জমায়াতের বিরূদ্ধে কোনো অপপ্রচারই সরকারের কাজে আসছে না

লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১৬:৫৭ সন্ধ্যা

জামায়াতের বিরূদ্ধে কোনো অপপ্রচারই সরকারের কাজে আসছে না। উপরন্তু চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে জনগণ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে ভোট দিয়েছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থীদেরকে বর্জন করেছে। সাধারণ মানুষ তাদের আশা-ভরসার, সুখের-দুঃখের সাথী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর প্রর্থীদেরকেই বেছে নিয়েছে। খুশি মনে তারা জামায়াতকে ভোট দিয়েছে। স্বতস্ফূর্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা গেছে।

হালের বলদ ছেড়ে কৃষক গেছে ভোট দিতে। জেলে জাল ফেলা বন্ধ করে ভোট দিতে গেছে। রিকশাওয়ালা ভাইয়েরা তাদের রিকশায় করে বৃদ্ধদেরকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এ যেন এক নিরব যুদ্ধ। অসহায় জিম্মি মানুষের ব্যালট বিপ্লব। জালিমের বিরূদ্ধে মজলুমের প্রতিরোধ। যদিও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সরকারদলীয় ক্যাডারদের দ্বারা ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট গ্রহণের খবর পাওয়া গেছে। কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, তরুণ, যুবক-যুবতী, নবীণ ভোটার একজোটে আওয়ামী অপশক্তির বিরূদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভোট দিয়ে তারা সৎ, যোগ্য, আদর্শবান ও চরিত্রবান নেতাকেই নির্বাচিত করেছে। তারা কোনো সন্ত্রাসীর গডফাদারকে ভোট দিতে চায় না। ড্রিল মেশিন দিয়ে মানুষ হত্যাকারীরা চেয়ারম্যান হোক তারা তা চায় না। তাই তো তারা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে। জামায়াত ইসলামীকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের ১৩জন উপজেলা চেয়াম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছে বলে জানা গেছে। আমি এখানে পাঠকদের সুবিধার্থে এক নজরে উপজেলা নির্বাচনের ফল উল্লেখ করছি, বিজয়ী চেয়ারম্যান-বিএনপি-৪৩টি, আওয়ামীলীগ-৩৪টি, জামায়াত-১৩টি, জাতীয় পার্টি-১টি, অন্যান্য-১। বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান-বিএনপি-৩২টি, আওয়মীলীগ-২৪টি, জামায়াত-২৩টি, জাতীয় পার্টি-৩টি, অন্যান্য-১০টি। বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা)-বিএনপি-৩৪টি, আওয়ামীলীগ-৩৪টি, জামায়াত-১০টি, জাতীয় পার্টি-১টি, অন্যান্য-৩টি। এ তো গেল শুধুমাত্র চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের খবর। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলের কথা এখানে নাইবা বললাম। এর ফলে হয়েছে কি? তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে আমরা দেখতে পাই আওয়ামীলীগের বাঘা বাঘা অনেক ডাক সাইটে নেতার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। অনেকে আবার লজ্জা শরমের মাথা থেয়ে মুখ খুলতেও শুরু করেছে। মিডিয়ার সামনে বক্তব্য প্রদাণ করেছেন। সরকারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একটা ঐতিহাসিক চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন, ‘জনগণ কেন যে জামায়াতকে ভোট দেয় তা জানি না’। একটা অনলাইন পত্রিকায় মন্তব্যটি পড়ার পর প্রথমে চুপেচুপে আমি নিজে একটু হেসে নিলাম। হাসার পর আমি কেন জানি কাশলাম। এরপর আমি আমার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মিজান ভাইয়ের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম। তিনিও খবরটি শোনার পর মুচকি হাসলেন। তাঁর মত অনেকেই হয়তো মুচকি হেসেছেন। তাদের কেউ শব্দ করে কেউ শব্দ না করে আবার কেউবা অট্টহাসি দিয়েছেন। কারণ, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের কোনো কর্মকান্ডেই দেশের সাধারণ মানুষ খুশি নয়। খুশি না হয়ে জনগণ রাস্তায় বের হয়ে যখনি প্রতিবাদ করতে বের হয়েছে। মিছিল, মিটং করার চেষ্টা করেছে তখনি সরকারের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তাদের প্রতিবাদের কন্ঠস্বরকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তাদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। টিয়ারশেলের আঘাতে অসংখ্য ভাই হাত, পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্বের ভাগ্য বরণ করেছে। বোন হারিয়েছে তার ভাইকে। মা হারিয়েছে তার সন্তানকে। মা-বোনের আত্নচিৎকারে বাংলার আকাশ-বাতাস আজ ভারী হয়ে উঠেছে।

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতি, যুবকের অর্থ লোপাট, জনতা ব্যংক দুর্নীতি, ডেসটিনি, ইউনিপে টু, পদ্মা সেঁতু দুর্নীতি, সাগর-রুণি হত্যা, সাধারণ মানুষকে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর অবর্ননীয় বর্বর নির্যাতন, রাতের আঁধারে গ্রেফতার, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এসব কারণে দেশের সাধাণ মানুষ আওয়ামীলীগ সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগে। তবুও আওয়ামীলীগ জনমতের তোয়াক্কা না করে তারা নিজেদেরকে মতো করে সরকার চালাতে শুরু করছে। গায়ের জোরে ৫জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন করে। এতে ১৫৪ জন প্রতিনিধি বিনা ভোটে পাশ করেছে। ভোটাররা তাদের ভোটধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হয়েছে। যে দেশের সংখ্যঘরিষ্ট সংসদ প্রতিনিধি ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয় সে দেশে কেমন গণতন্ত্রের চর্চা হয় তা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে আজ দিবালোকের মত সুস্পষ্ট।

এসব কারণে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ভেতর এক ধরণের ভীতি, অবিশ্বাস, ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে এসব ক্ষোভেরই সামান্য একটা চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাত্র। বিএনপির কথা বাদই দিলাম। সরকার অনুমতি দিলে শুধুমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সমাবেশে ঢাকা শহরে এক কোটি মানুষ জড়ো হবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ৯৭টি উপজেলা নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটারদের অনেকেরই অভিব্যক্তি ছিল সরকারের বিরূদ্ধে। অনেকের চেহারায় আওয়ামী জালিম সরকারের বিরূদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ আর ধিক্কারের চিহ্ন ভাসতে দেখা গেছে।

এবারের উপজেলা নির্বাচন একটা বিস্ময়কার কাহিনীর জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যা ইতিহাসের পাতায় ইতিমধ্যে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এত অপপ্রচার, এত নির্যাতন, এত হামলা, এত মামলা, শীর্ষ নেতাদের জেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো, হুমকি, দমকি কোনো কিছুই জামায়াতে অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারছে না। এটা একটা ভাবনার বিষয় বটে। সরকারের কোনো প্রচারই জনগণের ভালবাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে পৃথক করতে পারছে না। জামায়াত ইসলামী তাদের আচার -আচরণ, ব্যাক্তিগত আমল, আখলাক, নীতি, নৈতিকতার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। রিকশাওয়া ভাই থেকে শুরু করে সরকারের সচিব পর্যায় পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী তাদের দাওয়াতী মিশন নিয়ে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। তবে জামায়াতের একটা অন্যতম দুর্বলতা হলো তারা সমালোচনাকে সহ্য করতে পারে না। আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যতটুকু গবেষণা করেছি তাতে আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াতে কিছু মিল খুঁজে পেয়েছি। এখানে একটি মিলের কথা বলা যায়, তা হলো জামায়াতে ইসলামীর নেতারা (দায়িত্বশীলরা) সমালোচনাকে সহ্য করতে পারেন না। আর অন্যদিকে আওয়ামীলীগও সমালোচনাকে হজম করতে পারে না। এ দু’টি প্রবীণ দলের এ এক বিশেষ দুর্বলতা।

এবারে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতে ১৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে বলে যে খবর প্রচার হয়েছে তাতে অনেক জামায়াত বিরোধী লোকের কপাল কুঁচকে গেছে। আসলেই বর্তমান সময়ের জন্য এটা একটা বিস্ময়করই ঘটনাই বটে। সরকারের গালে এক কঠিন চপেটাঘাত। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচার আর সহিংসতাকে ঘিরে দলটিকে সরকারের পক্ষ থেকে পুরোমাত্রায় কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ নেতারা প্রায় সবাই পলাতক। পলাতক থেকেও তারা জয়ী হয়েছেন, যে জয় রাজনীতির মাঠে তাদের ফেরার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। আর তৃণমূলের রাজনীতিতে জামায়াত যে ক্রমেই প্রবেশ করছে এ ফল তারই আগাম বার্তা। অন্যদিকে, এ নির্বাচন মৃত্যু বার্তা নিয়ে এসেছে জাতীয় পার্টির জন্য। সংসদে কথিত প্রধান বিরোধী দল উপজেলা নির্বাচনে মাত্র একটি উপজেলায় জয়ী হয়েছে! অথচ যেসব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে এসব এলাকায় এক সময় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তার কমতি ছিল না। জাতীয় পার্টির এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বোদ্ধামহল আওয়ামীলীগের সাথে জোট করাকেই দায়ী করেছেন। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনে প্রভাবশালী দল হিসেবে আবির্ভূত ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন উপজেলা নির্বাচনে কোথাও জয়ী হতে পারেনি। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তোলে। তারা যতই মেহনতি মানুষের কথা বলুক, হকারদের অধিকারের কথা বলুন, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যের কথা বলুক এগুলো বাংলাদেশের সহজ-সরল মানুষ মোটেই বিশ্বাস করে না। কারণ এ বাম দলগুলো এমন একটা আদর্শ আর রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায় যা বাংলাদেশের মানুষ, ভৌগলিক পরিবেশ আর প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের আদর্শ ধর্ম বিরোধী, তাদের হাতিয়ার হল মিথ্যার বেসাতী আর বিদেশী প্রভুদের তাবেদারী করা।

এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি সম্পকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ সমস্যায় জনগণ ভুগছে । কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা নিয়ে হানাহানি করছে। এছাড়া সরকার-বিরোধীদলকে নিয়ে নির্বাচন করছেনা। অন্যদিকে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে অসহায় জনগণ। বিরোধীদলকে কিছু বলতে পারলেও ক্ষমতাসীন দলকে কিছু না বলে মুখ বুঝে সহ্য করেছিল। জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় উপজেলা নির্বাচনে তারা ভোট দিতে সরকারকে জবাব দিয়েছে। ভোটাররা প্রমাণ করলেন, তারা নিজ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।’

পরিশেষে, এ জয়ের ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে এ আত্নতৃপ্তিতে ভোগার কোনোই সুযোগ নেই যে, তারা বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে। শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমে নয়; তৃণমূলে জামায়াতের কাজকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে গরীব, অসহায়, মানুষের সেবা করে তাদের মিশনকে এগিয়ে নিতে হবে। কথার ফুলঝুরি না ছুটিয়ে নিজের ব্যবহারিক জীবনকে পরিবর্তণ করতে হবে। মানুষকে এ কথা জানিয়ে দিতে হবে যে, আমরা দেশের শত্রু নয়, আমরাই প্রকৃত দেশের বন্ধু। দেশের স্বাধীনতা আর সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় আমরা আমাদের চেতনাকে জাগিয়ে রাখব। আমরা যা মুখে বলি প্রথমে নিজেরা তা করি। অবস্থাদৃষ্টে জামায়াতের আগামীর দিনগুলো আরো কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় জামায়াতকে সকল নাশকতা মূলক কর্মকান্ড পরিত্যাগ করতে হবে। বিচক্ষণতার সাথে মাথা ঠান্ডা করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমি মনে করি।

লেখক:

সাহিত্যিক ও সাংবাদকর্মী

http://www.janatarnews24.com

ইমেইল:

বিষয়: বিবিধ

১১৭৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

180322
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
নীল জোছনা লিখেছেন : যেসব এলাকায় নির্বাচন হয়েছে সেগুলো জামাত অধ্যুষিত তাই তারা জিতেছে। সামনের বারে দেখা যাবে কারা জিতে।
180368
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২১
অজানা পথিক লিখেছেন : অসাধারন পোষ্ট
180489
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : মিথ্যা দিয়ে আর কতদিন পারা যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File