এই ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের বা আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইবুনালের বিচারক ছিলেন কারা তা একবার দেখে নেয়া যাক।

লিখেছেন লিখেছেন ববি_জি ৩১ জুলাই, ২০১৩, ০১:৫৬:০১ রাত

জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে যে ট্রাইবুনাল গঠন করেছে তা কোন ভাবেই আর্ন্তজাতীক মান সম্পন্ন নয়।

কিন্তু সরকার ও শাহরীয়ার কবিররা বলছে এটি আর্ন্তজাতীক মান সম্পন্ন এবং এক্ষেত্রে তারা ন্যুরেমবার্গের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এর উদাহরন দিচ্ছে। কিন্তু ন্যুরেমবার্গের বিচারকদের লিষ্ট দেখলেই বুঝা যায় আওমীলীগ সরকার দেশের মানুষ কে কি পরিমান ধোকা দিচ্ছে।

[b]এই ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের বা আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইবুনালের বিচারক ছিলেন কারা তা একবার দেখে নেয়া যাক। [/b]

কারা ছিলেন বিচারক

এই ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের বা আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইবুনালের বিচারক ছিলেন কারা তা একবার দেখে নেয়া যাক।

১ কর্নেল স্যার জিওফ্রে লরেন্সঃ বুটিশঃ ট্রাইবুনালের প্রেসিডেন্ট



২ স্যার নরমান বারকেটঃ বৃটিশঃ বিকল্প বিচারক।

৩ মেজর জেনারেল আইয়োনা নিকিচেন্কো। রাশিয়ান বিচারক রাশান সুপ্রীম কোর্টের জাজ ছিলেন।

৪ লেঃ কর্নেল আলেকচান্ডার ভলচকভঃ রাশিয়ার বিচারক।

৫ ফ্রান্সিস বীডলঃ মার্কিন বিচারক।

৬ জন জে পারকার‍ঃ মার্নিক বিকল্প বিচারক।

৭ প্রফেসর হেনরি ডনেদ্যু দ্যা ভাব্রেঃ ফরাসী বিচারক।

৮ রর্বাট ফাকোঃ ফরাসী বিকল্প বিচারক।

আমেরিকান ২ জন, বৃটিশ দুজন, রাশান দুজন ও দুজন ফ্রেন্চ বিচারক।

প্রসিকিউশন আসামীদের অপরাধগুলোকে ৪ টি ভাগে বা কাউন্টে ভাগ করেন:

১ নং কাউন্ট: আক্রমনাত্মক যুদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করা। প্রসিকিউশনের কাজ করা যুক্তরাস্ট্রের দায়িত্ব।

২ নং কাউন্ট: শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ। যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব।

৩ নং কাউন্ট: যুদ্ধাপরাধ: রাশিয়া ও ফ্রান্সের দায়িত্ব।

৪ নং কাউন্ট: মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। রাশিয়া ও ফ্রান্সের দায়িত্ব।

বিচারের জন্য অভিযুক্ত মোট ২৩ জন আসামীকে ন্যুরেমবার্গে আনা হয়।

বিচার শুরুর আগেই এক আসামী জার্মান শিল্পপতি গুস্তাভ ক্রুপ ফন বোহলেন আসামী হলেও তার বিচারই করা হয়নি তিনি অতি বৃদ্ধ ছিলেন বলে। তখন তার বয়স ৭৭।

আরেকজন আসামী রবার্ট লে ন্যুরেমবার্গেই ফাসীতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

অস্ত্র কারখানার মালিক গুস্তাভ ক্রুপ আর তার স্ত্রী

আত্মহত্যা করে বেচে যাওয়া আসামী রবার্ট লেম্যান।

বাকি রইল ২১ জন। এই ২১ জনের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে।

চলুন দেখি কারা কারা আসামী ছিলেন আর তাদের কার ভাগ্যে কি রায় জুটেছিল।



১. এডমিরাল কার্ল ডয়েনিৎয।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মান নেভীর সর্বাধিনায়ক । হিটলারের পর তারই ফুয়েরার হওয়ার কথা ছিল্ । এডলফ হিটলার ফুয়েরার বাংকারে আত্মহত্যা করার পর জার্মানীর প্রেসিডেন্ট হন। বার্লিনে রাশিয়ার কাছে জার্মান বাহিনীর আত্মসমর্পনের কাজটা তিনি সারেন। অসাধারন দক্ষ আর খ্যাতিমান অফিসার ছিলেন। বিচারের সময় তার মন্তব্য ছিল

'রাজনীতিবিদরা নাৎসীদের ক্ষমতায় এনেছে আবার যুদ্ধ শুরু করেছে। তারাই জঘন্য সব অপরাধ করেছে আর এখন তাদের সাথে আমাদের ঐ একই ডকে দাঁড়াতে হচ্ছে, দোষের ভাগীদার হতে হচ্ছে'!

গ্রেফতার হলেন যুদ্ধের সময়কার জার্মান নেভী চীফ এডমিরাল কার্ল ডয়েনিৎয।

বিচারে তার ১০ বছর জেল হয় যা তিনি জার্মানীর স্পান্ডাউ কারাগারে কাটান। ১৯৮০ সালে তিনি জার্মানীতেই মারা যান।

২. মার্টিন বোরম্যান।

নাজী পার্টির চ্যান্সেলারী, হিটলারের প্রাইভেট সেক্রেটারী, যুদ্ধের শেষদিকে তিনিই হয়ে উঠেন জারর্মানীর সেকেন্ড ম্যান, হিটলারের পরই । হিটলারের আত্মহত্যার সময় তিনি ফুয়েরার বাংকারেই ছিলেন, হিটলার মারা গেলে তিনি পালান। তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি।

তার অপরাধ ছিল পোল্যান্ডে লক্ষ লক্ষ ইহুদীদের বিতারিত করা, ইউক্রেনের মহিলাদের উপর অত্যাচার করা।

তার অবর্তমানেই তার বিচার করা হয় আর তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

তবে তিনি না থাকাতে সেটা কার্যকর হয়নি।

৩. হ্যানস ফ্রান্ক।

ছবিতে আদালতে বসা হ্যানস ফ্র্যাংক, পেছনে মিলিটারী পুলিশ দাড়ানো।তিনি ছিলেন নাজী সদস্য, আইনমন্ত্রী আর ১৯৩৯ থেকে পোল্যান্ড দখলের পর সেটার হিটলার নিযুক্ত গভর্ণর।

পোল্যান্ডে ইহুদীদের বিতারন, ক্যাম্প সৃস্টি, তাদের দাস হিসেবে ব্যাবহার করা এসবই ছিল তার অপরাধ।

প্রথম দিকে অপরাধ অস্বীকার করলেও পরে হিটলারের কাধে দোষ চাপিয়ে বাচার চেষ্টা করেন, রায়ে তার মৃত্যুদন্ড হয়।

১৬ই অক্টোবর ১৯৪৬ জার্মানীর স্পান্ডাউ কারাগারে ফাসীতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

৪. উইলহেম ফ্রীক

১৯৩৩- ১৯৪৩ পর্যন্ত নাজী জার্মানীর ইন্টেরিয়র মিনিষ্টার ছিলেন। গোয়েরিংএর সাথে ইহুদীদের ধনসম্পদ সরকারীকরনের কাজ করতেন।

বিচারে তার মৃত্যুদন্ড হয়।

১৬ ইঅক্টোবর ১৯৪৬ তারিখে ন্যুরেমবার্গে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকন করা হয়।

৫. হ্যানস ফিৎযে

এই ভদ্রলোকটি হিটলারের প্রচার কাজ করতেন, রেডিওতে বা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। না তখন টিভি ছিলনা।

সৌভাগ্যবশত নাজীদের প্রচার কাজটি বিখ্যাত মিথ্যেবাদী গোয়েবলস একাই নিয়ন্ত্রন করতেন আর তার নির্দেশ ছাড়া ঐ কাজে কেউ নাকই গলাতে পারতনা।

আদালত হ্যানসের কতৃত্ব আর ক্ষমতা বিবেচনা করে 'তার কিছু করার ছিলনা' দেখে

তাকে বেকসুর খালাশ দেন। পরে অবশ্য জার্মানরা তাকে আবার গ্রেফতার করে জেল দেয়। অল্প বয়সেই মারা যান।

৬. ওয়ালথার ফাংক

জার্মান নাজীদের ইকনমিকস মিনিষ্টার। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দী ইহুদীদের ধনসম্পদ এনে সরকারী তহবিলে জমা করতেন, মৃত ইহুদিদের দাত পর্যন্ত এনে জমা করতেন। অবশ্য মানুষ মেরেছেন এমনটা প্রমান পাওয়া যায়নি তার বিরুদ্ধে।

নুরেমবার্গের আন্তর্জাতিক মিলিটারী ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন।

১৯৫৭ সালে ভগ্ন স্বাস্হ্যের জন্য জেল থেকে মুক্তি পান আর

১৯৫৯ সালে মারা যান।

৭. ফিল্ড মার্শাল হারম্যান গোয়েরিং

নীচে আসামীদের ডকে অন্য সবার সাথে সবার ডানে আকাশী রংএর স্যুট পড়া ফিল্ড মার্শাল গোয়েরিং

তার আইকিউ ছিল ১৩৮ ফিল্ড মার্শাল হারম্যা গোয়েরিয় ছিলেন জার্মান বিমান বাহিনীর প্রধান। ছিলেন রাইখ মার্শাল আর রাইখ ষ্টাডের অর্থ্যাৎ পার্লমেন্টের প্রেসিডেন্ট। নাজিদের ৪ বছরের পরিকল্পনার তিনি ছিলেন পরিচালক।

ইহুদীদের সমস্ত ব্যাবসা দখল করা, রাজনৈতিক ভাবে তাদের পংগু করে দেয়া বা উৎখাত করা ছিল তার কাজ।

বিমান আক্রমন পরিকল্পনা তো ছিলই।

রায়ে তার মৃত্যুদন্ড হয়।

কিন্তু ফাসীতে ঝুলে মরে যাওয়া তার কাছে অপমানজনক মনে হয়েছে। তাই ফাসীর আগের দিন রাতে গোপনে তার কাছে পাচার করা সায়ানাইড পীল খেয়ে

তিনি আত্মহত্যা করেন।

এদের সাথে সাঈদী, নিজামী বা গোলাম আজমের সাথে কোথায় মিল সচেতন সমাজ একবার ভেবে দেখুন।

বিষয়: বিবিধ

১৯৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File