এত লাশ রাখবো কোথায়? সচেতন হোন জেগে উঠুন প্রতিবাদ করুন, বাঁচার মতো বাঁচুন
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০১:১২:৪২ দুপুর
গত কয়েকদিন থেকে মনটা বেজায় খারাপ। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, এদেশ কি আমাদের দেশ? এখানে কি আমরা নিরাপদে বাস করতে পারব? লাখো শহীদের রক্তে সিক্ত সবুজ বাংলাদেশের এ কেমন চেহারা! উফ্ আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।
চারিদিকে এত রক্ত! এত লাশ! এত কান্না! এত বুলেট! এত আহাজারি! এত খুন! এত গুম! বাতাসে লাশের গন্ধ। আমরা কী অন্ধকার কোনো গহীন শ্বাপদ জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছেছি। কোথায় আমাদের অধিকার? কথা বলার অধিকার? আাজ আমরা শুধুমাত্র বাঁচার অধিকারটুকুও আমরা পাচ্ছি না। কেন এমন হল। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আমরা কী এক ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি। এটা কী স্বাধীন দেশ।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রূপসা থেকে পাথুরিয় ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে শুধু লাশ আর লাশ। পঁচা গন্ধ আর বুক ফাটা কান্না। মায়ের আহাজারি ছেলের জন্য। নতুন বৌয়ের আহাজারি স্বামীর জন্য। বোনের আহাজারি ভাইয়ের জন্য।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশ আজ আর কোনো স্বাধীন ভূখন্ড নয়। এটা এক ভয়ংকর জনপদের নাম। এখানে মানুষরূপী মুষ্টিমেয় হিং¯্র পশুদের কাছে গোটা দেশের মানুষ জিম্মি। কেউ কথা বলছে না, বলতে পারছে না। সবাই মুখে কুলূপ এঁটে বসে আছে। হত্যা, গুম, জেল-জুলুম, নির্যাতনের ভয়ে।
বাংলাদেশের চার দশকের ইতিহাসে এক দিনে ৫৬ জন মানুষ আগে কখনো মারা যায়নি। পাকিস্তান আমলে না এমনকি ব্রিটিশ আমলেও না। শুধুমাত্র ব্রিটিশ আমলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড ছাড়া। সেই হত্যাকান্ডের পর রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর নামই তো পৌরূষ এর নামই বোধহয় দেশ প্রেম। আজ দেশ প্রেমিক মানুষের বড়ই অভাব। আজ এখানে নজরুলের প্রয়োজন। উমরের প্রয়োজন। খালিদ বিন ওয়ালিদের প্রয়োজন। হামজার প্রয়োজন। মুহাম্মদ বিন কাশিমের প্রয়োজন। বাদশাহ আলমগীরের প্রয়োজন। শাহ জালালোর প্রয়োজন। শ্রী চৈতন্যের প্রয়োজন। আব্বাসউদ্দীনের বড় প্রয়োজন। প্রয়োজন মানবতাবাদী লালন ফকিরের।
২৮ ফেব্রুয়ারী মাওলানা দেলোওয়ার হোসাঈন সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় ঘোষণা করেন ট্রাইবুনাল-১ এর আদালত। দেলু রাজাকার নামের এক ব্যক্তির দোষ চাপানো হয় মাওলানা সাঈদীর ঘাড়ে। সাঈদী সাহেবকে ফাঁসির আদেশ দেয় বিচারক। রায় ঘোষণার পর সাঈদী সাহেব বক্তব্য দিতে চাইলে তাঁকে ‘চুপ রাজাকার’ বলে থামিয়ে দেয় জাবির ভিসি আনোয়ার হোসেন, নাসিরউদ্দীন ইউসূফ বাচ্চু, মুনতাসীর মাসুন, শাহরিয়ার কবিরসহ ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির লোকেরা। যা কিছুতেই শালীনতার পর্যায়ে পড়ে না। এ রায় এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। মেনে নেয়নি। তারা এ প্রহসনের বিচার তারা মানেনা। তাই নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বণিতা রাজপথে নেমে পড়ে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেনো বিশ্ব ইতিহাসেও প্রথম। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! মানুষ এতটা প্রাণদিয়ে ভালবাসে সাঈদীকে। যা বিস্ময়ের ব্যাপার। মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে নির্বিচারে পাখির মত মানুষ হত্যা করে। নিহত হয়েছে ৫৬ জন। আহত হয়েছে হাজার খানেক। শত শত ঘর বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক লুটপাট করা হয়েছে। এ লেখটি যখন শেষ করছি তখন পর্যন্ত ১০৫ জন মারা যাওয়র খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এই হত্যাকারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে না পারলে দেশ বাঁচবে না। তিনি বলেছেন আর একটি গুলিও নয়। বন্ধ করুন গণহত্যা।’ এ বলে তিনি সাধারণ মানুষকে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এবংকি সেদিন গণহত্যার দিন সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে তিনি নেতাকর্মীদের দেয়া ফুল গ্রহণ করেননি। এই তো দেশের যোগ্য নেত্রী। কাজের মতো কাজ। এ জন্যই তো আপনার নাম আপোসহীন নেত্রী। আপনি কখনো অন্যায়ের বিরূদ্ধে, ইসলামের শত্রুদের বিরূদ্ধে, সৈরাচারের বিরূদ্ধে আপোস করেননি।
ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘দোহাই সাধারণ মানুষকে আর হত্যা করবেন না। নিরপরাধ মানুষকে আর খুন করবেন না। বন্ধ করুন এই গণহত্যা। বন্ধ করুন বিচার নামের প্রহসন।’
সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন-গুলি করে মেরে ইতিহাসে কেউ রক্ষা পায়নি। হিটলার, মুখোলিনি, গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেন, রেজা শাহ পাহলভি, হোসনি মোবারক, মার্কোস, পিনোচটকে, রদোভান কারাদজিককে, পাকিস্তা মেলিটারীদের হত্যা, শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনী পর্যন্ত।
যে মহৎ লক্ষকে সামনে রেখে শাহবাগের আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার এখন নাম গন্ধও নাই। তারা এখন সে লক্ষ থেকে হাজার মাইল দূরে। ইতোমধ্যে থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। ব্লগার রাজীবের ইসলামীর প্রতি অশালীন লেখার পর এবং ভারতের টাইস অব ইন্ডিয়া পরিস্কার ভাষায় বলেছে যে ভারতের মদদে শাহবাগে আন্দোলন হচ্ছে। এরপরও কি এ আন্দোলন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এখন দেশে জন্ম নিয়েছে দু’টি সরকার। একটি শেখ হাসিনা সরকার আরেকটি ইমরান সরকার। সে শাহবাগ থেকে একের পর এক হুকুম জারি করছে। যা একটা স্বাধীন দেশে কিছুতেই চলতে দেয়া যায় না। এমনটাই বলেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তারপরও কেন জানি আমাদের সরকারের কানে পানি যাচ্ছে না। এটা কীসের লক্ষন। এটা কি ক্ষমতার মোহ। ক্ষমতা করো জন্যই চিরস্থায়ী হয় না হতে পারে না এটাই ক্ষমতার ধর্ম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি, কি পারেন না এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে। আপনি দয়া করে এখনি পুলিশকে আর গুলি না করার জন্য প্রদান করুন। আপনার দিকেই তাঁকিয়ে গোটা বাংলাদেশের জনগণ। যে সকল মানুষ খুন হয়েছে তাদের আতœীয়ের আহাজারি আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? হৃদয় দিয়ে অনুভব করুন ঠিকই শুনতে পাবেন। আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি আমাদের নিরাপক্তার জন্য, হত্যার জন্য নয়।
আমরা আর কোনো লাশ চাই না। বিএনটি, আওয়ামীলীগ, জামায়াত, জাতীয়পার্টি বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হল দেশ। আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ। লাল সবুজের পতাকার দেশ। পাখির গানের দেশ বাংলাদেশ। সবাই এদেশের মানুষ। এদেশের নাগরিক।
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন