সাভার ট্র্যাজেডির উদ্ধারকর্মী ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ আর নেই!!!!
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ০৫ মে, ২০১৩, ০৬:০৪:৫৪ সকাল
উফ্ - কী নিষ্ঠুর সংবাদ! নিয়তির এ কি পরিহাস? নিয়তি এত নিষ্ঠুর হয় কি করে? মানুষের সকল মহতী উদ্যোগকে পরাভব মানানোই কি নিয়তির একমাত্র কাজ? একথা যে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না
সাভার দূর্ঘটনায় বনি আদমের হাজার সন্তানের নিরপরাধ মৃত্যূ আর পঙ্গুত্বে জীবন্মৃত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানো মানুষের শোক ও কষ্ট সামাল দেয়ারেও সময় পেল না জাতি - এরই মাঝে এ কী সংবাদ শুনতে হলো?
হায়রে নিষ্ঠুর নিয়তি - তোর কি ভাল মন্দের বোধটুকুও নেই? চির অন্ধ - পাষান নিয়তির এই খেলা যে আমার মত হিংসা বিদ্বেষপূর্ণ মানবের প্রাণও কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না! হে নিষ্ঠুর নিয়তি - একি করলি তুই ?
সাইফ আবীর -এর ব্লগঃ http://www.amarblog.com/ami-banglar-damal-chele/posts/166584 এ সংবাদটা পড়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। ব্যথায় বুকটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। জানতে পারলাম; সিঙ্গাপুরে চিকিৎসারত অবস্থায় ৫ মে ২০১৩ স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে তাঁকেও মৃত্যুর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে হয়েছে ? (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
খবরটা শুনে কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! সাভার দুর্ঘটনায় শাহানা কে উদ্ধার করতে যাওয়া অকুতোভয় লড়াকো আট জন সৈনিকের মধ্যে হতভাগা ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ অবশেষে নিজেই মৃত্যুর নিষ্টুর থাবায় নিভে গেলেন! সাহসী বাঙ্গালীর প্রতীক, জাতীয় বীর কায়কোবাদ তোমার মৃত্যু জাতিকে নতুন মহিমা দান করল। তুমি ত্যাগের এক অনন্য মহিমা স্থাপন করে গেলে। তোমার নাম বাঙ্গালীর সাহসী বীরদের মাঝে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে। তোমার আত্না যেন শহীদি মর্যদা পায়, তোমার পারলৌকিক জীবন যেন চীরশান্তির আবাস হয় -পরম করুণাময়ের কাছে এই আমাদের আরাধনা।
মহান ত্যাগী বীর ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ এর অসীম সাহসীকতা আর মানবপ্রেম আজ জাতিকে করল মহিমান্বিত। কিন্তু নিষ্টুর বধির নিয়তির নির্মম প্রহসন তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিল। তাই সরকারের কাছে দেশবাসীর দাবী; এই অকুতোভয় বীরকে যেন জাতীয় বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয় আর তাঁর পরিবারের সামগ্রীক নিরাপত্তার সম্মানজনক বিধান করা হয়। ৫ মে কে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দিয়ে যেন জাতি এই বীরের উৎসর্গীত আত্নার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারে। প্রজন্মান্তরে তার বীরগাঁথা যেন আমাদের জাতীয় গর্ব ও প্রেরণার উৎস ধারা হয়ে প্রজ্বলিত থাকে।
যে অকুতোভয় যোদ্ধা জীবন বাজি রেখে ২২টি ঘন্টা প্রাণপণ লড়ে আজরাইলের থাবা থেকে একটা প্রাণ ছিনিয়ে আনাতে গিয়ে একটার পর একটা বাঁধাকে তুচ্ছ বিবেচনা করে, কঠিন চ্যালেঞ্জে সফলতার স্বপ্ন নিয়ে জীবন মরণ সংগ্রাম করেই যাচ্ছিল! সে ই কি না নিয়তির বলি হল? এই অসীম সাহসী যোদ্ধার সকল প্রয়াশ যখন প্রায় স্বার্থক হতে যাচ্ছিল সাহানার মুক্তি প্রায় অবধারিত হয়ে উঠেছিল - উদ্ধারকারী আটজন যোদ্ধা জীবনের সেরা বিজয় গর্বের তৃপ্তি নিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নিয়তি সহসাই তার ক্রুর খেলাটি খেললো; হাবিয়া দোজখ থেকে এক স্ফুলিঙ্গ আগুন এনে অক্সিজেনের গোলকে লেলিয়ে দিল।
অকস্মাৎ আগুনের কুন্ডলীর ভয়াবহতায় উদ্ধার কর্মীরা আহত হয়ে সাহানাকে ফেলেই আপাত নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে সরে আসল বটে তবু তারা আশা ছাড়তে পারেনি, এই পরাজয় তারা মেনে নিতে পারেনি। তার মধ্যে সবচে' বেশী আহত হয়েছিল ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ। তার অবস্থা এতটাই সংগীন হয়ে পড়েছিল যে তৎক্ষনাত উন্নততর চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম খেলায় সে হেরে গেল বটে - কিন্তু জয়ী করে গেল বাঙ্গালী জাতির মহানুভবতাকে। যা হাজার বছর বাঙ্গালী জাতির মহিমার রাজটিকা হয়ে জ্বলে থাকবে।
আমরা তার বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করি আর শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনার সহানুভুতি জ্ঞাপন করছি।
বিষয়: বিবিধ
১১৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন