শরৎ এসেছে: শিউলি বকুলের সুবাস নিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:০০:১০ সকাল
রাতে দূর্বাঘাসের উপর শিউলি ফুল ঝরে পড়ে। শিউলি শরতের নিজস্ব ফুল। শরৎ আর শিউলি নাম দুটি পাশাপাশি উচ্চারিত হয়। একে যেন অন্যের পরিপূরক। পাশের বাড়ির কিশোরী মেয়েটি রোজ সকালে ফুল কুড়াতে আসে গাছ তলায়। তার চোখে মুখে রাজ্যের তৃষ্ণা। মেয়েটি মালা বানিয়ে খোঁপায় পরে। হিন্দু মহিলাটি রোজ সকালে ঢালি হাতে ফুল নিতে আসে। সকাল সকাল মন্দিরে ফুল দিলে নাকি দেবতা খুশি হয়। সংসদ ভবণ এলাকায় অনেকগুলো বকুল গাছ চোখে পড়ে। শরৎ এলে ফুলে ফুলে ভরে যায় সে গাছগুলো। অনেক মহিলাকে সেসব গাছ থেকে ফুল কুড়াতে দেখা যায়। সকালে ব্যায়াম করতে আসা অনেক বয়স্ক মানুষও শখ করে এক মুঠো বকুল হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকেন। ফুলের ঘ্রাণ শুঁকে তারা আনমনা হয়ে যান। মোহিত হয় তাদের মন। সিক্ত হয় তাদের হৃদয়। শরতের অন্যতম এক সৌন্দর্য হলÑ আকাশে লাল-সাদা বেগুনি রঙের সমারোহ। জিরিজিরি কোমল বাতাসে দোলা দেয় প্রাণ। আকুল হয়ে উঠে হৃদয়। আকাশের বুকে সাদা মেঘের ছোটাছুটি দেখে হৃদয় আমাদের নেচে উঠে। গেয়ে উঠে গান। বাতাসের সাথে ভেসে আসে বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ। বাঁশ বাগানের শিরশির ধ্বনি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তৈরী করে অন্যরকম এক আবহ। প্রকৃতিতে লাগে নতুন ঋতুর ছোঁয়া। এ সময় কাজলাদিদির কথা মনে পড়ে। “বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই মাগো আমার শোলকবলা কাজলাদিদি কই”। আমন ধানের চারাও দোল খায় শরতের বাতাসে। রোদেলা দুপুরে নূপুর পায়ে দিয়ে আসে বৃষ্টি। এ সময় নাকি শিয়াল মামার বিয়ে হয়। এ বিয়েতে তারা খুব আনন্দ করে। মজা করে খায়। হুক্কা হুয়া গান গায়। শিয়াল মামা বৃষ্টিতে ভিজে লোকবল নিয়ে হানা দেয় শ্বশুর বাড়ি। নদীর তীরে কাশফুল দোলে। সেদিন দেখলাম, বিজয় স্বরণীর মোড়ে একগুচ্ছ কাশফুল মাথা উঁচু করে শহুরে মানুষকে শরতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। কাশফুল যখন বাতাসে দোলে তখন সাথে সাথে আমাদের দেহে এক ধরণের শিহরণ খেলে যায়। এই বুঝি কাশফুল তার কোমল হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমার পিঠে। আমাকে জড়িয়ে ধরছে পরম মমতায়। রাখাল বালক মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে বটগাছ তলায় এসে বসে। সে তখন আনমনে বাঁশিতে সুর তোলে। রাখাল তখন আর রাখাল থাকে না; সে তখন কৃষ্ণের অবতার রূপে মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হয়। সে বাঁশির সুরে কত কুল বধূর যে উনুনের ভাত পুড়ে ছাই হয়েছে তার খবর আমরা ক’জনইবা রাখি। কিন্তু এসব ঘটনা হর হামেশা ঘটছে গ্রামবাংলায়। মানুষ যেখানে আছে সেখানে ভালোবাসা থাকবেই। এটা এক চিরন্তন সত্য। মানুষ হল ভালোবাসার কাঙাল। ভালোবাসার জন্য সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ভালোবাসার জন্য সে মুখিয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে চোখ বুলালে তা আমরা অতি সহজেই দেখতে পারব:
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাঁশীর শবঁদে মো আঊলাইলোঁ রান্ধন।
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি সে না কোন জনা।
দাসী হআঁ তার পাএ নিশিবোঁ আপনা।
সে বাঁশি পাগলপারা করে গ্রাম্য বধূদেরকে। সুযোগ ফেলে রাখালের কাছে ছুটে যেতে মন চায়। ষোড়ষী তন্বী তরুণীর মন আনচান করে। সে ভাবে প্রেমিক পুরুষের কথা। ডোবার জলে বালক-বালিকারা মেতে থাকে শাপলা শালুক নিয়ে। হাওড়ের পানিতে ঝাকে ঝাকে উড়ে বেড়ায় নানা রঙের পাখি। হাঁসেরা জলকেলি করে পুকুরে। টলটল পুকুরের জলে শাপলা দোখ খায়।
বর্ষার অঝোর ধারায় প্রকৃতি যখন সজীব আর প্রাণবন্ত হয়। রূপবতী, মায়াবতী, যৌবনবতী হয়; ঠিক তখনই সেই সবুজ পাতায় এসে খেলা করতে থাকে শরতের লাল-সাদা আর সোনালী রঙের রোদ। প্রকৃতিতে চলে আলো-আঁধারের মায়াবী খেলা। নদীর স্বচ্ছ জলে খেলা করে ঝিকিমিকি সোনালী রোদ। বালি হাঁস-পাতি হাঁস খেলা করতে থাকে পানিতে। রাতের আকাশ কখনো হয় আলোকিত আর কখনোবা হয় ঝাপসা ধোঁয়াসে অন্ধকার। অন্ধকারের নিস্তব্ধতায় শহর যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আকাশের বুকে জেগে থাকে রাতের চাঁদ। মিটিমিটি জ্বলে তারা। চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ে পৃথিবীতে। গাছের ডালে দু’একটা নিশাচর পাখির ডানা ঝাপটার শব্দ বুকের ভেতর অজানা ভয় আর শঙ্কা খেলা করে। দূরে শিয়ালের ডাক শোনা যায়। সুবহে সাদিকে মুয়াজ্জিনের আযান ধ্বনিত হয়। গ্রামের খোঁয়াড় থেকে মোরগ ডেকে উঠে। মৃদুমন্ধ বাতাসে শরীরে বইতে থাকে সুখের নহর। এভাবে শরৎ প্রতি বছর আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। তার রূপের আলো নিয়ে। তাই শরৎ এলে প্রকৃতিতে আসে এত বৈচিত্র। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে রূপের ছটা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন