অন্য রকম বন্দী-শালা, দারোয়ানের সাথে বসবাস ।
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৯ মে, ২০১৩, ১১:৫০:০১ রাত
অন্য রকম বন্দী-শালা, দারোয়ানের সাথে বসবাস ।
আবু রাইহান । একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । তিন সন্তানের জনক । সকলেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া । ব্যাংকের লোনের টাকায় ঢাকা শহরে একটু মাথা গোঁজার ঠাই করেছেন । এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক হিসাবে পরিচিতি থাকার কারনে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এলাকা ছাড়া । বাংলাদেশের বর্তমানে চলছে স্বঘোষিত ‘ইজারাদার বাহিনী’ আর জনগনের টাকায় পালিত পার্সোনাল/ইজারারক্ষক ফোর্সের রকমারী ‘আদর’/‘আপ্যায়নের’ মহোত্সব । যাকে খুশি তাকে আর যখন খুশি তখন তাদের মতাদর্শ বিরোধী লোকের উপর ঝাঁপিয়ে এ সমস্ত হায়েনার দল । এ সকল ক্ষেত্রে তারা কখনই বিবেক-বোধ বা আইন কানুনের তোয়াক্কা করে না ।
অক্টোবর মাসের যেদিন বাসা থেকে ফোন এসেছিল যে আজ যেন বাসায় না আসে । কারন ঐ হায়েনাদের সহায়ক বাহিনী বাসায় খোঁজাখুজি করেছিল । সে থেকে কয়েক দিন বিভিন্ন বন্ধু বাণ্ধবদের বাসায় থাকা শুরু করে । কিন্তু তা আর কতদিন এভাবে চলে । একদিন অফিস শেষে অফিসের এক কলিগ তাকে তার বাসায় যেতে আমন্ত্রন জানাল । কিন্তু তার মন চাচ্ছিলনা তার সাথে যেতে । অফিসের কাজ শেষ । কলিগ তাকে তার বাসায় নেয়ার জন্য বসে আছে । কিন্তু আবু রাইহান যেতে চাচ্ছে না রাত গভীর হচ্ছে । কিন্তু কোথায় যাবেন আবু রাইহান । ভেবে কোন কুল কিনারা করতে পারছেন না । অবশেষে মোবাইল ফোনটা বের করে অফিসের বসকে ফোন করলেন । বললেন স্যার, আজ বাসায় খুব সমস্যা । বাসায় যেতে পারছি না । খুব বিপদে পড়লাম, কি যে করি ভেবে পাচ্ছি না । বস বললেন, অফিসে দারোয়ানের সাথে থেকে যান । সেই থাকা থেকেই থাকা । এখনও থাকা ।
দুপুরে মেসে রান্না হয় । সে কি রান্না । তরকারী কাঁচা, মাছ থেকে গন্ধ আসে । খেতে বসলে মনে পড়ে প্রতিদিন তার স্ত্রী পরম মমতায় সকালে অতি কষ্ট করেও ভাত রান্না করে দিতেন । আবু রাইহান সাহেবের খাবার ব্যাপারে এমনিতেই একটু অন্য প্রকৃতির । রান্নার মান অবশ্যই এ ক্লাশের হতে হবে । ভাতের প্রায় সম পরিমান তরকারী খেতে অভ্যস্ত তিনি । তাই দুপুরে খেতে বসলেই মেজাজটা বিগড়ে যায় প্রায়শঃই । সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে বেচারা চতুর্থ শ্রেনীর বাবুর্চীরূপী চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীটির উপর । কিন্তু পদের ইচ্চতের কারণে কিছুই বলা সম্ভব হয়ে ওঠেনা ।
বিকেল গড়িয়ে পড়ে । অফিস শেষে সকলে চলে যায় আপন নীড়ে । শুধু যাওয়া হয়না আবু রাইহান সাহেবের । সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে । অন্ধকার নেমে আনে আবু রাইহান সাহেবের মনের কোনেও । অন্য সব দশদিন অফিস শেষ হলে এক মিনিটও দেরী সহ্য হতনা । মানুষের ভীড়, গাড়ীর জ্যাম, আকশের বৃষ্টি, রাস্তার কাঁদা, কোমড় পানি, বৈশাখী ঝড়, কোন কিছুই আটকে রাখতে পারতনা বাসায় গমনকে । ছোট্ট আদরের ফুটফুটে জাওহার, দু’ বছর আগে বিয়ে হওয়া মেয়েটার ঘরে এসেছে ৭-৮মাস আগে । কিইবা বুঝে । বাসায় গেলে বুকের সাথে লেগে থাকত । নাকে মুখে চুমু খেত । চুকচুক করে আংগুরের রস খেত । দন্ত বিহীন মাড়ি দিয়ে সুন্দর করে খেতে পারত বয়স্ক লোকের মত । কিন্তু আজ সেও হয়ত ভুলে গেছে তার নানা ভাইকে ।
রাত গভীর হতে থাকে । রাকিব বলে স্যার রাতে ভাত খাবেন ? না, খেতে ইচ্ছা করেনা । রাত ১১টা বাজে মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে । রিং টোনের শব্দেই আবু রাইহান সাহেবের বুঝতে পারেন, তার বেগম ফোন করছেন । কলার গ্রুপে বেগমের জন্য আলাদা রিং টোন সেট করে রেখেছেন যেন বুঝতে পারেন কে ফোন করছে । জিজ্ঞেস করেন রাতে কি খেয়েছেন । উত্তর কিছু খাইনি । মিথ্যা বলতে পারেনা । কেন? । ক্ষূধা নাই, খেতে ইচ্ছা করছেনা । রাতে ভাল ঘুম হয়না । এপাশ ওপাশ করে রাত কেটে যায় । সকাল বেলা একটু গভীর নিদ্রা আসে ।
স্যার, উঠবেন না । সারে আটটা বাজে । তাই, এত বাজল কখন, মনে মনে ভাবে আবু রাইহান । ৯টার মধ্যেই তো লোকজন এসে পড়বে । কখন সারবে গোসল, নাস্তা । গোসল ও আনুসঙ্গিক কাজ সারতে সারতে লোকজন অফিসে চলে এল ।
পিয়ন চা এনে রাখল টেবিলের উপর । টেবিলের ড্রয়ারে রাখা টোস্ট আর চা দিয়ে সারল সকালের নাস্তা । সকাল ১০টায় ইন্টার পরীক্ষার্থী ছোট মেয়েটা ফোন করে । রাতে মা কিছুই খাননি ।
বিষয়: রাজনীতি
৩১১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন