জামাত নিষিদ্ধের হিসেব নিকেশ
লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ০১ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৩৮:১৮ রাত
এইটাই আমার দোষ। ঘটনা ঘটলেই হিসেব নিকেশ করতে শুরু করি। জামাত এর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামাত স্বভাবতই দুঃখিত।
আর আপাত দৃষ্টিতে যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে তারা প্রকাশ্যে খুশি। আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপি এটা নিয়ে কোনো কথাই বলছে না। কেন বিএনপি কথা বলছে না সেই হিসেব্ পরে দেখাবো। আগে দেখা যাক লাভ ক্ষতির প্রশ্ন।
জামাত ইসলামকে আওয়ামী লীগ গত ৫ বছর যেভাবে রেপ করেছে, তাতে জামাতের ভোটাররা আর শীগগির আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে বলে তো মনে হয় না।
বিএনপিরই সেক্ষেত্রে লাভ হওয়ার কথা। যেহেতু তাদের নিজেদের দল নেই, সেহেতু তারা এন্টি আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে সেটাই স্বাভাবিক। মানে বিএনপির নির্বাচনের সময় কোনো আসন ভাগাভাগি করতে হবে না। অথচ তারা ভোটও পাবে। বিনিময়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জামাতকে পূর্বাবস্থায় হয়তো ফিরে যেতে দিবে না। তবে অপমান আর নির্যাতনের খড়গটা অবশ্যই কমবে। জামাত অন্তত অফিস নিয়ে বসতে পারবে। এটাও জামাতের কাছে অনেক কিছু। অন্তত বর্তমান বাস্তবতায়।
সমস্যা হলো এই সহজ হিসেবের কারনে , মানে বিএনপিকে সুবিধা দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই জামাতের নিবন্ধন বাতিল হয় নি। এর পেছনে অবশ্যই সরকারী দলের লাভ আছে। কিন্তু সেটা কি?
সেটা বেশ কিছু সম্ভাবনার ভিত্তিতে আলোচনা করতে হবে।
১। আওয়ামী লীগ খুব ভাল করেই জানে যে দেশে ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন হলে তাদের অধিকাংশ প্রার্থীই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবে। এমনকি জামাত যদি সঙ্গ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সাথেও যায়, তাতেও কোনো লাভ নাই। জামাতের সাধারন ভোটাররা মনে করবে যে চাপে ফেলে সেটা করা হয়েছে। ফলে ভোট আওয়ামী বাক্সে না পড়ারই কথা। ফলে কোনো জোট করেই আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারছে না। এখন বিকল্প একটাই। তা হচ্ছে নির্বাচন না দেয়া।
এবারে দেখেন, দেশে জামাতই একমাত্র শক্তি, যাদের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। অথবা একটি প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় কিছুদিন থাকতে হলেও জামাতের সহায়তা তাদের দরকার।
সেই প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হলে প্রথমেই দেখাতে হবে যে দেশে খুবই অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান। সুতরাং নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ডক্ট্ররিন অব নেসেসিটি ইত্যাদি বলে খুব সহজেই নির্বাচনে না গিয়েও ক্ষমতায় থাকার একটা যুক্তি অন্তত পাবে আওয়ামী লীগ।
অবশ্যই জামাতের রি অ্যাকশনের উপরে এগুলো নির্ভর করে। দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এক, জামাত যদি রি এ্যাকশন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসে। যে তাদের তেমন কোনো ক্ষতি করবে না, আবার এইভাবে নিবন্ধন বাতিল টাতিল জাতীয় কিছু কারন দেখিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে দিবে। আর দুই, জামাত কোনো আতাত করবে না। তাকে রি অ্যাকশন দেখাতে বাধ্য করা হবে।
দুই নম্বরটির সম্ভাবনাই বেশি।
২। নিবন্ধন বাতিলে যদি জামাত সেভাবে রিঅ্যাকশন না করে, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করা শুরু হতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু সাঈদীর একটা অন্যরকম ভাবমূর্তী রয়েছে। আর তাছাড়া জামাত সহ অন্যান্য দলেও তার ইসলাম প্রচারক হিসেবে গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে এবং তার সম্পর্কে অনেকেই মনে করেন যে তিনি রাজাকারই ছিলেন না। সেহেতু এই লোকটিকে ফাসি দিলে অবশ্যই সমাজে তীব্র রিঅ্যাকশন হবে। ফলাফল , আওয়ামী ক্ষমতা পাকাপোক্ত।
৩। এতকিছুর মধ্যে বিএনপি কি বসে থাকবে? নিশ্চয়ই না। তারা যেটা করবে, একটা পর্যায়ে যদি বলতে বাধ্য হয়, ভিক্ষা চাইনা কুত্তা ফিরাও। যার অধীনেই হোক নির্বাচন দিন। এই পর্যায়ে যদি বিএনপিকে নিতে বাধ্য করা যায় তবে বর্তমান সময়ের থেকে অনেক বেশি সুবিধা হবে। কথা হচ্ছে এতেও যদি শেষ রক্ষা না হয় তবে?
৪। এই পর্যায়ে তারা হেফাজতকে ধরতে পারে। তবে সেই পর্যন্ত যাওয়ার মত সময় সরকারী দলের আছে কিনা সন্দেহ। আর হেফাজত যেহেতু রাজনৈতিক দল না। তাছাড়া সাধারন মানুষের কাছে হেফাজতের গ্রহনযোগ্যতা জামাতের থেকে অনেক গুনে বেশি। ফলে তাকে ধরাও একটা বোকামী। আল্লামা শফী সর্বজন শ্রদ্ধেও ও একজন বর্ষিয়ান ব্যক্তি। ফলে তার পর্যন্ত যেতে অনেক সময় লাগবে।
যাই হোক এই সকল আওয়ামী ঘুটি যখন একের পর এক আসতে থাকবে, তখন বিএনপিরও নিশ্চয়ই গেইম প্লান আছে। বিএনপির সবথেকে বড় শক্তি হচেছ তাদের পপুলারিটি। যা এই দলটিকে বার বার টেনে তুলেছে।
সুতরাং এই সব কাজ যে আওয়ামী লীগ ছক অনুযায়ী করতে পারবে এমনটি মনে হয় না। তাছাড়া ভারতেও কংগ্রেসের অবস্থা বিপজ্জনক। বিজেপিই ক্ষমতায় আসছে বলে অনেকে মনে করেন। ফলে আগামী দিনগুলো বিএনপি বেশ সুবিধাজনক অবস্থায়ই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন বিএনপির গেইম প্লান এর কিছুটা আমরাও বুঝি। তবে সেটা খোলাসা করার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। কারন বিএনপি এই একটি জায়গায়ই এগিয়ে। আওয়ামী লীগের থেকে অন্তত দশ চাল এগিয়ে আছে বিএনপি। শুধু তাদের প্লান না জানানো এবং জনসমর্থনের কারনে।
এখন আপনারাই বলেন, আপনি যদি নিয়াজ মোর্শেদ বা রিফাত বিন সাত্তারও হন , আমি আপনার বিরুদ্ধে দশটি ঘুটি বেশি মুভ করে রাখলে যদি আমি নিতান্তই ইনজামামের মত দৌড়াই তাও তো আপনার পারার কথা না। কোনোভাবেই না।
আমার ধারনা আমি বললাম। বাকিটা আপনাদের বিবেচনা।
( এই ব্লগে খুব ভারী কোনো বিষয় লিখলেও তেমন কেউ পড়ে না। কমেন্টও তেমন পাওয়া যায় না। আপনারা দয়া করে পড়ুন। না পড়লে বুঝবেন কিভাবে ? আর পড়ে যার যার মতামত দিবেন। চোরের মত পালাবেন না। প্লিজ ..)
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন