উনারা এখনও আছেন!
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০১:১২:১৩ রাত
সম্ভবত ২০০৭ইং সালের কথা, ঠিক মনে করতে পারছি না। চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক প্রকাশনার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন আঙ্গিকে চালু কারা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিবর্তন আসে সম্পাদক ও সম্পাদনা বিভাগের। সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রিয়াজ আমাকে বললেন, ‘ধূমকেতু’র যাত্রা নতুন করে শুরু করছি। আপনার একটা লিখা চাই। অবশ্যই দেবেন। আমিও আর না করিনি। যথা সময়ে একটা লিখা দিয়েছিলাম প্রকাশিতও হয়েছে। শিরোনাম ছিল ‘জ্ঞানীদের কদর বিদায়ের পর’। এসব এখন স্মৃতি, শুধুই স্মৃতি। এখন ‘ধূমকেতু’ বের হয়না। বাকি দিনে বের হওয়ার কোন আশাও নেই। কারণ সেই সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রিয়াজ সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেছেন। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কারণ ছাড়াই এই স্মৃতি কথা ব্যক্ত করছি এমন কিন্তু নয়! সেই সব অতীত হয়ে গেলেও আমার সেই লিখার শিরোনামটা বার বার মনে পড়ে।
’……. আর নেই’ এমন শিরোনামে প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পারি বিশ্বের দরবার থেকে চিরবিদায় নেয়া মহাপ্রাণ গুলোর কথা। যাদের অক্লান্ত শ্রম- মেধা দ্বারা এক একটি নতুন সৃষ্টি আমাদের উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টি করা কবিতা ও লেখা আমাদের ঘুমন্ত বিবেক বোধকে জাগ্রত করে। ডাক্তার-চিকিৎসকদের সেবা-সহযোগিতায় আমরা মৃত্যুর দুয়ার থেকে বার বার ফিরে আসতে পারি। বিজ্ঞানীদের সৃষ্টি ও আবিষ্কার আমাদের জীবন চলার পথে নতুনত্ব যোগ করে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিক-নির্দেশণা প্রদান করে। সংগীত শিল্পী-গীতিকার তাদের গানের মাধ্যমে ভালবাসা আর মমতার কথা শেখায় কখনও কখনও আমাদের বিদ্রোহী আর যুদ্ধা হতে উৎসাহিত করে। সর্বোপরি স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তারা কাজ করে যায় মানব সেবা ও মানুষের কল্যাণে।
কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলে পাঠকরা অতি সহজে বুঝতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু আমি কারো নাম প্রকাশ না করেই আমার অভিমত ব্যক্ত করতে চাই। কারণ আমাদের চারপাশে এসব মহৎ লোকদের অভাব নেই। কিছু সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের নাম বলে দিলে তাদের দিকেই সকলের দৃষ্টিপাত ঘটে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু যারা নাম বা প্রচার মাধ্যমের কাছাকাছি আসতে পারেনা তাদের কথা কি ভাবা যায় না! কৃতজ্ঞতা শিকার করা যায় না কি তাদের কৃর্তির জন্য? অবশ্যই যায় এবং আমরা কৃতজ্ঞও হই। তবে তাদের মৃত্যুর পর।
অবাক পৃথিবী! আজকে যার বিদায় হলো, চলে গেলেন তাদেরকে নিয়ে আমরা বিচার-বিশ্লেষণধর্মী নানা প্রতিবেদন আর লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সবার মুখে মুখে তার নাম ” তিনি অত্যন্ত ভাল লোক ছিল বটে”। কিন্তু যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের কতটুকু মূল্যয়ন করতে পারছি, তাদের প্রতি আদৌ কি কৃতজ্ঞতা শিকারের চেষ্টা করেছি! কেন শুধু শুধু মৃত্যুর পর এত এত মহব্বত তার প্রতি বেঁচে থেকে যে ভালবাসাটুকু পায় না। মরোনত্তোর সংবর্ধিত করে কি কোন লাভ হয়! তিনি কি এই সংবর্ধনার কোন সম্মান পেয়ে থাকেন! তাকে নিয়ে লিখা হাজার পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কি তার চোখে পড়ে? একথায় এসবের সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকে না। আমরা লোক দেখানো আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যমে তাকে স্মরণ করার নাটক করি মাত্র!
কথা গুলো লিখতে কিছুটা খারাপ লাগলেও এটাই আমাদের বাস্তব সমাজ ব্যবস্থা যা আমরা নিজেরাই পরিচালনা করি। গুণীজনদের বিদায়ের পর কি তাকে সংবর্ধিত করবো, নাকি তাকে সম্মাননার ব্যবস্থা করা দরকার তার জীবত থাকা অবস্থায়!
প্রকৃত সত্য এই, যথাযথ সম্মান দেয়া দরকার যা তাদের প্রাপ্ত। স্ব-স্ব স্থান থেকে নির্বাচন করতে হবে তাদের যাদের ত্যাগ আর সৃষ্টির মাঝে আমরা ডুবে থাকি সর্বদা। আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম মিশে আছে যাদের। তাদের সম্মান ও সম্মাননা প্রদান প্রয়োজন জীবিত অবস্থায়। তাকিয়ে দেখুন আপনার চারপাশে উনারা এখনও জীবিত আছেন।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন