প্রশ্নোত্তরে যাকাতের হাকীকত- বই আলোচনা

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল বিন আমিনুল হক ০১ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:০৯:৫৪ সন্ধ্যা

বইয়ের নাম: যাকাতের হাকীকত

লেখক: সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী রহ:

অনুবাদ: মাওলানা আবদুর রহিম রহ:

১। নামাযের পরে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্তম্ভ কোনটি?

উত্তর: যাকাত।

২। যারা যাকাত আদায় করেনা তাদের দিল তথা অন্তর ও সম্পদের অবস্থা কি?

উত্তর: তাদের দিল নাপাক আর ধন-সম্পদ ও অপবিত্র।

৩। কারা আল্লাহর কাজ করার উপযুক্ত ও নিজেকে ইমানদার দাবী করতে পারে?

উত্তর: যে বা যারা ইচ্ছানুক্রমেই প্রয়োজনতিরিক্ত ধন-মাল হতে নির্দিষ্ট হিস্যা আদায় করে এবং আল্লাহর বান্দাহদের যথাসাধ্য সাহায্য করে।

৩। যারা এ কাজ করেনা বা করতে পারেনা তাদের ক্ষমতা কতটুকু।

উত্তর: তারা কোন কল্যাণকর কাজ করতে পারেনা এবং তারা শরীরে একটা পঁচা অঙ্গের মত যাদের তাড়াতাড়ি কেটে ফেলা উচিত।

৪। যদি কেউ যাকাত আদায় না করে তাহলে তার অন্যান্য ইবাদতের ব্যাপারে হুকুম কি?

উত্তর: তার অন্যান্য ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবেনা, অস্বীকার করলে সে কাফের এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ।

৫। যাকাত কি শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদী সা: এর উপর ফরজ?? দলিল কি?

উত্তর: না, অন্যান্য নবীর আমলেও যাকাত ফরজ ছিল। সুরা আম্বিয়া- ৭০, মরিয়ম-৫ আরাফ-১৫৬ ইত্যাদি

৬। সুরা বাকারার ৫নং আয়াতানুসারে কারা সফলকাম?

উত্তর: যারা অদেখায় বিশ্বাস করে, নামায় কাযেম করে ও যাকাত আদায় করে।

৭। মুসলমানদের প্রকৃত বন্ধু কারা?

উত্তর: মুসলমানদের প্রকৃত বন্ধু- আল্লাহ, তাঁর রাসুল সা: এবং ইমানদার লোকেরা। আর ইমানদার তারাই যারা নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে আর আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। তারা আল্লাহর দল এবং বিজয়ী হবে। (সুরা মায়েদা ৫৫-৫৬)

৮। মুসলমানদের দ্বীনি ভাই কারা?

উত্তর: যারা কুফর ও শির্ক থেকে তাওবা করে খাঁটিভাবে ইমান আনে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে। তাওবা ১১

৯। আল্লাহ কাদেরকে সাহায্য করবে তথা যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে তাদের কাজ কি হবে?

উত্তর: যারা আল্লাহকে সাহায্য করবেন আর তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে তাদের কাজ হবে নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া।

১০। সুদের মত মহামারি কাদের প্রচার প্রচারে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে তারা কিসের সাথে তুলনীয়?

উত্তর: বনী ইসরাইল তথা ইহুদী জাতি, তারা প্লেগরোগ বাহী ইদুরের সাথে তুলনীয় বিশ্বের কোথাও তারা স্থায়ী হতে পারছেনা।

১১। যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর রা; এর বাণী কি ছিল?

উত্তর: আল্লাহর শপথ রাসুল সা: এর জীবদ্দশায় যারা যাকাত দিত, আজ যদি কেউ তার উট বাঁধার একটি রশিও দিতে অস্বীকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমি অস্ত্র ধারণ করব।

১২। কাদের ধ্বংস অনিবার্য?

উত্তর: যেসব মুশরিক যাকাত দেয়না, আখিরাতকে অস্বীকার করে। (হা-মীম-আস-সাজদা-৭)

১৩। দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে তার প্রতিনিধি বানাতে চান তাদের ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কি?

উত্তর: তাদেরকে নির্দিষ্ট মানদন্ডে বিভিন্ন পরিস্থিতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন যারা উত্তীর্ন হবে তাদেরকে প্রতিনিধি বানাবেন।

১৪। কারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে?

উত্তর: ঐ সকল বুদ্ধিমান যারা দেখেই বিভিন্ন নিশানা দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহর কিতাব, আল্লার রাসুল ইত্যাদি চিনতে পারে।

১৫। আল্লাহ তার বান্দাদের কি কি পরীক্ষা করেন?

উত্তর: প্রথমত- বুদ্ধি বা জ্ঞান, দ্বিতীয়ত- চরিত্র, তৃতীয়ত- আল্লাহর জন্য নিজের মত ও আরাম আয়েশ ত্যাগ-কুরবানী করার ক্ষমতা, চতুর্থত- আল্লাহর পথে অর্থসম্পদ কুরবানী করার যোগ্যতা। সুরা আল ইমরান ৯২

১৬। আল্লাহর পথে কোন ধরণের সম্পদ দান করতে হবে?

উত্তর: সবচেয়ে ভাল এবং উত্তম জিনিসগুলো। (সুরা বাকারা ২৬৭)

১৭। আল্লাহর পথে দান কখন আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে?

উত্তর: যখন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দান করা হবে। সুরা বাকারা ২৭২

১৮। ধন-সম্পদ আর সন্তান সন্তুতির ব্যাপারে আল্লার হুশিয়ারী কি?

উত্তর: সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে যাতে এ দুটো আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত না রাখে। সুরা মুনাফিকুন-৯

১৯। কখন মানুষের দান নিস্ফল হয়ে যায়? দলিল কি?

উত্তর: অন্যের উপর অনুগ্রহ প্রচারের জন্য বা দান করে কাউকে কষ্ট দেয় (খোটা দিয়ে বা আচার আচরণে) কিংবা কেবল সুনাম কিনার জন্য দান করা হয়।

২০। মুনাফিকদের চরিত্র কেমন?

উত্তর: তারা একে অপরের বন্ধু, একে অন্যকে খারাপ কাজের আদেশ দেয় এবং আল্লাহর রাস্তায় দান-সাদকাকে জরিমানা মনে করে। সুরা তাওবা ৬৭, মুহাম্মদ ৩৮

২১। আল্লাহর রাস্তায় দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা করলে কে ক্ষতিগ্রস্থ হয়? তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুশিয়ার কি?

উত্তর: যারা কৃপণতা করে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আল্লাহ কৃপনদের পরিবর্তে অন্যদের স্থলাভিসিক্ত করবেন যারা কৃপনতা মুক্ত।

২২। যাকাত আর সরকারী টেক্স কি একই বিষয়?

উত্তর: অবশ্যয় না, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। (সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা )

২৩। আলকোরআনে যাকাত-সাদকাকে কি কি নামে অভিহিত করা হয়েছে?

উত্তর: ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ ও কর্জে হাসানা।

২৪। কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণের বিনিময় কি? (কোরআনের ভাষায় ও বাস্তবে)

উত্তর: বিনিময় হচ্ছে আল্লাহ ঋণদাতাকে অনেক বেশি ফেরত দেবেন।

২৫। দানকরার ক্ষেত্রে আল্লাহর বদান্যতা কি?

উত্তর: আমরা ব্যক্তি বা সামাজিক যেখানেই দান করিনা কেন তার সুফল আমরাই ভোগ করি অথচ আল্লাহ ওটাকে নিজের প্রতি ঋণ বলেছেন এবং আখিরাতে আমাদেরকে অনেকগুন বেশি বিনিময় দেয়ার ওয়াদা করেছেন।

২৬। যার ধন-সম্পদ দান করেনা সমাজের অসহায়-দরিদ্রদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

উত্তর: আমরা ধন-সম্পদ আমার পরিশ্রম আর যোগ্যতার ফল। যারা দরিদ্র তারা নিজের দোষে দরিদ্র বা তার পূর্ব পুরুষ তথা পিতার দোষে তার এ দুরাবস্থা, কারণ তাদেরও আমার মতই হাত পা আছে, সুতরাং আমি তাকে সাহায্য করতে যাব কেন??

২৭। সুদখোরের কিসের যুক্তিতে সুদ খায়?

উত্তর: যাকে টাকা দেব সে যদি আমার টাকা দিয়ে কোন উপকার লাভ করতে পারে, তবে আমি আমার টাকা দ্বারা কিছু না কিছু লাভ করতে পারবনা কেন? এবং তা থেকে আমি আমার অংশ আদায় করব না কেন??

২৮। এই ধরনের মানসিকতার অধিকারীরা কেন দান করে এবং তাদের এহেন কর্মে সমাজে কিরুপ অবস্থার সৃষ্টি হয়?

উত্তর: এদের মানসিকতা এমন যে, কাউকে দান করলে বা কারো উপকার করলে নিজ স্বার্থের জন্য করবে। দান বা উপকার গ্রহীতাকে অপমান ও লাঞ্চিত করে আত্নসম্মানবোধটুকুও নষ্ট করে দেয়। এতে পুরো সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

২৯। ইসলামে সুদ এবং দানের বিধান কি? (দলিলসহ)

উত্তর: আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দানকে বাড়িয়ে দেন । সুরা বাকারা ২৭৬, সুরা রুম ৩৯

৩০। শরিয়তের কোন হুকুম জারির ক্ষেত্রে আল্লাহর সুন্নত বা নিয়ম কি?

উত্তর: আল্লাহপাক প্রথমে সাধারণ হুকুম জারি করেন, অত:পর হুকুম বাস্তবায়নের জন্য একটা পন্থা নির্দেশ করেন যা মেনে চলা অবশ্যয় কর্তব্য।

৩১। আল্লাহর রাস্তায় কখন খরচ করতে হবে? বা কি খরচ করতে হবে?

উত্তর: সাধারণ হুকুম হচ্ছে যার দ্বারা যতটুকু সম্ভব খরচ করতে পারবে তা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল যে অবস্থায়ই হোকনা কেন। আর বিশেষ হুকুম হচ্ছে নিজের প্রয়োজনীয় খরচ শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা থাকলে তা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্টখাতে ব্যয় করতে হবে।

৩২। কখন মানুষ নিজেকে নিজে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়?

উত্তর: যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা বন্ধ করে দেয়, (সুরা বাকারা ১৯৫)

৩৩। দুনিয়াতে মানুষের জীবন যাপনের পদ্ধতি কয়টি ও কি কি এপথের পরিণাম কি?

উত্তর: দুইটি, প্রথম পথ আল্লাহর পথ যেখানে রয়েছে চিরন্তন সুখ-শান্তি ও পরম কল্যাণ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শয়তানের পথ যা বাহ্যিকভাবে খুবই সুন্দর বা চাকচিক্যময় হলেও পরিণাম হচ্ছে ধ্বংস ও বিপর্যয়।

৩৪। আল্লাহর পথের যাত্রীরা কিভাবে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে? পদ্ধতি কি?

উত্তর: প্রথমত: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করবে।

দ্বিতীয়ত: দান গ্রহণকারীর প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেনা বা কোনভাবেই তাকে কষ্ট দেয়া যাবেনা।

তৃতীয়ত: নিজ সম্পদ থেকে ভাল বা উত্তম জিনিসগুলো দান করতে হবে। (সুরা বাকারা ১৬৭)

চতুর্থত: যথাসম্ভব গোপনে দান করতে হবে যাতে প্রদচ্ছনেচ্ছা সৃষ্টি না হয়।

পঞ্চমত: নির্বোদ ও অজ্ঞদের মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ দান করা যাবেনা। (সুরা নিসা ৫)

ষষ্ঠত: কাউকে ঋণ দিলে আদায়ে অক্ষমতা সত্বেও বারবার তাগাদা দেয়া যাবেনা। (বাকারা ২৮০)

সপ্তমত: মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন তথা সব দানকরে নিজেকে নি:স্ব বা অসহায় করা যাবেনা (ফুরকান ৬৭)

অষ্টমত: উপযুক্ত ব্যক্তিকেই দান করতে হবে। অধিকারানুসারে বিভিন্ন শ্রেণীর কথা কোরআনে বর্ণিত।

৩৫। কিসের উপর যাকাত দিতে হয়?

উত্তর: ধন-সম্পদ, জমির ফসল (গুপ্ত/খনিজ সম্পদসহ) ইত্যাদির উপর (বাকারা ২৬৭, আনআম ১৪১)

৩৬। যারা সম্পদের যাকাত আদায় করেনা তাদের শাস্তি কি?

উত্তর: কঠোর আযাব, জমাকৃত সম্পদ আগুনে পুড়িয়ে কপাল পিঠ ও পাঁজরে দাগ দেয়া হবে। (তাওবা ৩৪-৩৫)

৩৭। কারা যাকাত গ্রহণের হকদার?

উত্তর: ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, ভিন্নধর্মাবলম্বী যাদের সাহায্য করলে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ পরিশোধের জন্য, ইসলামী আন্দোলনের কাজে এবং মুসাফিরদেরকে।

৩৮। ফকির ও মিসকিন কে?

উত্তর: ফকির: যাদের সামান্য ধন-সম্পদ আছে কিন্তু প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়।

মিসকিন: যাদের অবস্থা ফকির চাইতে খারাপ, অভাব পূরণের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।

৩৯। জরিমানা আদায়করতে ব্যর্থ হয়ে যারা জেলখাটে তাদের ব্যাপারে কি করণীয়?

উত্তর: যেহেতু বর্তমান যুগে দাসপ্রথা নেই, তাই কয়েদী মুক্ত করতে যাকাতের খাত ব্যবহার হতে পারে।

৪০। ধনী ব্যক্তি কখন যাকাত গ্রহণ করতে পারে?

উত্তর: ধনী যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করে তখন, আর মুসাফির হয়ে সফরে গিয়ে অভাবে পড়লে।

৪১। যাকাত বন্টনের কিছু নিয়ম বা বিধান-

ক) পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে যাকাত দিতে পারবেনা। আর আত্নীয়ের মধ্যে যারা ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়া হয় তাদেরও যাকাত দেয়া যাবেনা।

খ) যাকাত শুধুমাত্র মুসলানরা পাবে (তবে চিত্ত আকর্ষণের শর্ত বাদে)।

গ) যাকাত বন্টনের ক্ষেত্রে সংগৃহীতে এলাকাকে অগ্রাধিকর দিতে হবে।

ঘ) যাকাত গ্রহণের সর্বনিম্ন যোগ্যতা হচ্ছে- নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদে যার কাছে পঞ্চাশ টাকা পরিমাণের কম সম্পত্তি আছে তারা যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।

ঙ) হাদিস থেকে জানা যায় যে কাজ করার যোগ্যতা রাখে তার যাকাত গ্রহণ করা উচিত নয়।

৪২। যাকাত আদায় ও বন্টনের উত্তম পদ্ধতি কি?

উত্তর: রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় ও বন্টন করা।

বিষয়: বিবিধ

২৫৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File