ভোটের রাজনীতির জবাবে দিন বদলের হাতিয়ার প্রয়োগ -
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ১৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:২১:৫৩ রাত
ক্ষমতসীন দল ও জোটের মাঝে ইতোমধ্যেই হতাশার সূর বাজছে। নরমে গরমে ক্ষোভে শরমে নানান নেতার মুখে নানান কথাই শোনা যাচ্ছে। তারা জানেননা যে ২০০৮ এর নির্বাচনে মানুষ কেবল তাদের ভালবেসেই ভোট দেয়নি - সে ভোট ছিল তখনকার চার দলীয় জোটের অপশাসনের বিরুদ্ধে গনমানুষের ক্ষোভ। বর্তমান জোট সরকার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে বিগত সাড়ে চার বছর এমন কিছুই করতো যেন তাঁরা আবার ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু এত বেশী ভোট পেয়ে খুশীতে বেসামাল হয়ে সাড়ে চার বছর বাস্তবতাকে ভুলে নিজেদের ইচ্ছা মত যাচ্ছেতাই করে এসেছেন - যার ফলাফল ইতোমধ্যে পেতেও শুরু করেছেন। তাই এখনো ওই বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা না করে অনেকেই যে যার মত আবোল তাবোল বকছেন।
২০০৮ এর নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনা বা তাঁর দল কখনই মূল্যায়ন করে উঠতে পারেননি যে, এই ভোটের সবটাই তাঁর পক্ষের ভোট নয়। তাঁর দলের বা মার্কার নয়। এই ভোটের একটি বিশাল অংশ বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াবহ দু:শাসন, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বিপক্ষে গনরায় মাত্র। যেটি ইতিমধ্যেই পাঁচটি সিটি নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবার প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছে।
স্বৈরাচার খ্যাত এরশাদ সরকারও দীর্ঘ সাড়ে নয় বছর ক্ষমতায় থেকে কিছু না কিছু উন্নয়ন করেছিলেন। তখনো লুটপাট দুর্নীতি সন্ত্রাস বেশ ছিল, চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও তা ছিল অপরিবর্তিত। তাই বলে মহাজোটের আমলে লুটপাট সন্ত্রাস দুর্নীতি ছিলনা তা কি কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন? অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আওয়ামী জোট সরকারের আমলেও অনেক কিছুরই উন্নয়ন হয়েছে। এটা কারো কৃতিত্ব নয়; প্রশাসনের একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র। ভোটের জন্য সবাই তা ফলাও করে প্রচার করবেন এটাই স্বাভাবিক কিন্তু জনগন সব কিছুর নীরব দর্শক, নীরব স্বাক্ষী। সময় সুযোগ পেলে তারা অনেক প্রপাগান্ডা শুনবে কিন্তু সময়মত তাদের হাতিয়ার ঠিক প্রয়োগ করবেন।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেটে তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, “আমাদের দেশ গরীব, ভিক্ষে করে দেশ চালাতে হয়। তারপরও মানুষ সন্তুষ্ট না” মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে প্রশ্ন; আপনারা দেশের এত উন্নতি করেছেন তো এখনো ভিক্ষা করতে হয় কেন? লুটপাট কম হলেই তো সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়? তাহলেই আর ভিক্ষাও করতে হয় না? দেশের তো অনেক উন্নতিই করেছেন তো স্বভাবটা বদলান?
অতি সম্প্রতি; রানা প্লাজা ধ্বসে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বিদেশীরা যখন স্ব-প্রণোদিত হয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে চাইল তখন আপনাদের সরকার আত্নসম্মানবোধের খাতিরেই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আত্নসম্মান বোধ সম্পন্ন সে সিদ্ধান্তেকে সাধুবাদ জানাই। সাধারণ মানুষ তো বটেই বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত মনে করেন; এমন এক অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতায় আমাদের প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব তো ছিলই তার উপর উদ্ধারকর্মীদের ছিলনা তেমন দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অথবা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনও। সময় মত বিদেশীদের সাহায্য নিলে আরো ভাল হতো। আরো দ্রুততা ও কর্মকুশলতায় উদ্ধার কাজ পরিচালিত হলে প্রাণের ক্ষয় ক্ষতি হয়তো আরো কমানো যেতো।
একই অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আবার বলেছেন, “মানুষের এখন ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।” – তাহলে আর সরকারকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে কেন? মনে পড়ে? স্বাধীনতার পর - তখন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ক্ষেদের সাথেই বলেছিলেন; “আমার চারপাশে সব চাটার দল; আমি ভিক্ষা করে যা আনি চাটার দল চেটে পুটে তার সব শেষ করে দেয়।“ তিনি আরো বলেছিলেন; “ভিক্ষা করে মাথাপিছু একটি করে কম্বল পেয়েছি; কে কী পেয়েছে জানিনা, আমার কম্বলটি কোথায়?” বিগত ৪২ বছরে সেই চাটার দল মোটে কমেনি বরং বেড়েছে তাই আপনার ভাষায় সরকারকে এখনো ভিক্ষাই করতে হয়?
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বলেন, “আবার ক্ষমতায় গেলে বিএনপির নেতৃত্বে খালেদা জিয়া নতুন ধারার দুর্নীতি শুরু করবেন। আগে তারা হাওয়া ভবন তৈরি করে দুর্নীতি করেছে, এবার নতুন ভবন তৈরি করে দুর্নীতি করবেন।“ আগামী নির্বাচনে লুটেরা ও দুর্নীতিবাজেরা যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্যে দেশবাসীকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক কথাটাই বলেছেন – জনগণ সতর্কতার সাথে বিবেচনা করলে লুটেরা দূর্নীতিবাজরা কখনোই আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
এবার একটু ফিরে দেখা যাক; পদ্মা সেতুর দূর্নীতি নিয়ে যত আলোচনা, রটনা ঘটনা এসব জনগণ কিভাবে দেখছে? নির্বাচনে এর প্রভাবই বা কতটুকু তাও সবাই বুঝতে পারে। সোনালী জনতা ব্যাংকের হলমার্ক, বিসমিল্লাহ’র ঋণ কেলেঙ্কারির পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক থেকেও ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে বের করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে লাখো বিনিযোগকারী যখন পথে বসলো আর অর্থমন্ত্রীর ভাষায় সেই ‘ফটকাবাজারী’দের কেউ কেউ আত্নহত্যাও করতে থাকলো তখনো সরকার কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক তদন্ত কমিশনের সুপারিশটুকুও বিবেচনা করতে কোন উদ্যোগ নেয় নি। তাই আড়াই বছরে লাখো বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে, মার্কেটও এতটুকু ঘুরে দাঁড়ায়নি। অথচ আজ যাবার আগে সরকার কত তৎপর, কত দ্রুত একটার পর একটা ব্যবস্থা নিচ্ছে; ক্রমেই মার্কেটও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সরকার আন্তরীক হলে তা আড়াই বছর আগেই হতে পারতো? এই ত্রিশ লক্ষ বিনিয়োগকারীর ঘরে প্রা্য় এক কোটি ভোটার কি এত দ্রুত সব ভুলে যাবে?
মনে পড়ে; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাবা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীকে হুমকী দিয়েছিলেন; তাদের তিনি ভাতে মারবেন, পানিতে মারবেন পরবর্তীতে তা বুমেরাং হয়ে স্বজাতির উপরই নিপতিত হয়েছিল। গোদামে লাখ লাখ টন খাদ্য যখন পঁচে যাচ্ছিল তখন অসহায় বুভূক্ষু মানুষকে উচ্ছিষ্ট খবারের জন্য ভাগাড়ে কুকুরের সাথেও যুদ্ধ করতে হতো! ভাত দূরে থাক একখন্ড কাপড়ের অভাবে ‘বাসন্তি’র জাল জড়িয়ে থাকার স্মৃতি জনগন আজো নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি।
এদিকে কুইক রেন্টালের সমালোচনায় আজকের প্রধানমন্ত্রী জনগনের উপর গোস্বা করে ঈদের পর থেকে লোডশেডিংএ চুবিয়ে মারবেন বলেও ঘোষনা দিয়েছেন কিন্তু কুইক রেন্টালের অর্জন - নিরবাচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ নয়; লোডশেডিং এর ঘনত্ব কমেছে মাত্র কিন্তু এর পিছনে জাতীয় অপচয়গুলো কাদের পকেটে গেছে তা কিন্তু বিতর্কের উর্দ্ধে নয়? গত সাড়ে চার বছরে কয়টা টিভি চ্যানেল চালু হয়েছে? এগুলোর লাইসেন্স কারা পেয়েছে? যে কয়টি ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে তার কয়টি কারা পেয়েছে তাও জনগন জানে? একজন আমলা কত টাকার মালিক হলে তিনিও আজ একটি ব্যাঙ্কের মালিক সাজতে পারেন? এটা কীভাবে সম্ভব? এই সফলতার পিছনে কোন ভবনের হাওয়া লেগেছিল?
সরকারের বিশাল মন্ত্রী বহরে ‘কাল বিড়াল’ খ্যাত একজন বিতর্কিত ভাঁড়কে শুধু শুধু দফতরবিহীন বসিয়ে রেখে কোন জাতীয় স্বার্থে সরকার এমন জাতীয় অপচয় করছেন? জনগনের ট্যাক্সের টাকার অপচয় করতেই কি তারা আপনাদের মেন্ডেট দিয়েছিল? নির্বাচনী ওয়াদার আর সব ইস্যূ বাদ দিলেও যে সাংসদদের সম্পদের বিবরণী নিয়মিত নেয়ার কথা ছিলো তা এই সাড়ে চার বছরে ক’বার নেয়া হয়েছে? আমাদের শাসন করে সাংসদদের সম্পদ বেড়েছে না কমেছে তা জনগন জানতে চায়।
খবরে প্রকাশ; “নিয়ম ভাঙার অভিযোগে নতুন ব্যাংক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তের পরও অদৃশ্য ইশারায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের পরিচালনাধীন প্রায় এক ডজন ব্যাংকের অনিয়ম পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে।“
"সরকার সমর্থক এক প্রভাবশালীর ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকের জন্য যেন অনেকটা নিষিদ্ধ। মাস তিনেক আগে ওই ব্যাংকে একটি অনিয়ম তদন্ত করতে গেলে উপরের নির্দেশে পরিদর্শকদের ফিরে আসতে হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় একজন চৌকষ মহাব্যবস্থাপক অনেকটা রাগ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন”
এরপর আর দূর্নীতির কী প্রয়োজন? শাসনের নামে জাতিকে শায়েস্তা জন্য কোন ‘ভবনে’র প্রয়োজন নেই ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা ও স্বেচ্চাচরীতাই যথেষ্ট। দিন বদলের এই দিনে যদি মানুষের কিছুটা শিক্ষা হয়ে থাকে তাহলে নিরীহ জনগন তাদের একমাত্র হাতিয়ার প্রয়োগের এই মোক্ষম সুযোগের যথার্থ ব্যবহার করবে এটাই সাধারণের বিশ্বাস ও আকাংখা।
বিষয়: বিবিধ
১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন