তাওবার হাকীকত

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:১০:৩৩ রাত

তাওবা

নবী রাসুলগণ ছাড়া সকল আদম সন্তানই পাপী-গুণাহগার। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য জান্নাত তৈরী করেছেন। কিন্তু পাপ নিয়ে জান্নাতে যাওয়া যায়না। এ জন্যই আল্লাহ পাপী বান্দার পাপ মোচন করার জন্য তওবার ব্যবস্থা করেছেন। পাপ থেকে পবিত্র হওয়ার একমাত্র উপায় খাঁটি তওবা। নিজেকে পাপমুক্ত করতে আমরা অনেকেই ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলে তওবা করে থাকি। কিন্তু শুধু মুখে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বললেই তওবা হয়না। রয়েছে এর জন্য কতিপয় শর্ত ও বিধি-বিধান। গুণাহ পরিত্যাগ করে অন্তরে ব্যথা জাগিয়ে হায় আফসোস বলে ও অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে উক্ত পাপে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্পই হলো প্রকৃত তওবা।

তাওবা মানে আত্মিক পবিত্রতা অর্থাৎ আত্মাকে সকল প্রকার- ছোট হোক বড় হোক, গুনাহ থেকে বা পবিত্র রাখা।

গুনাহ করলে আত্মা ব অন্তর কলুষিত বা অপবিত্র হয়ে পড়ে, কেননা আল্লাহ বলেনঃ

كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ (১৪) سورة المطففين

অর্থ:‘‘ না এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে।’’ [সূরা মুতাফ্ফিফীন ১৪ ]

রাসুল সঃ বলেছেন-

(( ألا وإن في الجسد مضغة إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله ألا وهي القلب))رواه البخاري (৫২) مسلم ( ১৫৯৯)

অর্থঃ‘‘সাবধান! শুনে রেখো, দেহে বা শরীরে একটি মাংসখন্ড আছে, মাংস খন্ডটি যখন সুস্থ ও ভাল থাকে তখন সমস্ত দেহ ও শরীর সুস্থ ও ভাল থাকে এবং তা যখন নষ্ট ও বিকৃত হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহ ও শরীর নষ্ট হয়ে যায়। এবং জেনে রেখো সেই মাংসখন্ডটি হলো অন্তর।’’ [বুখারী পৃঃ-৫২ মুসলিম পৃঃ- ১৫৯৯]

রাসুল সঃ আরও বলেছেন-

( اَللَّهُمَّ طَهِّرْنِيْ مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ ( فإن الخطايا صغيرها وكبيرها توجب للقلب كدرا و قذرا يحتاج معها إلى تطهير.

অর্থ:‘‘হে ‌আল্লাহ ! আমার গুনাহকে পানি,বরফ ও শিলা দ্বারা ধুয়ে পবিত্র কর।’’ কারণ গুনাহ ছোট হোক বা বড় হোক তা অন্তরকে নোংরা ও অবর্জনাযুক্ত করে তুলে। তাই অন্তরকে পবিত্র করা প্রয়োজন ।

 আত্মাকে সকল প্রকার- ছোট হোক বড় হোক, গুনাহ থেকে বা পবিত্র রাখার পদ্ধতি হল গুনাহ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গুনাহ থেকে তাওবা করা।

 তাওবা অর্থ

তাওবা শব্দের অর্থ হল ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা । অর্থাৎ গোনাহ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ সংকল্প করা ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحاً

অর্থ-মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা কর আন্তরিক তওবা ।

نصاحة থেকে উৎপন্ন অর্থ তালি দেওয়া, জোড়া দেওয়া, মুচি বা দর্জি যেমন ছেঁড়া জামা বা জুতা জোড়া দেয় ।

অর্থাৎ সৎকর্মের ছিন্নবস্ত্রে তালি সংযুক্ত করা ।

হযরত হানার বছরী (রাহ) বলেন- বিগত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার পাকা পোক্ত ইচ্ছাই-‌‌ তাওবায়ে নাসুহা‌‌

 তাওবা কবুলের শর্ত-

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُوْلَـئِكَ يَتُوبُ اللّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللّهُ عَلِيماً حَكِيماً - وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ وَلاَ الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَـئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা নেসা- ১৭-১৮)

﴿وَاِذَا جَآءَكَ الَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰيٰتِنَا فَقُلۡ سَلٰمٌ عَلَيۡكُمۡ‌ كَتَبَ رَبُّكُمۡ عَلٰى نَفۡسِهِ الرَّحۡمَةَ‌ۙ اَنَّهٗ مَنۡ عَمِلَ مِنۡكُمۡ سُوۡٓءًۢا بِجَهٰلَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ وَاَصۡلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ﴾

৫৪) –হ্যাঁ, আল্লাহ কি তাঁর শোকরগুজার বান্দা কারা, সেটা এদের চাইতে বেশী জানেন না ? আমার আয়াতের প্রতি যারা ঈমান আনে তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক৷ তোমাদের কেউ যদি অজ্ঞতা বশত কোন খারাপ কাজ করে বসে, তারপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তাহলে তিনি তাকে মাফ করে দেন এবং নরম নীতি অবলম্বন করেন, এটি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেরই প্রকাশ৷৩৭

এ আয়াত দু’টি পর্যালোচনা করলে গুনাহ কবুলের নিম্নলিখিত শর্ত সমূহ পাওয়া যায়ঃ

১. গুনাহ হবে অজ্ঞতা বশতঃ ।

২. গুনাহ হবে একক, অর্থাৎ একটি গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে তাওবা করা ।

৩. গুনাহ করবে না, গুনাহ সংঘটিত হবে ।

৪. গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে অনুতপ্ত হওয়া ।

৬. ভবিষ্যতে গুনাহ না করার ওয়াদা করা ।

৭. তাওবা হবে মৃত্যুর লক্ষণ আসার আগে, মৃত্যুর লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বা মৃত্যুর পরে তওবা করার অবকাশ নেই ।

হযরত আলী (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হল- তাওবা কি? তিনি বললেন- ছয়টি জিনিসের একত্রে সমাবেশ হলে তাওবা হবে -

(১) অতীত কর্মের জন্য অনুতাপ

(২) ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার ব্যাপারে দৃঢ সংকল্প

(৩) যেসব ফরজ/ওয়াজেব তরক হয়েছে তার কাজা আদায়

(৪) কারো ধন সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করলে তা প্রত্যাবর্তন করা

(৫) কাউকে মুখের বা হাতের সাহায্যে ক্ষ্ট দিয়ে থাকলে তজ্জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয়া ।

(৬) নিজেকে যেমন আল্লাহর নাফরমান হিসাবে দেখতে পেয়েছিল তেমনি তার বিপরীত ভাবে আনুগত্য করতে দেখা ।

 তাওবা কবুলের জন্য আর্থিক কোরবানী প্রয়োজনঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَآخَرُونَ اعْتَرَفُواْ بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُواْ عَمَلاً صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا عَسَى اللّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيْهِمْ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ -خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ - أَلَمْ يَعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়। তাদের মালামাল থেকে সাদাকাহ গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন। তারা কি একথা জানতে পারেনি যে, আল্লাহ নিজেই স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং সাদাকাহ গ্রহণ করেন? বস্তুতঃ আল্লাহই তওবা কবুলকারী, করুণাময়। (সুরা আত তাওবা ১০২-১০৪)

তাওবা কবুলের অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য-

মূল তাওবা করেন আল্লাহ তাঁর বান্দার দিকে । বান্দাহ গুনাহ করার মাধ্যমে তাঁর রহমতের দরজা থেকে দুরে সরে গিয়েছিল। আল্লাহ ও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন । অনুতপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সে যেন আল্লাহর রহমতের দরজায় এসে মাথা ঠুকছে আর বলছে - হে আল্লাহ তোমার বান্দা তোমার রহমতের দরজায় উপস্থিত । তুমি মুখ ফিরে তাকাও । তোমার রহমতের দরজা খোল । তোমার বান্দাকে তোমার রহমতের বেড়ার মধ্যে আশ্রয় দান কর । আল্লাহ যদি তার দিক থেকে মুখ ফিরে তাকান তবেই বান্দার তাওবা কবুল হবে ।

বান্দার পক্ষ থেকে তাওবার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে সীমালংঘন ও বিদ্রোহের পথ পরিহার করে বন্দেগীর পথে পা বাড়িয়েছে ৷ আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, তিনি নিজের লজ্জিত ও অনুতপ্ত দাসের প্রতি অনুগ্রহ সহকারে দৃষ্টি দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতি তাঁর দান পুনর্বার বর্ষিত হতে শুরু করেছে ৷

সুরা তাওবার ১১৮ নং আয়াতে এ কথাই বলা হয়েছে-

﴿ وَّعَلَى الثَّلٰثَةِ الَّذِيۡنَ خُلِّفُوۡا حَتّٰۤى اِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ اَنۡفُسُهُمۡ وَظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّاۤ اِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوۡبُوۡٓا‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ‏﴾

এবং অপর তিনজনকে যাদেরকে পেছনে রাখা হয়েছিল, যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্বেও তাদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠলো; আর তারা বুঝতে পারলো যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশ্রয়স্থল নেইঅতঃপর তিনি তাওবা করলেন (সদয় হলেন) তাদের প্রতি যাতে তারা তাওবা করতে পারে (ফিরে আসে)। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দয়াময় করুণাশীল। (সুরা তাওবার ১১৮)

তাওবায়ে নাসুহার (সত্যিকারের তাওবার) উজ্জল দৃষ্টান্ত রয়েছে সুরা তাওবার ১১৮ নং আয়াতের শানে নুযুলে । ( পড়ে দেখুন, যদি না পড়ে থাকেন)

 তাওবা করে গুনাহ মাফ না করে মারা যাওয়ার পরিণতি-

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّهُ مَن يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيىসুরা ত্বহা-৭৪

নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না।

 আয়াতটি স্ব-ব্যাখ্যাত ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে আমার কাছে মনে হযেছে । সবাইকে বিষয়টি সম্পর্কে গভীর ভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি ।

হাদীস থেকে তাওবায়ে নাসুহার (খাঁটি তওবার) দৃষ্টান্ত-

নবী যুগে গামেদি গোত্রের জনৈক মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলেন । ক্ষণিকের তরে আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল হয়েছেন। কিন্তু পরক্ষণেই ঈমানি শক্তি ও আল্লাহ ভীরুতা তার অন্তরে দাউ দাউ করে অগ্নি প্রজ্জলিত করে দেয়। অস্থির হয়ে গেলেন। কি করা যায় ভেবে পাচ্ছেননা। গুণাহের উত্তাপ তার অন্তর পুড়ে ছাই করে দিল। কবীরা গুণাহের বোঝা পাহাড় সম মনে হল। অশ্লীলতার ঘৃণা তার অন্তরে আগুন জ্বলিয়ে দিল। ফলে তিনি শুধু গোপন তওবাতে তৃপ্তি পেলেন না। বললেন, আমি সীমা লঙ্ঘন করেছি। ছুটে গেলেন নবী (সঃ) এর কাছে বললেন- , হে নবী, আপনি শাস্তি দিয়ে আমাকে পবিত্র করুন।

নবী (সঃ) দেখলেন যে, তিনি বিবাহিতা, পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলাই হবে তার একমাত্র শাস্তি। প্রিয় নবী ডানে বামে মুখ ফিরিয়ে তাকে দূর করে দিতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না। পরদিন এলেন, তার কাজের উপর প্রমাণ পেশ করার জন্য।

হে নবী! কেন আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন ? তাহলে কি আপনি আমাকে মায়েজ রা. এর মত ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আল্লাহর কসম, আমি ব্যভিচারের কারণে বর্তমানে গর্ভবতী। এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও সন্তান প্রসব হওয়ার পরে এসো। মাসের পর মাস অতিক্রম করছে। কিন্তু তার অন্তরের আগুন প্রসমিত হচ্ছে না। প্রসবের পর শিশুটিকে কাপড়ে জড়িয়ে উপস্থিত করলেন; এই আমি প্রসব করেছি। এবার তো শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন। এ কেমন পরিস্থিতি! এ কেমন অবস্থা ! দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যাও দুধ ছাড়ানোর পর এসো। এক বছর, দুই বছর। কিন্তু তার ইচ্ছার পরিবর্তন হচ্ছে না। দুধ ছাড়ানো হলে প্রমাণ স্বরূপ বাচ্চার হাতে একটি রুটির টুকরা দিয়ে সে অবস্থায় নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। বললেন এই আমি বাচ্চাটির দুধ ছাড়িয়েছি। খানা খাওয়া তার উজ্জল প্রমাণ। এখন তো আপনি আমাকে পবিত্র করতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে বাচ্চাটিকে অপর এক মুসলমানের হাওলা করা হলো। আদেশ করা হলে তার বুক পর্যন্ত গর্ত করা হলো। উপস্থিত লোকজনকে পাথর নিক্ষেপের আদেশ করা হলো। এদিকে সাহাবি খালেদ ইবনে অলিদ রা. একটি পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন। মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করলে রক্ত ছিটকে এসে খালেদের মুখে পড়ল। খালেদ রা. তাকে গালি দিলেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গালি শুনে বললেন,

مهلا يا خالد، والذي نفسي بيده، لقد تابت توبة لو قسمت بين سبعين لكفتهم.

‘‘হে খালেদ তুমি থাম। যে সত্তার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, এ মহিলা এমন তওবা করেছে, যদি তা সত্তর জন মানুষের মাঝে বন্টন করা হয়, তাহলে তাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’’

অতঃপর আদেশ মোতাবেক গোসল দিয়ে কাফন পরানো হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার জানাযা পড়ালেন। পরে দাফন করা হলো। আমরা কি তার অবস্থা দেখে আশ্চর্য হইনা? দু’বছর পরও পাপের উত্তাপ তাকে দংশন করে যাচ্ছে, আত্মা জালিয়ে দিচ্ছে, অন্তরকে ব্যথা দিচ্ছে। তার জন্য সুসংবাদ। একেই বলা হয় আল্লাহ ভীতি।

চলুন আমরা এক পলক দৃষ্টি দেই উক্ত নারীর তওবার কাহিনীর দিকে; যিনি তওবা করতে গিয়ে সামাজিক তিরস্কারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন আখেরাত পানে, রেখে গেছেন সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য তওবার অনুপম উপমা, কাঁদিয়ে গেছেন হাজারো মা-বোনকে, প্রকম্পিত করেছেন লাখো মানুষের হৃদয়কে, স্থাপন করেছেন তাওবায়ে নাসুহার সঠিক দৃষ্টান্ত, রচনা করেছেন সেচ্ছায় জীবন উৎসর্গের একটি বিস্ময়কর কাহিনী।

এই ঘটনা শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের যে কারো থেকে গুণাহ সংঘটিত হওয়া সম্ভব। তবে সেই উত্তম গুণাহগার যে তওবা করে। আর তওবা হওয়া চাই খাঁটি অন্তরে। হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর পাপ রাশিকে পুণ্যে পরিণত করুন। আমিন!

বিষয়: সাহিত্য

২৩৬৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

182190
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৬
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ
182193
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৮
মাটিরলাঠি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান।
182197
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৫৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : প্রিয় তালিকায় না রেখে পারছিনা।
182209
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:১১
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : তথ্যনির্ভর গঠনমুলক লিখার জন্য ধন্যবাদ। পড়ে ভাল লাগল।
182244
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১৪
182268
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৩৭
পবিত্র লিখেছেন :
182276
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File