টয়লেটের পাইপ থেকে জীবন্ত উদ্ধার : বিস্ময়কর শিশু বেবি-৫৯ নিয়ে চাঞ্চল্য

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ৩০ মে, ২০১৩, ০১:১০:৪৬ রাত



টয়লেটের পাইপে মিলেছে নবজাতক শিশু! তা-ও আবার জীবিত! বিস্ময়কর, সত্যিই বিস্ময়কর। বিস্ময়করভাবে শিশুটির বেঁচে থাকা তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। এ নিয়ে চীনের গণমাধ্যমগুলোতে চলছে তোলপাড়। চীনের বাইরে বিশ্ব মিডিয়ায়ও এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) শিশুটির নাম দিয়েছে ‘বেবি-৫৯’। লন্ডনের বিশ্বখ্যাত দৈনিক ডেইলি মেইলের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করা হয়েছে শিশুটিকে টয়লেটের পাইপ থেকে জীবন্ত বের আনার সচিত্র প্রতিবেদন।

পত্রিকাটি সচিত্র প্রতিবেদনের পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত করেছে উদ্ধারের শুরু থেকে হাসপাতাল বেডে পাইপ কেটে শিশুটিকে বের করে আনার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের ভিডিওচিত্র।

স্থির ও ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, পাইপ কেটে বের করে আনার পরে শিশুটির চোখে-মুখে, শরীরজুড়ে টয়লেটের নোংরা বর্জ্যের ছড়াছড়ি। এ চিত্র দেখে সবাই একমনে শুধু ধিক্কার জানাচ্ছেন নিষ্পাপ শিশুটির এ দশার জন্য যারা দায়ী তাদের প্রতি।

ফেসবুক, টুইটারে এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। সবার মনে একটিই প্রশ্ন—কী দোষ শিশুটির।

জন্ম নেয়াই কী তার পাপ হয়েছে! কেন এমন নিষ্ঠুর কায়দায় পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তাকে হত্যা করতে হবে।

ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, নিষ্ঠুর ও বিস্ময়কর এ ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার এক সন্তান নীতির দেশ পূর্ব চীনের জিজিয়াং প্রদেশে। প্রদেশের পুজিয়াং এলাকার একটি চারতলা ভবনের প্রতিবেশী মহিলা কান্নার শব্দ পেয়ে দমকল কর্মীদের খবর দেন। দমকল কর্মীরা পরে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।

এর আগে পচা দুর্গন্ধময় সুয়ারেজের পাইপে কেটেছে নবজাতকের দুটি দিন। সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ বিস্ময় বালক শিশুটির খবর প্রচার করলে তোলপাড় শুরু হয়।

উল্লেখ্য, এক সন্তান নীতি থাকায় চীনের বেশিরভাগ নাগরিকের আশা থাকে ছেলে সন্তানের। এ অবস্থায় কোনো দম্পতির মেয়ে সন্তান হলে তাকে পরিত্যক্ত করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তা সত্ত্বেও নবজাতক ছেলে শিশুটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া দমকল কর্মীদের ধারণা, শিশুটির বয়স দুই-তিনদিন হবে। জন্মের পর জন্মদাতা হতভাগা শিশুটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যক্ত করতে কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু নিয়তিই শিশুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। শিশুটি একটি ৩ ইঞ্চি (১০ সেন্টিমিটার) ব্যাসের এল-শেপ আকারের পাইপে আটকে ছিল। উদ্ধারকর্মীরা পাইপটি কেটে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের চিকিত্সকরা পাইপটি কেটে শিশুটিকে বের করে আনেন।

এ সময় শিশুটির দুই হাত দু’পাশে পিন দিয়ে আটকানো ছিল এবং টয়লেটের নোংরা বর্জ্যে তার চোখ, মুখ ও শরীর ঢাকা ছিল। বের করার পর দেখা গেছে শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়েছে। তবে সে এখন আশঙ্কামুক্ত।

চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, শিশুটির ওজন ৬ দশমিক ২ পাউন্ড (২ কেজি ৮০০ গ্রাম)। হাসপাতালে তাকে বেবি-৫৯ নামের একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। পরে সংবাদ সংস্থা এপি ইনকিউবেটরের নাম অনুসারে শিশুটির নাম দিয়েছে ‘বেবি-৫৯’।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশুটির উদ্ধারের খবর প্রচার হলে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত অসংখ্য লোক ভিড় করছেন। এদের মধ্যে অনেকে দুধ, ডায়পারসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী নিয়ে আসছেন হাসপাতালে।

হাসপাতালের নার্সরা জানিয়েছেন, উদ্ধারের পর শিশুটির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল। পুজিয়াং সরকারি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের নার্স জাহাং বলেছেন, ‘আমরা ধারণা করছি মাথার উপরিভাগে আঘাতে শিশুটি জখম হয়েছে। কিন্তু সবকিছুই এখন স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, শিশুটির মাকে খুঁজে বের করা হয়েছে এবং এখন তিনি হাসপাতালে শিশুটির কাছেই আছেন। আমি শুনেছি ২২ বছর বয়সী ওই মা এখন পর্যন্ত অবিবাহিত। ফেসবুক-টুইটার ব্যবহারকারীরা শিশুটির জন্মদাতার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন।

তবে ঠিক কি কারণে ওই মা এ ধরনের কাজ করতে গেছেন তা তিনি জানাননি। পুলিশের ধারণা, ওই তরুণী অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মা হয়েছেন। আর সেজন্যই এ ঘটনার জন্ম হয়েছে। চীনে সম্প্রতি এ ধরনের মা হওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে বলেও পুলিশ দাবি করেছে।

নার্সরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে আসা উত্সুক লোকজনের অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইছেন। তবে তারা কবে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে তা জানেন না।

পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে শিশুটিকে পাওয়া গেছে, সেটি একটি ভবনের বিশ্রামকক্ষ। সেখানে গর্ভপাতের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এমনকি সম্প্রতি ওই এলাকায় কোনো সন্তান জন্ম নেয়ার খবরও এলাকাবাসী জানাতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে পুজিয়াং এলাকার পুলিশ ব্যুরো অ্যাকাউন্ট জানিয়েছে, শিশুটির মাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত হচ্ছে। এর বেশি কিছু জানানো আপাতত সম্ভব নয় । সূত্র: আমার দেশ, ৩০।০৫।১৩

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১২২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File