তাহাজ্জুদের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলাত শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৯ জুলাই, ২০১৪, ০৬:১৯:৪০ সন্ধ্যা
8. পরিবারের লোকদের তাহাজ্জুদে উদ্বুদ্ধ করন-
রসুল (সঃ) নিজে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়ের পাশাপাশি পরিবারের লোকদের তাহাজ্জুদে উদ্বুদ্ধ করতেন-
وعن علي رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم طرقه وفاطمة ليلا فقال ألا تصليان متفق عليه طرقة أتاه ليلا
আলী (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ফাতিমার কাছে রাতে আসেন এবং বলেন- তোমরা কি রাতের নামাজ( তাহাজ্জুদ) পড়না? সহীহাইন ।
وعن سالم بن عبد الله بن عمر بن الخطاب رضي الله عنهم عن أبيه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال نعم الرجل عبد الله لو كان يصلي من الليل قال سالم فكان عبد الله بعد ذلك لا ينام من الليل إلا قليلا متفق عليه
সালেম ইবনে আবদুল্লাহ উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে তার পিতার (আবদল্লাহ) সূত্রে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন- আবদুল্লাহ বড় ভালো লোক, যদি সে রাতের নামাজ পড়ত । সালেম (রা) বলেন, এর পর থেকে আবদুল্লাহ রাতের সামান্য অংশই ঘুমাতো । (সহীহাইন)
وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا عبد الله لا تكن مثل فلان كان يقوم الليل فترك قيام الليل متفق عليه
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হে আবদুল্লাহ! ওমুকের মত হয়োনা । প্রথমে সে তাহাজ্জুদ পড়তো, তারপর তাহাজ্জুদ পড়া ছেড়ে দিয়েছে । ( সহীহাইন )
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال ذكر عند النبي صلى الله عليه وسلم رجل نام ليلة حتى أصبح قال ذاك رجل بال الشيطان في أذنيه أو قال في أذنه متفق عليه
ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নিকট এমন এ ব্যক্তির প্রসংগ উত্থাপন করা হল যে এক রাতে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল । তিনি বলেন, সে এমন এক ব্যক্তি যার দুই কানে বা কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে । (সহীহাইন)
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رحم الله رجلا قام من الليل فصلى وأيقظ امرأته فإن أبت نضح في وجهها الماء رحم الله امرأة قامت من الليل فصلت وأيقظت زوجها فإن أبي نضحت في وجهه الماء رواه أبو داود بإسناد صحيح
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি সদয় হন যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং স্ত্রীকেও জাগায় । আর স্ত্রী যদি উঠতে অস্বীকার করে তাহলে তার মুখে পানির ছিটে দেয় । আল্লাহ সে মহিলার প্রতি সদয় হন যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং স্বামীকেও জাগায় । আর স্বামী যদি উঠতে অস্বীকার করে তাহলে তার মুখে পানির ছিটে দেয় ।
9. তাহাজ্জুদ থেকে বিরত রাখতে শয়তানের তৎপরতা-
وعنه وعن أبي سعيد رضي الله عنهما قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أيقظ الرجل أهله من الليل فصليا أو صلى ركعتين جميعا كتب في الذاكرين والذكرات رواه أبو داود بإسناد صحيح
আবু হোরায়রা ও আবু সাইদ (রা)থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি রাতে তার স্ত্রীকে জাগায় এবং তারা দু’জনে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এথবা ( তিনি বলেছেন) দুই রাকায়াত নামাজ পড়ে, তাদের দু’জনের নাম যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের মধ্যে লেখা হয় ।
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد يضرب على كل عقدة عليك ليل طويل فارقد فإن استيقظ فذكر الله تعالى انحلت عقدة فإن توضأ انحلت عقدة فإن صلى انحلت عقده كلها فأصبح نشيطا طيب النفس وإلا أصبح خبيث النفس كسلان متفق عليه قافية الرأس آخره
আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি রাতে ঘুমিয়ে পড়লে শয়তান তার ঘাড়ের পিছনের দিকে তিনটি গিরা লাগায় । প্রতিটি গিরায় সে এ বলে ফুঁ দেয়- রাত অনেক দীর্ঘ, কাজেই ঘুমাও । যদি তার চোখ খুলে যায় এবং আল্লাহর যিকির করে তাহলে একটি গিরা খুলে যায় । আর যতি সে অযু করে তবে আরও একটি গিরা খুলে যায় । এরপর যদি সে নামাজ পড়ে তাহলে তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায় । এবং সকালে সে হাসিখুশী এ তরতাজা হয়ে উঠে । অন্যথায় তার সকাল হয় মানসিক ক্লেশ ও আলস্যের মধ্য দিয়ে । (সহীহাইন)
10. তাহাজ্জুদের হাকীকত
সুরা আল ইমরানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ
অর্থ- মানুষের জন্য মোহগ্রস্ত করে দেয়া হয়েছে নারী, সন্তানসন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেতখামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।
উক্ত আয়াতে মানুষের নফসের মোহনীয় বস্তুসমূহের বনর্না দেয়া হয়েচ্ছে । বস্তুতঃ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন । আল্লাহ তায়ালা জানেন যে মানুষ যখন দুনিয়াতে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবে তখন তার আয়ত্বে থাকবে রাশি রাশি ভোগ্যপণ্য যার আকর্ষণে নফস বা প্রবৃত্তির তাড়নায় সে সৎ পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে । তাই নফস বা প্রবৃত্তির উপর বিবেকের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের পদস্খলন হয়ে যাবে ।
সুরা মুজ্জাম্মিলে আল্লাহ বলেন-
إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلاًثَقِيلاً- إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْءاً وَأَقْوَمُ قِيلاً
অর্থ- আমি অতি শীঘ্র তোমার ওপর একটি গুরুভার বাণী নাযিল করবো৷ প্রকৃতপক্ষে রাতের বেলা জেগে ওঠা, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশী কার্যকর এবং যথাযথভাবে কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত সময় ।
অর্থাৎ- সুরা আলে ইমরানের উক্ত আয়াতে বর্ণিত আকর্ষণীয় বস্তু সামগ্রী থেকে নফস বা প্রবৃত্তিকে দলন করতে তাহাজ্জুদের বিকল্প নেই ।
11. তাহাজ্জুদের অন্যান্য সুফল
[1] . গভীর রাত্রের নিস্তব্ধ পরিবেশে অন্তর, দৃষ্টি্, কর্ণ, ও জিহবার একাত্মতার মাধমে এবাদতের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় ।
[2] . চরিত্রের দৃঢ়তা ও কোমলতা অর্জিত হয় ।
[3] . একাগ্র মনে এবাদত করলে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা যায় ।
[4] . নির্জন নিথর পরিবেশে ইবাদত প্রদর্শনীর বা লোক দেখানোর আদৌ কোন সুযোগ থাকে না৷ তাই রিয়া (চোট শিরক) থেকে বাঁচা যায় ।
[5] . আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধক থাকে না বলে নিজ গুনাহর কথা স্মরন করে কাঁদাকাঁটি করলে আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ।
12. রমজানে তাহাজ্জুদ-
রমজান মাস প্রশিক্ষনের মাস । সেহরী খাওয়ার জন্য স্বাভাবিক কারণে আমাদের শেষ রাতে উঠতে হয় । আমরা যদি এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে রমজান মাসের ৩০ দিন তাহাজ্জুদের অভ্যাস করি এবং বাকী ১১ মাস এ অভ্যাসকে কাজে লাগাই তবে আশা করা যায় যে আমরা এক মহা কল্যাণের অধিকারী হতে পারব ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন- আমিন
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন