জিএসপি সুবিধা বাতিলঃ ‌আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা

লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২৯ জুন, ২০১৩, ১১:৫৬:৪৫ সকাল

অবশেষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে। তৈরি পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ ও শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জি.এস.পি)স্থগিত করেছে। পোশাক শিল্প খাতে কাজের পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়। তার পরের বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)ও যে সে সুবিধা বাতিল করতে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

তবে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে পারে - বলে তিনি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সুবিধা ফিরে পেতে চাইলে বাংলাদেশকে এখন কারখানার নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাতে আখেরে বাংলাদেশেরই লাভ হবে। তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড ও সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১২০০-এর বেশি শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই সুবিধা বাতিল করা হয়নি, স্থগিত করা হয়েছে। আসলে এসব হলো তাত্বিক কথা, বাস্তবে কি হতে চলছে – আপাততঃ সেটাই ভাবনার বিষয়।

স্মর্তব্য, জি.এস.পি সুবিধা বাতিলের এই ঘোষনাটি কিন্তু হঠাৎ করেই আসেনি। ২০০৭ সালে এ.এফ.এল যথার্থ কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মী খুন, হওয়া শ্রমিক অসন্তোষের কারণ সহ নানাবিধ অনিয়ম অব্যবস্থাপনার দরুণ যে জি.এস.পি সুবিধা বাতিলের জন্য আবেদন করেছিল তা যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রায় সাড়ে ছয় বছর ঝুলিয়ে রেখেছিল। এটা যে আমাদের সরকার তথা কুটনৈতিক মিশনের বানিজ্যিক সেল, বানিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র কতবড় ব্যর্থতা তা আর চোখে আঙ্গূল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন হয় না। এমন সুদীর্ঘ সময় পেয়েও আমাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরগুলো সামান্য একটু নড়ে চড়েও বসেনি। সরকারের এমপি মন্ত্রীদের জনকল্যানমুখী কোন কর্মকান্ড তো নেইই বরং ব্যক্তি বা বেসরকারী সংস্থা কর্তৃক অর্জিত সফলতাকেও ছিনতাই করে সব সময়ই তারা দলীয় সার্থকতার মোড়কে জাতীয় স্বার্থকতার ঘোষনা দিয়ে তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে।

বিশ্ব নিয়ন্ত্রণকারী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’কে পাশ কাটিয়ে চলাঃ

ইদানিং সরকারের নানান কর্মকান্ডে অতিমাত্রায় ইউরোপ আমেরিকা বিদ্বেষী একটা ‘ডেম কেয়ার’ ভাব লক্ষ করা গেছে। বেশ কিছু আচরণ সহ তাদের এড়িয়ে চলায় তারা বুঝে গেছে – ছোটলোকগুলো সামান্য আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন করা মাত্রই ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতে শুরু করেছে। দুনিয়া নিয়য়ন্ত্রণ করা ইউরোপ আমেরিকাকে পাত্তা না দিয়ে সরকার রাশিয়া ভারতের কথা মত চলছে। তাই এখন থেকে আস্তে আস্তে চাবি টাইট দেয়া শুরু হয়েছে। কেবল তো আমেরিকা জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে এর পর আসছে ই.ইউ’র ঘোষনাও। আমাদের দেশপ্রেমিক জনকল্যানের (!) নেতারা সে ঘোষনাটাও শোনার জন্য তৈরী থাকুন। ই.ইউ ভূক্ত দেশ ছাড়া ও আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলোর কাছে আমাদের দেশ এখনো অচ্যূত হয়েই আছে। তার কারণ কি? একমাত্র কারণ হল; আমাদের নেতাদের চারিত্রিক ভ্রষ্ঠতা।

এদিকে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রী তো ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে বলেই ফেললেন সরকার বিদ্বেষীদের প্ররোচনায়ই এটা ঘটেছে! জনগনের প্রশ্ন - এমনটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে অযোগ্য অপদার্থ সরকার কতটা অসহায় যে কতিপয় লোক লবিং করে স্বার্থক হলো আর সরকারের এতগুলো মন্ত্রনালয় ও মন্ত্রীরা কিছুই করতে পারলেন না? কারো মাধ্যমে ঝাঁকুনিটা যদি এসেই থাকে আর তাতে সরকারের হুস জ্ঞান ফিরে আসে তাহলে জিএসপি সুবিধা আবার ফিরেও আসতে পারে। মাঝে থেকে বাংলাদেশের রফতানীর বড় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়ে গেল - এটাই আফসোস।

রাজনীতিকদের “গায়ে মানে না - আপনি মোড়ল ভাবঃ”

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে "চোরের মা'র বড় গলা"। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন সহ কারখানার কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের কথা বললে – সরকারের এক পা-চাটা মন্ত্রী তো আমেরিকাকে রিতিমত শোকজ করে বসছিলেন? তখনই মনে হয়েছিল আমিরিকা আমাদের অভদ্র ছোটলোক এমপি মন্ত্রীদের মত এর মৌখিক জবাব দিবেনা বটে জবাবটা অন্য ভাবে ঠিকই আসবে। এখন দেখছি তা ই এলো? এখন ওই মন্ত্রী কি করবেন? পা ধরে মাফ চাইবেন? না গুঁয়ারের মত বলবেন; জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়েছে তাতে আমাদের কী – আমাদের ভোগ বিলাসের তো আর ঘাটতি হচ্ছে না?

ক্ষমতায় গিয়ে মন্ত্রী এমপি’রা কাজের কাজ কিছু করুক আর না ই করুক কিভাবে নিজেদের লুটপাট সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো যায় - সে ধান্দাই করে। দৈনিক প্রায় শত কোটি টাকা খরচের সংসদে বসে সাংসদরা পরনিন্দা করেন আর চা ফুস্কা খেতে খেতে বলেন আমরা যা করছি জনগনের স্বার্থেই করছি। তাদের একমাত্র কাজ – সংসদে বসে মুখ খিস্তির প্রতিযোগীতা করা। একটু কিছু হলেই ওয়াক আউট করা, জনগনের টাকায় কিভাবে আরো বিলাস বহুল জীবন যাপন করা যায়, সে আয়োজন আরো কিভাবে বাড়ানো যায়? সর্বদা সেসব ফন্দিই তাদের মাথায় ঘুরে। অথচ জনগনকে বোকা বানাতে বড় বড় বুলি ঝাড়েন – তারা নাকি জনগনের জন্য অহর্নিশি ভেবে আকুল(?) এর চে’ বড় ভন্ডামী আর কি থাকতে পারে?

সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে সরকার সমর্থকদের ভরাডুবিঃ

দেশের সচেতন নাগরিক মাত্রই যে সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট নয় তা (সরকার মুখে যা ই বলুক না কেন) তারা এতদিন পর কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। গত কয়টি সিটি কর্পোশেন নির্বাচনের ফলাফল দেখে সরকারের টনক নড়েছে। তাই গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে জয়ী করানোর সাম্ভাব্য সব কিছুই করতে সরকার এখন বদ্ধ পরিকর তাই ১৪ দলীয় জোটের শরীক পতিত এরশাদের দরবারে ও ধর্ণা দেয়া হচ্ছে।। দেরীতে হলেও নাক উঁচু ভাবটা বজায় রেখে গায়ের জোরে বিরোধীপক্ষকে হুমকি ধমকি ও দমন-পীড়নের আগ্রাসী রূপটাও খানিক বদলিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এতদিন পর সরকারের মধ্যে কিছুটা উপলব্ধি এসেছে। বিরোধী নেতাকর্মীরা আস্তে আস্তে ছাড়া পাচ্ছেন, জামিনও পাচ্ছেন। এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ এবং গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বাংলাদেশি আমেরিকানরা। এখন সরকারের সূরেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে - আস্তে আস্তে মোলায়েম হচ্ছে মনে হয়। কিন্তু ততদিনে যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই সরকারের জনসমর্থন যে কি পরিমান কমেছে তার আরো কিছু নজির তুলে ধরছি।

সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে – পদ্ধতি যা ই হোক না কেন নির্বাচন দিতেই হবে। ১৪ দল মিলিয়ে মাত্র ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়া এত জনপ্রিয় (!) সরকারের ভোটব্যাঙ্ক যে কিরূপ দেউলিয়া হতে চলেছে তারই একটা সরল সমিকরণ তুলে ধরছি।

শেয়ার বাজারের ধ্বসঃ

সাধারণ মানুষ বিশেষতঃ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনে এমন একটা ধারণার জন্ম হয়েছে যে শেয়ার বাজার ধ্বংসের জন্য এ সরকারই দায়ী; ২০০৬ ও ২০১০ দুই দুইবারই এই সরকার ওই অপকর্মটি করেছে। ধারণাটি এমন হতো না যদি গত আড়াই বছরে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সহ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, বি.এস.ই.সি, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাথে নিয়ে বাস্তবসম্মত ও সত্যিকারের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতো এবং এর পিছনে যাদের হাত রয়েছে (সরকার অবশ্যি তাদের চেনে ও জানে) তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করতো। সরকারের ছত্রচ্ছায় লালিত পালিত কতিপয় দূর্বৃত্ত ২০০৬ ও ২০১০ এ একই ভাবে শেয়ার বাজার ধ্বংস করে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে সরে পড়েছে। তাই মানুষ ধরেই নিয়েছে যে; এই সরকার এলেই বাজার ধ্বংস হবে। শেয়ার বাজারের ধ্বসে লাখো মানুষ ধ্বংস হয়ে যখন পথে বসে, একে একে আত্নহত্যা করতে থাকে সরকার তখন তাদেরকে “জুয়াড়ি” বলে মশকরা করে। সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের তদন্তে সরকারী প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নাম প্রকাশ করা দূরে থাক তাদের আড়াল করা হয়। আজ অবধি তাদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, হবেও না এটা জনগন জানে। গত আড়াই বছর সরকার মুখে যা কিছু ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের অকারণ প্রবোধ দিয়েছে মাত্র, বাস্তবে কোন বিনিয়োগকারীই আজো তার ফল ভোগ করতে পারেনি (কাজির গরু সব গোয়ালেই বাঁধা) বাজারও ঘুরে দাঁড়ায় নি। সরকার ইচ্ছা করেই বাজারটাকে আস্তাকুঁড়ে নিপতিত করে রেখেছে। অথচ আন্তরিকভাবে চাইলেই যে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারতো তার নজির – সাম্প্রতিককালের গৃহীত কিছু ব্যবস্থাবলী (যদিও তা বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্তদের কতটা উপকারে আসবে তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধই হয়ে আছে)। যাক, এখন তবু একটা কিছু তো করেছে? সরকার চাইলে আগেও তা করতে পারতো কিন্তু করেনি। সামনে নির্বাচন তাই জনগনকে ধোকা দিতে শেয়ার বাজার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে আরেক দফা ফাঁকা বুলি দিয়ে আবারো কিছু সুযোগ সুবিধার ‘শুভঙ্করী’ কথা বলা হচ্ছে মাত্র। এ সরকারের আমলে আর ওসব প্রয়োগ হবার কথাও নয়। অতঃপরও কি সরকার আশা করতে পারে যে; এই কয়েক লক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ সচেতন তরুণ বিনিয়োগকারী, তাদের ভুক্তভোগী পরিজন ও স্বজন বন্ধু মিলিয়ে প্রায় কোটি ভোটারের ভোট তারা আর কখনোই পাবে?

ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন-পীড়ণ নীতিঃ

ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন-পীড়ণের ইতিহাস এদেশের রাজনীতিতে বেশ প্রাচীন কৃষ্টি। বর্তমান সরকারকে আর আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার কোন যুক্তি নেই। তবে হালের রাজনৈতিক ধারাটা ছিল সত্যি ভিন্ন। যুদ্ধাপরাধি বিচারের ইস্যূকে ব্যবহার করে একদিকে গণ জাগরণ মঞ্চের পৃষ্ঠপোষকতা সহ ইসলাম ধর্মের নবী ও ধর্মকে নিয়ে জঘন্য ভাষায় কটুক্তি করা (কথিত নাস্তিক) রাজিবকে শহীদি মর্যাদা দেয়া অন্যদিকে যে ভাবে বিরোধী পক্ষকে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির উপাদানসমূহ তৈরী করে দিয়ে তাদের মারমুখী করে তোলা হয়েছে আর তা দমনের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও নিরীহ সাধারণ মানুষ সহ পুলিশ খুন হওয়া আর জনগনের সম্পদ ধ্বংস হওয়ার কারণ আর যা ই থাকুক না কেন জনগন কিন্তু সরকারকেই দায়ী করছে। সাধারন মানুষ মনে করে; এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সরকারই তৈরী করেছে। একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংসদে রাতারাতি সংবিধান কেটে ছেটে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার নিজেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ তৈরী করেছে।

বিরোধী মতাবলম্বীদের উপর জুলুম নির্যাতন, গুম খুন, সন্ত্রাস দূর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট আগেও ছিল এখনো আছে। তবে তথ্য সন্ত্রাস দমনের নামে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধরে এনে শায়েস্তা করা, তাদের মুখ ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি আগের সরকারগুলোর তূলনায় একটু বেশীই হয়েছে। হেফাজতিদের সমর্থন পাওয়ার ভরসায় সরকার গোড়ার দিকে তাদের প্রশ্রয় দিলেও এক পর্যায়ে যখন বিএনপি ও জাতীয়পার্টি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অমনি সরকার তার ভোল পাল্টে বাতি নিভিয়ে মিডিয়াকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে অসহায় নিরীহ হেফাজতিদের উপর পাশবিক নির্যাতন করেছে। কোরান পুড়ানো আর মসজিদ ভাঙার দায় যতই হেফাজতিদের উপর চড়ানোর চেষ্টা করা হোক না কেন ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ কোন ভাবেই এটা বিশ্বাস করে না। হেফাজতিদের দাবীগুলো যৌক্তিক বলে মেনে না নিলেও জনগনের সহানুভূতিটা হেফাজতিদের প্রতিই একটু বেশী। কারণ; যারা ধর্ম রক্ষার জন্য জীবন বাজি রেখে আহিংস আন্দেোলনের জন্যে এসেছে তারা নিজ হাতে কোরান পুড়াবে (?) এ কথা ধর্মপ্রাণ মানুষ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনা। এর প্রভাব গত চারটা সিটি নির্বাচনেও পড়েছে। তাই ‘ঘুষখোর’ (!) হেফাজতিদের একাংশকে দলে ভিড়িয়ে খোদ সরকার সমর্থিত প্রার্থীই গাজিপুরের নির্বাচনী প্রচারণায়ও নেমেছে।

হেফাজতিদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত বিতর্কিত হয়েই রইলো, আজ অবধি কোন বিচার বিভাগীয় তদন্ত তো হয়ই নি এমন কি সরকারের পক্ষ থেকেও পরিস্কার কোন ভাষ্যে জনগণকে সত্যিকারের চিত্রটি বুঝাতে সক্ষম হয়নি। বিটিভির মাধ্যমে যা ই প্রচার করুক না কেন জনগন যেহেতু বিটিভিকে পছন্দ করে না এর প্রপাগান্ডা যে সরকারেরই চামচাগীরি তা জনগন জানে। হেফজতের আন্দোলন নির্মূলের বাস্তব চিত্র দেশিীয় গনমাধ্যমে প্রকাশের উপায় নেই বটে কিন্তু আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে তার সঠিক চিত্র ও ফুটেজ ঠিকই প্রকাশিত হয়েছে তাই মূল ঘটনা দেশের মানুষের দৃষ্টির আড়াল করতে পারলেও বিশ্ব দরবারে ঠিকই প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। ইত্যকার কারণে দেশে বিদেশে ক্ষমতাশীন দলের ভাবমূর্তির প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বুলি সর্বস্ব ঘোষনা ও তার বাস্তবায়নে নানান প্রতিবন্ধকতাঃ

বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার স্বপ্ন নিয়ে এসেও সরকার দলীয় লোকদের স্বার্থ বজায় রাখতে একের পর এক এমন সব কর্মকান্ড করে যাচ্ছে যে দেশ ডিজিটাল হওয়া দূরে থাক দিনকে দিন বিশ্বের অগ্রগতির সাথে প্রতিযোগীতায় পিছিয়েই পড়ছে। অন্যদিকে ডিজিটিালাইজেশনের সুযোগ নিয়ে সরকারের আশির্বাদপুষ্ট কিছু মানুষ টাকার পাহাড়ও গড়েছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সরকারের কোনরূপ সহযোগীতা বা পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই দেশের তরুণ সমাজ বিশেষতঃ ছাত্ররা স্ব-উদ্যোগে আইটি সংশ্লিষ্ট ফ্রিলাঞ্চিং কাজে অনেক দূর এগিয়েছে, অচীরেই বিশ্ব দরবারে তারা একটা স্থানও পেতে চলেছে। সেই তরুণদের পারিশ্রমিকের টাকা ব্যাংঙ্কিং চ্যানেলে আনতে গিয়ে তাদের খুব দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে সরকার এব্যপারে তাদের কোন সহযোগীতাই করছে না। তার উপর আছে – সরকারের যথার্থ দৃষ্টি ও নজরদারীর অভাবে ইন্টারনেটের চরম স্লথ গতি আর অযৌক্তিক বিল। এসব বিষয়েও তরুণ সমাজ সরকারের উপর ভীষন নাখোস। অন্যদিকে সরকারের আশির্বাদপুষ্ঠ কতিপয় সুবিধাভোগীকে সুবিধা দিতে গিয়ে বিটিআরসি কয়েক দফায় অবিশ্বাস্য রকম বিল কমিয়েছে যার ছিটেফোঁটাও প্রান্তিক ব্যবহারকারী আজো ভোগ করতে পারছে না। দূর্নীতি আগেও ছিলো এখনো হচ্ছে তবে বাস্তবতা হলো; আগে মানুষ এত শিক্ষিত ও সচেতন ছিলোনা। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যানে সবাই মুহুর্তেই সব ভাল মন্দের খবরা খবর অতি সহজেই জেনে যাচ্ছে, অতি সহজে নিজেদের প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে পারছে যা শেয়ার করে ওই সব অনাচারের বিরুদ্ধে জনমতও তৈরী হচ্ছে। এসব তথ্য দিন দিন নানান মিডিয়া টিভি পত্রিকা ও ব্লগ আলেচনায় পরিস্ফূটিত হচ্ছে। ফলে সরকারের ভোট ব্যাঙ্ক দিন দিন সংকুচিত হয়েই আসছে।

সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর দূর্নীতি ও স্বেচ্চাচারিতাঃ

প্রতিপক্ষ দমনে সব সরকারই পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি তার পেটুয়া বাহিনী হিসাবে অঙ্গ সংগঠনকে কাজে লাগায় সেই সুবাদে তারা অতিমাত্রায় বেপরোয়াও হয়ে উঠে। গত সাড়ে চার বছরে সরকার দলের অঙ্গ সংগঠন সমূহ (বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ) নানান রকম অনিয়ম দূর্ণীতি খুন গুম রাহাজনি সন্ত্রাস চাঁদাবজি টেন্ডারবাজি দখলবাজি ইত্যাদির মাধমে বহুবার সংবাদ শিরোনাম হয়ে সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। অতীতের মতই বর্তমান সরকারও সে সব না দেখার ভান করেছে অথবা প্রশ্রয় দিয়েছে। আগে যেসব করে পার পাওয়া গেছে এখন আর যায় না কারণ, গত ক’বছরে মানুষ বেশ শিক্ষিত হয়ে উঠেছে, সেই সাথে সচেতনতার হারও বেড়েছে। নেহায়েত দলদাস না হলে এসব অনাচারগেুলো মানুষের মনে ব্যপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

অধূনা - সরকারদলীয় নব্য ‘ডন’ রানা’র ভবন ধ্বসের পর সংসদে দাঁড়িয়ে নেত্রী কাগজ হাতে বক্তব্য দেন – “রানা সরকারী দলের কেউ নয়, এই যে আমার হাতে লিস্টি আছে” আবার বলেন – “ভবনে ফাটল দেখে রানা প্লাজা থেকে আগেই লোকজনকে বের করে দেয়া হয়েছিল, কতিপয় লোক মূল্যবান জিসিপত্র সরাতে ভবনে ঢুকেছিল - তারাই দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে” কিন্তু সরকারী হিসাবেই ১২০০ লোকের প্রাণহানি ও কয়েকশ’ আহত লোকেকে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, বেসরকারীভাবে তার পারিমান আরো অনেক বেশী। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো নেত্রীকে বাঁচাতে এমন কথাই বললেন যার ফলে নিজ দলের সমর্থকরাই থু থু ছিঁটাতে থাকলেন – “বিএনপির হরতাল সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কিতেই নাকি ভবনটি ধ্বসে পড়েছিল”? তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা; তড়িঘড়ি রানাকে ইন্ডিয়া পাচার করতে না পেরে তাকে নিরাপদ করতে ধরে এনে নিজ হেফাজতে রেখে বিচারের নামে সরকার তাকে লালন পালন করছে। আর রানার গডফাদার মুরাদ জং এমপি তো এখনো পর্যন্ত সকল কেলেঙ্কারীর উর্দ্ধে, বহাল তবিয়তেই আছে। তার কোন সাড়াশব্দ না পেলেও বুঝা যায় সরকার তাকে সামান্য তিরস্কার করে চুপ থাকতে বলেছে। সচেতন জনগণ এসব অনাচার কোন ভাবেই সমর্থন করতে পারে না। তাদের একটা বড় অংশ যে আর আওয়ামী লীগকে ভোট দিবেনা সেটাও প্রায় নিশ্চিত।

[i]ব্যাঙ্ক লুটপাট, ডেসটিনি হলমার্ক কেলেঙ্কারী. কুইক রেন্টাল, পদ্মা সেতুর দূর্নীতে, বিশ্বব্যাঙ্কের সুস্পষ্ট সুপারিশ সত্বেও পদ্মাসেতুর দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আবুলকে বিচারের সম্মুখীন না করে তাকে শ্রেষ্ট দেশ প্রেমিকের সার্টিফিকেট দেয়া, “কাল বিড়াল” খ্যাত সুরঞ্জিতকে এখনো দিপ্তরবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে রাখা আর তার লাগামহীন কথাবার্তা এসবের কোনটিই সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখছে না। সংশ্লিষ্ট হত্যাকারীদের বাঁচাতে সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বিশ্বজিৎ ও গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা হত্যকান্ডের বিচার আজো হয়নি। দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও সাগর-রুনি হত্যাকান্ড সহ ইলিয়াস আলী গুম রহস্যের কোন সমাধান হয়নি। দেলোয়ার হোসেন সাইদির বিপক্ষে স্বাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় আদালত চত্তর থেকে সুখরঞ্জন বালিকে গুম করে ভারতে পাচার করে দেয়া, কাশিমপুর কারাগার থেকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী বিকাশককে কৌশলে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়া সহ ইত্যকার ঘটনা প্রবাহ জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয় সৃষ্টি করেছে। [/i]

জিএসপি স্থগিত ঘোষনা বাংলাদেশের জন্যে একটি সতর্ক বার্তা বটে। বাংলাদেশ সরকার শিল্প শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ। এই ব্যার্থতার মাশুল জাতিকেই গুনতে হবে। মানুষ তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, ভুল শুধরে নিয়ে আবার পথ চলে, কেউ বা আবার সারা জীবনই ভুল পথেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি একই সঙ্গে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও সরকারের শুধু ভুলই নয় বরং এতে রয়েছে চরম গাফিলতি আর অবহেলা। এর ফলে বিদেশে আমাদের বদনাম হচ্ছে এবং আমাদের পণ্যের বাজারে এর প্রভাবও পড়ছে। আজ এই জিএসপি সুবিধা বাতিলের কারণে সৃষ্ট সমস্যার জন্য সরকার জাতির কাছে কি কৈফিয়ত দিবে? এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে তার দায় কে নিবে? কে দোষ শিকার করে বলবে; এই দায় আমার, ক্ষমা করুন, আর একটিবার সুযোগ দিন অচীরেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করবো। এসব তো আর হবার নয়, স্বভাবতঃই সরকারের ভোট ব্যাঙ্কে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।

স্বয়ং বঙ্গবন্ধু একসময় খুব ক্ষেদের সঙ্গেই বলেছিলেন-“আমার চারপাশে সব চাটার দল ভীড় করে আছে”। একথা তিনি বলেছিলেন বটে কিন্তু দেশের স্বার্থে নয় রাজনীতির স্বার্থেই সেসব পা-চাটাদের প্রশ্রয়ও দিয়েছিলেন, তিনি কি কঠোর হতে পেরেছিলেন? হা, কঠোর হয়েছিলেন – “সব দল বন্ধ করে দাও, সব মুখে ট্যাপ লাগাও” আমার রাজ্যে যেন কেউ মুখ খুলে কথা বলতে না পারে। তার পরিনতি কি হয়েছিল তা তো দেশের মানুষ দেখেছেই? সেই ইতিহাস থেকে কি আজকের উত্তরসূরীগন আদৌ কোন শিক্ষা নিবেন না নিচ্ছেন?

শুধূ সমালোচনার জন্যই সমালোচনা নয় – সবাই বুঝে; গঠনশীল সমালোচক আমার শত্রু নয় বরং হিতার্থী বন্ধু। কিন্তু সরকার বুঝে; যে লোক সমালোচনা করে সে আমাদের শত্রু - ওকে ধরে জেলে ঢোকাও। যে তোষামোদ করতে পারে তাকেই কাছে ডাকো তাকে ক্ষমতা আর সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত কর। দেখুন - চারপাশ জুড়ে ডান বামের কত চাটুকার দিন রাত আবোল তাবোল কথা বলে নেত্রীর গুন গান করতে গিয়ে কেবল নিজেদেরই নয় নেত্রীকেও নীচে নামাচ্ছেন। একমাত্র দলদাস অন্ধ ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে কি তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে? তবু দেখবেন – নির্বাচনে জেতার জন্য জনগন নয় – কারুকাজটাই আসল। আর সেই কারুকাজের অংশ হিসাবেই সরকার সিভিল সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসনে ব্যপক রদবদল ও বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবেই কারুকাজ করে যারা জিততে পারবে তারাই আবার ক্ষমতায় আসবে। এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা।

তথ্য সূত্র সমূহঃ

http://www.nowbdnews.com/2013/06/28/198155.htm

http://www.nowbdnews.com/2013/06/28/198428.htm

http://www.nowbdnews.com/2013/06/28/198514.htm

http://www.nowbdnews.com/2013/06/29/198542.htm

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File