পুরুষ সেজে ৪৩ বছর
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২৭ মার্চ, ২০১৫, ০১:০৩:৪৪ দুপুর
কথায় আছে, শক্ত দড়ি ছেড়ে তাড়াতড়ি। এই কথার উদ্ভব কোথা থেকে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটগুলোতে এই কথার কার্যকারিতা আমরা দেখতে পাই হরহামেশাই। যেমন ধরা যাক মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের কথাই। ওই অঞ্চলগুলোতে নারীদের এখনও মধ্যযুগীয় কায়দায় দেখা হয়। প্রাচ্যের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে গেলেও মধ্যপ্রাচ্যে এখনও নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয় নিজের পছন্দ অনুযায়ী পুরুষ নির্বাচন করার জন্য। অথচ সেই মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার একাংশেই প্রতিবাদ করছে নারীরা। আফগানিস্তানে কোরান পোড়ানোর অভিযোগে এক নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে সমাজের পুরুষেরা। সেই নারীর মৃতদেহটিকে কোনো পুরুষ গোরস্থানে নিয়ে না যাওয়ায় সমাজের নারীরাই সেই দায়িত্বটি পালন করে। আফগানিস্তানের সমাজ বাস্তবতায় এটা এক বিশাল বিপৱব নিঃসন্দেহে।
তেমনি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মিশরের এক বিধবা নারী প্রায় অর্ধ শত বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পুরুষের বেশে। নিজের একমাত্র মেয়েকে মানুষ করার জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছিলেন সিসা আবু দায়ুহ নামের ওই নারী। সম্প্রতি সাহসী এই নারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনও তিনি পুরুষের পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই আর ফেলে আসা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান না ৬৫ বছরের এই নারী। যদিও তার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। নেই আর কোনো পিছুটান।
৪৩ বছর আগে যখন বিধবা হন আবু দায়ুহ তখন তিনি ২২ বছরের তরুণী। স্বামীর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন সিসা। তখন যে তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, কাজ করে অনাগত সন্তানের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিজেই পালন করবেন। একে তো গোড়া পরিবারের মেয়ে। তারওপর স্বামী নেই। মিশরের মত রক্ষণশীল সমাজে তাকে কাজ দেবে কে। তখন তিনি পুরুষের ছদ্মবেশ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। যদিও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই তাকে ফের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সিসা বলেন, ‘ভাইয়েরা চাইতেন আমি আবার বিয়ে করি। তারা আমার জন্য নতুন নতুন পাত্র আনতেন।’
কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন লুক্সোর শহরের বাসিন্দা আবু দায়ুহ। একদিন মাথার চুল কেটে ফেললেন। গায়ে চরালেন পুরুষের পোশাক। ছুটলেন কাজের সন্ধানে।
অনেক চেষ্টার পর সিসার কাজ মিলল ইট ভাটায়। পুরুষের সঙ্গে পুরুষ সেজে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। কোনোরকম যৌন হয়রানির হুমকি ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে লাগলেন সিসা। নতুন এই পরিচয়ে নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করলেন তিনি। তাইতো বাকি জীবন পুরুষ হয়েই কাটাতে চান এই নারী।
তবে কাজটা তার জন্য অতটা সহজ ছিল না। তার এ সিদ্ধান্তে আঘাত পেয়েছিলেন তার ভাইয়েরা। তখন যুবতী আবু দায়ুসের গায়ে শক্তি ছিল দানবের মতন। একাই ১০ জন পুরুষের সমান কাজ করতে পারতেন। কিন্তু বয়স বাড়লে শক্তি কমতে থাকে। পরে জুতা পালিশের কাজ শুরু করলেন তিনি। এসবই করেছিলেন নিজের একমাত্র মেয়েটির জন্য।
আবু দায়ুহ‘র ভাষায়, ‘একজন নারীর পক্ষে তার নারীত্বকে অস্বীকার করাটা যে কতটা কঠিন তা আমি জানি। কিন্তু মেয়ের জন্য আমি যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলাম। অর্থ উপার্জনের এটাই ছিল একমাত্র পথ। নইলে এই সমাজে আমার মত একটা মেয়েকে কে কাজ দিত বলুন? আমি তো লেখাপড়া জানতাম না। আমার পরিবার তো আমাকে স্কুলে পাঠায়নি। কায়িক পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু করার ছিল না আমার। নইলে একটা মেয়েকে কি কেউ ইটভাটায় কাজ দেয়, বলুন?’
প্রথমদিকে তিনি ভেবেছিলেন, মেয়েকে মানুষ করার পর যখন ওর বিয়ে দেবেন, তখন স্বরূপে ফিরে আসবেন। কিন্তু আবু দায়ুহ‘র ভাগ্যটাই খারাপ। বিয়ের পরপরই অসুখে পরলেন মেয়ে জামাই। অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর কাজ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ততদিনে ঝাড়া হাত পা হয়ে খানিকটা নির্ভার হয়ে পড়েছিলেন আবু দাউহ। চায়ের দোকানে পুরুষের বেশে বসে পুরুষদের সঙ্গে আড্ডা মারা, চা পান খাওয়া আর স্ফূর্তি আড্ডা করা। এসবেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়েজামাই অসুস্থ হওয়ার পর আবার সংসারের হাল ধরলেন দায়ুহ।
তবে তিনি নিজে কখনো লিঙ্গ গোপন করেননি। কেউ জিজ্ঞেস করলে সত্যিটাই বলতেন। এ কারণে লুক্সোরের অনেক মানুষ তার সত্যিকারের পরিচয়টা জানতেন। অনেকে তো আসল নামেই ডাকতেন তাকে। আসলে অপরিচিত লোকজনের অতিরিক্ত কৌতুহল লুকানোর জন্যই তিনি লিঙ্গ গোপনের এই কৌশল নিয়েছিলেন।
সন্তানের জন্য এতবড় আত্মত্যাগের জন্য সম্প্রতি স্বীকৃতি পেয়েছেন আবু দায়ুহ। লুক্সোরের স্থানীয় সরকার তাকে শহরে নিবেদিত প্রাণ মা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এছাড়া গত সপ্তাহে মিশিরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির কাছ থেকেও পেয়েছেন পুরষ্কার। সব নারীর কপালে সিসার মতো সম্মান জোটে না। কিন্তু আজ থেকে আবু দায়ুহ সিসা পৃথিবীর তাবৎ নিপীড়িত নারীদের জন্য পাথেয় হয়ে রইলেন।
তথ্য সূত্র: http://www.now-bd.com/2015/03/25/387552.htm
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আফগানিস্তানের ঘটনাটি বিকৃত। ঐ মহিলাকে মাজারপূজারীরা হত্যা করেছে। কারণ মহিলা তাবিজ কিনতে নিষেধ করেছিলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম তাবিজ ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
বারেবারে দেখি হেথা চমকের দরবার!
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা -
বারেবারে দেখি হেথা চমকের দরবার!
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা -
মন্তব্য করতে লগইন করুন