ঠকের রাজ্যে বাস

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৯ মে, ২০১৪, ১০:৪৬:১৩ রাত





ঠকের রাজ্যে বাস

মহান আল্লাহ বলেন-

وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ﴾﴿الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ﴾﴿وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسُوونَ)

(১) ধবংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়৷

২) তাদের অবস্থা এই যে , লোকদের থেকে নেবার সময় পুরোমাত্রায় নেয়

৩) এবং তাদেরকে ওজন করে বা মেপে দেবার সময় কম করে দেয়৷

মাপে কম দেয়া-

মূলে مُطَفِّفِينَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি এসেছে تطفيف থেকে। আরবী ভাষার তাফীফ ছোট্ট , তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসকে বলা হয়ে থাকে । পারিভাষিক অর্থে তাফীফ মানে হচ্ছে মাপে ও ওজনে চুরি করা । কারণ এ কাজ করার সময় এক ব্যক্তি মাপ ও ওজনের মাধ্যমে কোন বড় পরিমাণ জিনিস চুরি করে না। বরং হাত সাফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক ক্রেতার অংশ থেকে সামান্য সামান্য করে বাচিয়ে নেয়। ফলে বিক্রেতা কি জিনিস কতটুকু চুরি করেছে ক্রেতা তা টেরও পায় না।

মুয়াত্তা ইমাম মালেকে আছে, হযরত ওমর (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে নামাজের রুকু- সেজদা ইত্যাদি ঠিকমত আদায় করেনা এবং দ্রুত নামাজ শেষ করে দেয় । তিনি তাকে বললেন لقد طففت অর্থাৎ তুমি আল্লাহর প্রাপ্য আদায়ে تطفيف করেছ । অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় দেয়া ও নেয়া কম আছে, এমন কি নামাজ ও ওজুর মধ্যেও । এমনি ভাবে য ব্যক্তি আল্লাহর অন্যান্য হক ও এবাদতে এবং বান্দার নির্দষ্ট হকে ত্রুটি ও কম করে সেও تطفيف করার অপরাধে অপরাধী ।

মাপে কম দেয়ার অর্থ- যে বা যিনি যতটুকু পাওয়ার অধিকারী তাকে তা অপেক্ষা কম দেয়া । এ দিক বিবেচনা করলে দেখা যাব যে, আমাদের মধ্যে খুব লোকই আছেন যিনি এ দোষে দুষ্ট নন । বরং প্রত্যকেই কোন না কোন ভাবে মাপে কম দেয়ার দোষে দুষ্ট ।

পণ্য দ্রব্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেঃ

যিনি বেচাকেনা করেন- তিনি বিভিন্ন ভাব মাপে কম দেন, যেমন-

১.সরাসরি মাপে কম দেয়াঃ যেমন ১কেজি গোশতের স্থলে ৯০০গ্রাম দেয়া হল।

২.ভেজাল দেয়াঃ যেমন ১কেজি দুধে ১০০ গ্রাম পানি মিশানো প্রকৃতপক্ষে ১কেজি দুধের স্থলে ৯০০গ্রাম দেয়া হল।

৩. পণ্যের দোষ গোপনঃ যেমন ১কেজি আপেলের মধ্যে ১টা পঁচা । ১টা পঁচা আপেলের ওজন যদি ২০০ হয় তবে প্রকৃতপক্ষে ১কেজি আপেলের স্থলে ৮০০গ্রাম দেয়া হল।

৪. মজুদদারী ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করাঃ মজুদদারী ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয় । এ ক্ষেত্রে মজুদদারীর পূর্বে যদি ১০০০টাকায় ১ মণ পণ্য পাওয়া যেত, আর মজুদদারীর পরে যদি ১০০০ টাকায় ৩০ কেজি পণ্য পাওয়া যায়, তবে প্রতি মণে ১০ কেজি পণ্য কম দেয়া হল ।

এভাবে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে- ক্লাসে না পড়িয়ে ও প্রাইভেট টিউশনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রদের প্রাপ্য কম দেয়া হচ্ছে ।

চাকুরীর ক্ষেত্রে- কর্মস্থলে যথাসময়ে না আসা ও যথাসময়ের পূর্বে চলে যাওয়া, অফিস সময়ে ব্যক্তিগত কাজ করা, কাজে অলসতা করার মাধ্যমে চাকুরী দাতা কর্তৃপক্ষকে প্রাপ্য কম দেয়া হচ্ছে ।

চাকুরী দাতা কর্তৃপক্ষ/ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ-কর্মচারীদের দ্বারা বেশী কাজ নিয়ে কম মজুরী দেয়া- গার্মেন্টস্‌ সেক্টরে বেশী ঘটে । যথাসময়ের পূর্বে চলে যেতে না দেয়া বা থাকতে বাধ্য করার মাধ্যমে কর্মচারীদের প্রাপ্য কম দেয়া হচ্ছে ।

পরিবহন সেক্টরে- কম দুরত্বে অধিক ভাড়া আদায়, যাত্রী সেবা না দেয়া, ইত্যাদি শত অনিয়ম করে যাত্রীদের প্রাপ্য কম দেয়া হচ্ছে ।

আপনি কাপড় কিনবেন সেখানে পলিষ্টারকে ১০০% কটন বলে, ৬০ কাউন্টের সূতাকে ৮০, ৮০কে ১২০ কাউন্ট বলে আপনাক ঠকাচ্ছে ।

মাতা পিতা - মাতা পিতার নিকট তার সন্তানের অধিকার যে হক তা সঠিক ভাবে আদায় না করে তাদের ঠকাচ্ছে আর সন্তানরা মাতা পিতার যে হক তা সঠিক ভাবে আদায় না করে তাদের ঠকাচ্ছে ।

এভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সর্বত্রই মাপে কম দেয়া হচ্ছে, সর্বত্রই ঠকাঠকি । মানে আমরা ঠকের রাজ্যে বাস করছি ।

মাপে কম দেয়ার পরিনাম ফলঃ

১. অয়েল দোজখ (وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ﴾)

২.আমলনামা সিজ্জিনে রক্ষিত থাকবে।( ﴿كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ

৩. অন্তরে মরিচা ধরে (﴿كَلَّا ۖ بَلْ ۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم

৪.আখেরাতে আল্লাহর দর্শন থেকে বঞ্চিত রাখা হবে৷( ﴿كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُو

৫. সর্বশেষে তারা জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে ।৷ ﴿ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِ﴾

.

বিষয়: সাহিত্য

১২৪০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

228156
২৯ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৫
শুভ্র আহমেদ লিখেছেন : আমরা মুসলমানেরা বিভিন্ন লিফলেট ব্যবহার করে মানুষের মনে হয় দেখাতে পারি। যেমনঃ এতে যে শাস্তি এগুলো তাদের দেখাতে পারি। এতে অনেকের এই বদ অভ্যাস দূর হবে। কিন্তু,


কিন্তু, এই যে নাস্তিক কমিউনিস্ট। তাদের কি হবে? তারা কিভাবে এসব মানুষকে ভালো করবে। এই ভাবতে ভাবতে আমার এক বেলাএ খাবারের সময়ই নষ্ট। সত্যিই।

ধর্মই মানুষের পথ পদর্শক।
228157
২৯ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৫
শুভ্র আহমেদ লিখেছেন : আমরা মুসলমানেরা বিভিন্ন লিফলেট ব্যবহার করে মানুষের মনে হয় দেখাতে পারি। যেমনঃ এতে যে শাস্তি এগুলো তাদের দেখাতে পারি। এতে অনেকের এই বদ অভ্যাস দূর হবে। কিন্তু,


কিন্তু, এই যে নাস্তিক কমিউনিস্ট। তাদের কি হবে? তারা কিভাবে এসব মানুষকে ভালো করবে। এই ভাবতে ভাবতে আমার এক বেলাএ খাবারের সময়ই নষ্ট। সত্যিই।

ধর্মই মানুষের পথ পদর্শক।
228171
৩০ মে ২০১৪ রাত ১২:২৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো
228241
৩০ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
হতভাগা লিখেছেন : ভাল পোস্ট দিয়েছেন ভাই সাহেব ।

বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে যে, মানুষ এখন ওজনে কম দেওয়াকে গায়েই নেয় না । ওজনে কম দিলেও জিনিসটা যদি সঠিক দেয় তাহলেও চলে । কম খেল , তাতে শরীরটাও ভাল থাকবে ।

কিন্তু ওজনে বেশী দিলেও যদি জিনিসটাতে ভেজাল দেয় তখন ক্রেতা পড়ে যায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে। সেটা তার বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File