একপাক্ষিক মিডিয়া যে সকল কারনে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। ( খুবই গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট)
লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ০৮ মে, ২০১৩, ০৯:০৯:১৬ রাত
মিডিয়া নিয়ন্ত্রন, বিচার বিভাগ , আইন , নির্বাহি বিভাগ, এমনকি সামরিক বাহিনিতে দলিয়করন করে আওয়ামী লীগ চিরস্থায়ী ক্ষমতা পেয়ে গেছে বলে খুশিতে ক্যাটরিনা কাইফের মত নাচতাছে।
ওদেরকে নাচতে দেন।
চুপচাপ নিচের ইতিহাসটা পড়েন, তারপরে আসল কথা বলতেছি........
আমি খুব সোজাসুজি বিষয়টি ব্যাখ্যা করবো। আজকে দেশ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বাম। আরেকটি হচ্ছে এন্টি আওয়ামী লীগ।
৭৫ এর আগে পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বামরা ছিলো একে অপরের প্রধান শত্রু। এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর বামরা ছিলো প্রধান জঙ্গি সংগঠন।
আজকে যাদের দেখছেন একাত্তর টিভিতে মন প্রান উজাড় করে হেফাজতিরা ইট মারছে সেই ঘটনাকে জঙ্গিবাদ ইত্যাদি প্রমানের চেষ্টায় আছেন, সেই নাস্তিক নষ্ট ভ্রষ্টরা এদেশে মুলত সহিংসতার শুরু করে। আজকে হয়তো তাদের সেই সকল ইতিহাস আর মনে নেই। তবে আপনাদের প্রয়োজন হলে মনে করিয়ে দিয়েন। জাসদ আর বাসদের ছিলো এন্টি রক্ষি বাহিনি ফোর্স। রক্ষিবাহিনী ছিলো সরকারী ভাবে সন্ত্রাসের হোতা। আর জাসদ ছিলো বেসরকারী জঙ্গি।
পার্থক্য হলো তারা যেহেতু নাস্তিক। তাদের ক্ষেত্রে জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সর্বহারা, সশস্র বিপ্লবী ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার হত।
এতবড় ভূমিকার কারন এক লাইনে ব্যাখ্যা করছি। এই বামরা কখোনো জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না। এমনিতেও তো বোঝা যায়, কম্যুনিজম ও গনতন্ত্র দুটো ভিন্ন জিনিস।
বিশ্বব্যাপী যত কম্যুনিষ্ট ক্ষমতায় এসেছেন, সে হুগো শ্যাভেজই হোক আর ফ্রিদেল ক্যাষ্টো হোক, কেউই তার ও তার দলের বাইরে অন্য কাউকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চাননি। মোটামুটি একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এনারা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই। বামরা এদেশে কখোনো এককভাবে একটি আসনেও জিততে পারেনি। মানে হচ্ছে এদেশের গনতন্ত্র তাদের কিছুই দেয়নি। .......বিষয়টি মনে রাখেন।
প্যারা ২.
আওয়ামী লীগের ইতিহাসও ক্ষমতা ছাড়ার ইতিহাস না। যে কোনো মূল্যে হোক ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ন অবৈধ উপায়ে এদেশে কোনো নির্বাচন ছাড়াই ২য় বার নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেছিলেন। এরপরে বাকশাল গঠন করে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। নিজের দল ছাড়া অন্য সব দলকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন।
আর বর্তমানে যেমন কোনো বিরোধী মিডিয়া আর অবশিষ্ট নাই, তখন তার থেকেও খারাপ অবস্থা করে ফেলেছিলো।
পরবর্তীতে তার কন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর পরে এদেশের ক্ষমতায় আসে। তখন নিজের নামে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গনভবন লিখে নিয়ে যান। ....এটাও মনে রাখেন.....
প্যারা ৩
এরপরে নানান চরাই উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে এসে সেই বাসদ, জাসদ আর বর্তমান আওয়ামী লীগ , এই দুই শক্তি এক হয়েছে।
খেয়াল করেন, দুটি দলেরই স্বাধীনতার পরে সশস্র ও সহিংস আচরনের ভুরি ভুরি প্রমান আছে। হেফাজত মতিঝিলে গাছ কেটেছে কিনা সেটা নিয়ে এখন যারা চিল্লাচিল্লি করছে, সেই জাসদ এক সময় ৪৪ জন আর্মি অফিসারের হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ৭২-৭৫ সময়ে একের পর এক হত্যাকান্ডে তাদের হার রঞ্জিত করেছে। আর রক্ষিবাহিনী দিয়ে আওয়ামী লীগ ৩০০০০ মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। বেঁচে থাকলে তারা হয়তো আজ আমাদের দাদার বয়সী হতেন।
আজকে যেমন কাদের সিদ্দীকি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলে তাকে রাজাকার বলছে , একইভাবে তখনও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক বন্দি করা হয় ও পরবর্তীতে তার মৃত্যু ঘটে। একই ভাবে সিরাজ শিকদারকে এক সপ্তাহ ধরে নির্যাতন করে বিনা বিচারে হত্যা করে শেখ মুজিব পার্লামেন্টে দম্ভোক্তি করেন, কোথায় সেই সিরাজ শিকদার??
বহু বহু ইতিহাস আছে। এটুকু আজকের প্রসঙ্গের সাথে যুক্ত বলে উল্লেখ করলাম।
তো এহেন দুই গ্রুপ আজকে একত্রিত হয়েছে। তাদের কাছে ক্ষমতা আছে। তাদের কাছে মিডিয়া নিয়ন্ত্রনের জন্য নির্লজ্জ বেহায়ার মত কিছু চাটুকারও আছে। সেটা তারা করেছেও। তাদের কাছে গোপালগঞ্জি রক্ষিবাহিনী আছে। ৭৫ এর মতই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিস্কৃয় করে ফেলার কাজও প্রায় কমপ্লিট।
সুতরাং যদি বিএনপি মনে করে যে আওয়ামী বাম লীগ স্বেচ্ছায় নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবে ও জনসমর্থন নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসবে, তাহলে বলতেই হয় যে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে।
সেটা আওয়ামী লীগের অবস্থান থেকে আর সম্ভবও না। এদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসলে , আমি নিশ্চিত যে গনহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা গংদের বিচার হবে। ভয়াবহ বিচার হবে সেটা। স্বেচ্ছায় কি আওয়ামী লীগ সেই রিস্ক নিবে? তাছাড়া যেখানে ভারত তাদের পূর্ন সাপোর্ট দিচ্ছে।
প্যারা ৪
আপনাদের অনেক হতাশার কথা শোনালাম। এবারে কিছু আশার কথা।
যা শুরু হয়েছে একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন দিয়ে। এভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করে, বিচার, আইন , শাসন সব বিভাগে নগ্ন দলিয়করন করে তারা কি ক্ষমতায় থাকতে পারবে?
আমি সরাসরি বলবো না।
কারন খুব সহজ ,
১। বিশ্বে যত বড় বড় ডিক্টেটরদের পতন হয়েছে তারা সবাই ই মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে। তারপরেও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
২। এখন শুধু মেইনষ্ট্রিম মিডিয়া বন্ধ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না। ফেসবুক, ইন্টারনেটে সব মানুষ জেনে যাচ্ছে।
৩। একটা সময় এদেশে শুধু বিটিভি ছিল। যা সরকারই নিয়ন্ত্রন করতো। তারপরেও কিন্তু নির্বাচনে দেখা যেত বিরোধী দল বিজয়ী হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং মিডিয়ার অপপ্রচার কোনো বিষয়ই না।
৪। সুস্ঠু একটি নির্বাচন যদি না দিতে পারে তবে আওয়ামী লীগের পরের সরকারের বৈধতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে প্রশাসন তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৫। গোপালীদের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রশাসনে প্রচুর শত্রু তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা এনটিভি ও বাংলাভিশনের মত ঘাপটি মেরে আছে। সময় হলে তাদের চেহারা দেখা যাবে।
৬ । নিরপেক্ষ একটি সরকারের রূপরেখা আসলেই পুরো দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর সেই সরকার তো এক সময় না এক সময় দিতেই হবে।
৭ । যখন সংসদ সদস্য নির্বাচন হয় তখন স্বাধীনভাবে দু পক্ষই তাদের কথাবার্তা মানুষকে বলার সুযোগ পাবে। তখন নতুন করে ভোটাররা দু পক্ষের কথাই শুনবে। যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি শুনবে। সুতরাং সত্যের জয় হবে, তা আশা করা যায়।
৮। বামদের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের অবহেলা করেছে আওয়ামী লীগ। ফলে তার একটি নেগেটিভ প্রভাব অবশ্যই পড়বে।
৯। পাঁচ বছরেও যেহেতু আওয়ামী লীগ অন্য দলের কয়েকজনকে ধরা ছাড়া প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেনি, সুতরাং সেই ইস্যুও তাদের কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
১০। সর্বোপরি, একটা সরকারের দ্বারা সবাই উপকৃত হয় না, ধরুন একটি গ্রামের ২০ জন সরকারের দ্বারা উপকৃত হলে ৫০০ জন মনে মনে সরকারের বিপক্ষে চলে যায়। ফলে সরকারী দলের খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। আর হলমার্ক , ডেসটিনি , শেয়ার বাজার, পদ্মা সেতু ইত্যাদি ইস্যু তো আছেই আওয়ামী বধের জন্য।
শেষ কথা হচ্ছে, খুব একটা ভয় পাওয়ার কিছু নাই। যারা ৬ তারিখের গনহত্যা দেখে রাগে দাতে দাঁত ঘষছেন, মনে করছেন অস্র পাইলে ওগুলারে শেষ করে দিতাম ইত্যাদি। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, গনতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যান। কোনো সন্ত্রাস করবেন না। কোনো ভাবেই যাতে জরুরী অবস্থা দিয়ে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার সুযোগ না পায় বাল সরকার।
ধৈর্য ধরেন, এন্টি আওয়ামী লীগের জয় সুনিশ্চিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন