দেখা হলো তবু কথা হলো না

লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৫:০১:৩৭ বিকাল

মুখ দেখার সাথে কথা বলা সেই ২০০৯ সালে। এর পর দেখা হলেও আর কথা হয়না। দুজনের মনেই প্রেম নেই, নেই ভালবাসা। আকাশ-বাতাস আর এই মায়াময় পৃথিবী সবাই শান্ত থাকতে চায় দুটি মানুষের মিল-মহব্বত নিয়ে। কিন্তু বিধি বাম! ভালবাসাতো দূরের কথা ভাল কথাও মুখে আসেনা তাদের। তবে কিভাবে এদের সন্ধি হবে, কিভাবে মিলন! একে অন্যের প্রসঙ্গ টানলে মনে হয় কখনো এদের মায়া-মহব্বত ছিলনা, ছিল শুধুই শত্রুতা! পাগল আখ্যা দিতেও বাঁধেনা তাদের মুখে। কি আজব ভালবাসা, আজব তাদের দেশপ্রেম!

কথা হয়েছিল শেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে। এরপর একই বছর মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমণ্ডির সুধা সদনে। সেই শেষ খালেদা-হাসিনার কথোপকথন। গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসেও তারা সেনাকুঞ্জে উপস্থিত হলেও তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরা বার বার আহবান করেছেন দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসতে, সংলাপে বসতে। সংলাপের ব্যাপাটা আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে দুই নেত্রীর বঙ্গভবনে দেখা হলো তবু কথা হলো না।

কারণ এটাই ক্ষমতা। সাধারণ জনগণ কি চায়? কি আশা করে সরকার আর বিরোধীদলের কাছে? এমন কোন ধরণের প্রশ্ন মনে জাগেনা দুই নেত্রীর মধ্যে! এমনটি ধারণা করা ছাড়া কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না। সবাই জানে একতরফা ভালবাসার কোন দাম নাই। আর একতরফা ভালবাসলেও ফলাফল শূণ্য। পাবলিক এখন রাজনীতি বুঝে। তাদের বোকার কাতারে রাখার দিন পুরিয়ে গেছে অনেক আগে। শুধু চিৎকার করে না যদিও বাক স্বাধীনতা তাদের পূর্ণ বহাল রয়েছে। অবশ্য চিৎকার না করারও একটা কারণ আছে তা হলো – সাধারণ মানুষ যতই চিৎকার করুক দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। ভাল-মন্দ, ঘটন-অঘটন, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাবান রাজনৈতিকদের চার থেকে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী। অভ্যন্তরীন কাজ সারাতে নিয়োজিত স্ব-স্ব দলের কর্মী- সমর্থক। আর বাকিরা সবাই আমজনতা। বলতে গেলে রাষ্ট্রের সফলতা আর ব্যর্থতার জন্যও এরাই দায়ি। এদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা ও জনগণ জিম্মিও বলা চলে। সংখ্যায় কম হলেও কোটি মানুষকে নানা কৌশলে বোকা সাজিয়ে অভিনয়ের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তারা।

একটি সাধারণ কথা মাসের শুরু থেকে শেষ লেগে আছে হরতাল-অবরোধ। অর্থনীতির চাকা উল্টো পথে ঘুরলেও দৃষ্টিপাত হয়না রাজনৈতিকদের। প্রতিনিয়ত খুন-হত্যা তালিকা দীর্ঘ হলেও কারো কোন মাথা ব্যথা নেয়। বিরোধীদলের দাবি ছিল একটাই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যা সরকার ভাল ভাবেই জানে। এই দাবি প্রতিষ্ঠা করা সরকারের কোন ব্যাপার না কিন্তু এটাই রাজনীতি। আমজনতা বুঝে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পূর্ণবহাল করলে বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধ করার কোন ইস‌্যুই থাকবেনা। অন্যদিকে সরকারেও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এই সাধারণ সত্যটা সরকার মেনে নিতে রাজি না অন্য দিকে বিরোধীদলও তাদের দাবি ছাড়বে না। মধ্যেখানে যত্রতত্র প্রাণ দিতে হচ্ছে আমজনতার। দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার ফলাফল। দেশপ্রেমের নামে এসব রাজনীতি বন্ধ হবে কবে! কবে স্বাধীনতা শব্দটি কাগজ কলমের সীমা অতিক্রম করে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করবে! এসব প্রশ্ন সবর্দাই ঘুরপাক করে আমজনতার হৃদয়ে।

পালাবদল ছেড়ে এক হয়ে দেশের কথা ভাবুন, মানুষের কথা ভাবুন। ক্ষমতা আর রাজ‌্যত্বের স্থায়ীত্ব নেই বিশ্বাস করুণ এই চিরন্তন সত্যকে, লালন করুণ প্রকৃত দেশপ্রেমের স্মারক স্ব-স্ব হৃদয়ে।

বিষয়: রাজনীতি

১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File