলন করে বাংলাদেশের মাটিতে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে’।

আব্দুল মালেক উকিল তৎকালীন সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের স্পিকার ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ফেরাউনের পতন হয়েছে। স্বৈরশাসকের হাত থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে’।

লে. কর্নেল তাহের, তৎকালীন জাসদ গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার ১৭ আগস্ট শেখ মুজিবের হত্যা নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন যখন মুক্তিযোদ্ধা নাইম জাহাঙ্গীর তার বাসায় গিয়ে দেখা করেন। অভিযোগ রয়েছে কর্নেল তাহের খন্দকার মোস্তাক আহমেদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কর্নেল তাহের তার বক্তব্যে বলেন, তারা অনেক বড় ভুল করেছেন। শেখ মুজিবকে কবর দেওয়া তাদের উচিত হয়নি। তাদের ভুলের কারণে সেখানে একটি মাজার তৈরি করা হবে। তাদের উচিত ছিল শেখ মুজিবের দেহ বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বিএসএস ক্ষমতার পট পরিবর্তন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপে। যেখানে বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা খন্দকার মোস্তাকের নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৯৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255789
১৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:২২
হতভাগা লিখেছেন : বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য যারা আছেন , আর যারা ডাকসাইটে প্রবীন নেতারা আছেন তারা কে কি বলেছিলেন ? মানে তোফায়েল , আমু , মতিয়া , সাজেদা , সুরন্জিত , ইনু , মেনন ..... ইনারা ।
255800
১৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৫৫
কাহাফ লিখেছেন : এখন পর্যন্ত বলা চলতেছে,কখন যে বলা শেষ হবে আল্লাহ মালুম...........।
255806
১৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:০৭
নূর আল আমিন লিখেছেন : বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয় মুজিব যে কত্ত বড় খবিস ছিলো বর্তমানে শেখ হায়েনার শাসন ব্যাবস্থা দেখলেই অনুমেয়
256072
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:০৫
ব১কলম লিখেছেন : হিটলার বলেছিল... " আমি চাইলে সব ইহুদীদের হত্যা করতে পারতাম, কিন্তু কিছু ইহুদী
বাচিয়ে রাখেছি। যাতে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারে, আমি কেন ইহুদী হত্যায় মেতেছিলাম
২৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:০৫
201269
কাহাফ লিখেছেন : কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়..তেমনি............।
257623
২৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৫৮
নেনাভাই লিখেছেন :


আঁই হাচা কতা কইছিনি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File