দোলনায় কথা বলা তিন শিশু
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত ভোর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৪৫:০০ সকাল
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,' বনী ইসরাঈলদের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ দোলনায় কথা বলেনি।
(এক) ঈসা ইবনে মরিয়ম
(দুই) সাহেবে জুরাইজ। জুরাইজ একজন খোদাভীরু বান্দা ছিলেন। তিনি নিজের জন্য একটি খানকাহ্ তৈরি করে সেখানেই বাস করতেন। একদিন সেখানে তার মা এসে উপস্থিত হলেন। এই সময় তিনি নামাযে মগ্ন ছিলেন। তার মা তাকে ডাকলেন,' তখন তিনি মনে মনে বললেন,' হে প্রভু! একদিকে আমার মা এবং অন্যদিকে আমার নামায' তবে তিনি নামাযেই রত থাকলেন। পরদিন এসেও মা তাকে নামাযরত অবস্থায় পেলেন। তিনি ডাকলেন,' হে জুরাইজ! তিনি বললেন,' হে প্রভু! একদিকে আমার মা এবং আমার নামায।' তিনি তার নামাযে ব্যস্ত রইলেন। তার মা বললেন,' হে আল্লাহ! একে তুমি ব্যভিচারী নারীর মুখ না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিও না।'
বনী ইসরাঈলদের মধ্যে জুরাইজ ও তার বন্দেগীর চর্চা হতে লাগল। লোকদের মধ্যে চরিত্রহীন এক নারী ছিল। সে অত্যন্ত রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল। সে দাবী করলো, 'তোমরা যদি চাও, তাহলে আমি জুরাইজকে চরিত্রহীন করতে পারি।' সে তাকে ফুসলাতে লাগল। কিন্তু তিনি সেদিকে কিছুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না। এরপর সে তার খানকার কাছাকাছি অবস্থিত এক রাখালের কাছে এল। সে নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করল এবং উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এতে সে গর্ভবতী হলো। অতঃপর সে একটি সন্তান প্রসব করে বললো,' এটা জুরাইজের ফসল।'
বনী ইসরাঈলেরা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে খানকাহ্ থেকে বের করে মারধর করল এবং খানকাহটিকে ধূলিস্মাৎ করে দিল। জুরাইজ প্রশ্ন করলেন, 'তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা এরূপ কেন করছো?' তারা ক্রুদ্ধস্বরে বললো, 'তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছো। ফলে একটি শিশু জন্মলাভ করেছে।' তিনি প্রশ্ন করলেন,' শিশুটি কোথায়?' তারা শিশুটিকে নিয়ে এলো। জুরাইজ বললেন 'আমাকে নামায পড়ার একটু সুযোগ দাও।' তিনি নামায পড়লেন এবং তারপর শিশুটিকে নিয়ে নিজের কোলে বসালেন। তিনি শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলেন,' ওহে! তোমার পিতা কে?' সে বললো,' আমার পিতা অমুক রাখাল।' উপস্থিত লোকেরা তখন জুরাইজের দিকে মনোযোগী হলো এবং তাকে চুম্বন করতে লাগল। তারা প্রস্তাব করলো,'এখন আমরা তোমার খানকাহটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি।' তিনি বললেন,'তার কোন দরকার নেই; বরং পূর্বের মতো মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও।' এরপর তারা খানকাহটি পুনঃনির্মাণ করে দিল।
(তিন) একদা একটি শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একটি লোক অত্যন্ত দ্রুতগামী ও উন্নত জাতের একটি পশুতে সওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলো। তার পোশাক-আশাকও ছিল খুব উঁচু মানের। শিশুটির মা নিবেদন করল, 'হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে এই ছেলেটির মতো যোগ্য করে দাও।'
শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে লোকটার দিকে গভীরভাবে তাকাল। তারপর বলল্,' হে আল্লাহ! আমাকে এই লোকটির মতো করো না। ' (বর্ণনাকারী বললেন) আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরছেন এবং তর্জনী মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, 'লোকেরা একটি বাঁদীকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিল, তুমি চুরি ও ব্যভিচার করেছো।' অন্যদিকে বাঁদী মেয়ে লোকটি বলছিল যে, 'আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি আমার সর্বোত্তম অভিভাবক।'
শিশুটির মা বলল, 'হে আল্লাহ তুমি আমার সন্তানকে এ ভ্রষ্টা নারীর কবল থেকে বাঁচাও।' শিশুটি দুধপান ছেড়ে দিয়ে মেয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, 'হে আল্লাহ! আমাকে এই মেয়ে লোকটির মতো বানাও।'
এই সময় মা ও শিশু পরস্পরে কথা বলা শুরু করল। মা বললো, 'একটি সুন্দর, সুপুরুষ চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম,'হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ যোগ্য করে তোল। তুমি জবাবে বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এর মতো বানিও না। আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি চুরি ও ব্যভিচারের মতো খারাপ পাপাচার করেছো। আমি বললাম, 'হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ বানিও না। তুমি বললে, আমাকে এরূপ বানাও।'
শিশুটি এবার জবাব দিল, 'প্রথম ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও জালিম। সেজন্য আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এর মতো বানিও না। আর এই মেয়েটিকে তারা বলল, তুমি খারাপ কাজ করেছ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে খারাপ কাজ করেনি। তারা এও অভিযোগ করল, তুমি চুরি করেছো। কিন্তু আসলে সে চুরি করেনি। এই জন্যই আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এই মেয়ে লোকটির মতো বানাও। '
(বুখারী ও মুসলিম)
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৪ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চুক চুক
আবার পড়ে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
আপনি বলেছে তিনজন শিশুই কথা বলেছে আমার জানা এর সংখ্যা প্রায় আরো দশ গুন হবে, আপনার বর্ণনা কেবল মহানবী দ এর হাদিস কিন্তু মহানবী দ এর পরের যুগে ওয়ালিয়া কেরামের যুগে প্রায় শিশু কথা বলেছেন এমনকি মার্তৃগর্ভকালীন সময়েও
অনেক ভালো লাগল, ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন