বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্ক
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৩ মে, ২০১৩, ০৯:৫১:৫৪ রাত
বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্ক
৪২ বছর আগের কথা । স্কুলে আমাদের ক্লাসে অংকের টিচার ছিলেন আলতাফ স্যার । ভদ্রলোক এখনও জীবিত আছেন । লেখা পড়ায় ছিলেন ম্যাট্রক পাশ । তার পড়েও নাইন টেনের অংক করাতেন দাপঠের সংগে । স্কুলজীবনে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্ক করেছেন সকলেই । সমাধান মেলাতে অনেকের মস্তিষ্কই ঘর্মাক্ত হয়েছে। গণিতের আলতাফ স্যার প্রায়ই ক্লাসে বানরের এ অব্যাহত প্রচেষ্টার সঙ্গে মানবজীবনের তুলনা করতেন। বলতেন ‘জীবনের চাকা ঘুরাতে হলে বানরের বাঁশে ওঠার মতো অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাতে হয়। পিছলে পড়ার ভয়ে ভীত হলে চলে না।’ স্যারের বক্তব্যের গভীরতা বোধগম্য না হওয়ায় অনেকেই মিটমিটিয়ে হাসত। সেই আলতাফ স্যারের হস্তক্ষেপেই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো ইভেন্টের সঙ্গে ‘বানরের বাঁশ’ ইভেন্টটি যুক্ত হয়। এ প্রতিযোগিতা ঘিরে আমাদের আগ্রহও ছিল সীমাহীন। মসৃণ বাঁশটাকে যথেষ্ট পিচ্ছিল করার জন্য দু-তিন দিন আগে থেকে তাতে খাটিঁ সরিষার তেল মাখানো হতো। আমরা মহা-উৎসাহে কাজটা করতাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে মোটকা আর হাবাগোবা সমীরন কীভাবে যেন এ ইভেন্টে প্রথম হওয়াটাকে নিয়মে পরিণত করে ফেলল। লুঙ্গিতে কাছা মেরে (প্যান্ট পরার বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেকেই লুঙ্গি পরত) অতিকায় শরীর নিয়ে তরতর করে সুউচ্চ বাঁশের মাথায় ওঠার দৃশ্য আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করতাম। অন্য সকল প্রতিযোগীদের চেয়ে অর্ধেকেরও কম সময়ে সে উঠে যেত তৈলাক্ত বাঁশের চূঁড়ায়। । তার কাছে কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে বলত, ‘কায়দা সব লুঙ্গির কাছায়!’ গোপনে জেনেছি সে লুঙ্গির মধ্যে বালু রাখত । মসৃন বাশে ওঠার সময় লুঙ্গির ফাকা দিয়ে বালু বের হয়ে বাশের তৈলাক্ততা অনেকটা কমিয়ে দিত । আর তাই সে তরতর করে বাশেঁ উঠে যেত ।
আলতাফ স্যারের ‘তৈলাক্ত বাঁশ’ প্রীতির বিষয়টি অবগত থাকায় এ সম্পর্কীয় অঙ্কগুলো আমরা মুখস্থ করে রাখতাম। পরীক্ষার সময় হাতেনাতে যার সুফল পেলাম। নিমেষেই অঙ্কের সমাধান করলাম। কিন্তু ক্লাসে নম্বর জানানো এবং খাতা দেখানোর সময় স্যার যা বললেন, তাতে আমাদের আক্কেলগুড়ুম। প্রায় সবাই অঙ্কটির সঠিক সমাধান করলেও তেলা বাঁশে চড়ার ক্ষেত্রে ‘ওস্তাদ’ মামুন তা ভুল করেছে! ‘কী ব্যাপার, সমীরন! তুমি নিজে তো তৈলাক্ত বাঁশে ওঠায় খুব পারদর্শী, কিন্তু বানরকে বাঁশে ওঠাতে পারলে না কেন?’ জবাবে সমীরন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, ‘স্যার, আমি তো লুঙ্গি কাছা দিয়ে তেলা বাঁশে উঠে পড়ি। কিন্তু বানর তো আর লুঙ্গি কাছা মারতে জানে না। ওকে কীভাবে তেলা বাঁশে ওঠাব?’
বর্তমানে বিএনপির আন্দোলনের অবস্থা দেখে ছোট বেলার বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্ক মনে পড়ে গেল । বর্তমানে বিএনপির আন্দোলনের সাথে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার খুবই মিল । সকলের মনে থাকার কথা গত বছর সরকারকে ৩ মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছিল বিএনপি জোট, যা শেষ হয় ১০ জুন,২০১২ । ঘোষিত সময়ের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নেয়া না হলে ১১ জুন রাজধানী ঢাকায় আরেকটি মহাসমাবেশ ডেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করার ঘোষনা দিয়েছিল বিএনপি জোট । কিন্ত ৩মাস পরে বিএনপি নতুন করে জনসমর্থন আদায়ের জন্যবিভাগীয় সহরে সমাবেশ বরা শুরু করে । একে বারে বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অঙ্কের মত ১মিনিটে ৩ফুট ওঠে পরবর্তী মিনিটে ২ফুট ১১.৯৯ ইঞ্চি নেমে যাওয়ার অবস্থা । আবার ৪৮ ঘন্টা আল্টিমেটাম । ৪৮ ঘন্টা পর সমাবেশ ডাকল অনুমতি না পেয়ে তাও বাতিল । এথন শুনতে পাচ্ছি জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হবে । মানে এবাব ৫ফুট নেমে যাওয়া অবস্থা । অংকের বানর যদিও বাঁশের শীর্ষ উঠতে পেরেছিল । কিন্তু বিএনপি জোটের যে অবস্থা তাতে আওয়ামী জোট বাঁশে শুধু তেলই মাখায়নি, তার সাথে গ্রীজ আর মবিলও দিয়েছে । যাতে বিএনপি জোট কোন দিন বাঁশ নামক ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করতে না পারে, ১মিনিটে ৩ফুট উঠলে পরের মিটেই যেন ৫ফুট নেমে পড়তে বাধ্য হয় । পক্ষান্তরে আওয়ামী জোট যখন তৈলাক্ত বাঁশে ওঠে, তখন বিএনপি জোটের দেয়া তেল থাকে ভেজাল ও অপর্যাপ্ত । আর আওয়ামী জোট লগি-বৈঠা, বংগভবন ঘেরাও, সচিবদের নিয়ে জনতার মঞ্চ ইত্যাদি নামক “বালু’ লুঙ্গির মধ্যে পুড়ে মাল কাচা মেরে তরতর করে সমীরনের মত ‘ক্ষমতা’ নামক বাশেঁর শীর্ষে পৌছেঁ যায় । তাই বিএনপি জোটেকে ‘ক্ষমতা’ নামক তৈলাক্ত বাঁশে ওঠতে হলে ‘সমীরনের’ মত মালকাচা মারা শিখতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
২২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন