একজন কিশোরের মাধ্যমে মুনাফিকদের মুখোস উন্মেচিত হলো

লিখেছেন লিখেছেন অজানা পথিক ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫৯:০২ দুপুর

একবার একটি গোপন বৈঠকে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে তার সাঙ্গপাঙ্গরা বললো-

"এতদিন আমরা তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি প্রতিরোধও করে আসছিলে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তুমি আমাদের বিরুদ্ধে এসব কাঙাল ও নিঃস্বদের সাহায্যকারী হয়ে গিয়েছো।"


এমন অভিযোগ শুনে সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ভীষনভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সে বলতে শুরু করলঃ
এসব তোমাদের নিজেদেরই কাজের ফল। তোমরা এসব লোককে নিজের দেশে আশ্রয় দিয়েছো, নিজেদের অর্থ-সম্পদ তাদের বন্টন করে দিয়েছো। এখন তারা ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং আমাদেরই প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এবং মুহাম্মাদের (সা.) (সঙ্গীসাথীদের) অবস্থা বুঝাতে একটি উপমা হুবহু প্রযোজ্য। উপমাটি হলো, তুমি নিজের কুকুরকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা তাজা করো, যাতে তা একদিন তোমাকেই ছিঁড়ে ফেড়ে খেতে পারে। তোমরা যদি তাদের থেকে সাহায্যের হাত গুটিয়ে নাও তাহলে তারা কোথায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আল্লাহর শপথ, মদীনা ফিরে গিয়ে আমাদের মধ্যে যারা মর্যাদাবান লোক তারা হীন ও লাঞ্ছিত লোকদের বের করে দেবে। “


গোপন এ বৈঠকে ঘটনাক্রমে কিশোর বালক হযরত যায়েদ ইবনে আরকমাও উপস্থিত ছিলেন। এসব কথা শোনার পর তিনি তাঁর চাচার কাছে তা বলে দেন। তাঁর চাচা ছিলেন আনসারদের একজন নেতা। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে সব বলে দেন। নবী (সা.) যায়েদকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি যা শুনেছিলেন আদ্যপান্ত খুলে বললেন।

নবী (সা.) বললেনঃ
তুমি বোধ হয় ইবনে উবাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। সম্ভবত তোমার শুনতে ভুল হয়েছে। ইবনে উবাই একথা বলছে বলে হয়তো তোমার সন্দেহ হয়েছে। কিন্তু যায়েদ বললেন, হে আল্লাহর রসূল, তা নয়। আল্লাহর শপথ আমি নিজে তাকে এসব কথা বলতে শুনেছি।


অতপর নবী (সা.) ইবনে উবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে সরাসরি অস্বীকার করলো। সে বারবারের শপথ করে বলতে লাগলো আমি একথা কখনো বলি নাই। আনসারদের লোকজনও বললেনঃ
হে আল্লাহর নবী, এতো একজন ছেলে মানুষের কথা, হয়তো তার ভুল হয়েছে।


বিভিন্ন গোত্রের প্রবীণ ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরাও যায়েদকে তিরস্কার করলো। বেচারা যায়েদ এতে দুঃখিত ও মনঃক্ষুণ্ন হয়ে নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকলেন। কিন্তু নবী (সা.) যায়দে ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাই উভয়কেই জানতেন। তাই প্রকৃত ব্যাপার কি তা তিনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পারলেন।

তখনি বালক যায়েদের বক্তব্যের সমর্থনে আল্লাহর ঘোষনা অসলো

[q]

يَقُوۡلُوۡنَ لَٮِٕنۡ رَّجَعۡنَاۤ اِلَى الۡمَدِيۡنَةِ لَيُخۡرِجَنَّ الۡاَعَزُّ مِنۡهَا الۡاَذَلَّ‌ؕ وَلِلّٰهِ الۡعِزَّةُ وَلِرَسُوۡلِهٖ وَلِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَلٰكِنَّ الۡمُنٰفِقِيۡنَ لَا يَعۡلَمُوۡنَ


অর্থাৎ- এরা বলে, আমরা মদীনায় ফিরে যেতে পারলে যে সম্মানিত সে হীন ও নীচদেরকে সেখান থেকে বের করে দেবে।১৫ অথচ সম্মান ও মর্যাদা তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের জন্য। ১৬ কিন্তু এসব মুনাফিক তা জানে না। ( মানাফিকুন-০৮)[/q]

আয়াত নাজিলের পর বালক যায়েদ বললেন-

আমি যখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের এ কথা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম এবং সে এসে শপথ করে পরিষ্কার ভাষায় তা অস্বীকার করলো তখন আনসারদের প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ লোকজন এবং আমার আপন চাচা আমাকে অনেক তিরস্কার করলেন। এমনকি আমার মনে হলো নবীও ﷺ আমাকে মিথ্যাবাদী এবং আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে সত্যবাদী মনে করেছেন। এতে আমার এত দুঃখ ও মনঃকষ্ট হলো যা সারা জীবনে কখনো হয়নি। আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে নিজের জায়গায় বসে পড়লাম। পরে এ আয়াতগুলো নাযিল হলে রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ডেকে হাসতে হাসতে আমার কান ধরে বললেনঃ ছোকরাটার কান ঠিকই শুনেছিল। আল্লাহ‌ নিজে তা সত্য বলে ঘোষণা করেছেন।
(ইবনে জারীর। এ বর্ণনা অনুরূপ বর্ণনা তিরমিযীতেও আছে)।

এভাবেই অাল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময়ে মুনাফিকদের মুখোস উন্মেচন করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

208172
১৫ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৪৬
আমি মুসাফির লিখেছেন : মুনাফিকরা সব সময় তটস্থ থাকত কোন সময় তাদের বিরুদ্ধে কোন আয়াত মহান আল্লাহ নাযিল করেন। তবুও তারা মুনাফিকী করতে এতটুকু পিছুপা হতো না
১৫ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৩
156933
অজানা পথিক লিখেছেন : ঠিক তাই! কষ্ট করে পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ
208178
১৫ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০৮
আলোর আভা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবা।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৩
156934
অজানা পথিক লিখেছেন : শুকরিয়া
208181
১৫ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
শফিউর রহমান লিখেছেন : এখান থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয় যে, মুনাফিকরা আল্লাহকে অস্বীকার করতো না বরং অস্বাীকার করতো নবী (সাঃ) এর নেতৃত্বকে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে নবী হিসাবেও তারা অস্বীকার করতো না। যদি তা করতো তবে আয়াত নাযিল হবার পর একথা নবী (সাঃ) বানানো এটা বলতে পারতো। কিন্তু তারা কোন উচ্চবাচ্চই করে নি এব্যাপারে। তার মানে মুনাফিকীর বড় বৈশিষ্ট হলো সে মুসলমান সর্বগ্রহণযোগ্য নেতৃত্বকে অস্বীকার করে তার মনের মতো কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
156945
অজানা পথিক লিখেছেন : যথার্থই বলেছেন। যত সমস্যা নেতৃত্ব আর কতৃৃৃত্ব নিয়ে----
208382
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫১
কেলিফোরনিয়া লিখেছেন : এভাবেই অাল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময়ে মুনাফিকদের মুখোস উন্মেচন করেন।

ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৫৭
157073
অজানা পথিক লিখেছেন : শুকরিয়া
208424
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:১৭
জবলুল হক লিখেছেন : Rose Rose Rose
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:০৩
157135
অজানা পথিক লিখেছেন : Happy
208565
১৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : এরা কাফেরদের চাইতেও খারাপ৷ এ জন্যই কোরআন বলে,' এরা আগুনের সর্ব নিম্ নস্তরে থাকবে'৷ আল্লাহ আমাদের মাফ করুক৷
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:৪৯
157222
অজানা পথিক লিখেছেন : আমীন....
208573
১৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:৫৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শোকরিয়া, আগেও পড়েছি এখন আবার নতুন করে পড়লাম।
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:৪৯
157223
অজানা পথিক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
211607
২২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:১৫
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৩৪
160295
অজানা পথিক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File