সমকামীতা: যে কারণে বৈধ নয়
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:২৫:১৬ রাত
সমকামীতা বিধ্বংসী এক ভাইরাস। ভয়ানক এক নেশার নাম। যা মূলত মানুষের বিকৃত রুচিরই পরিচায়ক। মানসিক রোগও বটে। যা অতি সুন্দর নগরীকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। সুন্দর সংসারে ভাঙন সৃষ্টি করে। তৈরী করে অশান্তি। পৃথিবীর বিখ্যাত নগরীকে ধ্বংস করেছিল এ মারাতœক ভাইরাস। সে নগরীদ্বয়ের নাম হলো সদূম ও ঘমরা। সেখানকার অধিবাসীরা গণহারে সঙ্গমে লিপ্ত হতো। এখন কোনো শহরের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। সেখানে শুধু পানি আর পানি। সেটি আরব সাগর বা লোহিত সাগরের কোনো অংশে ছিল। সে জায়গাকে ডেড সী (মৃত সাগর) নামে অভিহিত করা হয়। সমকামীতা ভয়ংকর এক আসক্তি। ভয়াবহ এক পাপ কাজ। এ পাপে জড়িত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। সমকামীতায় আসক্ত ব্যক্তি সব সময় অস্থিরতায় ভোগে। এর প্রথম উদ্ভব হয়েছিল হযরত লূত (আঃ) এর সময়ে। প্রকৃতি এবং শারীর কোনোটিই একে সমর্থন করে না। কেবল শয়তানই একে সমর্থন দেয়। সে নানা রকম যুক্তি দেখিয়ে আকর্ষনীয়ভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। যার ফলে বর্তমান বিশ্বে সমকামীতা বৈধতার দাবি উঠেছে। লূত (আঃ) সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াতি কাজ করে মাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তিকে হেদায়াতের পথে আনতে পেরেছিলেন। এছাড়া অধিকাংশ মানুষই পাপ কাজে নিয়োজিত ছিল। এমন পাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছিল যা একদিকে যেমন ঘৃণিত তেমনি অন্যদিকে মারাতœক গুনাহর কাজ। যে কাজ করলে আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হতে থাকে। তারা পুরুষের সাথে যৌনাচার করত। পুরুষের মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করত। তারা তাদের স্ত্রীদের চেয়ে সুদর্শন বালকদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হতো। তাই তারা স্ত্রীদের বদলে সুদর্শন পুরুষদেরকেই যৌন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইত। এসব কারণে কত ঘর যে ভেঙেছে তার হিসাব নেই। সমকামীতা এমন এক ধরণের মানসিক রোগ যা একজন মানুষকে আনভেলেন্সড করে দেয়। নিচে যে সব কারণে সমকামীতা ঠিক না তা আলোচনা করা হলো:
১. ধর্ম সম্মত নয়: পৃথিবীর কোনো (ইহুদী, খিস্টান, ইসলাম) ধর্মই সমকামীতাকে সাপোর্ট করে না। মহান আল্লাহ তাঁয়ালা এ পৃথিবীর সকল কিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করার সময় তাদের জন্য কর্মপন্থা ঠিক করে দিয়েছেন। তাই সৃষ্টিগতভাবে সকল কিছুরই নিজস্ব একটা নিয়ম কানুন রয়েছে। নিয়ম মতো চললেই কেবল তার শান্তি এবং কল্যাণ লাভ হয়। উদাহরণ স্বরূপ-কেউ যদি নিয়ম মেনে গোসল করে তাহলে চার লিটার পানি দিয়েই সে পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে। নিয়ম না মেনে করলে পুরো বঙ্গোপসাগরের পানি ঢাললেও সে পবিত্র হবে না। আমাদের মহানবী (সাঃ) চার লিটার পানি দিয়ে গোসল করেছেন এটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এর বিপরীত দিকে চলতে গেলেই যত রকমের বিপদ ঘটে। সে রকম সমকামীতাও এক প্রকার ভাইরাস। যা আমাদের দেহ-মনে এক প্রকার অশান্তি সৃষ্টি করে। কোনো কিছুতেই আমরা শান্তি পাই না। অশান্তির অনল আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে দগ্ধিভূত করে।
২. স্বস্তিধায়ক নয়: স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সহবাসে যে রকম স্বস্তি এবং তৃপ্তিলাভ হয় তা অন্য কোনোভাবে সম্ভব হয় না। একজন পুরুষ (ইংরেজীতে যাকে এধু বলা হয়) আরেকজন পুরুষের সাথে শারীরিকভাবে মেলামেশা করে পায় না। এটি হতে পারে একজন নারী (ইংরেজীতে যাকে খধংনরধহ বলা হয়) আরেকজন নারীর সাথে যৌন সংসর্গের ক্ষেত্রেও। একমাত্র নারী-পুরুষের দৈহিক মেলামেশাই মানসিক ও শারীরিক স্বস্তি দিতে পারে। এর বিপরীতে যত প্রকার অশান্তি।
৩. শারিরীকভাবে সাপোর্ট করে না: মানব দেহের যে কলকব্জা রয়েছে এর প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আর চাহিদা রয়েছে। একে যদি আমরা ভিন্নভাবে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের শরীরেরই ক্ষতি হবে। এতে উভয়ের মেরুদন্ডে ব্যাপক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। পুরুষের সাথে সঙ্গম করেই একজন নারী পরিপূর্ণ যৌন সুখ লাভ করতে পারে। একজন পুরুষ শুধুমাত্র নারীর সাথে যৌন সম্ভোগ করেই শারিরীক ও মানসিক তৃপ্তি এবং সুখ লাভ করতে পারে। একজন নারী একজন পুরুষ আকর্ষণ করবে এটাই স্বাভাবিক। পুরুষের আকর্ষণে নারী নদীর মতই ছুটে যায়। নারীর আকর্ষণে পুরুষ সাত সাগর তের নদী এমননি উঁচু পাহাড়ও মাড়াতে পারে।
৪. মানসিক অস্থিরতা বাড়ে: একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিয়ে যেভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। ধীরস্থিরভাবে জীবনকে অতিবাহিত করতে পারেÑসমকামী মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। কেননা পুরুষ সঙ্গীটি যার তার সাথেই যৌন কাজে জড়িয়ে যেতে পারে। কেননা সে কোনো সীমারেখা মানে না। বল্গাহীনভাবে চলতেই সে ভালোবাসে। সে কেবল নতুন নতুন সঙ্গী চায়। নারীও তেমনি নতুন নতুন নারী সঙ্গীর পিছনে ছুটে চলে। এতে করে তার শুধু অস্থিরতাই বাড়তে থাকে। সুখের চেয়ে দুঃখের পাল্লাটা ভারী হয়ে যায়।
৫. সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য ব্যাহত: সৃষ্টিকর্তা সকল কিছুই একটা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তা ব্যাহত হয় এই সমকামীতার দ্বারা। মানব জাতি সৃষ্টি করার অন্যতম উদ্দেশ্যে হল সে বংশবৃদ্ধি করবে। আর এ বংশ বৃদ্ধি কেবল নারী পুরুষের যৌন মিলনের দ্বারাই সম্ভব অন্য কোনোভাবে নয়। সমকামীতার দ্বারা কখনো বংশ বৃদ্ধি ঘটে না। এতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিই কেবল বৃদ্ধি পায়।
৬. এইডস জীবানু ছড়ায়: পুরুষ কোনো নারীর সাথে সঙ্গম করার সময় নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে এক ধরনের লালা নির্গত হয় যার ফলে সহজে সঙ্গম করা যায়। এর বিপরীতে একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের সাথে সঙ্গম করার সময় লালা বা যৌনরস নির্গত হয় না যার ফলে মলদ্বার দিয়ে অনেক সময় রক্ত বের হয়ে আসে। সেই রক্তের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে এইডস ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সমকামী ব্যক্তি একে অপরের শরীরে এইডস নামক ভয়ংকর ভাইরাস সরবরাহ করে। যে ভাইরাস মানুষের শরীরকে ধ্বংস করে। শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেয়।
৭. মা-বাবার অধিকার থেকে বঞ্ছিত হয়: সমকামী ব্যক্তি পরস্পর মিলিত হয় বটে হবে পুরুষে পুরুষে মেয়ে মেয়ে মিলিত হলেতো আর সন্তান জন্ম নিতে পারে না। তাই তারা উভয়েই মা-বাবার অধিকার থেকে বঞ্ছিত হয়। সাময়িক আনন্দ লাভ করে সত্য তবে দীর্ঘস্থায়ী সুখ থেকে তারা বঞ্ছিত হয়।
৮. আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে: সমকামী ব্যক্তি পরস্পর পরস্পরের প্রতি কিছুদিন পর্যন্ত টান অনুভব করলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর আর্কষন হারিয়ে ফেলে। যার ফলে তারা আর আগের মত মেলামেশা করতে পারে না। তাই তাদের ভেতর এক ধরণের মানসিক অশান্তি বিরাজ করে। মোটকথা তারা একে অপরের প্রতি কোনো আকর্ষণই পোষণ করে না। তারা নতুন কোনো সমকামী ব্যাক্তিকে খুঁজে বেড়ায়।
৯. ভয়াবহ পাপ: সমকামীতা এমন এক ভয়াবহ পাপ যার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। এমনও বলা আছে যে সমকামী ব্যক্তিকে কোনো উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দিয়ে তার মাথার উপর পাথর বর্ষণ করতে পলা হয়েছে। আর এক হাদীসে সমকামী ব্যক্তি আগুন হয়ে একে অন্যকে জ্বালানোর কথা উল্লেখ আছে।
১০. শয়তানকে খুশি করা হয়: যে কোনো পাপ কাজ করলেই শয়তান খুশি হয় আর আল্লাহ নারাজ হন। সমকামীতা এমন এক পাপ কাজ যা করলে শয়তান একটু বেশিই খুশি হয় বলা যায়। তাই শয়তান বিভিন্ন ব্যাখ্যা যুক্তি দাঁড় করিয়ে একে আমাদের সামনে বৈধ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
১১. আল্লাহকে নারাজ করা হয়: এক কথায় আল্লাহর আদেশ না মানলে তিনি আমাদের উপর নারাজ হয়ে যান। আর যার উপর আল্লাহ নারাজ হয় বস্তুত তার যাওয়ার কোনো জায়গাই আর আমাদের মুক্তির পথ থাকে না।
১২. আল্লাহর গজব অপেক্ষা করে: সমকামী ব্যক্তি যদি এ পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে তখন তার জন্য কেবল আল্লাহর গজবই অপেক্ষা করতে থাকে। বর্ণিত আছে যে, “যখন কোনো পুরুষ অপর পুরুষে উপগত হয়, তখন আল্লাহর গজবের ভয়ে আরশ কাঁপতে থাকে এবং আকাশ পৃথিবীর উপর ভেংগে পড়ার উপক্রম হয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত আকাশকে তার প্রান্তসীমায় ধরে রাখে এবং সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে থাকে।”
১৩. পরিসংখ্যানগত: একটা বিষয় ভেবে দেখুন, আজ থেকে পৃথিবীর সকল মানুষ যদি সমকামী হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষ জন্মানোর কোনো পদ্ধতি গ্রহন না করে সে ক্ষেত্রে আগামী ১৫০ বছরের মধ্যে পুরো মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
একমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন পালনের মধ্য দিয়েই একজন মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে। সকল ধর্মই এই সমকামীতাকে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ সমকামীতা মানুষের বংশ বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়। সৃষ্টিকর্তা নারাজ হন। হাজার হাজার বছরের মানবতার মূল্যবোধকে রুদ্ধ করে দেওয়ার কালো পথ। তাই বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা করে আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি কি সমকামী হবেন নাকি হবেন না।
বিষয়: বিবিধ
১০০৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান এর দৃষ্টিতেও আলোচনা প্রয়োজন ছিল।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন