পাঠ্যবইয়ে ইসলামের ইতিহাস ও কোরআনের আয়াতের অর্থ বিকৃতি
লিখেছেন লিখেছেন আফলাতুল হোসেন লিমন ৩১ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪৯:০১ রাত
‘ইসলাম এতো উদার যে, মহানবি (সা.) ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ধর্মযাজকদেরমদিনা মসজিদে এবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।’ পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে রাসুলের (সা.) নাম ভাঙিয়ে এ মিথ্যাচার করা হয়েছে। নবম শ্রেণীর বইয়ে সুরা আন ফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের বিকৃত অর্থ করা হয়েছে—‘তোমরা (ইসলাম ও মানবতাবিরোধী শত্রুর বিরুদ্ধে) লড়াই করবে।’
পঞ্চম ও নবম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পাঠ্যবই অনুসন্ধানে ধৃষ্টতাপূর্ণ এ মিথ্যাচার, কোরআনের আয়াত বিকৃতির এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ তমীযুদ্দীন, অধ্যাপক এবিএম আবদুল মান্নান মিয়া ও মুহাম্মদ কুরবান আলী রচিতও সম্পাদিত পঞ্চম শ্রেণীর ‘ইসলামও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ইসলামের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ইসলাম এতো উদার যে, মহানবি (সা.) ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ধর্মযাজকদেরমদিনা মসজিদে এবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।’ ইসলাম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা ইতিহাসের বিকৃতি ও মিথ্যাচার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ড. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, প্রকৃত ইতিহাস হলো রাসুলের (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল মদিনা মসজিদ। এই মসজিদ কমপ্লেক্সের কামরায় (পাশের কোনোকক্ষ) রাসুল (সা.) রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা করতেন। সমস্যার সমাধান দিতেন। সেখানে অমুসলিমরাও আসতেন। রাসুল (সা.) তাদের সেই সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ‘মহানবি (সা.) ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের মদিনা মসজিদে এবাদতকরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন’—ইতিহাসে এমন কোন তথ্য বা নজির পাওয়া যায় না। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান মিয়াজীবলেন, ‘মহানবি (সা.) ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের মদিনা মসজিদে ইবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন’ পাঠ্যবইয়ের লেখকরা এ তথ্য কোথায় পেলেন আমার জানা নেই।কোরআন, হাদিস ও ইতিহাসে আমরা এমন তথ্য পাই না। কোনো গোষ্ঠীর নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য এ অসত্য ইহিতাস তুলে ধরা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।নবম-দশম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃত করার ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। ওই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের ৮৭ থেকে ১১০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ইবাদত সম্পর্কিত আলোচনায় ১০৭ পৃষ্ঠা থেকে একটি পাঠ্য ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ রয়েছে। সেখানে রেফারেন্স হিসেবে সুরা আন-ফালের৩৯নং আয়াতের অর্থ বিকৃত করা হয়েছে। ওই আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে ‘তোমরা (ইসলাম ও মানবতাবিরোধী শত্রুর বিরদ্ধে) লড়াই করবে। যতক্ষণ না ফিতনা ফ্যাসাদ ও অশান্তি চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।’
কোরআন বিশেষজ্ঞদের মতে, বইয়ের লেখকরা ওই আয়াতের বিকৃত অর্থ করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বহুল পঠিত মারেফুল কোরআনে এ আয়াতের সঠিক অনুবাদ—‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষণ না ফেতনাদূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’
এই অর্থ বিকৃতি ছাড়াও ১০৬, ১০৭ ও ১০৮ পৃষ্ঠায় ‘জিহাদ’ ও ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ বিষয়ে যে পাঠ দেয়া হয়েছে তাতে সুকৌশলে জিহাদের সঠিক যথাযথ ব্যাখ্যা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আগের ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ে জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা, কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্স বাদ দেয়া হয়েছে। আগের পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত সুরা নিসার ৭৬ নম্বর আয়াত, সুরা বাকারার ১৫৪ নম্বর আয়াত, সুরা তাওবার ৭৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জিহাদের স্পষ্ট ধারণা পেত। কিন্তু বর্তমান বইয়ে জিহাদ বিষয়ে আগের আয়াত বাদ দিয়ে সুরা হাজ্জের ৭৮, সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াত ও কয়েকটি হাদিস দেয়া হয়েছে। এসব আয়াত ও হাদিস জিহাদ সম্পর্কিত হলেও তা থেকে জিহাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট আলেমরা।
মুহাম্মদ আবদুল মালেক, ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ ও ড. মোহাম্মদ ইউছুফ রচিত ওই বইয়ে এমনবিকৃত অর্থ ও জিহাদের সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বইটি সম্পাদনা করেছেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক হয়ে সম্পাদনা করেছেন ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বই ।
মারেফুল কোরআনের অনুবাদক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরী এ বিষয়ে বলেছেন, পবিত্র কোরআনের আয়াতের এ ধরনের অর্থ বিকৃত করা মানে ইহুদি চরিত্রের অনুশীলন।মারেফুল কোরআনের অনুবাদক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরী এ বিষয়ে বলেছেন, পবিত্র কোরআনের আয়াতের এ ধরনের অর্থ বিকৃত করা মানে ইহুদি চরিত্রের অনুশীলন। অতীতে ইহুদিরা তাওরাতের অর্থ বিকৃত করেছে। কিন্তু পবিত্র কোরআনের মূল আয়াত যেহেতু বিকৃত করা সম্ভব নয়, তাই এর অর্থ বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।
পাঠ্যবইয়ে ইসলাম অবমাননা বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতিমুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের দুশমন। সরকার যে শিক্ষানীতি করেছে এর উদ্দেশ্যে হলো ইসলামকে নির্মূল ও বিকৃত করা। পাঠ্যবইয়ে ইসলাম অবমাননা করে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে আকবরের দ্বীন-ই-এলাহীর মতো ধর্ম প্রচার করে সুকৌশলে ধর্মহীন, নাস্তিক ও আল্লাহদ্রোহী বানাতে চাচ্ছে সরকার। শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সেলিমভুঁইয়া বলেন, যারা আমাদের মহান ইসলাম ধর্মের অবমাননা, কোরআনের বিকৃতি ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান বলেন, নতুন সব পাঠ্যপুস্তকই পরীক্ষামূলক সংস্করণ। তাতে ভুল-ত্রুটি সংশোধনে আমাদের কমিটি কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ভুলত্রুটি খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে কমিটি কাজ শুরু করছেন। আগামী বছর এই সংশোধনী করা হবে। তারপরও যদি জরুরি কোনো বিষয়ে সংশোধনের প্রয়োজন হয়, সে ব্যবস্থাও মন্ত্রণালয় নেবে।http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/03/31/194535#.UVkf6ptkqY1
বিষয়: বিবিধ
১৫১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন