শাহবাগের অবুঝ তরুনরা বড় ভূলটা করে ফেললো তখনই, যখন তারা কয়েক কদম এগিয়ে দাবী করে বসলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ....
লিখেছেন লিখেছেন ববি_জি ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৫৯:০১ বিকাল
আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় বন্ধুরা শাহবাগ আন্দোলনের যে দাবি তা ছিল মূলতঃ ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার। সেই দাবি জানানোর সময় ছিল ১৯৭২ সালে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদায় করে নেয়া উচিৎ ছিল যুদ্ধের পরপরই। সেই সময়ের সরকারের দায়িত্ব ছিল দাবিগুলোকে বাস্তবায়ন করা। কারণ সেই দাবি বাস্তবায়নের সবচেয়ে আদর্শ সময় ও পরিপ্রেক্ষিত তখনই ছিল। কারণ তার আগে একটা ৭১ ছিল। মানুষের চিন্তা চেতনা সসস্ত্র ছিল। দাবি আদায় করে নেয়র মত লড়াকু পরিস্থিতি ছিল। আওয়ামীলীগ তা করেনি, তংকালীন রাস্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানও তা চায়নি। সর্বোপরি পরের কোন সরকারও এর প্রয়োজন বোধ করেনি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে যারা দাবী করে, তারা এর সমাধানের চাইতে এই সমস্যা জিইয়ে রাখাটাই তাদের জন্য লাভজনক মনে করেছে। বছরের পর বছর এ দাবি নিয়ে রাজনীতি করেছে। ক্ষমতায় এসেছে। ৪৩ বছর পর ৭২ সালে যে দাবি আদায় করে নেয়ার কথা সে একই দাবি করা কতটুকু বাস্তবমুখি কিংবা তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা আজ প্রশ্নের সম্মুখিন। ২০১৩র দাবি আসলে যে ৭২এর দাবি নয়, এর যে একটি নতুন প্রেক্ষিত আছে তা আন্দোলনের কিছুদিন পার হতেই জনগন বুঝে গেছে। ৭১এর চেতনার আভাস থাকলেও শাহবাগে সেই চোয়াল শক্ত করা দৃঢ়তা বেশিদিন টিকে থাকে নাই। উৎসব শেষ হতেই মানুষ নিজ নিজ কাজে ফিরে গেছে। শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। সেই দৃঢ়তা নেই বলেই এটাযে সরকারী আন্দোলন বুঝে যারা সরে পড়েছিলেন তারা আর আসছেন না।
এদিকে শাহবাগের অবুঝ তরুনরা বড় ভূলটা করে ফেললো তখনই, যখন তারা কয়েক কদম এগিয়ে দাবী করে বসলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ, ইসলাম ও মুসলমানদের বিশ্বাস সম্পর্কিত কিছু বিষয় এর বিরুদ্ধাচারণ ও তার উৎখাত চেয়ে। যদিও বা তা ছিল তাদের অদৃশ্য প্রভূদের মূল পরিকল্পনা। অদৃশ্যে সরকার এবং সরকার পন্থী কিছু মহল যে এর প্রধান উদ্দোগক্তা ও পৃষ্টপোষক, তা আওয়ামীলীগ একেবারেই স্বীকার করছেনা। তবে এখানে এ বিষয়টিও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে শাহবাগ মঞ্চের নেতৃত্ব দানকারী সকলেই নাস্তিক, ধর্মনীরেপেক্ষতাবাদী বা কমিউনিষ্ট ভাব ধারায় বিশ্বাসী। তাদের অনেকেই এই ভাবধারার সংগঠনের গুলোর নেতৃত্বে ছিল বা আছে। অদৃশ্য মহলটি শাহবাগের সফলতাকে পুজি করে, একের পর এক দাবী আর কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে গেল। কথিত দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ‘জাতির পিতা’ রাজাকার বংশোদ্ভূত ইমরান সরকার আন্দোলনের একপর্যায়ে স্পিকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে ছয় দফা দাবিনামা পেশ করে, তার তিন নম্বরে পরিষ্কারভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের কথা বলা হয়। সাথে সাথে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠলো গোটা দেশ। রাজপথে নেমে আসলো রাজনীতি বিমুখ আলেম ও তৌহিদী জনতা। যদিও লড়াইটা সকল ইসলাম পন্থীদের বা তাদের দলের বিপক্ষে ছিল না, ছিল বাংলাদেশের প্রধান ইসলামী দল জামাতের বিরুদ্ধে। যা হবার তাই হলো, দেশে এগিয়ে গেল সংঘাতময় পরিস্তিতির দিকে। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এই চক্রান্তকে রুখে দিতে এগিয়ে আসলো আল্লাম শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম। ঘোষিত হল লংমার্চ আর সে ঘোষনায় সাড়া দিয়ে সমগ্র দেশ থেকে ঢাকার পথে এগিয়ে আসলো লাখো জনতা। এবার সরকার পড়লো বেকায়দায়। শুরু হয়ে গেল মিথ্যা প্রচারনা, মিডিয়া গুলো আদা জল হয়ে নামলো হেফাজতে ইসলামির সাথে জামাত শিবিরকে এক করতে এবং তাদের জঙ্গী মৌলবাদী ও রাজাকার প্রমানের ব্যার্থ প্রচেষ্ঠায়। লংমার্চকে প্রতিহত করার জন্য তাদের অনুগত বিভিন্ন সংগঠন দিয়ে ডাকা হল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে হস্যকর কর্মসূচি জুমা ও ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে হরতাল তাও আবার রাতে। শাহবাগ থেকে ঘোষনা করা হল সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথ আবরোধ কর্মসূচি। হেফাজতে ইসলাম সহ তৌহিদী জনতার ভাড়া করা সব যানবাহন ছিনিয়ে নেওয়া হল মালিক সমিতির দোহাই দিয়ে। বন্ধ করে দেওয়া হল নির্ধারিত সকল ট্রেন, ফেরি ও লঞ্চ। তৈরী করা হল প্রকাশ্যে গোপনে নানা প্রতিবন্ধকতা। তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ভেবেছিল হরতাল আবরোধ করে ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে আলেম ওলামা সহ ধর্মপ্রান তৌহিদী জনতার বিক্ষুব্ধ জনশ্রোতকে। হলোনা শেষ রক্ষা। শাহবাগ, ঘাদক দালাল নির্মুল কমিটি সহ আওমীলীগ ছাএলীগের ও পুলিশের সকল বাধা বিপত্তির বাধঁ ভেঙ্গে পায়ে হেটে, খেয়ে না খেয়ে রাতের গভীরে ভ্যান-ট্রাক ছোট বড় যে যেই বাহন পেয়েছে তাই নিয়ে ছুটে আসলো শাপলা চত্বরে। লাখো জনতার নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনীতে প্রকম্পিত হল ঢাকার রাজপথ অলি-গলি। অবস্থা ভাল নয় দেখে সরকার আগের দিন থেকে নমনীয় হয়ে তাদের প্রতি দ্বিমুখি আচরন শুরু করল। মতিঝিলে সমাবেশের অনুমতি দিলেও দেশ জুড়ে চলল বাধা। হলো না আওয়ামীলীগ সরকারের শেষ রক্ষা, ৬এপ্রিলের লংমার্চ ও ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমাবেশ দেশে দেশের মানুষ আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে যে, শাহবাগ সমগ্র বাংলাদেশের জনগন বা তরুন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। শাহবাগই দেশের একমাত্র মঞ্চ নয়, নয় দেশের আপামর জনতার আবেগ-অনভুতি বা চিন্তা ও আকাংখার প্রতিফলন। শাহবাগ যা চায় তা শুধু ঢাকা সহ দেশের কয়েকটি শহুরে ধর্মীয় ও নৈতিকতা বিমুখ সেক্যুলার এলিট শ্রেণীর, অতি উৎসাহী রাজনৈতিক ও ফ্যাসিবাদী চিন্তা প্রসূত প্রচার প্রপাগান্ডা মাত্র। যুদ্ধাপরাধের ধূয়া তুলে ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তিকে উৎখাত করে ধর্মহীন কমিউনিষ্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, পার্শবর্তী একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গোলামীর শেকলে আবদ্ধ করা।
একদিকে শাহবাগ আন্দোলনের ব্যার্থতা, অন্যদিকে লাখো জনতার লংমার্চ এবং আগামী নির্বাচন কে সামনে রেখে দেখা যাক আওয়ামীলীগ সরকার, তাদের দোষর কমিউনিষ্ট ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহযোগীতায় নতুন কোন রাজনৈতিক খেলা শুরু করে।
কিন্তু টানেলের শেষ প্রান্তে এখনো একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে, আর তা হলো আওয়ামীলীগ বা তাদের দোষরদের এই রাজনৈতিক খেলাকে বন্ধ করতে দেশের আপামর জনতার রাজপথে নেমে আসা এবং দেশ রক্ষার এ আন্দোলনে তরুন-যুবকদের অগ্রগামী হওয়া। আমার বিশ্বাস, নাস্তিক নয় বিশ্বাসী তরুন-যুবকরাই পারবে প্রিয় বাংলাদেশকে এই বির্পযয় থেকে বাচাঁতে, ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন