মন খারাপের দলে

লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:০৫:৫৪ সকাল



অনেকেই প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ভাই আপনার কি মন খারাপ। তখন আমরা কেউ উত্তর দিই হ্যাঁ আমার মন খারাপ। আামর কেউ বলে না মন ভালোই আছে-তবে আমি আসলে অন্য একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলামতো তাই এ রকম মনে হচ্ছে। এভাবে এগিয়ে চলে আমাদের জীবন। এ জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি। অনেক মানুষের সাথে সখ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সৃষ্টিকর্তা সত্যিই সুন্দর। অপরূপ তাঁর সৃষ্টিজগৎ। পৃথিবীর পরতে পরতে তিনি বিছিয়ে দিয়েছেন মায়ার চাদর। মানুষ হল মায়ার খনি। এই যে লালনের একটা গান আছে না-“এই মানুষে আছে রে মন যারে বলে মানুষ রতন” মহান আল্লাহ তাঁয়ালা এই মানুষের ভেতর একাধারে সৌন্দর্য, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি, মান, অভিমান, রাগ, ঈর্ষা, ফুঁকে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন বিবেকবোধ। যার দ্বারা সে নিজেকে চালিত করতে পারে। সৎপথের সন্ধান করতে পারে। যার বিবেকবোধ ভালো, বন্ধু ভালোÑ ভালো-খারাপের মূল্যায়ন সে করতে যে জানে। সে নিজেকে ভালো পথে পরিচালিত করে। যার বিবেকবোধ খারাপ, সঙ্গী খারাপÑ সে নিজেকে খারাপ পথে পরিচালিত করে। ভালো-খারাপের মূল্যায়ন করতে সে জানে না। ভালো পথের সন্ধান সে পায় না। আল্লাহর অপূর্ব দৃষ্টিনন্দর সৃষ্টি দেখলে চোখ সরাতে মন চায় না। আমরাতো তাঁকে দেখিনি দেখেছি তাঁর সৃষ্টিকে। আর মানুষ হলো আল্লাহর সবশ্রেষ্ট সৃষ্টি। মানুষকে তিনি উত্তম আকৃতিতে গঠন করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই এবাদত করার জন্য। মানুষের মতো এমন মনোহর, এমন মহৎ সৃষ্টি আর নেই। মানুষই সৃষ্টি প্রধান সৌন্দর্যের ধারক-বাহক। মানুষ নিজে সুন্দর সে কারণে সে সৌন্দর্যের পুজারীও। সুন্দর তার কাছে ভালো লাগে। মায়াবী মুখগুলো তাকে চম্বুকের মতো আকর্ষণ করতে থাকে।

পৃথিবীতে যত রকম জিনিস আছে তার ভেতর মানুষ আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে থাকে। মানুষের সৌন্দর্যের কাছে আমি বারবার পরাজিত হই। মানুষের মায়াবী মুখের কাছে আমি আত্নসমর্পন করি। মানুষের প্রতি আমার দুই ধরণের ধারণা কাজ করে। এক. এ জীবনে আমি খুব কমই ভালো মানুষ পেয়েছি। দুই. ভালোবাসার মতো যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে তাও মানুষ। মানুষকেই ভালোবাসা যায়। মানুষের সাথে গল্প করে, মানুষকে ভালোবেসে যত তৃপ্তি পাওয়া যায় তা অন্য কোনো প্রাণীকে ভালোবেসে তা কি পাওয়া যায়!

যে রাগ করে সে ভালোবাসতেও পারে। যে একটুতেই অভিমান করে বসে তার বুকের ভেতর ভালোবাসার আকর জমা থাকে। তবে অধিকাংশ মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারে না। যার ফলে দেখা যায় যে অভিমান বা রাগ করে আছে তার থেকে আমরা দূরে সরে যাই। এটা আসলে একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু নয়। আপনি দেখবেন, যে ব্যক্তি আপনাকে ভালোবাসে সে-ই আপনার প্রতি বেশি রাগ করে। এটাসেটা নিয়ে অভিমান করে বসে। আপনাকে ভালো কাজের পরামর্শ দেয়। খারাপ কোনো কিছু দেখলে সতর্ক করে। আপনাকে যে ভালোবাসে না সে আপনার উপর রাগ কিংবা অভিমান করার প্রশ্নই উঠে না। যাকে আপনি ভালোবাসবেন না তার উপর রাগ-ই বা কি আর অভিমান-ই বা এসব কোত্থেকে জন্মাবে আপনার ভেতর। আমার একটা স্বভাব হল আমি হুটহাট করে কারো সাথে মিশতে পারি না। যে কোনো মানুষকেই আমি প্রথমে অবজাভেশন এর মধ্যে রাখি। তারপর তাকে নিয়ে স্টাডি করি। তারপর তার সাথে বন্ধুত্ব করি বা করি না। বন্ধুত্ব না করলে যে শত্র“তা পোষণ করি এমন কোনো কথা নেই। তার সাথে এমনিতেই পরিচয় থাকে। তবে গভীব সম্পর্কে জড়াই না। কারণ জেনেবুঝে কোনো খারাপ মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়া মানে হলো চোখে দেখে আগুনে ঝাপ দেয়া। নিজের কপালে নিজে কুড়াল মারার মতো অবস্থা। যাকে ভালোবাসি তাতে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলি। তার উপর নির্ভরশীলতা করি বেশি। বিশ্বাস করি বেশি। যে কোনো কাজে যে কোনো জায়গায় তাকে আমার সাথে চাই। কিশোরকাল থেকে আজ পর্যন্ত অনেক মানুষের সাথে উঠাবসা করেছি তবে খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে কয়েক জনের সাথে। গুনে গুনে তাদের নাম বলা যাবে এখানে। তবে আমি তাদের কারোরই নাম বলব না।

যাদেরকে আমি ভালোবাসি কিংবা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি তাদের উপর রাগ আর অভিমানও করি বেশি। দেখা গেছে ছোটখাট কোনো কারণে রাগ করে বসে আছি। অথবা একটুতেই অভিমান করে গোমড়া মুখে বসে আছি। রাগলে অনেকে বুঝে আর অনেকে বুঝতে একটু সময় নেয়। অনেকে এমন আছে দরুন, একটু কথা কাটাকাটি কিংবা ভুল বোঝাবুঝির জন্য কয়েক দিন ধরে তার সাথে কথা বলা বন্ধ। মনে মনে ভবি, যাকে এত কাছের বন্ধু ভাবতাম সে এই কাজটা করতে পারল। না তার সাথে আর কথা নয়। এরপর একদিন দুইদিন তিনদিন কথা বলা বন্ধ থাকে ঠিকই তবে ভিতরে ভিতরে তার জন্য মন আমার পুড়তে থাকে। কারণ, তাকে যে আমি ভালোবাসি। ভালো না বাসলে তার জন্য এত খারাপ লাগত না। এক সময় একে অপরের সাথে কথা বলি। কারণ, কথা বলা ছাড়া থাকতে পারি না। তার হাসি মুখ না দেখলে আমার ভালো লাগে না। তার সাথে ঘুরতে না পারলে, চায়ের কাপে আড্ডা কিংবা রাতে লেকের ধারে বসে বাতাস না খেলে আমার যেন ভাতই হজম হয় না। তাই আবার আগের মত কথা বলি। হাসি, ঘুরি, চা পান করি, গল্পে মেতে উঠি। মশকারি, দুষ্টামি সবই এক সাথে করি। এ সময় অনেক ছোট ভাই আমার কাছে এসে বলে ভাই, আপনার কি মন খারাপ। আমি বলি হ্যাঁ। সে বলে কেন খারাপ? আমি বলি- একজন পরিপূর্ণ মানুষ মাত্রই মন খারাপ হবে। হাসবে, কাঁদবে, রাগ অভিমান করবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটলেই অস্বাভাবিক বলা যায়। কারণ, যে ব্যক্তির মন খারাপ হয় না সে হয় ফেরেশতা না হয় পাগল। তাই আমার ঘন ঘন মন খারাপ হয়। কারণ, আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের ভালোবাসা আমি উপলব্ধি করি। আমি চাই, মানুষের ভালোবাসায় রঙিণ হয়ে উঠুক আমার জীবন। তাইতো আমার মন খারাপ হয় বেশি বেশি। তাই অমি মন খারাপের দলে।

যোগাযোগ

০১৭৬৬১০৭০৮৮

বিষয়: বিবিধ

১২৭০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349204
১০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১৭
349239
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনার মন ভালো হোক এ কামনা করি। কেমন আছেন?
349248
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৮
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : জানলাম অনেক কিছু । আরো লিখুন । আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
349321
১১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৩১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ।

খুব বেশি বেশি ঘন ঘন মন খারাপ হলে কিন্ত পারমানেন্ট ডিপ্রেশনের পেসেন্ট হয়ে যাবেন!

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখুন। শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File