রানা প্লাজার দূর্ঘটনা – প্রকৃতির প্রতিশোধ ও মূল্যায়ন

লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ০৩ মে, ২০১৩, ০২:২৩:১৫ দুপুর



“সব শুরুরই যেমন একটা শেষ আছে” তেমনি আমাদের জাতীয় জীবনে চলমান সমূহ সমস্যারও একটা শেষ আছেই। সময় আপন নিয়মেই তা করে দেয়। কাজেই মনে আশা নিয়েই অপেক্ষা করতে হবে যে; আমাদের দেশের চলমান অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য, দূর্নীতি, জোর-জুলুম আর অত্যাচারের প্রতিফলও এক সময় “পানির গতিপথের মতই” আপন পথটি খুঁজে নিবে যা - আমরা কেউই জানিনা। অনেকটাই প্রাকৃতিক নিয়মে, অনেকটাই ঈশ্বর প্রদত্ত। যেমনটি ঘটেছিল ৪৭, ৫২, ৭০, ৭১, ৭৫, ৯৬ আর ২০০৭ এ!

দার্শনীক ও অর্থনীতিবিদ ম্যাল্‌থাসের তত্ত্বের মতে; প্রকৃতি তার আপন নিয়মেই এক সময় এমন কিছু ঘটায় যা মানুষ শত চেষ্টা করেও সেই সংশোধন আনতে পারেনা কিন্তু প্রকৃতি নিজেই তার সমাধান করে দেয়। হালের নজীর - রানা প্লাজার বিপর্যয়ও তেমনই এক প্রকৃতির প্রতিশোধ। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার মত অনেক কিছুই আছে।

এই দূর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। এখানে যেমন আছে ক্ষমতার দাপটে “যেমন খুশী” করতে পারার প্রবনতা, আছে মোনাফা লোভী মানুষের নির্মম স্বেচ্ছাচারিতা তার উপর রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরের অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির স্পষ্ট স্বাক্ষর। রাষ্ট্রীয় সংস্থগুলোর খামখেয়ালীপনা, নিজেদের অসত রোজগারের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংস্থাকে প্রলুব্ধ কারা সহ অন্যায় সুবিধা প্রদান, কর্তব্যকর্মে উদাসীনতা, ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধ আর জবাবদিহিতার অভাব। তাই তো, এমন একটা আকাশচুম্বী ভবন তৈরীকরণ আর তাতে শিল্প-কারখানা স্থাপনে যে সব সংস্থার তদারকী ও নজরদারী ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হত না তারা সবাই দিব্বি ছাড়পত্র দিয়ে গেছে, রীতিমত পৃষ্ঠপোষকতা করেছে!

সুতরাং এই দূর্ঘটনার দায় রাষ্ট্র তথা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা। এমন খামখেয়ালীপনা আর স্বেচ্ছাচারীতা আমাদের দেশে বরাবরই ঘটে আসছে – আর এই রানা প্লাজাও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। এব্যপারে সরকারকে আরো উদ্যোগী ভুমিকা নিতে হবে।

আজ রানা প্লাজায় দূর্ঘটনা ঘটায় তা আলোচনার ইস্যূ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র। রানা প্লাজাও গড়ে উঠেছিল তেমনি এক ব্যাঙের ছাতা বিশেষ। হাজার বছরের এক প্রাকৃতিক ডোবায় কেবল মাটি ভরাট করেই কোন পুরকৌশলিক বাস্তবতা যাচাই না করেই এমন বিশাল স্থাপনা গড়ে তোলা বস্তুতঃ কোন বিবেকবান সুষ্থ মানুষের কাজ নয়। এর পিছনে ক্ষমতার দাপটই ছিল প্রধান শক্তি। ভাবখানা এমন; আমি সব পারি, আমি যা করব তা ই সম্ভব, তা ই বাস্তব। আমাকে ঠেকায় কে? কিন্তু প্রকৃতির মার যে বড় মার তা রানার মত অশিক্ষিত সন্ত্রাসী পান্ডার মাথায় আসেনি। একটা জিনিস লক্ষনীয়; ৮টি তলা যে নীচতলাটির উপর আছড়ে পড়ল তা কিন্তু অনেকটাই কাঠামো অনেকটাই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে! তার কারণ কি?

কারণ হল; ভবনটি প্রথমে একজন ইঞ্জিনিয়ারের নকশায় ন্যূনতম মান বাজায় রেখেই একজন ডেভেলপার কাজ শুরু করেছিল। প্রথম তলাটি তৈরী করার পর রানার ইচ্ছা ও খামখেয়ালী আব্দার রক্ষা করে মান বহিঃর্ভূত কাজ করতে না পারার অপরাধে সেই বিল্ডারের সাথে চুক্তি বাতিল করে। তারপর রানা আপন ইচ্ছায় যেন তেন ভাবে তিন চার তলা ভিত্তির উপর ক্রমান্বয়ে দশ তলা চড়াবার উদ্যাগ নেয়। কেবল সাড়ে আটতলা পর্যন্ত উঠেছিল তার মধ্যেই বিপর্যয় ঘটে গেছে। শুধূ রানা প্লাজা কেন এদেশে এমন হাজার হাজার স্থাপনাই আছে যেখানে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটি সম্ভব হয় কেবল ব্যক্তির রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট আর টাকার গরমে, ধরাকে সরা জ্ঞান করার করণে। রানার ক্ষেত্রেও তা ই ঘটেছিল।

এই বিপর্যয় শুধু আমাদের ক্ষতিই করেনি, এমন কিছু দিয়েও যাবে যা - আমরা শত বছরেও অর্জন করতে পারতাম না। এই কঠিন বিপর্যয়ের মাধ্যমে শতশত নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিয়ে শতশত মানুষকে জীবন্মৃত করে দিয়ে প্রকৃতি যে প্রতিশোধ নিয়েছে; তার একটা শুভ দিকও আছে।

সুবিধাভোগী ক্ষমতাশীন গোষ্টীর অনীহা স্বত্বেও আমাদের জাতীয় জীবনে এর একটা সুদূর প্রসারী ফল আসবেই যা - মনূষ্য সৃষ্ট কোন বিপ্লব থেকেই এতটা অর্জন করা সম্ভব হতো না। আশা করতে পারি যে; রানা প্লাজার বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি, রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের সংশিষ্ট সংষ্থাগুলোর চেতন হবে ও প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যাগী হবে।

সূতরাং আশা হারালে চলবেনা, আশা আমাদের করতেই হবে, চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। কখন যে কোন সমাধান কিভাবে আসবে তা কেউই হয়তো কল্পনাও করতে পারিনা। কিন্তু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী – সে আশা নিয়েই আমাদেরকেও আগামী দিনের স্বপ্ন বুনতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File