বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী কি এমন হতে পারে?
লিখেছেন লিখেছেন অজানা পথিক ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৮:২৯:০৭ রাত
২০০২ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস ফোরে। আমার বাবা তখন নাটোর শহরে ব্যবসা করত। আমরা নাটোরেই থাকতাম। একদিন বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক ভদ্রলোক সাহায্যের জন্য আসল।
লোকটা পঁঙ্গু। নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিখ্যাত কলম গ্রামের অধিবাসি তিনি।অভিজাত বংশের লোক। চাকুরী করত পূর্ব-পকিস্তান এয়ারফোর্সে। স্বাধীনতার দু-এক বছর আগে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাতে তিনি চির পংগুত্ব বরন করেন। প্যারাস্যুটের সাহায্যে কোন রকম জীবন বাঁচান তিনি। তখন থেকেই মানুষের সাহায্য ছাড়া তার সংসারের ভরন পোষনের আর কোন পথ ছিলনা। তার মেয়ে মাদরাসায় পড়ে। পড়লেখার যাবতীয় খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। যাওয়া আসার জন্যে বোরকা কিনতে মাদরাসা থেকে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তার তো সংসার ই চলেনা বোরকা কেনার টাকা পাবে কই? এ ধরনের আর ও সমস্যার কথা অকপটে বলে ফেলল বাবার কাছে।বাবা মনোযোগ দিয়ে তার সবকথা শুনলেন। তাকে বললেন-
”আমি তো ছোট ব্যাবসা করি, আপনাকে খুব ভাল সাহায্য করা হয়তো যাবেনা। তবে আমি আপনাকে একটা ঠিকানা দিতে পারি। আপনি যেহেতু এয়ারফোর্সে চাকরী করতেন ঢাকা শহর ভাল চিনবেন। সচিবালয়ে আপনি সমাজকল্যান মন্ত্রীর সাথে দেখা করে আপনার সমস্যা খুলে বলতে পারেন।”
বাবার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি যেতে মনস্হির করলেন। বাবা তাকে আসা-যাওয়ার খরচ দিয়ে ঢাকার একটি গাড়িতে তুলে দিলেন।
বাবা কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। মুজাহিদ সাহেব একজন মন্ত্রী,জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল, অনেক ব্যস্ত থাকেন। তার কাছে পংগু লোকটাকে পাঠানো হল। তার সাথে কোন ধরনের আচরন করেন! তিনি যদি সাহায্য না পেয়ে ফিরে আসে?ইত্যাদি।
দুদিন পর লোকটি বাবার কাছে ফিরে আসলেন। চোখে আনন্দের অশ্রু। অশ্রু ভেজা চোখে প্রতিক্রীয়া ব্যাক্ত করলেন-
“আমি সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলে মন্ত্রীর অনুমতি পেলাম। মন্ত্রীর নির্দেশে উনার পি এস আমাকে রেস্ট রুমে নিয়ে বসতে দিলেন, আমাকে ফ্রেশ হতে বললেন, আমার জন্যে উন্নতমানের খাবারের ব্যাবস্হা করলেন অতপর উনি আসা পর্যন্ত আমাকে বিশ্রাম নিতে বললেন। কিছুক্ষন পর উনি আসলে সমস্যার কথা খুলে বললাম। সমবেদনা জানালেন। আমাকে নগদ কিছু টাকা দিলেন আর মোটা অংকের একটি চেক ধরিয়ে দিলেন তারপর উনার পি এস এর মাধ্যমে আমাকে গাবতলী নিয়ে নাটোরের গাড়িতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী কি এমন হতে পারে! নিজের রেষ্ট রুমে নিয়ে আমার মত একজন পংগু লোক কে এভাবে সামাদর করতে পারলেন!! এমন মানুষ আমি আর কোথা ও দেখিনি!!!”
বাবার প্রতিক্রীয়াঃ
আমার নেতার মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ। রাসুলে খোদার আদর্শ এমনই ছিল। একেই বলে ইসলামী আন্দোলেনের নেতা। এ আন্দেলনের নেতারা এমনই হয়ে থাকেন।
আমরা ২০০৪ সালে সপরিবারে নাটোর ছেড়ে আমাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর চলে যাই। তারপর থেকে ঐ লোকটির সাথে আমাদের আর যোগাযোগ হয়নি।
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই আওয়ামী ট্রাইবুনাল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ স্যারের রায় ঘোষনা করবে। হয়তো ফাসির রায় ই হবে। তাই আজ স্মৃতি থেকে দুটি কথা লেখলাম। এমন মানুষ কখনো মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ করতে পারে একথা শয়তান ও বিশ্বাস করবেনা।
অজানা পথিক
১৫-০৭-১৩
বিষয়: বিবিধ
৪৫৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন