তরুণ প্রজন্মের শাহবাগ আন্দোলন যেন আর প্রশ্নবিদ্ধ না হয় -
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০২:২২:৫৮ রাত
আজ ৪৮দিন! শাহবাগের আন্দোলনকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের সহ্য ধৈর্য ও সহিঞ্চুতায় দেশবাসী মুগ্ধ! বয়েসের ভারে বিগত তারুণ্যের কীটদংশ আমাদের নূজ্জ্য প্রজন্ম যেন তরুণ প্রজন্মের কাছে কিছু শিখি। এই ৪৮টি দিন শত প্ররোচনা সত্বেও তারা অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুরু থেকেই আন্দোলনকে দলীয়করণের নানান চেষ্টা চলছে। আস্তিক নাস্তিকের বিতর্ক তুলে তরুণদের উসকে দেয়ারও চেষ্টা চলছে। তবু সচেতন তরুণ সমাজ যথেষ্ট প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। শাহবাগের আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ কোমলমতি ভাইবোনরা শীত বৃষ্টি উপেক্ষা করে নির্ঘুম রাত জেগে, খেয়ে না খেয়ে রাতদিন শাহবাগকে জাগিয়ে রেখে অবশেষে বিতর্কিত হচ্ছেন(!)এটা মেনে নেয়া যায় না। অনেকেই মনে করেন; বেশ আবেগ নিয়ে শুধুই ‘ফাঁসি চাই’ জাতীয় একটা বিকৃত স্লোগান বেশী বেশী উচ্চারিত হওয়ার ফলে এর তাৎপর্য হারিয়ে ক্রমেই তা একঘেয়ে হয়ে উঠছিল। এ যেন - একটি ভাল কথার বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ প্রকাশ! কোমলমতি তরুণরা বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তাই প্রথম দিকে আপামর জনগন বেশ আগ্রহ ও সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে এলেও ক্রমেই তা একঘেয়ে হয়ে উঠে। একথা সত্য যে; ওই ফাঁসির দাবী ছাড়াও শাহবাগের আন্দোলনকারীদের কাছে জনগনের আরো অনেক প্রত্যাশা ছিল। সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তরুণরা যে কোন সময় যে কোন অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াতে পারেন।
দেশ আজ নিদারুণ দূর্দিনে পতিত - ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাচারী খামখেয়ালীপনার মাসুল দিতে এই কয়দিনে কত প্রাণ ঝরে গেল? আর কত রক্ত ঝরবে? আর কত সন্তান তাদের বাবা হারাবে? মা হারাবে সন্তান? দেশে তো এখন যুদ্ধ নেই? জনগনের ম্যান্ডেট বলে ক্ষমতায় আসীন গনতান্ত্রিক সরকার দেশ শাসন করছে? তবু তরুণ প্রজন্মকে শুধু কয়টা লোকের ফাঁসির জন্যই ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ করতে হচ্ছে? তথাকথিত শাসকগোষ্ঠী জনগনকে নিয়ে আর কত খেলা খেলবে? যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মূলো ঝুলিয়ে ৪২ বছর ধরেই নাটক হচ্ছিল এখন তরুণদের কাছে ধরা পড়ে গেছে – আর রেহায় নেই। ৪২ বছরের শাসনে কোন সরকারের আমলে দূর্নীতি হয়নি? ৪২ বছরে দেশের প্রভূত আর্থিক অগ্রগতি হওয়া সত্বেও (দেশে আজ দুইশ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসে) ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো দূর্নীতি আর সন্ত্রাসের প্রতিযোগীতা করেই চলেছে। ব্যাঙ্কগুলো লুটপাট হয়ে সারা, শেয়ার ব্যবসা ধ্বংস করে ক্ষমতার সুবিধাভোগী গোষ্ঠী টাকা লুটে নিয়ে লাখ লাখ মানুষকে পথে বসিয়েছে। একজন দলীয় মানুষের ইমেজ নষ্ট হতে পারে বলে দুদুকের মাধ্যমে পদ্মাসেতুর নাটক রচিত হয়! এক প্রধানমন্ত্রীর ধোয়া তুলসীপাতা - সোনার টুকরা (!) ছেলেরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। সেই অপকর্ম ঢেকে জনগনকে ধোকা দিতে আবার নির্লজ্জের মত বড় গলায় সাফাই গাওয়া হয়! ব্যাবসা বানিজ্য সহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে আজ চরম অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিরাজমান। তা যে কতদূর প্রলম্বিত হবে তা এখনো অনিশ্চিত, অনির্ণেয়। ছাত্রদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত। সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরতে হয় - ঘর থেকে বাহির হওয়া সুস্থ্য সবল মানুষটি আবার অক্ষত ঘরে ফিরে আসবে সে নিশ্চয়তা নেই অথচ আমরা স্বাধীন (!) সেলুকাস্!! এরচে' বড় তামাশা আর কী হতে পারে? আর এসবের ক্রীড়নক কারা? তথাকাথিত স্বঘোষিত দেশপ্রেমের এজেন্ট – রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজ যারা ক্ষমতায় থেকে বা বাইরে থেকে জনগনকে ব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
শাহবাগের আন্দালনে এসবের কিছু প্রতিধ্বনীত হলে আরো বেশী গণসমর্থন থাকতো। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। যদি ট্রাইবুনাল সৎ ও নিরপেক্ষ হয় যুদ্ধাপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবেনই। যদি তেমন মনে হয় যে; ওই ট্রাইবুনাল কারো হয়ে কাজ করছে তাহলে সেটা বাতিলের জন্য বা নিরপেক্ষতার দাবী করা যেতে পারে, চাই কি - আন্দোলনও হতে পারে। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে সম্মান জানাই, তাদের দাবীর স্বপক্ষে যুক্তি আছে। শিক্ষিত সচেতন তরুণরা কখনোই কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না। নানান পক্ষ তাদের আন্দলনকে পূঁজি করে নানা ভাবেই চক্রান্ত করে চলছে। কেউ বা আবার আস্তিক নাস্তিকের ধোঁয়া তুলে তরুণদের উত্তেজিত করে বিপথগামী করতে চাইছে। তবু তরুণরা অহিংস আন্দোলনই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কাদের ইন্দনে কোমলপ্রাণ ভাইবোনেরা ব্যবহৃত হচ্ছেন আর ওই আন্দোলনটা ক্রমেই কেন একঘেয়ে হয়ে উঠছে তাও খতিয়ে দেখতে হবে। ট্রাইবুনাল ঘোষিত শাস্তিতে ক্ষুব্ধ হলে বা মনপুতঃ নাহলে তার প্রতিকারের নানান পথও খোলা আছে। কিন্তু আদালতকে জিম্মি করে রায় আদায় করাটা শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয়। ট্রাইবুনাল যদি প্রশ্নাতীত ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে ট্রাইবুনালের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করা বেআইনী কাজ। শিক্ষিত তরুন সমাজের দ্বারা আবেগের বশে এমন অপরাধের দিকে ধাবিত হওয়াকে সমর্থন করা যায় না। কারো প্রেসক্রিপশনে নয়; তরুণ প্রজন্ম বিষয়টি নিজ মেধা ও চেতনা থেকে ভাবলে আরো ভাল হয়।
এখন রাজনৈতিক চাপবাজদের হুশ ফিরে আসার সময়, কেননা তরুণরা আজ জেগে উঠেছে। শুধুই এক ফাঁসির দাবীতে নয় – যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধেই তারা যেকোন সময় বারুদের মত জ্বলে উঠতে পারে – তখন কিন্তু তোমাদের রেহায় নেই।
বিষয়: রাজনীতি
১১৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন