আমরা কি পারিনা চরমপন্হা পরিত্যগ করে সহনশীলতার পন্হা অবলম্বন করতে???
লিখেছেন লিখেছেন অজানা পথিক ০৮ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫০:০৯ রাত
বাগদাদ নগরীতে যেদিন হালাকু খান হামলা করেছিল সে দিন আলেমদের মধ্যে তুমুল বাহাস চলছিল।মিসওয়াক ডান মাড়ী থেকে শুরু করা সুন্নত এ বিষয়ে সবাই একমত হলেও উপরের মাড়ী না নিচের মাড়ী এ বিষয়ে চলছিল তুলকালাম কান্ড। এ সমস্ত বাহাস প্রতিযোগিতার আড়ালে মুসলমানদের গাফেল করে রাখা হয়েছিল। ফলে সাধারন জনতা হামলা সম্পর্কে জানতেই পারেনি। কিন্তু আফসোস! হালাকু খান বাগদাদ ধ্বংসের সময় পার্থক্য করেনি, কে শিয়া আর কে সুন্নি। কে হানাফি আর কে শাফি!!! হালাকু খান বাগদাদ ধ্বংস করে ৪লাখ মুসলমানকে হত্যা করেছিল।
কবি আল্লামা ইকবাল একবার আফসোস করে বলেছিলেন
“এই জাতির লাভ-ক্ষতি একই; সবার নবীও এক; দ্বীন-ঈমানও এক; কাবা-বায়তুল্লাহ ও স্রষ্টা সবই এক; কতই না ভালো হতো যদি সব মুসলমানও এক হতো!
এ আফসোস শুধু কবি ইকবালের আফসোস নয় বরং কোটি কোটি ধর্মপ্রান মুসলিমের হ্রদয়ের আফসোসই কবি ইকবালের কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
এবার একটি হাদিস পড়ে নেই
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না ঈমান আন আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বাতলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে ? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- সহীহ মুসলিম- অধ্যায়ঃ ১- কিতাবুল ঈমান-হাদিস নাম্বার:১০০)
রাসুলুল্লাহর(স) এ বক্তব্য হতে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হয়
১. ঈমানের সাথে সম্পর্ক জান্নাতের
২. ভালোবাসার সাথে সম্পর্ক ঈমানের
৩. ভালোবাসার পরীধি হলো একে অপরকে তথা সকল মুসলিম পরষ্পরকে
৪. এ ভালোবাসায় ঘাটতি দেখা দিলে একজন ইমানদার দাবীকারীর গন্তব্যের জায়গা তথা জান্নাতে প্রবেশের পখেই বাধা সৃষ্টি হবে, যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা(ঈমানদাররা) কি পরষ্পরকে ভালো বাসিনা? অবশ্যই ভালোবাসি কিন্তু আমাদের ভালোবাসার পরিধী মারাত্মক সংকীর্ণ । যার যার দল এবং উপদলের ভয়ংকর গন্ডীর ভেতর আমাদের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ। যার পরিনতি এবং ভয়াবহতা এতটাই তীব্র যে আমাদেরকে প্রকৃত শত্রুর আক্রমন সম্পর্কেও উদাসীন করে রাখে।
ভালোবাসার সংকীর্ন পরীধি বলতে আমি যা বুঝিয়েছি তার কয়েকটি ফরমেট এমন-
১. হানাফীরা হানাফীদের (সকল মুসলিমকে নয়)
অনুরুপ ভাবে
২.শাফেয়ীরা শাফেয়ীদেরক
৩. সালাফীরা সালাফীদের ।
৪. তাবলীগপন্হীরা তাবলীগ পন্হীদের
৫. চরমোনাই পন্হীরা চরমোনাইপন্হীদের
৬. ইখওয়ানরা ইখওয়ানদের
৭. জমায়াতপন্হীরা জামায়াতপন্হীদের
আরো অনেক। অনেকেই আমার চাইতে ভালো বলতে পারবেন।
আল্লাহর রাসুল অন্যত্র বলেছেন ধের্য্য ও সহনশীলতার ভেতরেই ঈমান রয়েছে।
তাহলে আমরা কি পারিনা?
*চরমপন্হা পরিত্যগ করে সহনশীলতার পন্হা অবলম্বন করতে।
*পরষ্পর কাদা ছুড়াছুড়িমূলক ষ্টাটাচ না দিয়ে সাধারন মুসলমানদের মনে
বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুয়োগ না করতে।
* দলাদলীমূলক প্রচারনা ও প্রপাগান্ডা বন্ধ করে অনলাইন এবং অফলাইনে মানবতার ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন মুক্তির জন্যে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে।
এ ধরনের সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আমাদের ভালোবাসার পরীধিকে রাসুলুল্লাহর বেধে দেওয়া পরীধি তথা সকল মুসলীমদের ভেতর সম্প্রসারিত করে একটি ভাতৃত্বপূর্ণ ইসলামী সমাজগড়ার স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।
[আলোচনার পরীধি দির্ঘায়িত না করার স্বার্থে এখানেই শেষ করলাম]
এ লেখা পড়ার মাধ্যমে একজন মুসীলমও যদি দলাদলির মানসিক সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আসার অবকাশ পান তবেই আমার প্রচেষ্টা স্বার্থক।
অজানা পথিক
সদস্য, সিবিএফ কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেই তথাকথিত আলিমরা বাগদাদের পথে চেঙ্গিস খানের প্রধান বাধা খাওয়ারিজম কে সহায়তা করা জায়েজ নয় বলে ফতোয়া দিয়েছিল তারা এখনও মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি আর উদাসিনতার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
আল্লামা ইকবালের ভাষায়
"খানকাহ মেজাজ দৃঢ়তর কর,উদাসিন রাখ সকল কাজে"।
আসহাবে রাসুলগনের মাঝেও মারাত্মক মতবিরোধ ছিলো। কিন্তু সে মতোবিরোদ ব্যক্তি সম্পর্কে কখনো ফাটল সৃষ্টি করেনি
মন্তব্য করতে লগইন করুন