পিলখানা ট্র্যাজেডি নিয়ে সুনীতা পালের ৩০টি প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৪২:৪০ সকাল
পিলখানা ট্র্যাজেডি নিয়ে সুনীতা পালের ৩০টি প্রশ্ন
২৫ মার্চ, ২০০৯, বাংলােদেশর ইতিহাসে কলংকিত দিন । পরিকল্পিত ভাবে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে এ দিন হত্যা করা হয় ।
ভারতের কলামিস্ট সুনিতা পাল অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে লিখছেন। সন্ত্রাস ও তথাকথিত ইসলামী মৌলবাদীদের ব্যাপারে সব সময় তাকে অতি উৎসাহী দেখা গেছে। উপলক্ষ্য পেলেই তিনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক দলগুলোকে তুলোধুনো করে ছেড়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি ও `জনপ্রিয়তাও' প্রধানত সে কারণে। কিন্তু পিলখানা হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগ বিরোধিতার মুখে পড়ে। এর কারণ, বিডিআরের কথিত বিদ্রোহের আড়ালে সেনা অফিসারদের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সুনিতা পাল প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখে চলেছেন। এসব লেখায় প্রকাশিত হচ্ছে ঘটনার নানা বিশ্লেষণ ও তথ্য। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সুনিতা পালের অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলোর নিখুঁত বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে, হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ ক'জন `রাঘব-বোয়ালেরও' সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে চাকরিরত কারো কারো ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ধরিয়ে দিয়েছেন তথ্যসূত্রও। দিন-তারিখ ও সময় ধরে ধরেই এসব তথ্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে চলেছেন তিনি। সুনিতা পালের রিপোর্টগুলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে বলে সারাবিশ্বের মানুষের কাছেই মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে বিশেষ করে আওয়ামী ঘরানার `চক্ষুশূলে' পরিণত হয়েছেন এই ভারতীয় এ কলামিস্ট। মাত্র সেদিনের মিত্রকে আওয়ামী লীগ ঘরানা এখন ভয়ংকর শত্রু মনে না করে পারছে না।
বিডিআর বিদ্রোহ এবং এর তদন্ত নিয়ে এখন নিয়মিত খবর প্রচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তাও উঠে আসছে বিভিন্ন কলামিসেল্টর লেখায়। আমেরিকান কদ্ধনিকল-এ প্রখ্যাত কলামিসল্ট সুনীতা পাল বাংলাদেশ : ম্যানিপুলেশন অব বিডিআর ম্যাসাকার প্রোব’ শিরোনামে তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের রহস্য উদঘাটনে ৩০টি প্রশ্নউত্থাপন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বিডিআর বিদ্রোহে সিআইডির তদন্ত কমিটি প্রধান আবদুল কাহ্হার আকন্দের বিরুদেব্দ গুরুতর সব অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়াও তিনি সঠিক তদল্পেস্নর ব্যাপারে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সুনীতা পালের উত্থাপিত প্রশম্নগুলো হলো :
১. ২৫ ফেবু্রয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি গোয়েন্দা তথ্য পাঠানো হয়েছিল?
২. বিডিআরের প্রয়াত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ কি কথা হয়েছিল?
৩. প্রধানমন্ত্রী কেন ২৬ ফেবু্রয়ারির ডিনারে যেতে অস্ট্বীকার করেছিলেন?
৪. ২৫ এবং ২৬ ফেবু্রয়ারি কার নির্দেশে বিডিআর হেডকোয়ার্টারের আশপাশের লোকজনকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ দূরত্ম্বে সরে যেতে বলা হয়েছিল?
৫. ২৫ ফেবু্রয়ারি সল্পব্দ্যায় কেন লে. কর্নেল মুকিত বিডিআর সদর দফতর থেকে সেনাবাহিনী এবং বিডিআর মহাপরিচালকের বিরুদেব্দ ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছিলেন?
৬. বিডিআর সদর দফতরের ৫ নম্বর গেটে সেদিন কেন পুলিশ এবং র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়নি?
৭.প্রধানমন্ত্রী কেন ঘটনা জানার ৪ ঘণ্টা পর নানক এবং আজমকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন?
৮. বিডিআর বিদ্রোহীদের যে প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তাদের নাম-ঠিকানা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢোকার সময় কেন রেজিসিল্ট্র করা হয়নি?
৯. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিদ্রোহীদের নেতা ডিএডি তৌহিদ জানিয়েছিলেন বিডিআর ডিজিসহ কয়েকজন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে-এ বিষয়টি কেন ২৬ ফেবু্রয়ারি সল্পব্দ্যা পর্যন্ত গোপন করা হলো?
১০. বাংলাদেশ টেলিভিশন সেদিন বিদ্রোহের ঘটনা কেন প্রচার করেনি?
১১. বিদ্রোহীরা কেন প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের নেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিল?
১২. কিছু বিদ্রোহী কেন আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান জয় বাংলা’ বলে স্নোগান দিয়েছিল?
১৩. ঘটনার সময় বিডিআর হেডকোয়ার্টারে দেশের বাইরে থেকে একাধিক ফোন কল এসেছিল। তদন্তকারীরা কি এগুলো খুঁজে বের করার চেদ্বা করছেন?
১৪. প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ২৭ ফেবু্রয়ারি কেন পালিয়ে যাওয়া কিছু বিদ্রোহীর সঙ্গে দেখা করতে দুবাই এসেছিলেন?
১৫. জয় দুবাই এয়ারপোর্টে কেন পালিয়ে যাওয়া বিদ্রোহীদের হাতে একটি করে ইনভেলপ দিয়েছিলেন?
১৬. আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জয় কেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে বিদ্রোহের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করলেন?
১৭. তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জয়কে কেন তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করেছেন? ১৮. সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি কেন নির্দিদ্ব কয়েকটি দেশের সরকারের কাছে ফোন করে ক্ষমতাসীন
দলের বিরুদেব্দ সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ ঠেকাতে সাহায্য চান?
১৯. আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীর কেন ২৭ ফেবু্রয়ারি দেশ থেকে পালানোর চেদ্বা করেছিলেন? ২০. মন্ত্রী ফারুক খান কেন বললেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং ডিসিপ্ট্নিন ফোর্সের মধ্যে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে?
২১. সরকার কেন পুলিশের আইজিকে তদন্ত প্রকিদ্ধয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেদ্বা করছে?
২২. কারণ ছাড়াই কেন নবনিযুক্ত ঢাকার পুলিশ কমিশনার ইংরেজি মাধ্যমের স্ট্কুলে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন?
২৩. প্রধানমন্ত্রী বিডিআর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদব্দারে সেনাবাহিনীকে অভিযান চালাতে দিলেন না?
২৪. তথ্য সংগ্রহের নামে সিআইডি দল বিডিআর সদর দফতর থেকে কি সরিয়েছে?
২৫. বিডিআর সদর দফতরে পাহারারত পুলিশ সদস্যরা ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কি ধরনের তথ্য-প্রমাণাদি সেখান থেকে সরিয়েছে?
২৬. ২৬ মার্চ আত্মসমর্পণের পর রাতের অন্ধকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য নেতা কেন বিডিআর সদর দফতরে গিয়েছিলেন?
২৭. ঘটনার পর থেকে সাবেক ছাত্রনেতা লিয়াকত সিকদার কেন লুকিয়ে আছেন?
২৮. আওয়ামী লীগ এবং এর নেতারা কেন হত্যাকারী এবং তাদের সহযোগীদের বিচার সামরিক আদালতের পরিবর্তে বেসামরিক আদালতে দাবি করছেন?
২৯. আওয়ামীপন্থী একদল সাংবাদিক কেন অব্যাহতভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং বেসামরিক আদালতে বিচার দাবি করছেন?
৩০. ভারতীয় গণমাধ্যমে যে ধরনের বক্তব্য আসছে, ক্ষমতাসীন দলের কণ্ঠে কেন সেই একই ধরনের বক্তব্য?
সুনীতা পাল এই ৩০টি প্রশ্ন উত্থাপন করে তার নিবন্ধ বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে তদন্তকারীদের সত্য উদঘাটনে সহায়তা করবে।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নহলো-ক্ষমতাসীন দল একটি নিরপেক্ষ তদন্ত চায় কিনা। সুনীতা পাল তার নিবন্ধে আবদুল কাহ্হার আকন্দের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, আবদুল কাহ্হার আকন্দ বাংলাদেশে খুবই পরিচিত। তিনি বঙ্গবন্ধু এবং জেল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কাজে তার অনভিজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত অনেক আগে তাকে সতর্ক করেছে। আবদুল কাহ্হার আকন্দ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাতে বিভিন্ন তদন্ত কাজে তিনি সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে যে গুটিকয়েক কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী এবং ন্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার ক্ষমতা রাখেন, তিনি তাদেরই একজন। ক্ষমতাসীন দল নিজের লোক হিসেবেই বিডিআরের ঘটনা তদন্তের জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। এ ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা জড়িত, তাদের নাম চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট থেকে বাদ দেয়া, বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত এবং কিছু ইসলামী সংগঠনের নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করা-এর সবকিছু করতে পারবেন আবদুল কাহ্হার আকন্দ।
সুনীতা পাল অভিযোগ করে বলেন, এই স্পর্শকাতর মামলায় জঙ্গি সম্পৃক্ততা আবিষ্ফ্কারের জন্য আবদুল কাহ্হার আকন্দকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকে এ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্তকারীদের কাছে এটা সঙদ্ব যে, বিডিআর ঘটনায় সরকারি এবং বিরোধী দলের কিছু নেতা প্ররোচনা দিয়ে একটি নোংরা ভূমিকা পালন করেছে। এই সত্যকে আড়াল করে ঘটনাকে অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড থেকে আবদুল কাহ্হার আকন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুহত্যা মামলার ব্যাপারে সুনীতা পাল তার নিবন্ধ বলেন, এই মামলার বাদী মুহিদুল ইসলাম মুহিতকে নিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আকন্দ যা করেছেন, তা সবার জানা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মুহিতের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। সরকার তাকে বেছে নেয় মামলার বাদী করার জন্য। শুরুতেই মুহিতের সঙ্গে পরিচিত হন আবদুল কাহ্হার আকন্দ মামলার তদন্ত এবং এফআইআর তৈরির জন্য। মামলার বাদী হওয়ার জন্য মুহিত আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তিনটি প্লট এবং অনেক টাকা নেন। মামলাটি এই দরিদ্র ব্যক্তির ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আবদুল কাহ্হার আকন্দ জানেন তিনি যদি ক্ষমতাসীন দলকে ঠিকমত সার্ভ করতে পারেন, তাহলে আগামী কয়েক বছরের জন্য তার চুক্তিভিত্তিক চাকরিটি পাকা। আর যদি তিনি তা না করতে পারেন, তাহলে চাকরিটা তো যাবেই, জীবনটাও পড়বে বিপদের মধ্যে।
সূত্রঃ আমার দেশ, ০১.০৪.০৯
বিষয়: রাজনীতি
১১৭৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ চোরের মন পুলিশ পুলিশ
২, এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কি কারণ ছিল ?কারা জড়িত ছিল ?এবং তাদের কি কোনো সাজা হয়েছে বা হবে ?
৩ , এই হত্যাকান্ডের পেছনে কি বিদেশী রাষ্টের ইশারা রয়েছে ? বা বিদেশী কোনো রাষ্টের ইশারা রয়েছে কি না তার খুজ নেওয়া হয়েছে ?
৪ , সরকারের ভুমিকা কি ছিল ? প্রশাসনের সকল স্থরের ভুমিকা কি ছিল ?এসব তদন্ত করা হয়েছিল ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন