রায় নিয়ে আপনারা অখুশি কেন?? ও জামাতের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শ

লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ০৯ মে, ২০১৩, ০৬:০৭:০০ সন্ধ্যা



এই সরকারের সব থেকে বড় ব্যর্থতা কি জানেন?

তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটাও ঠিকমত করতে পারেনি ।


আজ যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় হয়েছে। সরকারের ঘাড়ে যখন হেফাজতের নিরস্র মানুষকে গনহত্যার অভিযোগ চলছে তখন তারা তড়িঘড়ি করে একটি রায়ের তারিখ ঘোষনা করলো।

সেই রায়ে অনেকে খুবই অখুশি। বিএনপি খুশি নাকি অখুশি বোঝা যাচ্ছে না। তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামাতকে খুশি করতে হলেও তারা এখন আর কোনো প্রতিক্রিয়া দিবে বলে মনে হয় না।

একটি বিষয়ে তো সবার একমত হওয়ার কথা যে জামাত এই দেশের জন্মের বিরোধীতা করেছিলো। আর আজকে যার রায় হলো তিনিও সরাসরি বাংলাদেশ নামর একটি দেশ হোক তা চান নি। প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধের। যখন আমার দেশের মানুষ তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য , নিজেদের মা বোনদের পাকিস্তানি বর্বরদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিলো , তখন এই লোকগুলোই ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সাধারন জনগণের আবেগের বাইরে অবস্থান নেয়।

সেটা অনেক বড় অপরাধ। এই লোকগুলো কাউকে হত্যা করুক আর না করুক, দেশের বিরোধীতা করা ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে নানা রকম উদ্ধত বক্তব্য রাখা কি কম অপরাধ?

জামাত একবার আনুষ্ঠানিক ভাবে একাত্তরের সেই দায় গ্রহনও করেনি, আবার সরাসরি এই জাতির কাছে ক্ষমাও চায়নি। আমরা আজকে যে স্বাধীন সেটা আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত নিরীহ মানুষের প্রান গেছে।

মতিঝিলের হত্যাকান্ড যদি আপনাদের কারো বুকে নাড়া দিয়ে থাকে, তবে আপনি যদি সাধারন মানুষ হন, কেন সেই সকল মৃত্যুর ঘটনা আপনাদের বুকে নাড়া দিবে না।

এইখানে আমি সরকারের মত করে ভাবছি না। আমি বিশ্বাস করি , এদেশে যত বড় বড় অত্যাচার ও গনহত্যা, তা ঘটিয়েছিলো পাকিস্তানি আর্মি। কিন্তু তাদের যারা সহায়তা করেছে, তারা কি একেবারে দায়মুক্ত?

আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো তারা সবাই নির্দোষ?

বিষয়টি কিন্তু অত্যন্ত সেনসিটিভ। যারা উপলব্ধি করতে পারবেন , তাদের এই বিচারের বিরোধীতা করার কিছু নাই।

তারপরেও অনেকগুলো প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন জামাতই শুধু না, অনেক অনেক সাধারন মানুষও মনে করে যে সাঈদি রাজাকার না। এমনকি সাঈদির বাড়ির কাছে আমার বাড়ি , আমি নিজেও সাঈদি যে রাজাকার তা আগে কখোনো শুনিনি। সুতরাং সরকার বড় বড় রাজাকারদের মধ্যে সাঈদিকে ঢুকিয়ে একটা গর্ত তৈরি করেছে।

সামুতে আমার একটি নিক ব্যান হয়েছে খালি সাঈদি যে রাজাকার তা আমি আগে কেন শুনিনি সেই অপরাধে। আমি সেখানে দেখিয়েছিলাম যে পিরোজপুর তিন আসনের বর্তমান সরকার দলিয় এমপি ডা. আনোয়ার হোসেন একজন যুদ্ধাপরাধী। সাঈদিকে প্রথমে যে মামলায় দেয়ার কথা ছিলো , সেই গনপতি হালদারের হত্যাকান্ডে ডা. আনোয়ার ও তার মরহুম পিতা ইসাহাক হাজি জড়িত।

এটা শুধু আমার কথা না, সেই শহীদদের পরিবার এটিএন বাংলায় প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে এগুলো স্বীকারও করেছে। সেই ভিডিওটি আমি দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে নিয়ে ঘুরছি, আর গালে হাত দিচ্ছি।

এই যুদ্ধাপরাধীদেরও তো বিচার হওয়া দরকার। যেহেতু বর্তমান সরকার এসব বিচার করবে না, তাহলে কি এসব বিচার হবে না? আমার মনে হয় জামাতের উচিত স্পষ্ট ঘোষনা দেয়া, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া।

তাদের স্পষ্ট বলা উচিত , একটি নিরপেক্ষ ট্রাইবুনালে বিচার হলে তারা মেনে নেবেন। যারা দোষি তাদের প্রত্যেকের শাস্তি হোক। কোনো খুনী যেন বেঁচে যেতে না পারে।

যেহেতু দল হিসেবে জামাতের বিরুদ্ধে অন্তত রাজাকারীর অভিযোগটি সত্য , সেহেতু তাদের সেই সময়ের নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করায় তো কোনো দোষ নাই। তবে সেই বিচার হতে হবে নিরপেক্ষ।

আর বিচারটি হওয়া উচিত ছিল ১৯৭২ সালে করা ৩৬০০০ রাজাকারের লিস্ট ধরে ধরে। কিন্তু সেটা এই সরকার কেন জানি করলো না।

এখন প্রথমে যে প্রশ্নটি করে আমি শুরু করেছিলাম, সেটা দেখেন।

এই সরকার যত রকম রাজনৈতিক নোংরামী আছে তা সব এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দোহাই দিয়ে করে বেড়াচ্ছে। নিজের মা বোনকে হত্যার বিচার করতে গিয়েও কেউ রাজনীতি করতে পারে? পাঁচ বছরে বিচারটি কতদূর করতে পেরেছে তা তো আপনারা দেখছেনই।

মাত্র ১০/১১ জন ধরে তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিজেদের মেয়ে বিয়ে দিতে পারে রাজাকারের ঘরে, তাতে কোনো দোষ নাই, নিজেদের মন্ত্রী বানাতে পারে একজন রাজাকারকে , তাতে কোনো দোষ নাই , বঙ্গবন্ধু নিজে রাজাকার শাহ আজিজ ও সবুর খানকে জেল থেকে মুক্ত করে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছিলেন। তাতে কোনো দোষ নাই। কেবল দোষ দেয়া শুরু হলো জামাতের বেলায়।

এগুলোই সব থেকে বড় অন্যায় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণ দেশের উন্নয়ন করার আশায় ভোট দিয়েছে। শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ভোট দেয়নি।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রত্যেকেরই এলাকায় অনেকে মারা গেছেন। কারো নিকটাত্মিয়, কারো ভাই বোন, বা কারো এলাকার বড় ভাই, দাদা , নানা। আমরা সেই মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে চাই না।

আর জামাতের উদ্দেশ্যে আবারো একটি পরামর্শ দিচ্ছি, আপনারা একাত্তরে জাতির মূল অংশের আবেগের সাথে বেঈমানী করেছেন। পারলে প্রকাশ্যে একটি সুবিধাজনক সময়ে সেই কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন। এতে দোষের কিছু নাই।

আর বিএনপির সাথে সাথে আপনারাও ঘোষনা দিন, আপনারা কোনোদিন ক্ষমতায় গেলে একাত্তরে আপনাদের দল সহ অন্যান্য সকল দলে যারা অপরাধ করেছে, তাদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের ব্যবস্থা করবেন। সবাই যাতে ন্যায় বিচার পায় তা নিশ্চিত করবেন।


আমার যা মনে হলো বলে দিলাম, মানা না মানা আপনাদের বিষয়।

আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে এ ধরনের পোষ্টে খুব একটা কমেন্ট পাওয়া যায় না। তবুও আমি এই ব্লগে যদি কোনো জামাত শিবিরের প্রগতিশীল ভাইরা থাকেন তাদের কমেন্ট করার আমন্ত্রন জানাচ্ছি। সেই সাথে সাধারন ব্লগাররাও আপনাদের মতামত জানালে খুশি হব।

বিষয়: বিবিধ

১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File