ভয়ংকর ভূমিকম্প ও আমার অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:১১:২১ দুপুর
ছোটবেলায় গ্রামে পুকুরে পানি উথলে উঠতে দেখলে বুঝতাম ভূমিকম্প হচ্ছে। এরপর জীবনে অনেক ভূমিকম্প দেখেছি তবে গতরাতের মত এমন প্রচন্ড ভয়ানক ভূমিকম্প আর কখনো দেখিনি। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তখন ঘড়িতে সময় কত তা আমার জানা ছিল না। ঘড়ি দেখার সময়ই বা কোথায়। এ যেন কিয়ামতের মত অবস্থা। রাতে আমি স্টিলের একটা খাটে শুয়েছিলাম। প্রচন্ড ঝাকুনিতে কেঁপে উঠল আমার খাটটি। মনে হয় আমার খাটটির চারপাশে ইয়া বড় বড় চারজন দৈত্য ধরে প্রচন্ড ঝাকুনি দিচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে আমি জেগে উঠলাম। মুহূর্তেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। গায়ের লোমকূপ খাড়া হয়ে গেল। আমার পাশের খাটে যে শুয়েছিল সেও জেগে উঠল। ভয়ে সে কোনো কথা বলছে না। সাথে সাথেই আমি কলেমা পড়তে লাগলাম। যে কলেমাটি মানুষ মৃত্যুর সময় পড়ে। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ”। আমি মনে মনে ভাবলাম, আজ মনে হয় মরেই যাচ্ছি। আমার গুনার খাতা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। একটি একটি করে প্রতিটি গুনাহ আমার সামনে ভেসে উঠল। আমি সব পড়তে লাগলাম। ওমুক দিন এই গুনাহ করেছিলাম। ওমুক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে ওই পাপ করেছিলাম। ওমুককে গালি দিয়েছিলাম। ওমুককে কয়েকজন বন্ধু মিলে বিনা কারণে পিটিয়েছিলাম। ওমুকের মনে ব্যথা দিয়েছিলাম। প্রভাব বিস্তারের জন্য দোকানে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে জোর গলায় কথা বলেছিলাম। ওমুকের বদনাম করে বেড়িয়েছিলাম। মা-বাবার মনে এই কষ্ট দিয়েছিলাম। ওই রাতে ওই গুনাহ করেছিলাম। ওমুককে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছিলাম। এসব আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। গুনাহ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিয়ামতের দৃশ্য আমার আমি অনুভব করতে থাকলাম। কিয়ামাতে দিন এভাবেই প্রচন্ড কাপুনিতে পুরো পৃথিবীর সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনের সূরা ইনফিতার, যিলযাল এ কিয়ামাতের বর্ণনা আছে। তখন পাহাড়গুলো তুলোর মতো উড়তে থাকবে। সমুদ্রগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। সবাই প্রাণ বাঁচাতে নিচে যাবার জন্য তৈরী হুড়েহুড়ি করতে লাগল। আমি শুধু কলেমা পড়তে লাগলাম। আমি ভাবলাম আজ আমি মরেই যাচ্ছি। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হলাম মনে মনে। মুমিনদের উচিত সব সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা।
অনেক দিন মায়ের সাথে আমার দেখা নেই। ঈদের পর আর বাড়িতে যাইনি। আজ যাব কাল যাব করে করে যাওয়া হয় না। আমার মায়ের পান খাওয়া সুন্দর শুভ্র মুখটি আমি যেন দেখতে পাচ্ছি। বাড়িতে গেলে মা আমার সাথে গল্প করেন। শহরে কোথায় থাকি কি কি রান্না হয় তা খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আমার রুমমেটরা সবাই বাড়িতে গেছে। তারা বিনা কারণে একদিন ও ঢাকায় থাকে না। আমি একা একা থাকি রুমে। যাদেরকে আমি আপন ভাবি তারা আসলে আপন কিনা মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি। দুনিয়াতে সবচেয়ে আপন মানুষ হল দুইজন মা এবং বাবা। সবাই আপনার কাছ থেকে কিছু না কিছু আশা করে এই দুইজন মানুষ কিছুই আশা করে না। তারা শুধু আপনার ভালো থাকা চায়। কখনো মা-বাবার মনে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। কারণ, মা-বাবার মনে কষ্ট দিলে আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হয়ে যান। একটি কারণে মা-বাবার আদেশ অমান্য করা যাবে তা হলো মা-বাবা যখন শিরক করার জন্য বলবে তখন তা মানা যাবে না। যেমন, মা-বাবা কোনো মাজারে গিয়ে রঙ্গিণ সুতা বাধঁতে বললে বা পীরের কাছে কিছু চাইতে বললে তা চাওয়া যাবে না। এটা হল শিরকের একটি উদাহরণ। এছাড়া অসংখ্য উদাহরণ আছে।
কিছুদিন হল আমি নতুন বাসায় উঠেছি। এখনো পুরোপুরি সেটিং করতে পারিনি। আমরা থাকি পাঁচ তলার একটা ফ্যাটে। সব মিলে ভালোই লাগছে। আমাদের বাসার পূর্ব পাশে চৌদ্দতলা কলফিডেন্স ভবন। দেখলেই গা শিউরে উঠে। যদি ওটাও ভেঙ্গে পড়ে তবে তার তলায় চলে যাবে আমাদের ছয় তলা ভবনটি। মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন। মৃত্যু থেকে সে পালাতে পারবে না। যদিও সে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকে তবুও মৃত্যু তাকে ধরবেই। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। তবুও আমরা সবাই মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করছি। এই ণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সুখী করার জন্য আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই। এটা বৃথা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু অনন্ত জীবনকে আমরা ভুলে আছি। অথচ আখিরাতের জীবনই হলো স্থায়ী। আখিরাতের সফলতাই মানুষের আসল সফলতা। দুনিয়াতে আমরা যার টাকা বেশি প্রভাব প্রতিপত্তি বেশি তাকেই আমরা সফল মানুষ বলে থাকি। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করে থাকি। অথচ আখিরাতের তুলনায় এটা কোনো সফলতাই নয়। বরং কিছুই না। সফল মানুষ ওই ব্যক্তি যে ব্যক্তি পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ব্যর্থ ওই মানুষের জীবন যে আখিরাতে পাপের পুরস্কার হিসেবে জাহান্নাম পাবে।
মার্কিন ভূতাত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য মতে, উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। এটা হলো মানুষের গবেষণার ফল। মানুষ সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে গবেষণা করে থাকে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রহস্যের কুল কিনারা সে করতে পারে না। পাওয়া সম্ভবই হয় না। সে অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। তবে মানুষকে আল্লাহই সে মতা দিয়েছে। সে জন্য অনেক বড় বড় বিধর্মী বিজ্ঞানী, ডাক্তার দীর্ঘদিন গবেষণা করার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
ভূমিকম্প এমন সময় হয়েছে যখন ফজরের সময় নিকটবর্তী। তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় তখন। যে সময় আল্লাহ তাঁয়ালা প্রথম আসমানে নেমে এসে হাত বাড়িয়ে বলতে থাকেন, কে আছে আমার কাছে মা ভিা চায় আমি তাকে মা করে দিব, কে আছে আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে তা দিয়ে দিব, কে আছে অসুস্থ আমি তাকে সুস্থ করে দিব। এভাবে প্রতিরাতে আল্লাহ তাঁয়ালা পৃথিবীর মানুষকে ডাকতে থাকেন। আদম সন্তান বড় অকৃতজ্ঞ সে নাক ডেকে ঘুমাতে থাকে। শয়তান তাকে পিঠ চাপড়ে বলতে থাকেন ঘুমাও রাত এখনো অনেক বাকি আছে। মানুষ বুঝেনা শয়তান তার কত বড় শত্র“। সে কখনো মানুষের ভালো চায় না। সে মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার মিশনে নেমেছে। প্রকৃত মুমিন বান্দারা আল্লাহর সাথে সাাৎ করতে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। আমার পরলোকগত বাবাকে দেখেছি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে। কত রাতে যে বাবার কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে তার হিসাব নেই।
নিচে এসে দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে। আমরা কিছুণ নিচে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সবাই বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকে অনেক মন্তব্য করছে, ভবণটির ভিত্তি ভালো না, মানুষ গুনাহ’র মধ্যে ডুবে আছে, এটা হল পাপের ফল। এভাবে অনেকে অনেক মন্তব্য করছে। আমি তাদের কথা শুনতে থাকলাম। এরপর আমরা রুমে চলে আসলাম। এসে বাসার লোকদের অনেকে অনেক মন্তব্য করতে লাগল। কেউ বলল, না আজকে দেখে নামাজ পড়তে হবে। আরেকজন বলল জীবনে কত নামাজ যে পড়ি নাই তার হিসাব নেই; আজকে থেকে নামাজ পড়ব নিয়মিত। একজন ছোটভাই ফরজ গোসল সেরে নামাজ পড়ল। যে প্রতিদিন নাক ডেকে ঘুমায়। আসলে আল্লাহর ধরা বড় কঠিন। আল্লাহ যেদিন ধরবে সেদিন শক্ত করেই ধরবেন। তার পাকড়াও থেকে কেউ পালাতে পারবে না। তাই সময় থাকতে আমাদেরকে হেদায়েতের পথে আসা উচিত। নামাজ পড়ে দুইহাত তুলে আল্লাহর কাছে যখন কোনো মানুষ বলে, আল্লাহ আমার ভুল হয়ে গেছে, বাকী জীবনে আমি আর নামাজ ছেড়ে দিব না। আমি আর রাত জেগে মেয়ের সাথে অবৈধ প্রেম আলাপ করব না। আমি আর খারাপ ভিডিও দেখব না। আমি আর জেনা করব না। আমি আর মানুষের বদনাম করব না। আমি আর সুদ খাব না। তাহলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।
ভূমিকম্প এমন সময় হয়েছে যার একটু পরেই ফজরের সময় শুরু হয়। যে সময় মানুষ নামাজ না পড়ে নাক ডেকে ঘুমাই। সে সময় ভূমিকম্পের প্রচন্ড কাঁপুনিতে মানুষ জেগে উঠল। হতদ্যম হয়ে ছুটে পালাতে লাগল শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর জন্য। অথচ তারা জানে না মৃত্যু থেকে কেউ পালাতে পারবে না। প্রতিদিন মসজিদে যত মানুষ হয় ভূমিকম্পের দিন মানুষ তার পাঁচগুণ থেকে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাক ভূমিকম্পের কারণে অসিলায় কিছু মানুষ হেদায়েত হলে তি কি? ভূমিকম্প যেন ফজরেই এলার্ম।
এর বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরে ল ল লোক যে মারা যাবে তাতে সন্দেহ নেই। অথচ এ নিয়ে মানুষের কোনোই মাথা ব্যথা নেই। সবাই আল্লাহকে ভুলে আছে। অপসংস্কৃতিতে ডুবে আছে তরুণ-তরুণীরা। কোরআন-হাদীস ছেড়ে দিয়ে নাচ-গান-ব্লু ফিল্ম দেখে রাত অতিবাহিত করছে। নিজেদেরকে ধ্বংস করছে। আর আল্লাহর আজাবের শিকার হওয়ার বস্তু হচ্ছে। তাই সময় থাকতে আমাদের সাবধান হতে হবে। তওবা করে পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করতে হবে। ভূমিকম্পে হোক যেভাবেই হোক মৃত্যুর সময় আমার মুখে যেন কলেমা নসিব হয়। আমীন।
যোগাযোগ:০১৭৬৬১০৭০৮৮
বিষয়: বিবিধ
১৩৬১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন