ইতিবাচক শাহাবাগ এবং দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ
লিখেছেন লিখেছেন মানিক ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫০:৫৪ রাত
শাহাবাগ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে, এ আন্দোলন আমাদের দেশের বিদ্যমান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন রেখাকে সুস্পষ্ট করে তুলেছে। একদিকে আছে মুরতাদ-নাস্তিক ইসলাম বিদ্যেশী তথাকথিত প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়ীক সুশিল সমাজ। বর্তমানে যারা শাহাবাগী নামে বিশেষভাবে পরিচয় লাভ করেছেন। তারা এতোদিন লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্লগার, গবেষক, আইনজ্ঞ, বিচারক, সাংস্কৃতিক কর্মী, গায়ক, বুদ্ধিজীবী, রাজনিতীবিদ ইত্যাদি বিভিন্ন উজ্জ্বল পরিচয়ের মুখোশের আড়ালে তাদের ইসলাম বিদ্যেশী প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদেরকে সহজে চিনে নেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এখন মহান শাহাবাগ চত্ত্বরে খোলস ছেড়ে তারা স্বরূপে আবির্ভুত হয়েছেন। একটি অভিন্ন পরিচয়ে সাধারণ মানুষ আজ সহজেই তাদেরকে চিনতে সক্ষম হচ্ছেন। আর সে পরিচয়টি হচ্ছে ‘শাহাবাগী’। বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধীদের এই যথার্থ চমৎকার ব্রান্ডিংটা শাহাবাগ আন্দোলনের অন্যতম ইতিবাচক দিক।
এটি এখন সকলের কাছেই পরিষ্কার যে, আমাদের প্রতিবেশী প্রভাবশালী রাষ্ট্রর প্রত্যক্ষ মদদে ও সহায়তায় শাহাবাগ আন্দোলন চালু করা হয়েছিল। শুধুমাত্র বিরোধী জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবী বা আওয়ামী সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-অপসাশন থেকে জনসাধারণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে দেবার জন্যেই নয় বরং বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে সংঘাতময় একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়াও ছিল শাহাবাগ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। শাহাবাগী নাস্তিক-ব্লগারদের ভয়াবহ ইসলাম বিরোধীতা, শাহাবাগীদের মাত্রাতিরিক্ত সরকারী আনুকুল্য প্রাপ্তি, শাহাবাগীদের পক্ষে দেশে বিদেশে নজিরবিহীন মিডিয়া কাভারেজ সব কিছুই অভিন্ন যোগসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী সকল মত পথ শাহাবাগের মোড়ে একাকার হয়ে মিশে গেছে। তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসলামের বিরুদ্ধে, তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশে স্বাধীন সার্বভৌম অস্তিত্বর বিরুদ্ধে। শাহাবাগীরা সংগঠিত এবং সংহত। তারা তাদের কুট শক্তির সবটুকু ব্যবহার করে চলেছে সর্বোচ্চ দক্ষতায়।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সর্বশক্তি নিয়োগ করে বহুমুখী আক্রমনের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে ভারত আর কমিউনিস্ট সমর্থিত শেখ হাসিনার সেকুলার সরকার। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর আঘাত করায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বর্তমান সরকার। দেশের প্রধান ইসলামী দলের শীর্ষ নেতাদের পাতানো মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গণহত্যা, গণমামলা, গণগ্রেফতার আর একটি বৈধ গণতান্ত্রীক দলের উপর সীমাহীন দলন পীড়নে কথা না হয় বাদই দিলাম। সংবিধান কাটাছেঁড়া করে মহান আল্লাহর উপর থেকে আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়া। দেশে বিশ্বমানের ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা পাঠ্য বই-এ ঈমান আকিদার উপর আঘাত। অভিন্ন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে অদৃশ্য শক্তির মদদে ব্লগে আর নেটে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের(সঃ) বিরুদ্ধে কুৎসিত কুৎসা রটনা! তার পর ফাঁসির দাবীর ছুতায় ডুগি-তবলা, সরকারী রসদ আর মদদে নাস্তিক-মুরতাদ-ব্লগারদেরকে রাষ্ট্রীয় পাহারায় বসিয়ে দেয়া হয়েছে রাজধানীর প্রানকেন্দ্র শাহাবাগে। দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদে ইমাম আর মুসল্লিদেরকে রাখা নজরদারীর মদ্ধ্যে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে তালা । বসানো হয়েছে কড়া পুলিশী প্রহরা, গোয়েন্দা নজরদারী। ন্যাক্কার জনক ভাবে দলীয় ক্যডারদেরকে মুসল্লি সাজিয়ে পাঠানো হচ্ছে মসজিদ্গুলি দখলে রাখবার জন্য। ঘরে বাইরে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ বাংলাদেশের মুসলমান ও ইসলাম।
শাহাবাগের রঙ্গীন ফানুস তৌহিদী জনতার চাপে আপাত ঠুস হয়ে আসলেও শাহাবাগীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন এবং তাদের স্বপ্নের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এটা ভাববার কোন কারণ নেই। ষড়যন্ত্র আর কুট চালে পটু শাহাবাগীরা সাধের শাহাবাগ ছেড়ে আবার মুখোশ পরে মিশে যেতে শুরু করেছে জনতার কাতারে। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তারা দ্রুতই বদলে নিচ্ছে তাদের রণ কৌশল।
সময়ের সাহসী সন্তান দৈনিক আমারদেশের সুযোগ্য সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে শাহাবাগী নাস্তিক- মুরতাদ চক্রের স্বরূপ জাতীর সামনে উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সত্যজিত রায়ের সেই বিখ্যাত সংলাপ বার বার আমার মস্তিস্কে টোকা মারে, “দড়ি ধরে মার টান, রাজা হবে খান খান”। শাহাবাগে নাস্তিক-মুরতাদ চক্রের যে চমৎকার ব্রান্ডিং হয়েছে, তাদের পারস্পরিক যোগসূত্রের যে মূল্যবান দড়ি তৌহিদী জনাতার হাতে এসেছে তা ধরে এইবার হ্যাচকা টান মেরে ওদেরকে বাংলার জমিনে খান খান করে ফেলতে হবে। কান টানলে মাথা আসে। শাহাবাগীদের কান এখন বাংলার তৌহিদী জনতার হাতে। কোন অবস্থাতেই তা হাত ছাড়া করা চলবে না। কোন মতে একটু ঢিলা পেলেই কানটা ছাড়িয়ে নেবে ওরা, লুকিয়ে ফেলবে বাবরী চুলের আড়ালে। অতীতে বহুবার ওরা হাতের নাগাল থেকে ফসকে গেছে। হাতে গোনা গুটি কয়েক নাস্তিক-মুরতাদ খেলা করেছে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে। এখন দেখা যাক এইবার কী ঘটে।
বিষয়: রাজনীতি
১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন