রম্য রচনা কুকুরের বিচার
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১০ মে, ২০১৩, ১০:১৪:১৩ রাত
সুমাইয়া স্কুল থেকে বাসায় ফিরার পথে রাস্তার পাশ থেকে ২০ টাকা দিয়ে ২টি মুরগির বাচ্চা কিনে আনল । মুরগির বাচ্চা দেখে তার মা বাবা আপদ মনে করে বকাবকি করলেও সকলের পরম আদর যত্নে মুরগির বাচ্চা দু’টি বেশ বড় হলে উঠল । পরিবারের অন্যান্যরা মুরগী দু’টিকে পরিবারের সদস্য হিসাবেই মনে করত ।
সুমাইয়াদের পাশে ছিল সুমাইয়ার বাণ্ধবী সাবিহাদের বাসা । উভয় বাসায় দুটি পোষা কুকুর ছিল । সুমাইয়াদের কুকুরটির নাম ছিল সুয়া আর সাবিহাদের কুকুরটির নাম ছিল সাহা । সুয়া আর সাহায় ছিল গলায় গলায় ভাব । দু’জনে কেউ কাকে না দেখে এক মূহুর্তও থাকতে পারত না । ভাল খাবার হলে দু’জনে ভাগ করে খেত ।
একবার খুব বৃষ্টি হল । সুমাইয়ার মুরগী দু’টি শখ করে বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়ল । শত চেষ্টা করেও মুরগী দু’টিকে বাঁচানো গেলনা। দু’দিনের মাথায় মুরগী দু’টি মারা গেলে সুমাইয়াদের বাসায় শোকের ছায়া নেমে আসল । সুমাইয়া খাওয়া দাওয়া বন্ধ । । সকলের চোখেই পানি । কিন্তু সুয়া মনে মনে খুশি হল । ভাবল আজ একটু ভাল খাবার খাওয়া যাবে । মরা মুরগী দু’টি ডাষ্টবিনে ফেলে দিলে সুয়া তার বন্ধু সাহাকে ঘটনা অবহিত করে নৈশ ভোজনের আমন্ত্রন জানাল । সাহা কিন্তু সুয়ার আমন্ত্রনকে ভাল ভাবে নিলনা । সেও সুমাইয়াদের শোকে শোকাতুর । মুরগীর মৃত্যুতে সকলের শোকে শোকাতুর না হয়ে, তাদের আদরের মুরগী ভক্ষনকে সে পরিবারের প্রতি অকৃতজ্ঞতার পরিচয় বলে মনে করল । এ নিয়ে সুয়া আর সাহার মধ্যে প্রথম কথা কাটিকাটি ও পরে মারাত্মক ঝগড়ায় রূপ নিল । ঝগড়ার এক পর্যায়ে সাহা সুয়াকে গালি দিয়ে বলল, তুই একটা মানুষের বাচ্চা । ‘মানুষের বাচ্চা’ গালি খেয়ে সুয়া একদম মুষড়ে গেল । এ এটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারলনা । সে সিদ্ধান্ত নিল সাহার সাথে তার যতই বন্ধুত্ব থাক, সে এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে । বিকেলেই সে তাদের নেতা পাড়ার মোড়ল কুকুরটির কাছে বিচার দিল । মোড়ল উভয়ের কথা শুনে সুয়াকে বলল, তুমি তোমার প্রভুর আদরের মুরগীর মৃত্যুতে দুঃখী না হয়ে আনন্দিত হয়েছ । শুধু তাই নয় উহা খাওয়ার জন্য তোমার বন্ধুকে নৈশ ভোজনের আমন্ত্রন জানিয়ে মারাত্মক অন্যায় করেছ । তোমার আচরণ কুকুর জাতির জন্য মানানসই নয় । কুকুর জাতি প্রভুভক্ত । প্রভুর খেদমত করার পাশাপাশি তারা প্রভুর দুঃখে দুঃখী ও প্রভুর সুখে সুখী হবে । কুকুর জাতি কখনই প্রভুর অবাধ্য হবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না । তাই তোমার আচরণের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার পাশাপাশি সাহা ও তোমার প্রভুর কাছে নত শিরে ক্ষমা চাইতে হবে । এটাই আমার রায় ।
সুয়া তার ভুল বুঝতে পেরে বলল, মহারাজ, আমি আমার আচরণের জন্য দুঃখিত । কিন্তু আমাকে ‘মানুষের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়াটা আমি মেনে নিতে পারছিনা । আমার অন্যায় কি এতটাই যে, আমাকে ‘মানুষের বাচ্চা’ বলে গালি দেবে? আমি এর বিচার চাচ্ছি ।
মোড়ল বলল, ‘মানুষের বাচ্চা’ বলে গালিতে তোমার আপত্তিটা বুঝিয়ে বল ।
সুয়া বলল, মহারাজ, মানুষ যে সমস্ত কাজ করে আমি আপনাকে তার কিছু তথ্য ও চিত্র দেখাব । এর পর আপনি বিচার করবেন আমরা কুকুর জাতি কি কোন কালে ঐরকম কাজ করেছি? যদি করে থাকি তবে ‘মানুষের বাচ্চা’ গালিতে আমার কোন আপত্তি থাকবেনা ।
চিত্র-১
চিত্র-২
চিত্র-৩
চিত্র-৪
চিত্র-৫
চিত্র-৬
চিত্র-৭
চিত্র-৮
মোড়ল বলল, বন্ধ কর, বন্ধ কর, আমি আর দেখতে পারছি না আমার ভিমরী লাগছে । না না না কখনোই না । কুকুর জাতি এত খারাপ হতে পার না । একটা কুকুর বড় জোর আরেকটা কুকুরকে কামড়াতে পারে, ঘেউঘেউ করে নিজ এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে । কিন্তু একটা কুকুর আরেকটা কুকুরকে মেরে ফেলছে এরকম ঘটনা ইতিহাস কুকুর জাতির ইতিহাসে নেই । তাও আবার মেরে তার উপর নর্তন কুর্দন করছে । এটা অসম্ভব । হে সুয়া তোমার অভিযোগ যথার্থ । হে সাহা তুমি সুয়াকে ‘মানুষের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে অমার্জনীয় অপরাধ করেছ । তোমার শাস্তি হল তুমি তিন মাস কোন কুকুরের সংসর্গে যেতে পারবে না । তিন মাসের জন্য কুকুর জাতি থেকে তোমাকে বয়কোট করা হল ।
বিষয়: বিবিধ
২৯১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন