কোরআন পাঠের ফযিলত
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:১৬:৪৩ দুপুর
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন “যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে উহা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও”। (আরাফ-২০৪)।
রাসূল (স.) বলেছেন, “কোরআন তিলাওয়াতের বরকতে অনেক লোক উন্নতি করবে, আর অনেক লোক অবহেলার কারণে লাঞ্ছিত হবে”।
ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে লাভের চিন্তায় সবাই অস্থির। লাভের পিছনে আমরা ছুটছি। লাভের জন্য কাজ করছি। লাভের নিরন্তর প্রতিযোগিতার যেন শেষ নেই। মজার বিষয় হলো এ জীবন হলো অস্থায়ী। বরং পরকালের জীবনই হলো স্থায়ী। অথচ পরকালের অনন্ত জীবনকে সবাই ভুলে আছি। কেউ এ পৃথিবীতে থাকতে পারব না জেনেও অস্থায়ী জীবনের বাসস্থানকে পাকাপোক্ত করার ব্যর্থ প্রয়াশ চালচ্ছি দিনরাত।
বিশ্বব্যাপী চলছে কমার্শিয়াল যুগ। সকল কাজে লাভ খোঁজা আমাদের অন্যতম এক স্বভাব। লাভ ছাড়া কেউ কোনো কাজ করতে চাই না। কথায় আছে পাগলও লাভ বুঝে। লাভের হিসাব না মিললে পাগল সেই পথ থেকে নাকি সরে আসে। কথাটা কতটুকু সত্য তা জানি না। যেখানে যত লাভ সেখানে মানুষের দৌঁড়ঝাপও ততো বেশি। নগদ লাভের আশা সবাই করে। কেউ বাকিতে বিশ্বাস করে না। বাকির খাতাকে শূণ্য রাখতেই বেশি পছন্দ করে মানুষ। কথায় অছে, “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকির খাতা শূণ্য থাক”। বলছিলাম কোরআন পাঠের ফযিলত সম্পর্কে।
পবিত্র কোরআন সমগ্র মানবজাতির সংবিধান। আমাদের জীবন চলার গাইডবুক। মহান আল্লাহ মুহম্মদ (সা.) এর উপর এটি অবতীর্ণ করেন। যাতে করে মানুষ সঠিক পথের দিশা পেতে পারে। ইহকালে যাতে মানুষ ভালোভাবে চলতে পারে। পরকালের চূড়ান্ত পরীায় উত্তীর্ণ হতে পারে। অথচ দুঃখের সাথে বলতে হয় আজ আমরা এই কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কত বিষয়ে আমাদের পড়াশোনা। কত কিছু নিয়েই যে আমাদের ব্যস্ততা। মাত্র একটিবারের মত কোরআন পড়ে দেখিনা। দুনিয়াতে যারাই পবিত্র কোরআন থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে পরকালে আল্লাহ তাঁয়ালা তাদেরকে অন্ধ করে উঠাবেন। পার্থিব জীবনকে সংকটাপন্ন করে দেবেন। আর মৃত্যুর পর তাদের জন্যই অপো করছে নিদারুন দুঃখকষ্ট।
পবিত্র কোরআন পাঠের অশেষ ফযিলত রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত কোরআন পাঠ করতেন। কোরআনের আলোকে তারা জীবন পরিচালিত করতেন। কোরআন এমন এক পরশ পাথর যার স্পর্শে খারাপ মানুষও সোনার মানুষে পরিণত হয়। আরবের সবচেয়ে খারাপ মানুষগুলো ভালো মানুষ হয়েছে এই কোরআনের ছোঁয়ায়। যে ব্যক্তি নিয়মিত কোরআন পাঠ করবে তার জীবন খোদার রঙে বঙিণ হয়ে উঠবে। যে মানুষ কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করবে তার দিন ভালো যাবে। সকল কাজে আল্লাহর রহমত থাকবে। সে দুঃশ্চিন্তামুক্ত জীবন লাভ করবে। তার উপর আল্লাহর ফেরেশতাদের দোয়া থাকবে। কোরআন পাঠের ফযিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
হাদিসে এরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চায় তবে সে যেন বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করে”। যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেছে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ। এ মর্মে রাসূল (স.) বলেন, “কিয়ামতের দিন কোরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, কোরআন তিলাওয়াত করতে করতে জান্নাতে প্রবেশ কর”। সুতরাং কোরআন পাঠ জান্নাতে প্রবেশের উসিলা। মহানবী (স.) বলেছেন, “ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কোরআন পড়া”। তিনি আরো বলেন, “তোমরা কোরআন পড়, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে”। (মুসলিম)
মহানবী (স.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কোরআন শিখে ও অপরকে শিা দেয়”। (বুখারী)
মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে, লোহায় পানি লাগলে যেমন মরিচা ধরে তেমনি মানুষের অন্তরসমূহেও মরিচা ধরে। মহানবীকে (স.) জিজ্ঞাসা করা হলো “হে আল্লাহর রাসূল (স.) এর প্রতিষেধক কি? উত্তরে মহানবী (সঃ) বললেন, মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা এবং কোরআন তিলাওয়াত করা”।
কোরআন তিলাওয়াত মানবাত্নাকে পরিশুদ্ধ করে। মনে আনে অনাবিল আনন্দ দেহে বয়ে যায় অফুরন্ত প্রশান্তি। কোরআন তেলাওয়াত করা মুমিনদের জন্য সওয়াবের কাজ। এ মর্মে রাসূল (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে তার জন্য ১০টি নেকী রয়েছে”। (তিরমিযী)
কোরআন হলো জ্ঞানের সাগর। জ্ঞান আহরণ এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার জন্য কোরআন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংলাপ করা হয়।
রাসূল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন শিা করেছে এবং তাতে যা আছে তদানুযায়ী আমল করেছে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির পিতা-মাতাকে এমন একটি নূরের মুকুট পরিয়ে দেবেন যার আলো সূর্যের আলো হতেও অধিকতর উজ্জ্বল হবে। আমাদের দুনিয়ার গৃহে সূর্যের কিরণ পতিত হলে ঘর যেরূপ আলোকিত হয়, তার আলো তদাপো অধিক উজ্জ্বল হবে। সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি ভালোভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে জানে না, পড়তে গিয়ে পুনঃপুনঃ আটকে যায় এবং তোতলায়, তার জন্যও দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে”।
রাসূল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন শরীফ পড়বে ও তা হেফাযত করবে এবং তার হালালকৃতকে হালাল ও হারামকৃতকে হারাম জেনে চলবে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন এবং তার আত্বীয়বর্গের মধ্য হতে এমন দশজন লোকের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম সাব্যস্ত হয়েছিল। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে র্বণতি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা পবিত্র কোরআন মাজীদ পাঠ করো। কনেনা, কিয়ামতের দিন কোরআন, তার পাঠকরে জন্য সুপারশিকারী হিসাবে আগমন করবে’’।
বন্ধুরা, আমাদের দিনের শুরুটা হোক কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে। আমরা প্রতিদিন কোরআনের অন্তত দুই তিনটি আয়াত হলেও পাঠ করি। আসুন নিজেকে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে তুলি। ইসলামের আলোকে জীবন গড়ি। সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হোক আমাদের জীবন।
মুঠোফোন: ০১৮২০১৪৭৬৫৪
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন