মোবাইল হ্যাকিং: সাধু সাবধান

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩৮:৫৬ রাত

মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার পর ব্যালান্স শূন্য। কোন ফোন করা হয়নি এসএমএস দেয়া হয়নি। তাহলে টাকা কোথায় গেল! কাস্টমার কেয়ারে ফোন করায় জানা গেল আপনার মোবাইল হ্যাকিং করা হয়েছে। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আপনার মোবাইলের টাকা অন্য মোবাইলে নেয়া হয়েছে। কোন মোবাইলে নেয়া হয়েছে কিভাবে করা হয়েছে এর কোন প্রমাণ কাস্টমার কেয়ারে নেই। গতকাল ওয়ান ব্যাংক কর্মকর্তা হাসিব খান এভাবেই বর্ণনা করেন তার মোবাইল হ্যাকিংয়ের কথা। মোবাইল ফোন অপারেটর ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তথ্যমতে, কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের ইতিহাস পুরনো। এটা প্রায় সকলের জানা। কিন্তু মোবাইল হ্যাক একেবারেই নতুন একটি আতঙ্ক। নিজের মোবাইল কখন হ্যাকাররা হ্যাক করছে তা টেরও পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের মোবাইলে ইন্টারনেট ও ব্লুটুথ ব্যবহার হচ্ছে- তাদের মোবাইল হ্যাক করতে হ্যাকারদের খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না। যারা ইন্টারনেট ও ব্লুটুথ ব্যবহার করছেন না- তাদের মোবাইলও হ্যাক করছে হ্যাকাররা। এতে ব্যক্তিগত সব তথ্য কপি করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এমনকি আপনার নিজের নাম্বারটি ব্যবহার করে হ্যাকাররা অনায়াসে কথা বলে যাবে আপনি টেরও পাবেন না। সরজমিনে বিভিন্ন মোবাইলের কাস্টমার কেয়ার ঘুরে দেখা যায় প্রায় হরহামেশায় এই ধরনের অভিযোগ আসে। ফার্মগেটের গ্রামীণফোন কাস্টমার সেন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের কাছে কাস্টমাররা অভিযোগ করে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার পর তা শূন্য হয়ে যায়। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা হেড অফিসে জানাই। পরে অভিযোগটি যাচাই করে দেখা যায়, কখনও গ্রাহকের অজান্তেই বিভিন্ন প্যাকেজ চালু করার জন্য টাকা কাটা হয়। আবার অনেক সময় ক্লোনিং -এর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়। বিটিআরসির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অপরিচিত কোড(+৯) দিয়ে ফোন কল আসার বহু নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও মোবাইল ফোন সিম ক্লোনিং -এর ঝুঁকি খুবই বেশি। এমন হতেই পারে ক্লোনিং কিংবা হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টি যাচাই না হওয়া এবং সচেতনতার অভাবের কারণে জানা যাচ্ছে না। আগে থেকে সতর্কতা মহল ব্যবস্থা নিলে দেশের কোটি কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্যামল বলেন, আমার নিজের মোবাইল থেকে একবার টাকা রিচার্জ করার পর ব্যালেন্স শূন্য হয়েগিয়েছিল। পরে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেয়ার পর সেখান থেকে কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে একই নাম্বারের সিম একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করছে। ক্লোন পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হচ্ছে। এটা ধরা কঠিন কাজ না হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে কাজটি করা যাচ্ছে না মোবাইল অপারেটরদের কাছে একাধিক অভিযোগ আসে। হ্যাকাররা মোবাইল ফোন সিমকার্ড ক্লোনিংয়ের জন্য ব্যবহার করছেন একটি ইউনিকোড। এই ইউনিকোডটি প্রথমে কলারের হ্যান্ডসেট কিংবা পিসি অথবা সার্ভারে মাদার ফাইল হিসাবে অ্যাকটিভ করা হয়। পরে ওই কোড নাম্বার যে কোন মোবাইল ফোন নাম্বারে প্রবেশ করালেই মোবাইল ফোন নাম্বারটি কপি হয়ে যাচ্ছে। অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে হ্যাকার নিজের পরিচয় দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফোন অপারেটরের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের কর্মী হিসেবে এবং ফোন ব্যবহারকারীকে নেটওয়ার্ক নির্বিঘ্ন আছে কিনা তা যাচাই করতে বিশেষ কোডটি চাপতে অনুরোধ করছে। যিনি কলটি রিসিভ করেছেন তিনি কলারের কথামতো কোড চাপার সঙ্গে তার ফোন নম্বর ক্লোনিং হবে তেমনি তার ফোনের ডাটা কপি হতে শুরু করবে। এমনকি কলটি কেটে দিলেও কপি চলবে। ফোনের পাওয়ার সুইচ বন্ধ করা ছাড়া এই কপি বন্ধ করা সম্ভব না।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। বহুদিন থেকে মোবাইল হ্যাকিং নিয়ে মানুষ ভোগান্তির মধ্যে থাকলেও বিটিআরসির কোন পদক্ষেপ নেই। শুধুমাত্র মোবাইল হ্যাকিংয়ের বিষয় নয় মোবাইল কোম্পানির আরও অনেক অভিযোগ থাকলেও বিটিআরসির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেই। মোবাইল অপারেটররা দানবের মতো আচরণ করছে আর বিটিআরসি নীরবে তা সহ্য করছে। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে একজন ব্যক্তির অভিযোগ ছিল যার গ্রামীণফোনের সিমের মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ ডলার সমপরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছিল। গ্রামীণফোনের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেও গ্রামীণফোনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নাকচ করে দেন।

হ্যাকররা শুধু ফোন করে গ্রাহকদের কোড নাম্বার চাপতে অনুরোধ করছে তাই নয়, তারা ওই কোড নাম্বার ব্যবহার করে কলও করছে। এক্ষেত্রে বিপদ আরও বেশি। এ ধরনের কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে রিসিভারের হ্যান্ডসেটেরে সব তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। এ সংক্রান্ত একাধিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী “#, + কিংবা *” দিয়েই ইউনিকোডের শুরু হয়। এ কারণে এ ধরনের প্রতীক দিয়ে শুরু যে কোন ধরনের কল গ্রহণ না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া কেউ ফোন করে গ্রাহকসেবা কর্মী পরিচয় দিলেই তার কথা অনুযায়ী কাজ না করা। সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতি সংঘের প্রতিষ্ঠান আইটিইউ (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন)-র কাছে দাবি জানিয়েছে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিতে অনুরোধ জানিয়ে ছিল। বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ এই দাবির সঙ্গে একমত ছিল। কিন্তু আইটিইউ ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের ওপর নিজ নিজ দেশের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। সৌজন্যেঃ দৈনিক মানব জমিন

বিষয়: বিবিধ

১১৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File