বিবিসি'র বেঈমনী এবং আমরা।

লিখেছেন লিখেছেন মানিক ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১১:১৭:৪৮ রাত

আমি দীর্ঘ দিন থেকে বিবিসি’র একজন গুণমুগ্ধ শ্রোতা। বাংলার আপামর জনসাধারণ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সঙ্কট ও ক্রান্তিকালে এবং শান্তিতে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শুনে আসছে। আমি তখন ছোট, ইরাক যুদ্ধ শুরু হলে আমার বাবা বেশ বড় সড় একটা টু-ইন-ওয়ান কিনে আনলেন বিবিসি’র খবর শুনবার জন্য। সকাল বেলায় দোয়েলের ডাকের সাথে মিশেল খাওয়া বিবিসি বাংলার বিখ্যাত সূচনা সঙ্গিতের সুরে আমাদের ঘুম ভাংত। আসপাশ থেকে আব্বার বন্ধু বান্ধব আর প্রতিবেশীরা আমাদের বাসায় আসতেন পরিষ্কার শব্দে বিবিসি বাংলার খবর শুনবার জন্য সাথে চলত মায়ের হাতের গরম নাস্তা আর চা। পাড়া মহল্লার মুদি দোকানে আর চায়ের স্টলে দেখা যেত উৎসুক মানুষ ভিড় করে বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান শুনছে। তখন বাংলাদেশ বেতার ছিল, ছিল বিটিভি। তার পরও বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠানের প্রতি মানুষের আগ্রহের মূল কারণ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠতা। তখনকার সময়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে সরকার বাহাদুর তার মর্জি মাফিক সাজিয়ে গুছিয়ে সবকিছু প্রকাশ করত। ভেবে নিত মানুষ তার প্রচারণার সব কিছুই বিশ্বাস করে নিয়েছে এবং সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। তখন মানুষ ভিন্নমত জানতে এবং প্রকৃত সত্য জানবার বাসনায় বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার দ্বারস্থ হতো। গণমানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় প্রতিটি সংকটে এবং ক্রান্তিকালে তাই বিবিসি বাংলার ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। সেই গৌরবময় অতীত ঐতিহ্য থেকে সরে এসে বিবিসি বাংলা দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন ভাবে দেশের মুক্তিকামী গণমানুষের বিরুদ্ধে শাহাবাগীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গত ২৩ মার্চ মতিঝিলে আওয়ামী মদদপুষ্ট শাহাবাগী মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদের বিগ বাজেটের ফ্লপ মহাসমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতির সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রচার করা তার প্রকিষ্ট উদাহরণ।

তাদের সাম্প্রতিক অবস্থানের মাধ্যমে বিবিসি বাংলা অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষে না দাঁড়িয়ে অবস্থান নিয়েছে শোষকের পক্ষে। মানবাধীকারের পক্ষে অবস্থান না করে সমর্থন করছে নির্বচার গণহত্যা। উৎসাহিত করছে বিচারিক ও বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড। সমর্থন করছে মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস। সমর্থন করছে সীমাহীন দুর্নীতি আর অপশাসন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সৈর শাসকের স্বেচ্ছাচার।

গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধীকারের বিপক্ষে দাড়িয়ে বিবিসি বাংলা আমাদের মতো কোটি কোটি গুনমুগ্ধ শ্রোতার ভালোবাসার সাথে অবিচার করছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা তো আর শর্ট ওয়েভ আর টু-ইন-ওয়নের যুগে বসে নেই। এখন আমাদের সাথে ঢালাও অবিচার করা অতোটা সহজ হবে বলে আমার মনে হয় না। বস্তুনিষ্ঠতা আর সততাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের ভালবাসার সাথে বেঈমানী করে আমাদেরকে ছ্যকা দিতে গেলে নিজেরাই ছ্যকা খেয়ে যেতে পারেন। দয়া করে শাহাবাগী গণমাধ্যম বিষয়টা মাথায় রাখবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File