মহান আল্লাহর পরিচয়
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ১৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৮:৩৯ দুপুর
আল্লাহ আমাদের প্রভু। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি মহা পরাক্রমশালী প্রবল প্রজ্ঞাময়। তাঁর কোনো শরীক নেই। কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি; তিনিও কাউকে জন্ম দেননি। আল্লাহর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা কেউ নেই। আল্লাহ কারো মুখাপেী নই। আমরা সবাই তাঁর মুখাপেী। তিনি চন্দ্র সুর্যের উদয় অস্ত ঘটান। তিনি সাগরের বুকে ঢেউ তোলেন। তিনিই পাহাড়কে দৃঢ়তা দান করেছেন যাতে পৃথিবী হেলে না পড়ে। তিনি জমিনকে বিছানা বানিয়েছেন। এ ছাড়া মানুষের জীবন ধারণের জন্য নানা রকম ফলমূল পানি তাজা শাক শবজি উৎপন্ন করেছেন। তিনি যাকে খুশি মতা ধনী করেন; যাকে খুশি তাকে বিখারী বানান। যাকে ইচ্ছ সম্মানিত করেন; যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। তিনি সকল মতার উৎস। তিনি যা খুশি তাই করেন। আল্লাহ আমাদের মনের গোপন কথাও জানেন। পাতালে বসবাসরত ছোট একটি প্রাণীকে কেউ না দেখলেও তিনি ঠিকই দেখতে পান। তার মনের খবর রাখেন। তার গোপন বেধ জানেন। তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। তার প্রয়োজন পুরণ করেন। তিনি হলেন দয়ার সাগর। আমরা অপরাধী তিনি গাফুরুর রাহীম। দুই হাত তুলে মা চাইলে তিনি মা করে দেন। তিনি সমগ্র পৃথিবীর মালিক। তিনি একসাথে সকল সৃষ্টিকে দেখেন। তিনি সবার কথা শোনেন। তিনি আমাদেরকে খাওয়ান। আমাদেরকে পান করান। অসুখ হলে তিনি আরোগ্য দান করেন। এই পৃথিবীর সকল কিছু তিনি সৌন্দমন্ডিত করে তৈরী করেছেন। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো ক্রটি নেই। একমাত্র তিনিই নির্ভুলভাবে কাজ করেন। তিনি কোনো কিছু ভুলে যান না। তাঁর সৃষ্টিকে তিনি বড়ই ভালোবাসেন। মানুষ নিজকে নিজে যত ভালোবাসে আল্লাহ্ তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। বিষয়টি বিবেকের বিচারে গভীর ভাবে চিন্তা করলে পরিস্কার বুঝা যায়। কারন আমাদের সুন্দর চেহারা হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, নাক-মুখ, চোখ আল্লাহ্ পাক মায়াবী কুদরত দিয়েই সৃজন করেছেন।
আল্লাহ তাঁয়ালা আসমান-জমিন, সৌরজগৎ, আত্মার জগৎ, বেহেশত-দোযজ, ফেরেশতা, জীন-ইনসানসহ গোটা মাখলুকাত অর্থাৎ জীবজন্তু, জড়বস্তু এবং সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। এক কথায় বলা যায় গোটা আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের । তিনি সমস্ত জীবের ভাগ্যর নিয়ন্ত্রক। তিনি সকল জীবের পালনকর্তা ও সংহারকর্তা। আল্লাহ তখনো ছিলেন যখন আর কিছু ছিলো ন। আল্লাহ তখনো থাকবেন যখন কিছুই থাকবে না। অর্থাৎ আল্লাহ চিরকাল ছিলেন, চিরকাল আছেন, চিরকাল থাকবেন। চিরন্তন চিরস্থায়ী অস্তিত্ব তাঁর। তিনি ধ্বংসের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ ছাডা সব কিছুই ধ্বংসশীল। আল্লাহর ুধা নেই, পিপাসা নেই। আল্লাহ কিছু খান না। আল্লাহ কিছু পান করেন না। আল্লাহর তন্দ্রা নেই, নিদ্রা নেই। আল্লাহ অন্যমনস্ক হন না। আল্লাহকে কোনো সৃষ্টি দেখতে পায না। আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই থাকা সম্ভব নয়। আল্লাহ সব কিছুই শোনেন। মহাবিশ্বের সর্বত্র উচ্চারিত প্রতিটি কথা ও উত্থিত প্রতিটি আওয়াজ তিনি একই সময়ে শুনতে পান। আল্লাহ একচ্ছত্র সম্রাট। গোট মহাবিশ্ব আল্লাহর সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের মালিকানায় ও পরিচালনায় তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর কোনো কান্তি নেই। প্রতিটি প্রাণী, বস্তু ও শক্তি অস্তিত্ব লাভের জন্য ও টিকে থাকার জন্য তাঁর মুখাপেী। আল্লাহ সকল কিছুর ওপর মতাবান। মহাবিশ্বের সর্বত্র তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন। আল্লাহর শক্তি অসীম। আল্লাহর সৃষ্টি-মতার শেষ নেই। আল্লাহ জীবন দেন। আল্লাহ মৃত্যু দেন। আল্লাহ জীবিত থেকে মৃতকে এবং মৃত থেকে জীবিতকে বের করে আনেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো ওপর বিপদ-মুছীবাত আসতে পারে না। আল্লাহর মতা অপ্রতিরোধ্য। আল্লাহ যদি কারো কল্যাণ করতে চান তাতে বাধ সাধবার সাধ্য কারো নেই। আল্লাহ যদি কারো অ-কল্যাণ করতে চান তা প্রতিরোধ করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ সর্ব-বিজয়ী। আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী।
আল্লাহ শাস্তি দাতা। আল্লাহর পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন। আদেশ-নিষেধের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত মতা একমাত্র তাঁর। আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত আইন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করতে পারেন। আল্লাহ কোন কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে বলেন “হও”, আর অমনি তা হয়ে যায়। আল্লাহ শূন্য থেকে বা অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি করতে পারেন। আল্লাহ যা করেন তার জন্য কারো কাছে জওযাবদিহি করতে হয় না। অন্য সবাইকে তাঁর নিকট জওয়াবদিহি করতে হয়। আল্লাহ সকল মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সকল যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর স্রষ্টা। আল্লাহ সময়ের ছয়টি অধ্যায়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেন। আল্লাহ মহাবিশ্বকে সাতটি স্তর বা অঞ্চলে বিন্যস্ত করেছেন। আল্লাহর নির্দেশেই আসমান ও পৃথিবী সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। আল্লাহ মহাবিশ্বের সকল কিছুর আকার, আয়তন ও গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করে প্রত্যেকটিতে তার করণীয় বলে দিয়েছেন। আসমান ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর ফরমানের অধীন। আল্লাহ সূর্য ও চাঁদকে এমন নিয়মের অধীন করে রেখেছেন যার ফলে পৃথিবীতে একের পর এক বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। রাত দিনের আবর্তন ঘটে এবং মানুষ মাস ও বছরের হিসাব রাখতে পারে। আল্লাহ আলো সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ আঁধার সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ছাঁয়া সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠকে বাসোপযোগী ও আবাদযোগ্য বানিয়েছেন। আল্লাহ পৃথিবীর চারদিকে বায়ুর একটি পুরু বেষ্টনী সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীকে মাটি, বন, ঘাস, উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, পানি, সামুদ্রিক, মাছ, পাখি, পশু, তাপ-বিদ্যুৎ, খনিজ ইত্যাদি সম্পদে ভরপুর করেছেন। আল্লাহ মাটির গভীরে সোনা, রূপা, হীরা, লোহা, তামা, কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস ইত্যাদি সম্পদ মওজুদ রেখেছেন। আল্লাহ পানি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে যমীনকে সিক্ত করা, প্রাণীর পিপাসা মেটানো ও দানা-বীজকে অংকুরিত করার গুণ দান করেছেন। আল্লাহ আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে তাপ ও আলো বিতরণের গুণ দান করেছেন। আল্লাহ বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে বিভিন্ন যন্ত্র চালানো ও বালবের ভেতর সঞ্চালিত হয়ে আলো ছড়ানোর গুণ দান করেছেন। আল্লাহ পানি থেকে বাষ্প, বাষ্প থেকে মেঘ ও মেঘ থেকে বৃষ্টি সৃষ্টি করেন। আল্লাহর নির্দেশে বায়ু প্রবাহিত হয়, বায়ুতে ভর করে মেঘ দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ মধুসহ বিভিন্ন দ্রব্যে রোগ নিরাময়ের গুণ দান করেছেন। আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাঁর অবাধ্যতা করার মতা দেননি। ফেরেশতারা আল্লাহর বিশ্বস্ত অনুগত কর্মচারী। আল্লাহ আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ জিনদেরকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্যতা করার মতা দিয়েছেন। আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মানুষকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্য হওয়ার মতা দিয়েছেন।
আল্লাহ জিন ও মানুষদেরকে তাঁর আনুগত্য করার পুরস্কার ও অবাধ্যতা করার শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদম (আ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (রা) থেকে মানুষের বংশধারা চালু করেছেন। আল্লাহ নারী পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করেছেন। আল্লাহ পুরুষকে দুর্ধষতা, সাহসিকতা, প্রিতা ও কঠোরতার বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। আল্লাহ নারীকে নম্রতা, মায়া-মমতা ও সৌন্দর্যানুভূতির বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। আল্লাহ সকল মানুষ ও অন্যান্য সকল প্রাণীর রিজিক এর ব্যবস্থা করে থাকেন। আল্লাহর সৃষ্ট নিয়ামতগুলো গণনা করা মানুষের পে সম্ভব নয়। আল্লাহ কাউকে বেশি অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীা করেন। আবার কাউকে কম অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীা করেন। আল্লাহই মানুষের আকৃতি, গায়ের রঙ, ভাষা, কণ্ঠস্বর, চলনভংগি ইত্যাদির পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ জীবকুলের মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান দান করেছেন। তবে জ্ঞানময় আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এই জ্ঞান খুবই সামান্য। আল্লাহ মানুষকে চিন্তাশক্তি দান করেছেন। আল্লাহ মানুষকে দেখার শক্তি দান করেছেন। আল্লাহ মানুষকে লেখার শক্তি দান করেছেন। আল্লাহ মানুষকে বলার শক্তি দান করেছেন। আল্লাহ মানুষকে শোনার শক্তি দান করেছেন। একমাত্র মানুষকেই তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ জোর করে তাঁর জীবন বিধান কোন জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেন না। এটা তাঁর ফিতরত বিরোধী। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যদি তারা তাদের চিন্তাধারা ও কর্মধারা পরিবর্তন না করে।
আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের জন্য দুইজন ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অবিরাম লিখে চলছেন। আল্লাহ মানুষকে দুর্বল রূপে সৃষ্টি করেন, যৌবনে তাকে শক্তিমান করেন, বার্ধক্যে আবার তাকে দুর্বলতর করে দেন। আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। নির্দিষ্ট ণেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। দুর্ভেদ্য দুর্গের ভেতর লুকিয়ে থাকলেও মৃত্যু থেকে রেহাই পাবে না। আল্লাহ মহাশিল্পী। আল্লাহ মহাবিজ্ঞানী। আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য তুলনাহীন। আল্লাহর কোন অপারগতা নেই। পৃথিবীর গাছগুলোকে কলম বানিয়ে, সমুদ্রগুলোর পানির সাথে আরো সাত সমুদ্রের পানি মিলিয়ে যদি কালি বানানো হয়, তবুও আল্লাহর কথা লিখে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহর জন্যই সব সম্মান। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাঁয়ালার জন্যই।
মুঠোফোন:০১৮২০১৪৭৬৫৪
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন