হেফাজত থেকে হেফাজতে সরকার!
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:১১:০৯ রাত
হেফাজতে ইসলামের লং মার্চকে ঘিরে জনমনে যে শংকা ছিল তার কিছুই প্রতিফলিত হয়নি বললেও চলে। তারা তাদের দাবি নিয়েই ঢাকায় এসেছে। আর দাবিগুলোই বার বার মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থাপন করেছে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। জনসমাগম ও শান্তিপূর্ণ ভাবে মহাসমাবেশ পালনের দিক থেকে হেফাজতে ইসলামের লং মার্চ সফল হয়েছে এমন ধারণা করা যায় তবে পুরোপুরি সফল বলা যাবে না। মহাসমাবেশের স্থল থেকে সরাসরি সম্প্রসারিত টিভি চ্যানেলে যা দেখলাম তার উপর ভিত্তি করে বলছি, নেতা-কর্মীদের মধ্যে দক্ষ বক্তার সংখ্যা ছিল খুব কম। যারাও বলেছেন শুধু দাবি-দাবা নিয়ে। উপস্থিত জনতার জন্য তেমন বিশেষ বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে মনে হয়না। তাদের আগমনের জন্য যেমন আমন্ত্রণ জানানও হয়েছে তেমনি তাদের প্রস্থান তথা নিজ নিজ এলাকায় কিভাবে যাবে বা কিভাবে যাওয়া উচিত এমন কোন পরামর্শ মূলক বক্তব্যও তারা দেয়নি। যার কারণে ঘটে গেলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
যাক সেদিকে যাবো না, আসল কথা হচ্ছে হেফাজত থেকে হেফাজতে সরকার। লং মার্চকে কেন্দ্র করে সরকারের নানা জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। কি জানি কি হয়? সরকার ও সরকার সমর্থিতরা ধারণা করেছে এরা জামাত-শিবির এর মত করে অঘটন ঘটাবে। শুধু সরকারের যে হাটু কেঁপেছে তা নয় গণজাগরণ মঞ্চ ও কিছু সাংস্কৃতিক জোটও এমন ভেবেছে। তা না হলে শুধু শুধু তাদের লং মার্চে আসতে বাঁধা দেয়া হলো কেন? কেন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ ঘোষণা করা হলো?
হরতাল-অবরোধ আর সরকারি ভাবে ট্রেন-বাস-লঞ্চ চলাচলে বাধা দেয়া হলেও অবশেষে দেখা গেল লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হলো শাপলা চত্বরে। শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত করলো তাদের মহাসমাবেশ। যার জন্য স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর হেফাজতে ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন । তাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হওয়ার কারণ একটাই তারা রাজনীতি বুঝে না, রাজনীতির ফায়দা নিয়ে চিন্তাও করে না। তারা আল্লাহ ও রাসুল(সঃ) এর প্রেমে মগ্ন। শুধু আল্লাহ ও রাসুল(সঃ) এর প্রেমে তারা জড়ো হয়েছে। এটা তাদের বক্তব্য শুনলেই বুঝা যায়। কারণ যে সব বক্তারা মঞ্চে বক্তব্য উপস্থাপন করলেন, তারা দু-চারটি কথায় নিজ নিজ বক্তব্য শেষ করলেন।
সমস্যা গিয়ে ঠেকলো যেখানে, লং মার্চে আসতে বাধা দেয়ায় এখন তারা নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। চলতি মাসের বিভিন্ন তারিখে তারা হরতাল ও সমাবেশ করবে। ফলাফলটা হলো কি?
আবার দেশের ক্ষতি। অর্থনীতির ক্ষতি। জনজীবনের শংকা। এর জন্মদাতা কারা? সহজ কথা যারা তাদের বাধা দিলো তারা! অর্থ একটাই লং মার্চে বাঁধাদানকারীরা আসলে কি দেশের শান্তি চাই!! নাকি সবর্দা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জন্ম দিতে চাই!
গত ফেব্রুয়ারী থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন এ ব্যাপারে সবার ধারণা আছে। নতুন করে বলার কিছুই নাই। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্ন ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও নিরীহ মানুষের। এই মৃত্যুর দায় নেয়ার মত কি কেউ আছে? নিশ্চিত উত্তর – না! কারণ কেউ নিজেদের ফায়দা ছাড়তে রাজি না। ফেব্রুয়ারীর আগে এই সরকারইতো দেশ পরিচালনা করেছে কই তখন তো এত গণ হারে মানুষ হত্যা করা হয়নি। আমজনতার মনেও কোন শংকা কাজ করেনি। তবে কেন ফেব্রুয়ারী থেকে এমন দৃশ্যর রূপ নিলো দেশে! বাস্তবতা থেকে বলতে গেলে আমি বলবো’ গণজাগরণ মঞ্চ’ আজ দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ি। এ বলে এই নয় আমি গণজাগরণ মঞ্চ কে সমর্থন করি না! যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারের বিচারের দাবিতে তৈরি গণজাগরণের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল, বিশ্বাস ছিল এরাই পারবে রক্তির সূর্যকে আবার বাংলার আকাশে স্বাগত জানাতে। কিন্তু পরক্ষণে যে যার মত করে রাজনৈতিক মঞ্চের রূপ দিলে এই গণজাগরণ মঞ্চকে। কি অদ্ভুত বিষয়! প্রধান দাবি ছেড়ে এবার ভিন্নমুখী দাবি নিয়ে তারা হাজির…….. আর জনগণ তাদের থেকে একে একে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো। আর এখন দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়া তেমন জমে না গণজাগরণ এ কথাই সত্য! কিন্তু দেশের পরিস্থিতিতে তারা যে রূপ দান করলো, রচিত করলো দেশের গণ হত্যার মত অপ্রত্যাশিত ঘটনার! এর জন্য কি শুধু পুলিশকে দায়ি করবো? এখন পুলিশও পিছু হাটতে শুরু করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় খবর আসছে পুলিশ আর সংর্ঘষে যেতে চায় না। তবে কে রুখবে তাদের যারা আজ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার না গণজাগরণ মঞ্চ! কোন দিকে যাচ্ছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি! জনতার শান্তি কি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে সরকার? এমন প্রশ্ন কেন আজ জন্ম হচ্ছে আমজনতা মনে!
এসব অপ্রসঙ্গিক কথা এই জন্য তুলে আনলাম, সরকার হেফাজত থেকে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা মনে মনে আশা করেছিল তা ঘটায়নি তারা। সেদিক থেকে হেফাজতে সরকার। কিন্তু যারা তাদের বাঁধা দিলো তাদের জন্য আবার কর্মসূচি দিলো হেফাজত। ভেবে দেখে হতাশ হই তারা কি আদৌ দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গণজাগরণ আর সাংস্কৃতিক মঞ্চের আয়োজন করছে না দেশের অশান্তি সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে?
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন