মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ২৩ মার্চ, ২০১৩, ০১:২৭:০১ রাত
আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ। মানুষ হিসেবে গোটা সৃষ্টিজগতের অন্যান্য জীবের চেয়ে আমাদের মর্যাদা আলাদা। সৃষ্টির সেরা জীব। অনন্য বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। সৃষ্টির সবচেয়ে মর্যাদাশীল সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তার আদরনীয় সৃষ্টি। তাই ১৮ হাজার সৃষ্টির মাঝে মানুষ বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। শুধু সৃষ্টির কাছে নয়; ¯্রষ্টার নিকটও মানুষ অতিপ্রিয়। অতি ভালবাসার পাত্র। এই মানুষদের মধ্যে থেকেই তিনি একজনকে বন্ধু হিসেবে গ্রগন করেছেন। তিনি হলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)।
আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় আমরা মুসলিম। ইসলাম আমাদের ধর্ম। হযরত মুহাম্মাদ (সা) হলেন আমাদের নেতা। সঠিক পথের পথ নির্দেশক। তিনিও মানব তবে অতি মানব। নবী তবে সর্বশ্রেষ্ট নবী। এটাই মুহাম্মাদ (সা) এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই মুহাম্মাদ (সা) আমাদের নিকট অতি আদরের একটি নাম। ভালবাসার নাম। আগেগের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বশান্তির সবশ্রেষ্ট দূত। অতি সম্মানের পাত্র। যাকে আমরা আমাদের জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসি। পৃথিবীর জন্ম থেকে আব অবধি যতগুলো বিজয় এসেছে তার মধ্যে রক্তপাতহীন বিজয় হল মক্কা বিজয়। আর সে বিজয়ের নায়ক হলেন আমার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। তিনি অতি সুন্দর একজন মানুষ ছিলেন। চাঁদের সৌন্দর্য তার সৌন্দর্যের কাছে ম্লান হয়ে যায়। সূর্যের দিপ্তী তাঁর কাছে হারিয়ে যায়। আর চরিত্রের দিক দিয়ে ছিলেন পূত পবিত্র। এভাবে ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর বুকে অনেক ধর্ম ও ধর্ম প্রচারকের আগমন ঘটেছে। সকল ধর্ম ও ধর্ম প্রচারকগণই আমাদের নিকট সম্মানের অধিকারী।
তৃতীয়ত: আমাদের সকলেরই একটা নিজস্ব সত্তা রয়েছে। আমাদের জন্মভূমি, মা-বাবা, ধর্ম অত্যন্ত আদরের, সম্মানের, ভালবাসার, আবেগের বিষয়। আমরা যে ধর্মের মানুষই হই না কেন আমরা কখনো আমাদের মা-বাবাকে, জন্মভূমিকে অবহেলা করিনা। ভালবাসি। প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। হৃদয় উজাড় করে ভালবাসি। আমাদের সকলেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। এ স্বাধীনতা আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তাঁয়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন। বর্তমানে যা মুক্তবুদ্ধির চর্চা নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে অড়ষ্ট, মুক্তি যেখানে অসম্ভব।’ আসলেই তাই। তবে যেততেন যেভাবে খুশি যেভাবে ইচ্ছা করা, বলা, লিখার নাম স্বাধীনতা নয়। মুক্তবুদ্ধির চর্চা নামেও তা স্বীকৃত হতে পারে না। যে বলা, যে লিখা, যে করায় অপর মানুষের, ধর্মের, ইচ্ছার, আদর্শের উপর আঘাত করে তা কখনোই স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং পরিচায়ক হতে পারে না।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাজীব হায়দার নামের একজন ব্লগার মারা যায়। মৃত্যুর দিন থেকে জামায়াত-শিবিরকে খুনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আসলে সে মেয়ে ঘটিত কারণেই মারা যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকায় সে খবর ছাপা হয়েছে। পরদিন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজীবের বাসায় শান্তনা দিতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশে খুনী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই।’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বিশ্বজিতের বাসায় গেলেন না। যাকে প্রকাশ্য রাজপথে ছাত্রলীগের নষ্ট ছেলেরা চাপাতির আঘাতে খুন করেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সকালে একজন ব্লগার শাহবাগে স্টক করে মারা যায়। তার নাম শান্ত। আরেকজন ব্লগার শাহবাগের রাজাকারের ফাঁসির মঞ্চে অভিনয় করতে গিয়ে মারা যায়। তার খবর কোনো পত্রিকায় এসেছে বলে আমার জানা নেই। তারা দু’জনই শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের সংগঠক ছিলো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই। যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ চাই। তবে এক দলের রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় সকল দলের রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টি, জামায়াত সবার। একই সাথে দুঃখের, রোমাঞ্চের, লজ্জার খবর হল বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর একজন নামকরা রাজাকার। এটা আমার কথা নয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি সাহেবের। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা তাকে গ্রেফতার করুন, কেউ স্বাক্ষী না দিয়ে আমি এর স্বাক্ষী দিব’ এ দু’ন ব্লগার মারা যাওয়াতে আমি নিজে কিছুটা দুঃখ পেয়েছি। কারণ আমি নিজেও একজন ব্লগার। কিন্তু গত ১৮ ও ১৯ তারিখের আামারদেশ, নয়াদিগন্ত পত্রিকা আমার দুঃখ দূর করে দিল। ভুল ভেঙে দিল। অপরদিকে আমার ভেতর তৈরী হল ক্ষোভের এক দাবানল। অনুশোচনার আগুণে আমি দাউদাউ করে জ্বলছি। গত ১৮ তারিখের আমারদেশ পত্রিকায় ব্লগার রাজীব হায়দারের লিংকগুলো প্রকাশ করেছে। সে লিখাগুলোতে রাজীব হায়দার মুসলমান, জন্ম-মৃত্যু, দাঁড়ি-টুপি, ইসলাম, মুহাম্মাদ (সা) ও তার সম্মানীত স্ত্রীগণ, রোযা-নামাজ, সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মনগড়া কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যা কোনো অংশেই দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদের লেখার চেয়ে কম নয় বরং অনেকাংশেই বেশি। লেখাটি পড়ে আমার শরীর কাঁপতে লাগল। লোম খাড়া হয়ে গেল, প্রচন্ড ঘৃণা, ক্ষোভ দানা বাঁধতে লাগল। ভাবতে লাগলাম, যে লোক জীবত অবস্থায় দাঁড়ি-টুপি, ইলমাম, পরকাল নিয়ে হাসিঠাট্টা করত মৃত্যুর পর সে লোকের জানাযা হয়েছে! হাসবো না কাঁদব বুঝে আসছে না।
এ রকম আরেকজন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। তার উপর হামলা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সামহোয়ারইনব্লগে আমি একটা লিখা পোস্ট করেছিলাম। তখনো তার সম্পর্কে আমি পুরোপুরি জানতাম না। পরে দু’জন ব্যক্তির কমেন্ট আমার ভুল ভেঙে দিল। আমি ব্যাপক লজ্জা ফেলাম। সঙ্গে সঙ্গে লেখাটি মুছে ফেললাম। জানিনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে ক্ষমা করেছেন কিনা। হে আল্লাহ তুমি আমাকে মাপ করে দিও।
এ ধরণের কূলাঙ্গার লেখকের লেখার প্রতিবাদ করার ভাষা আমার জানা নেই। তবে তারা যে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কুকুর, শৃগাল, সাপ, ব্যাঙ, শুয়োরের চেয়ে নিকৃষ্ট তার চেয়েও খারাপ। কারণ, কুকুর, শৃগাল, শুয়োরও তাদের মা-বাবাকে, সৃষ্টিকর্তাকে মেনে চলে। কিন্তু এসব মুক্তবুদ্ধির এসব ব্লগাররা কোন প্রজাতির জানোয়ার তা আমার অজানা।
নিজের মনুষ্যত্ব, নিজের পরিচয়, নিজের ধর্ম, জাতীয়তাবোধ, ইসলামকে, আল্লাহকে, রাসূলকে অপমান করা তো মুক্তবুদ্ধির-মুক্তচিন্তার পরিচয় হতে পারে না। মুক্তচিন্তা-মুক্তবুদ্ধিকে আমি প্রাণপণে সমর্থন করি, তবে এমন নির্লজ্জতা কোন ধরণের মুক্তবুদ্ধির চর্চা! প্রকাশ্য মুত্যুদন্ডই এসব মুক্তবুদ্ধি-মুক্তচিন্তার লেখকদের উপযুক্ত শাস্তি হতে পারে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন লেখা লিখতে সাহস না পায়। তারা লেখক নামের নেংটি ইদুর। তাদের থেকে কোন কিছুই শেখার নেই। যাতে ভবিষ্যতে কোন লেখক, ব্লগার মুক্তবুদ্ধি আর মুক্তচিন্তার নামে ধর্মকে, দেশকে, ইসলামকে, রাসূল (সা সম্পর্ক মন্তব্য করতে সাহস না পায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকতে হবে। এখানে কোন দলীয় লেজুড়বৃত্তি চলতে দেয়া যায় না। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামায়াত সব দলকেই এ ব্যাপারে একমত হতেই হবে। এ ব্যাপারে তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
হে তরুণ, মুক্তি চাও কি? আল কোরআন তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন