ক্যান্সার নিয়ে ড. তাহেরের জীবন্ত রোবট বিপ্লব
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ১২ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:০২:১০ রাত
২০১৬ সালে প্রযুক্তি জগতে এক বিস্ময়কর বিপ্লব ঘটতে চলেছে!
চিন্তা করুন তো - আপনার রক্তনালিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘জীবন্ত রোবট’! ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সে শিরায়-ধমনিতে চষে বেড়াচ্ছে! কি? অবিশ্বাস্য লাগছে? লাগারই কথা, কিন্তু ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সংখ্যায় এমন প্রশ্নই রেখেছে। আর এর উত্তর দিয়েছেন নিকোলাস ক্রিস্টোফ। দু-দুবার পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া এই কলাম লেখক আমেরিকার অগ্রগণ্য চিন্তাবিদ হিসেবেও খ্যাতিমান।
বাংলাদেশের মানুষ হিসাবে আমরা গৌরবান্বিত। কারণ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই ‘জীবন্ত রোবট’, নিয়ে মূল গবেষণাটি করছেন আমাদের ঢাকার সন্তান - অধ্যাপক তাহের এ সাইফ। বর্তমানে আমেরিকার ইলিনর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা করছেন। তিনি স্নাতকোত্তর পড়পশোনা করেছেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আর পিএইচডি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পুরকৌশল থেকে ইলেকট্রিক্যাল, এখন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তিনি, কাজ করছেন বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে।
৫ আগস্ট ২০১৪, তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোতে নুরুন্নবী চৌধুরী ‘আমিই বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত - ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রোবট’ সম্পর্কিত প্রতিবেদনটিও তিনি নাকি প্রথমে দেখতেই পান নি। বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র ড. সুকোমল মোদক তাঁর প্রাক্তন শিক্ষকের এই কৃতিত্ব নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পরই শুরু হয় অধ্যাপক তাহেরকে খোঁজ করা। ৭ দিনের জন্যে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন, ৩ জানুয়ারি ফিরেও যাচ্ছেন। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ও বিনয়ী অধ্যাপক তাহের বলেন- ‘আমার নিউইয়র্ক টাইমস-এর এই খবর চোখেই পড়ে নি। পড়তও না যদি প্রথম আলো থেকে যোগাযোগ না করত। আমি যে বিশাল স্বপ্নের পেছনে ছুটছি তা আমি যদি নাও পারি, কেউ না কেউ পারবেই’ – তিনি অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেন।
ঢাকা ত্যাগের আগের সন্ধ্যায় প্রথম আলোর প্রতিবেদক তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। তাঁকে প্রশ্ন রাখা হয় – ‘আপনাকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন লিখেছে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও লিখেছে বড় প্রতিবেদন, নানা বিজ্ঞান সাময়িকীতে লেখা হচ্ছে, এসব কেমন লাগছে আপনার?’ উত্তরে তিনি উদাস হন, স্বপ্নময় চোখে তাঁর প্রত্যয়ী জবাব - ‘স্বপ্নটাই বড়। আমি রোজ ঘুম থেকে উঠি, আরও আত্মবিশ্বাসী হই, পারব।‘
কী সেই বড় স্বপ্ন?
ইলিনর বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. তাহেরের নেতৃত্বে তাঁর ছাত্ররা করছেন এক স্বপ্নময় গবেষণা। তাঁরা জীবন্ত রোবট তৈরি করেছেন। আণুবীক্ষণিক আকারের এই রোবট মানুষের রক্তনালিতে আপনা-আপনি সাঁতার কাটতে পারে। এই সাফল্যের খবরটি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নেচার পত্রিকায় প্রথমে বের হয়। তারপর অনেক বড় বড় প্রচার মাধ্যমে আসে। এছাড়া টেকনিক্যাল জার্নালে বের হচ্ছে টেকনিক্যাল প্রবন্ধ।
ড. তাহেরের এই কাজটা বৈপ্লবিক কেন?
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এটা হতে যাচ্ছে ২০১৬ সালে প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বড় ঘটনা? তাঁরাই প্রথমে হৃৎপিণ্ডের কোষ থেকে বানিয়েছেন সেই ‘বায়ো-বট’ (বায়লজিক্যাল রোবট) যা - সাঁতার কাটতে পারে। এখন তাঁরা বানাচ্ছেন স্টেমসেল থেকে নেওয়া নিউরন আর পেশিকোষ সমন্বয়ে জৈব রোবট। নিউরনগুলোকে এই রকম দীক্ষা দেওয়া হবে যে তারা নিজে নিজেই সংকেত পাবে, কোথায় তাদের যেতে হবে।
নিউরনের নির্দেশে এই ‘বায়ো-বট’ ক্যান্সার সেলে চলে যাবে সেখানে প্রতিষেধক উৎপাদনকারী কিছু কোষ নিজে নিজেই ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করার উপাদান নিঃসরণ করতে থাকবে। তাহলে আর বাইরে থেকে ক্যান্সারের কোনো ওষুধই দিতে হবে না। এই রকম আরও অনেক রোগের বেলায়ও বাইরের কোনো রাসায়নিক ওষুধই দেওয়ার দরকার হবে না হয়তো। আর তেমনটি হলে ঘটে যাবে সত্যিকারের বিপ্লব। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। রক্তনালিতে জীবন্ত ‘বায়ো-বট’ ঘুরে ঘুরে ক্যান্সার কোষ খুঁজে বের করবে আর ধ্বংস করবে - এমন বড় স্বপ্নই ডাঃ তাহের দেখছেন। এই কাজে ২০১৪-এর পরে তাঁরা অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আশা করছেন, ২০১৬তে তাঁরা নিউরন ও পেশিকোষের এই রোবটকে সংকেত চেনানোর কাজটাও করে ফেলতে পারবেন।
তাঁর আবিষ্কৃত ‘বায়ো-বট’ বুদ্ধিমান হবে, আবার রোগের বিরুদ্ধে নিজেই প্রতিষেধক উত্পাদন করে দূর করবে ক্যান্সারের মতো রোগ। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০১৬-তে যে তিনি অনেকটাই এগিয়ে যাবেন, এ ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। আর তা যদি হয়, তাহলে তাঁর ‘গ্রান্ডেস্ট ড্রিম’ বা বিশালতম স্বপ্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবেই, সন্দেহ নেই। আর সে কথা ভাবতে একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের বুক গর্বে ভরে উঠছে।
সফল হোন ড. তাহের এ সাইফ, সফল হোক ক্যান্সারকে জয় করার স্বপ্ন। পৃথিবীর মানুষ এই মরণঘাতী ব্যধির হাত থেকে মুক্তি পাক।
অনুলিখন – অনিরুদ্ধ বুলবুল
তথ্যসূত্র: http://allbanglanewspapers.com/prothomalo/
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন