যৌন জীবন ধ্বংসকারী পর্ণগ্রাফের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচার উপায়...

লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২৪ জুন, ২০১৩, ০২:১৩:৪৬ দুপুর



বিজ্ঞানের চরম উকৎর্ষতার এই যুগে বেশীর ভাগ শিক্ষিত মানুষ যারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করেন, যারা আইটি পেশাজীবি বা তরুণ সমাজ, যারা প্রতিনিয়ত নানান তথ্য ও গবেষণার জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল তাদের কাছে ইন্টারনেট আজ এক প্রাত্যহিক অনুসঙ্গ। আজকের ডিজিটাল সভ্যতায় ইন্টারনেট যেমন হাজার তথ্যাবলী থেকে শুরু করে নানান রকমের বিনোদন, যেকোন প্রশ্ন ও জ্ঞান জিজ্ঞাসার সমাধান দিচ্ছে তেমনি দিচ্ছে অবাধ পর্ণোগ্রাফের সুবিধাও। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অথচ পর্ণোগ্রাফ নজর এড়িয়ে গেছে তেমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ইন্টারনেটে ঢুকলেই হাতের কাছে পাওয়া এসব সুবিধা কম বেশী সবারই দৃষ্টি কাড়ছে। ইচ্ছা না থাকলেও যে কারো দৃষ্টি ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে যায়। তা ব্যবহারকারী যদি হয় বয়েসে তরুণ বা ছাত্র আর একাকী ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকে তাহলে তো কথাই নেই। যখন তখন ইন্টারনেটে ঢুকে বিভিন্ন স্বাদ-রুচির পর্ণপ্রাফ ছবি ও মুভি দেখার অবাধ সুযোগ তাদের রয়েছেই। কম বয়েসী ছেলে মেয়েরা একবার তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, তার পুরো জীবনের ওপর সেটা প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এ বিষয়ে অভিভাবক, সমাজকর্মী ও গবেষকরা কী ভাবছেন? একজন অভিভাবক হিসাবে নৈতিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে এই লেখাটা সবার সাথে শেয়ার করছি। আপনারা নিজ নিজ মতে চেষ্টা করুন – শতভাগ না হলেও ন্যূনতম সচেতনাবোধটুকু অন্ততঃ তৈরী করতে পারি!

তরুণ বয়সী ছেলেমেয়েদের বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়া দরকার যে; ‘সেক্স এডুকেশন’ আর তা উপভোগ এক জিনিস নয়। মনে রাখতে হবে - মানুষকে সুন্দর ও পরিশীলিত করার জন্য যে শিক্ষা তা যেন ভুল খাতে প্রবাহিত না হয়। সঠিক জ্ঞানের জন্য ‘সেক্স এডুকেশন’ দরকার কিন্তু তার অপব্যবহার যেন জীবনকে পঙ্গু করে না দেয়। তরুণরা যেন শিক্ষার পরিশীলিত রূপটাকেই কাজে লাগাতে পারেন। সে বিষয়ে অভিভাবক, সমাজকর্মী ও গবেষকদের নজর দেয়া উচিৎ। আশা করতে পারি; সুশিক্ষিত তরুণরাও সচেতন নাগরিক হিসাবে বিষয়টাকে সবিশেষ গুরুত্বের সাথে মূল্যয়ন করবেন।

ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফি নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে; এটা দর্শকদের মাঝে এমন একটা অনূভবের সৃষ্টি করছে যে যথার্থ যৌন জীবনে উপযুক্ত সঙ্গীর সাথে তা উপভোগের ফল একেবারেই হতাশাব্যাঞ্জক। ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফ বিনোদনের মাধ্যমে এর দর্শক এবং তরুণ সমাজ এতটাই প্রভাবিত হচ্ছে যে, তারা প্রকৃত সঙ্গীর কাছাকাছি আসলে আর তেমন আকর্ষণ অনুভব করে না।তাই যৌন অক্ষমতা এখন আর কেবল শেষ বয়েসী প্রৌঢ়দের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই, তরুণ প্রজন্মের ভেতরও প্রকট হতে শুরু করেছে – যার পরিণতি কখনোই শুভ হতে পারে না।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা জার্নাল, ‘সাইকোলজি টুডে’তে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়; ইন্টারনেট পর্ণগ্রাফি এখন এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, মাত্র বিশ বছরের তরুণ যুবকও প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক রকম যৌনাচরণ করতে পারছে না।এর মূল কারণ কী ? -যারা পর্ণো দেখে তাদের যৌন উত্তেজনা তৈরিতে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক উত্তেজনার প্রয়োজন হয় যৌনবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় “ডোপামাইন স্পাইক”।কোন ব্যক্তি কোনোভাবে একবার এই উত্তেজনায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে সাধারণ নারীতে সে আর তেমন উত্তেজনা বোধ করে না। অর্থাৎ মস্তিষ্ক আর আগের মত কাজ করে না।ফলে তারা একধরণের নঃপুংশক পুরুষে পরিণত হতে থাকে।

‘ন্যশনাল জিওগ্রাফি’তে তেমন কিছু ছবি দেখানো হয় যে; উন্নত বিশ্বের কিছু দেশে রুচি পরিবর্তিত (এখানে বিকৃত শব্দটা ইচ্ছা করেই ব্যবহার করলাম না)পুরুষরা বাস্তব নারীর সান্নিধ্যের পরিবর্তে কৃত্রিম ডলের সান্নিধ্যেই ঘর সংসার করছে। স্বাভাবিক বিবেচনায় উদ্ভট মনে হলেও এটা সত্য যে তারা বাজারে পাওয়া যায় এমন হরেক রকম কৃত্রিম নারী (ডল) কিনে এনে মানের মাধুরী মিশিয়ে প্রিয়তমার মতই তাদের সাজাচ্ছেন সেগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করছেন, প্রেম করছেন, জীবন কাটাচ্ছেন। এটা কেবল রুচি বিকৃতির জন্যই নয় বরং ব্যক্তির চেতনার স্বরূপ, আর্থিক, মনঃস্তাত্বিক ও পেশাগত কারণেই ঘটছে।

গবেষণাপত্রের লেখিকা 'মারনিয়া রবিনসন' বলেন, যৌন উত্তেজক গল্প, ছবি কিংবা মুভি আগেও ছিল। কিন্তু হালে ইন্টারনেটে পর্ণগ্রফির সহজলভ্যতার কারণে এই ‘ডোপামাইন স্পাইক’ সীমাহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফলে এর প্রভাব হবে আরো বেশি ভয়াবহ ও ক্ষতিকর। সম্প্রতি অনেক যুবকের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, তাদের উপর এই ‘ডোপামাইন স্পাইকে’র প্রভাব এতটাই বেশি যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রমাগত পর্ণ না দেখলে তারা কোনোরকম যৌন উত্তেজনাই অনুভব করতে পারেন না। কেউ যখন দেখতে পান তাদের স্বাভাবিক যৌন জীবন আর আগের মত স্বাভাবিক নেই তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন। পাশাপাশি অনেকেই জানেন না, ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফি এভাবে যৌন উত্তেজনাকে কমিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু একবার তা জানার পর তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখন তা পূণঃরোদ্ধার করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েন।

এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে লেখিকা ‘ব্রেনকে রিবুট’ করতে বলেছেন অর্থাৎ - পর্ণোগ্রাফি দেখা একদম বন্ধ করে দিয়ে কয়েক মাস পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। তাহলে ব্রেন থেকে সেই অতি উত্তেজনাকর সিগনালগুলো দুর্বল হয়ে অপসৃত হতে হতে এক সময় সেই মানুষটিই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতেও পারে। উঠতি বয়সী তরুণদের হাতে এখন কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট রয়েছে। অর্থাৎ পর্ণোগ্রাফি এখন ২৪ ঘণ্টাই তাদের হাতের নাগালে। আর ওই বয়সে একবার তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে পুরো জীবনের ওপর তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।

অভিভাবক, সমাজকর্মী গবেষক ও তরুণ প্রজন্ম প্রত্যেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবলে ব্যক্তি দেশ ও প্রজন্ম উপকৃত হবে।

বিষয়: বিবিধ

২১১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298224
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৫৪
জোনাকি লিখেছেন : ধন্যবাদ।
300216
১২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:০১
নির্বোধ১২৩ লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File