মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রকৃত বাস্তবতা ও অতি আসিফ মহিউদ্দিন প্রীতিতে টনক নড়ানড়ি
লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ২৩ মার্চ, ২০১৩, ০৭:২২:২৩ সন্ধ্যা
আসিফ মহিউদ্দিন এর ব্যান হওয়া নিয়ে একের পর এক পোষ্টই প্রমান করে যে আমরা মুলত একপেশে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্লগে দেখে আসছি জামাত - শিবিরের পক্ষে কোনো লেখা দিলেই সাথে সাথে ব্যান হয়।
আবার এমনও আছে জাতীয়তাবাদী ব্লগাররা যখন লেখেন তখন তাদেরও কোনো কোনো লেখা জাশি ভেবে গন ব্যান করা হয়েছে।
তখন এত সুন্দর করে বাক স্বাধীনতার পক্ষে কাউকে দাঁড়াতে দেখিনি।
যখন বিশেষ একটি কারনে দেশের ভিন্নমত প্রকাশকারী মিডিয়াগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জোর প্রচেষ্টা হয়েছে তখনও কাউকে এ রকম জ্ঞানগর্ভ স্বাধীনতার কথাবার্তা বলতে শুনিনি।
আমার মনে আছে যখন জনকন্ঠের আতিকুল্লাহ মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করেছিলাম আমি।
আর বর্তমানে আসিফ মহিউদ্দিন আর যে আল্লাহ ও রাসূলকে গালাগালি করতে পারবেন না সেই কষ্টে বাক স্বাধীনতার নামে লিখছেন অনেকেই। আমি কিন্তু ভাই প্রকৃত স্বাধীনতার প্রসঙ্গে সব মহলকে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলাম আমার আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা ও সামুর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নেপথ্য কথন শিরোনামের Click This Link পোষ্টে। যে কেউ দেখে আসতে পারেন। আমি কিন্তু সাবধান করেছিলাম যে এটাও একটা ষড়যন্ত্র ।
আসলে মিডিয়াকে রুখতে চায় কারা? সাধারন সেন্সেই বলা যায় মুলত সরকারই এটা চায়। আমাদের দেশের সরকার কি ধরনের নিউজ মন থেকে চায় তা তো বিটিভি দেখলেই বোঝা যায়। এখন একটা দেশে যদি বিটিভি মানসিকতার সরকার হয় সেই দেশে স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের অনেক রিস্ক আছে।
সেসব ক্ষেত্রে ব্লগ গুলোর কিন্তু দায় অনেক বেড়ে যায়।
আমর এই লেখাটি অনেকেই পড়েছেন হয়তো, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মিডিয়াগুলির একপেশে নীতি , বাকশাল ও বর্তমান বাস্তবতা Click This Link
আমি সেখানে দেখিয়েছি যে আসলে সামনে নির্বাচন। সেখানে সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করার যে চেষ্টা এখন করছে তার ফলাফল কখোনোই শুভ নয়।
একটু মোটা দাগে চিন্তা করেন, জাশি কে আমরা কেউ পছন্দ করি না। ঠিক আছে, আমাদের প্রায় প্রগতিশীল ব্লগারদেরই কিন্তু ধারনা যে জাশি সমর্থক এদেশে ৭-১০ শতাংশের বোশি না।
তারা ব্লগে আসলে উল্টাপাল্টা গালি খায় এটাও ঠিক আছে।
এখন আমরা ধর্মীয়ভাবে যারা মাইনরিটি সেই হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে যেমন আছি তেমনি এই ৭-১০ শতাংশ যে দলে আছে তারাও তো দলগতভাবে মাইনরিটি। তাদের সরকার যেভাবে রাজপথে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, সেভাবে সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তখন কিন্তু ব্লগগুলো বরং তাদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারতো।
এতে তারা অন্তত মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেত।
আমার এই ৮ বছরের ব্লগিং অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কেউ তার ইচ্ছে মত মত প্রকাশ করলেই কিন্তু পার পেয়ে যায় না। সেটা পছন্দ না হলে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। সুতরাং মত যদি এরাও স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারতো, তাতে কিন্তু সব যুদ্ধাপরাধী মুক্তি পেয়ে যেত না। বরং এর কাউন্টার কমেন্টে আসল সত্যটা মানুষ জানতে পারতো।
কিন্তু আমরা তা করলাম না। আমরা তাদের সবার নিক এমনভাবে ব্যান করলাম যেন এরা সবাই রাষ্ট্রদ্রোহীতার আসামী। কিন্তু বিষয়টা তো সে রকম না। এসব করার ফলে যেটা হয়েছে তা হল এরা আরো দশ ডিগ্রী উপরে উঠে এক্সট্রিম আচরন শুরু করেছে।
দেশের মধ্যে যেমন অরাজকতা করে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে , তেমনি এসব সুশিল ব্লগে স্থান না পেয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা আরো কঠিন করে তাদের বক্তব্য বা মতবাদ প্রচার করছে।
এখন তথ্যক্ষেত্রেও তারা সন্ত্রাস করতে এক রকম বাধ্য হচ্ছে। দেখা যায় হাসিনার বড় বড় দাঁতওয়ালা একটা ছবিতে রক্ত মাখিয়ে ডায়লগ লিখে দিল , রক্তপিপাসু বা ভ্যাম্পায়ার টাইপের কিছু একটা। আপনারা শুধু বলেন এদের প্রচারনা কি বন্ধ করা গেছে?
তাহলে এত নিক ব্যান করে লাভ কি হল?
ছাগুদের গালাগালির উপরে রাখেন , ঠিক আছে কোনো অসুবিধা নাই। এই ব্লগের ব্লগাররা কোনো নির্দিষ্ট মতবাদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা তো করতেই পারে। এবং আমার বিশ্বাস জাশি বিরোধী এই লোকগুলো সবাই যে দেশপ্রেমের কারনে বর্তমান অবস্থানে আছে তা নয়, এদের অনেকেই কেবলমাত্র কট্রর আওয়ামী সমর্থক বলেই এই অবস্থায় তাদের দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ আবার জাশির সাথে আঁতাত করলে এদের অনেকের যুক্তি পরিবর্তন হয়ে যাবে।
যাই হোক , আজ শুধু সামু না, সব ধরনের বাংলা ব্লগই কিন্তু কঠিন একটি চ্যালেঞ্জের মুখে।
এটা অন্তত বুঝতে হবে যে স্বাধীনতা জিনিসটা আসলে কি , এবং সেটা কতটা গ্রহনযোগ্য?
আসিফ মহিউদ্দিনরা যেন সরাসরি ধর্ম নিয়ে গালাগালি করে , সেটা যেমন অন্যায় তেমনি এই জাশি বা অন্য কেউ যদি সরাসরি দেশ বিরোধী কোনো কথঅ বলে বা গভীর ষড়যন্ত্র করে সেটাও কিন্তু অন্যায়।
আমরা এই সামুতেই কিন্তু টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষেও পোষ্ট দেখেছি। এবং সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ফেলানিদের মৃত্যু নিয়ে অনেকে ভারতের পক্ষেও কথা বলেছেন। এই সামুতেই অনেকে আবার পাকিস্তানের পক্ষে তাদের অবস্থান বর্ননা করেছেন।
এখন আমাদের সুনির্দিষ্ট একটি জায়গায় আসতে হবে । আমাদের সিন্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা আসলেই সংবাদ মাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা চাই কি না।
সেখানে আপনার মতবাদের পক্ষের একজন লেখককে ব্যান করলো বলেই চিল্লাচিল্লি শুরু করবেন, আর সেই চিল্লাচিল্লি করবেন স্বাধীনতার নামে তা তো গ্রহনযোগ্য নয়। স্বাধীনতা থাকলে সব পক্ষেরই স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সব ব্লগ এবং সংবাদ মাধ্যমেরই আজ এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসার সময় হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমরা আসলে সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও সংবাদ মাধ্যমের এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেব, নাকি আমাদের পরিসর আস্তে আস্তে ছোট করে ফেলবো ???
বিষয়: বিবিধ
১০৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন