রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্তি ১৮প্লাস

লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ২৭ মার্চ, ২০১৩, ১২:৪৭:৫১ রাত

গণতন্ত্র আর সংবিধান মেনে এক একটি রাজনৈতিক দল বাংলার মাটিতে ভূমিষ্ট হয়। তাদের মাতা-পিতারা লালন পালনের মাধ্যমে বড় করে দলটিকে আমাদের কাছে পৌছায়। আমরাও তাদের সাদরে গ্রহণ করি। তাদের পূজা করি। কোন এক সময় আমাদের ভক্তি শ্রদ্ধা এত বেশি হয়ে যায় নিজেরাই নিজেদের হুশ হারায়। এর বেশির ভাগ প্রভাব পড়ছে আমাদের ছাত্র সমাজের উপর। কারণ তাদের বয়সটাই এরকম। এদের একতা দেখলেই সুকান্ত ভট্টাচার্যের আঠারো বছর বয়স কবিতার ক’টা লাইন মনে পড়ে-

‌‌” আঠারো বছর বয়স সে দুর্বার

পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,

দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার

ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।”

এ বয়সে যে যা বলে তাই ভাললাগে। আসলে সব কথায় রস আছে কিন্তু রসের তৃপ্তি নেই। যা বুঝার ক্ষমতা আমাদের ছাত্র সমাজের হয়ে উঠেনা। আপন গতিতে চলে এরা। এক পক্ষ হিসেবে ভালবাসতে থাকে যেকোন একটি দলকে। আর প্রিয় দলের কোন ত্রুটি অন্য কেউ তুলে ধরতে চাইলেই, তাকে আর ঠেকায় কে! শুরু হলো হানাহানি-মারামারি।

ছোট একটা উদাহরণ যোগ করছি, দেশে নব প্রজন্মের সংগীত শিল্পী বৃদ্ধি পাচ্ছে সে তুলনায় অধিক হারে বাড়ছে তাদের ভক্ত।অধিকাংশের সাথে শিল্পীর সম্পর্কের কোন সম্পৃক্ততা থাকে না, যাদের আছে তাও সংখ্যা লঘু ক’জন। বাকিরা ভক্ত-শ্রোতা। যারা একটু ভারি বয়স্ক তাদের পছন্দ আর যুবক-যুবতী বা মধ্যবয়স্কদের পছন্দ কিছুটা মিল থাকলেও তরুণ-তরুণীদের পছন্দ সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের ক্ষেত্রে সংগীত আর সংস্কৃতি এক পাল্লায় মাপা হয় সচরাচর। যে যাকে পছন্দ করে তার নামটাই যপতে থাকে সারাক্ষণ। সেদিক বিবেচনা করে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার প্রিয় সংগীত শিল্পী কে? যখনই প্রশ্নের সম্মুখীন, তখনই হুট করেই উত্তর। এটা ঐ শিল্পীর প্রতি ভক্ত শ্রোতাদের গভীর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, যদি আপনার পছন্দের শিল্পীর বিরুদ্ধে কেউ কোন খারাপ মন্তব্য করে তখন আপনার হৃদয়ে লাগে। ইচ্ছে হয় হাতে একটা লাঠি নিয়ে তার মাথা ফাটাতে। কিন্তু যখন আপনি অন্যের পছন্দের শিল্পীকে অহেতু মানহানির চেষ্টা করেন, তখন তার ঠিক আপনার মতই লাগে। সব শিল্পীই সংস্কৃতি জগতের মানুষ। তাদের নিজস্ব গতিসীমা আছে, তারা আপন গতিতেই চলাচল করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সবাইকে মূল্যায়ন করা এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যেমনি জরুরী ঠিক তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন ক্যাটাগরী রয়েছে বয়স অনুপাতে যার যা পছন্দ, সকল দল ও দলের নেতা-নেত্রীদেরও সঠিক মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদর্শন করা উত্তম। কারণ সব ক’টি দলই বাংলাদেশের রাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে সরকার ক্ষমতায় আসার যোগ্য।

মানবাধিকার সংস্থার মতে, ১৮ বছরের কম বয়সীরা প্রত্যেকেই শিশু ক্যাটাগরিতে পড়ে। এরা সব সময় আবেগের মধ্যে অবস্থান করে। এ সময় তাদের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া বা বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা থাকেনা বললেও চলে। যে যা বলবে ভাল লাগলে গ্রহণ করবে, আর খারাপ লাগলে বর্জন। সে সূত্র মতে,দেশের শতকরা ৯৭% ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার আগ পর্যন্ত শিশু ক্যাটাগরিতে পড়ে। কারণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পনের বছর বয়সে মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ষোল, সতের পেরিয়ে আঠার’তে পা রাখে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা পর্যন্ত সবাই শিশু। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করে কলেজের সিঁড়িতে পা রাখলেই রাজনীতি নামের পলিসিতে যুক্ত হয়। বড় ভাইদের উৎসাহ আর নেতা কর্মীদের নানা কৌশলের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে রাজনীতির যুদ্ধে সৈনিকে রূপ লাভ করে। এতেই ক্যারিয়ার শেষ। প্রচলিত প্রবাদ আছে, ছেলে-মেয়ে ভবিষ্যতে কি হবে তা নির্ভর করে উচ্চ মাধ‌্যমিকের ফলাফলের উপর। সে কি ডাক্তার হবে, উকিল না ব্যবসায়ী?

এছাড়াও নির্বাচনকে সামনে রেখে তালিকা হাল নাগাদ শুরু হলে নতুন ভোটারদের যেমন উৎসাহী দেখা যায় তেমনি এলাকা ভিত্তিক নেতাদের আদর স্নেহ বেড়ে যায়। তারা বয়সের দিকে লক্ষ্য করা ছাড়াই অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও ভোটার হতে উৎসাহিত করে। ভোট দিতে কে না চায়? এখানেও আবেগের আক্রমণ। নিজের বয়স মূল্যায়ন ছাড়াই অনেকেই ভোটার হয়ে যায়। অবশ্যই একটা বিষয়ও রয়ে যায় অগোচরে! তা হলো রাজনৈতিক পদ। ভোটার হওয়ার পর নিজস্ব এলাকার নেতা বনে যাওয়ার স্বপ্নেও অনেকে ভোটার হয়। যত দিন ক্ষমতায় তত দিন তরুণদের ব্যবহার করে বড় বড় নেতারা। যখন ক্ষমতা হস্তান্তর হয় তখন এই তরুণরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ কে অন্যের হাতে হস্তান্তর করে পালাতে হয়।যারা এখনও শিশু ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছেন তাদের জন্য বলছি, রাজনীতি আবেগের বিষয় নয়, সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ১৮ বছরের কম হলে বয়স অনুপাতে রাজনীতি থেকে দূরে থাকুন।

অন্যদিকে, দুই-তৃতীয়াংশই ছাত্ররা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে উদাসীন। কলেজ-বিশ্ববিদ‌‌্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হয়েও বেশিরভাগই রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য মস্তিস্ক নিয়ে রাজপথে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে। অযথা তর্ক-বির্তক আর কথা কাটাকাটিতে তো রাজনীতি হয় না! সুষ্ঠু ইতিহাস না জেনে বির্তকে জড়ালে হানাহানি হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬০% ছাত্র, ৮০% সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে না জেনে রাজনীতির খাতায় নাম লিখায়। যার কারণে তাদের একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকেনা। তর্ক-বির্তক, হানাহানি-মারামারির মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা নষ্টে নিয়োজিত থাকে সর্বদা।

বাংলাদেশের সংবিধানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,‌’ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শোষণ মুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সু বিচার নিশ্চিত হবে। মৌলিক অধিকার আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’

বর্তমানে সংবিধানের এ ধারা অব্যহত রয়েছে কি? রাষ্ট্রের নাগরিক কি শোষণ মুক্ত? সবাই কি সমান আশ্রয় পাচ্ছে আইন প্রশাসন থেকে? আজ জাতি বিবেককে কোন পথে কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে! কোথায় অবস্থান করছে আজকের রাজনীতি? গণতান্ত্রিক দ্বারা অব্যহত আছে না শুধু শাসনতন্ত্র আর কিছু মন্ত্র নিয়ে সর্বদা আমরা ব্যস্ত! অধিকার বঞ্চিতদের কাতারে আজ দেশের কোটি জনতা।

রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি অবশ্যই রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। দেশের নাগরিক হিসেবে আঠারো বছর বয়সকেই নির্ধারণ করে ভোটার করা হয়। এতে সে যে কোন একটি দলের পক্ষে নিজের মতামত দিতে পারে। কারণ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র এদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করে। আর আঠারো বছর বয়স থেকে বাস্তবতাকে মূল্যায়ন করতে শিখে সকলেই। তাই এই বয়স থেকেই রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্ত হয়ে দেশের গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার এখনই সময়। ঝাঁক বেঁধে আজ তরুণ-জোয়ানদের মাঠে নামার সময়।

যেসব দলগুলো দেশের মুকুট পড়ে বার বার, সেসব দলের নেতারা কি সঠিক শিক্ষা দিতে পারে না? নাকি তাদেরও শিক্ষার অভাব রয়েছে? তারা সরকার গঠন করে কি শুধু নিজস্ব বাহিনী তৈরী আর কিছু দল সৃষ্টি করার জন্য? যা সাধারণ জনগণের কাতার থেকে আমরাই বুঝে উঠতে পারিনা। এসব আর কত দেখতে হবে? এবার পরিবর্তন করুণ আপনাদের ধ্যান-ধারণা। জাতিকে শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ দিন, যাতে দেশ পরিচালনায় আপনাদের মত অযোগ্যতা না দেখাতে হয়।

সকলের হৃদয়ে জেগে উঠুক সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা। রাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করেই শুরু হোক রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্তি। দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এগিয়ে চলাই হোক আগামীর স্বপ্ন। রাষ্ট্র পরিচালকদের সর্বদা সহযোগিতা করার মনোভাব জেগে উঠুক সকল হৃদয়ে। গণতন্ত্র আমাদের সুনিশ্চিত হবেই। কারণ এরাই গণতন্ত্রের উদ্ধারক।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File