জান্নাতে প্লট বিক্রি, বুকিং দিবেন কি?

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২০ মে, ২০১৪, ১০:২৩:৪৬ রাত

ِإ نَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَসুরা আত-তাওবার ১১১নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন ।

‘আয়াতে কিনে নিয়েছেন’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে কিনে নেয়ার ঘোষনা (public announcement) দিয়েছেন। আল্লাহ জোর করে বান্দার জান ও মাল কিনে নিয়ে যাননি, কারণ জোর করে নিলে তা ক্রয় হয়না, লুন্ঠন করা হয় ।

লজিক্যালি যদি আমরা এ আয়াতটিতে বিশ্লেষণ করি তবে পাই-

1. আল্লাহ (শুধুমাত্র) মু’মিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন, যারা ‘মু’মিন নয়’ তাদের জান ও মাল কিনে নেননি।

শুধুমাত্র মু’মিনরা জান ও মাল (জান্নাতের বিনিময়ে ) আল্লাহর কাছে বিক্রি করেছে । যারা ‘মু’মিন নয়’ তারা জান ও মাল বিক্রি করেনি ।

যারা জান ও মাল (জান্নাতের বিনিময়ে ) আল্লাহর কাছে বিক্রি করেছে শুধুমাত্র তারাই মু’মিনরা । যারা জান ও মাল বিক্রি করেনি তারা মু’মিন নয়।

2. বৈধ ক্রয়- বিক্রয় সম্পন্ন হয় ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা’ এ দু’টি পক্ষের মধ্যে । আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ হলেন ক্রেতা ও মু’মিনগন হলেন বিক্রেতা।

3. দুই পক্ষের ক্রয় বিক্রয় চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত ৩ টি

(ক) ইজাব (ক্রেতা ক্রয়ের প্রস্তাব দিবেন) ও কবুল (বিক্রেতা ক্রেতার প্রস্তাবে সম্মতি দিবেন ) ( offer & acceptance)

(খ) যা বিক্রি করা হবে (goods) কার অস্তিত্ব থাকতে হবে ।

(ঘ) মূল্য ( value) নির্ধারিত হতে হবে ।

আলোচ্য আয়াতে-

(ক) ইজাবকারী (ক্রয়ের প্রস্তাবকারী) হলেন আল্লাহ ও কবুলকারী ( প্রস্তাবে সম্মতিদানকারী ) হলেন মু’মিনগন ।

(খ) যা বিক্রি করা হবে (goods) তা হল বান্দার জান ও মাল ।

(গ) নির্ধারিত মূল্য ( value) হচ্ছে জান্নাত ।

ব্যাখ্যাঃ

(ক) ইজাব ও কবুল

- ক্রয়-বিক্রয়ে কমপক্ষে ১জন ক্রেতা ও ১জন বিক্রেতা থাকতে হবে । বিক্রেতা যদি বিক্রয় না করেন তবে ক্রেতা ক্রয় করত পারবেন না । বিক্রয় না হলে ক্রয় হয়না, no buy without sale.

- বিক্রেতার সম্মতিতে বিক্রয় হয়, অসম্মতিতে নয় । আল্লাহ জোর করে বান্দার জান ও মাল কিনে নিয়ে যাননি, কারণ জোর করে নিলে তা ক্রয়-বিক্রয় হয়না, লুন্ঠন করা হয়।

- ক্রয়-বিক্রয় হবে বাস্তবে, মনে মনে নয় ।

- আল্লাহ্ ইজাব (প্রস্তাব) করেছেন মাত্র । বান্দা যদি কবুল বলে তবে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে । নতুবা নয় ।

-

(খ) বিক্রিত দ্রব্য (পণ্য) ( বান্দার জান ও মাল)

- একটি মাল একবার একজনের কাছেই বিক্রি করা যায় । একই মাল একাধিক বিক্রেতার কাছে বা বিক্রিত মাল বার বার বিক্রি করা যায়না ।

- বিক্রেতা যদি মাল ‘বাকীতে’ বিক্রি করেন আর ক্রেতা মাল বুঝে না নেন, বরং বিক্রেতার কাছে ‘গচ্ছিত” রাখেন তবে বিক্রেতা মূল্য না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রিত মাল সযত্নে পাহারা দেন ।

- বিক্রিত মালকে বিক্রেতা ‘নিজের মাল’ মনে করেন না ‘বিক্রিত মাল’ মনে করেন ।

- বিক্রিত মালের উপর বিক্রেতার প্রভাব খাটাতে পারেন না ।

- বিক্রিত মালের উপর বিক্রেতার প্রভাব খাটানো বিক্রয় চুক্তি ভংগ করার সামিল ।

- বিক্রয় চুক্তি ভংগ হলে ক্রেতার কাছে মূল্য চাওয়ার কোন নৈতিক অধিকার বিক্রেতার থাকেনা ।

- যে মু’মিন আল্লাহর ‘ক্রয়’ প্রস্তাবে নিজের জান মাল ‘বিক্রি’ করতে সম্মতি দিয়েছেন, তিনি সব সময়ই নিজের ‘জান-মালকে’ ‘বিক্রিত মাল’ হিসাবে, গণ্য করবেন । তার জীবনে ‘স্বাধীনতার’ কোন লক্ষণ দেখা যাবে না ।

- প্রকৃত পক্ষে বান্দার জান ও মালের মালিক বান্দা নিজে নন, জান ও মালের প্রকৃত মালিক হলেন আল্লাহ । কিন্তু জান ও মাল কোন পথে খরচ করবে সেই ‘ইচ্ছা শক্তির’ মালিক হলেন বান্দা নিজে ।তাই জান ও মাল বিক্রয় করার প্রকৃত অর্থ হল বান্দার ‘ইচ্ছা শক্তিকে’ বিক্রি করা।

-

(গ) মূল্য ( জান্নাত)

- বিক্রেতাকে মূল্য পেতে হলে মাল দিতে হবে, মাল না দিয়ে মূল্য চাওয়া অনৈতিক।

- মূল্য পাওয়া না পাওয়া ক্রেতার সন্তষ্টির উপর নির্ভর করে, বিক্রেতার সন্তষ্টির উপর নয় ।

- যেহেতু বিক্রয় ‘বাকিতে’ ( deferred payment of credit sale) তাই ক্রেতা ‘মাল বুঝিয়া পাইলাম’ ( goods received in good condition)এ সার্টিফিকেট দিলেই বিক্রেতা মূল্য দাবী করতে পারে, তাই পণ্য অবশ্যই নিখুঁত হতে হবে । নইলে আম ও ছালা সবটাই যাবে ।

- আল্লাহ বান্দার ‘জান ও মাল’ তথা বান্দার ‘ইচ্ছা শক্তিকে’ নগদ মূল্যে কিনে নিয়ে যাননি, ‘জান ও মাল’(ইচ্ছা শক্তিকে) ‘নগদ’ দিতে হবে, মূল্য (জান্নাত) থাকবে ‘বাকী’ ।

- যেহেতু আল্লাহ ‘পবিত্র’ তাই তিনি বান্দার পবিত্র ‘জান ও মালই’ ক্রয় করবেন । অপবিত্র ‘জান ও মাল’ আল্লাহ ক্রয় করবেন না ।

- ‘জান’ অপবিত্র হয় ‘কুফরী, শিরকী ও নেফাকী আকিদা ও হারাম বস্তু ভক্ষনের মাধ্যমে ও মাল অপবিত্র হয় উহা অবৈধ পথে অর্জনের মাধ্যম ।

- তাই আল্লাহর কাছে জান ও মাল বিক্রি করে জান্নাত পেতে চাইলে (১)‘কুফরী, শিরকী ও নেফাকী আকিদা সংশোধন ও হারাম বস্তু ভক্ষন পরিত্যাগ করে ‘জান’ পবিত্র করতে হবে এবং (২) অবৈধ পথে অর্জিত মাল হকদারদের কাছে ফেরত দিয়ে ‘মাল’ পবিত্র করতে হবে ।

4. আল্লাহর কাছে জান ও মাল বিক্রয় করা করার পন্থা

- উপরে বর্ণিত নিয়মে জান-মালকে পবিত্র করতে হবে ।

- ‘ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্পর্ক’ (আবদ এবং মা’বুদের)পর্যন্ত যাতে বিক্রয় মুল্য (জান্নাত) না পাওয়া (মৃত্যু) অক্ষুন্ন থাকে সেজন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্পর্ক বিষয়ক জ্ঞান (rules of conduct) অর্জন করতে হবে । আল কুরআনই সে জ্ঞানের ভাণ্ডার । জন্যই ইসলামের প্রথম বাণী- ‘اقر’

- আল্লাহর মনোনিত ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের নিকট ( আল্লাহর রাসুল, তাঁর অবর্তমানে রাসুলের প্রতিনিধি এবং তার অবর্তমানে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ) বাস্তবে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (বাইয়াত) সম্পন্ন করতে হবে ।

ভাববার বিষয়

!! আমরা কি ‘জান্নাত’ পেতে চাই? ( অবশ্যই)

!! যদি তাই হয় তবে আল্লাহর ক্রয়-বিক্রয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (বাইয়াত) সম্পন্ন করেছি?

!! উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে ‘পণ্য’ (জান ও মাল’) বিক্রয় না করে কি ‘মূল্য’ (জান্নাত) পাওয়া বাস্তবে সম্ভব?

!! উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তবে ‘পণ্য’ (জান ও মাল’) বিক্রয় করার পরেও ‘বিক্রিত পণ্যেকে’ (জান ও মালকে’) ‘আমার’ মনে করি কিনা ? বা বিক্রিত পণ্যের’ (জান ও মালের’) উপর আমার কোন অধিকার আছে বলে মনে করি কিনা এবং মনে করলে কি ‘মূল্য’ (জান্নাত) পাওয়া বাস্তবে সম্ভব?

!!! উক্ত কাজগুলি সম্পন্ন না করে আমরা ‘ ادخلنا الجنة বলে যতই দোয়া করি, তাতে কোন ফল দিব কিনা?

!!!!!!!!ভাবুন!!!!!!!!

আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন ।

বিষয়: সাহিত্য

১৪৯৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

223949
২০ মে ২০১৪ রাত ১০:৫২
মাজহার১৩ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
224003
২১ মে ২০১৪ রাত ০১:১২
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
224014
২১ মে ২০১৪ রাত ০৩:০৩
নিশা৩ লিখেছেন : ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File