ক্ষমা নাই গ্রেপ্তার চেয়ে রিট! হাসনাত থেকে শাহবাগ, অতঃপর লাকী!
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:১০:০২ বিকাল
আলোচিত বিষয়কে যত সমালোচনা আর আলোচনায় রাখা যায় ততই তার আলো ছড়াতেই ব্যস্ত সে! ছড়ানো আলোয় যখন সব পরিষ্কার তখন রাস্তা দেখা যায় খুব সহজে। সে রাস্তার অগ্রভাগে কি থাকতে পারে বা কি পাওয়া যাবে এই সীমাঅতিক্রমে সব ভাবনার বিষয়! তবুও ভাবি না! কারণ ভাবনা-চিন্তার জন্য অনেক বিজ্ঞ লোক মিডিয়ায় ও মিডিয়ার বাইরে ব্যস্ত রয়েছেন।
” শাহবাগের আন্দোলনকারী নারীদের নিয়ে লেখা গল্পের মাধ্যমে ‘ঘৃণা’ উস্কে দেয়ার অভিযোগে লেখক হাসনাত আবদুল হাইকে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। ”
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা পহেলা বৈশাখের বিশেষ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত ” টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি” ছোট গল্পটি লিখাই তার অপরাধ। নানা সমালোচনার মুখে প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণ থেকে লিখাটি মুছে দেয়ায় লিংক সংযোজন করা যায় নি। তবে কম বেশি সবার নজর পড়েছে এই গল্পের উপর। বিশেষ কারণ বশত গল্পটি প্রথম আলো মুছে দিলেও কিছু অনলাইন ভিত্তিক ম্যাগাজিন ও নিউজ পত্রিকা তা হুবহু ছেপেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম আলো পড়ার কারণে গল্পটি চোখে পড়েছে। ধৈর্য্য ধরে পড়ে শেষ করেছিলাম। প্রথম মন্তব্য ছিল, গল্প হিসেবে বেশ ভাল হয়েছে। খুব সুন্দর একটি ছোট গল্প তার মর্যদা অক্ষুন্ন রেখেছে, শেষ হয়েও হলো না শেষ। দ্বিতীয় মন্তব্য, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে যাদের খুব বেশি মাখামাখি সম্পর্ক তথা শাহবাগ, গল্পের মূল বিষয়বস্তুটা তাদেরকে ছোট কারার জন্য রচিত হয়েছে এবং সাথে সেখানকার নারীদের স্বাভাবিক রূপের কথা বর্ণনায় উঠে এসেছে। এটি একাধারে শাহবাগ ও ঐসব নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করা বললো। তবে এখানে ‘সীমা’ নাম ব্যবহার হওয়ায় অনেকের দৃষ্টি বিশেষ কোন ব্যক্তির দিকে নজর কাড়লেও আমার চিন্তা ধারণা ছিল অন্য। যেমন লেখক যে কোন চরিত্রকে নিয়ে লিখতে পারেন। পাঠক যে যার মত করে বুঝে নেবে, তাই বলে এই নয় কাউকে প্রত্যক্ষ ভাবে বলা যায় যে (নাম ধরে) তোমাকে নিয়ে গল্প লিখা হয়েছে বা তার চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তবে গল্পটি পড়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করা হয়েছে। গল্পে উল্লেখ্য ছিল ” মেয়েটি বাংলাদেশের পতাকার রং দিয়েই সালোয়ার-কামিজ বানিয়েছে অথবা সেই রকম তৈরি করা কাপড় কিনেছে। আজকাল অনেকেই এভাবে কাপড় পরে, কিছুটা দেশপ্রেম দেখাতে, কিছুটা ফ্যাশন স্টেটমেনেটর জন্য।” এক্ষেত্রে আমি বলবো বর্তমানে বাংলাদেশে অনেকেই জাতীয় পতাকার রং ও ডিজাইন দিয়ে পোশাক পড়তে বেশ আনন্দ পায়। সবার কথা কেন মাঝে মাঝে আমি নিজেও এমন পোষক বাজার থেকে কিনে পরিধান করি তাই বলে এই নয় আমি জাতীয় পতাকার অমর্যদা করি বা করছি। বন্ধু মহলে অনেকেই এমন! এটা দেশপ্রেমের আলাদা প্রকাশ বলা চলে।
এছাড়া গল্পের বিভিন্ন অংশে শাহবাগ ও এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা স্বাভাবিক ভাবেই তুলে ধরায় ক্ষেপেছেন শাহবাগবাসী। সাথে সেখানকার নারীরা। সে পর্যন্ত শেষ হয়ে থাকা হয়নি, আন্দোলনের ডাক দিতেই লেখাটি অসাবধানতাবশত মুদ্রণের জন্য সম্পাদক মতিউর রহমান ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সাথে লিখাটি অনলাইন সংস্করণ থেকে অপসারণ ও প্রত্যাহার করে নেন। লেখক নিজেও এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কোন গ্রন্থে গল্পটি থাকবেনা বলেও ঘোষণা দেন। ক্ষমা চাইলেও এটা ক্ষমার অযোগ্য প্রমাণ করতে লেখককে গ্রেপ্তারের জন্য হাই কোর্টের রিট আবেদন দায়ের করা হয়।
এতটুকুতে লেখকের লেখা ও অপরাধ বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করেছি কিন্তু সমস্যাটা শুরু ”হাসনাতের গল্পের সঙ্গে আমার মিল নেই” এই শিরোনামে সংবাদটি পড়ার পর থেকে।
লেখক কি লিখেছে বা কাকে নিয়ে লিখেছে লিখা পড়ে পাঠক যে যেভাবে গ্রহণ করে। আগেই একবার উল্লেখ্য করেছি তবে সরাসরি কারো নাম ধরে বলার কোন নিয়ম নেই। কিন্তু এই অনলাইন সংস্করণ গুলোর কি কোন কান্ডজ্ঞাণ নেই! নাকি জেনে শুনে ভুল করে! তারা বেশ ভালো ভাবেই শাহবাগের অন্যতম লাকীর সাক্ষাৎকার ছেপেছেন। উল্লেখ্য করেছেন, ‘প্রথম আলোতে হাসনাত আবদুল হাইয়ের যে গল্পটি ছাপা হয়েছে আমার মনে হয় এই গল্পটার সঙ্গে আমার আসলেই মিল নেই। কারণ আমি এই প্রেকটিস করি না। আমি সততার সঙ্গে জীবনযাপন করার চেষ্টা করি। আন্দোলন করার সময় অনেকেই এসেছে আর্থিক সহায়তা করার জন্য। কিন্তু আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি জানি, এগুলো নিয়ে পরে নানা কথা হবে। মানুষ নানাভাবে রসালো গল্প বানাবে।’ এই কথার অর্থ কি হাসনাত লাকীকে নিয়েই লিখেছে। আর যা লিখা হয়েছিল গল্পে তার থেকে পাঠক লাকীর চরিত্র সম্পর্কে অবগত হবে। কেন এই তুলনা করা? জবাব চাই ঐ সব অনলাইন সংস্করণগুলোর কাছে!
তাদের বিবেকবোধ এতই লোপ পেয়েছে যে, তারা যা খুশি তাই করবে আর প্রতিবাদ কেউই করবে না! লাকীর সাক্ষাৎকার ছাপানোর প্রয়োজন ছাপাও, তার রাজনৈতিক আর ব্যক্তিগত জীবন তুলে ধরো যাতে সবাই লাকী সম্পর্কে পজেটিভ ধারণা নিতে পারে। লাকীদের মত মেয়েদের শ্রদ্ধা করতে পারে। কিন্তু তুলনা করতে যাওয়া কি প্রকৃত পক্ষে ঠিক যখন সমালোচনার মুখে তারা।
আমি মনে করি এতে লাকী সম্পর্কে যতটুকু ইতিবাচক ধারণা পাঠক সহ সর্বস্তরে পৌঁছানো চেষ্টা করা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি নেতিবাচক ধারণার জন্ম হচ্ছে সবার মনে। ছোটখাটো ভুল মনে করে ক্ষমা চাওয়ার কোন যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। প্রকৃত পক্ষে এগুলো অনেক বড় মাপের ভুল এর জন্য মাশুল দিতে হয় উল্লেখ্য ব্যক্তিদের। তাই সব ধরনের মিডিয়ার প্রয়োজন নেতিবাচক দিক তুলে ধরা থেকে সরে এসে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংবাদ-খবর পরিবেশন করা।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন