“সাভার ট্র্যাজেডির পর দেশের রাজনীতিতে বিতর্ক ও ধাঁধা” শির্ষক চাটুকারীতার জবাবে দুটি কথা-
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ০২ মে, ২০১৩, ০২:২৬:০৮ রাত
সূত্রঃ http://www.nowbdnews.com/2013/04/30/175446.htm
আমাদের দেশে ক্ষমতাশীনরা নীল রক্তের ধারক বাহক! ক্ষমতার বাইরে: রাজনৈতিক দলই হোক আর সাধারণ মানুষই হোক - সব সময়ই অচ্যূত। আর অচ্যূতরা তো কত কথাই বলতে পারে, তার কী মূল্য আছে? কথায় আছে না – “পাগলে কী না বলে আর ছাগলে কী না খায়”? কাজেই অচ্যূতদের বাজে কথা শুনতে গেলে কি আর ক্ষমতা ভোগ করা যায়? এই নীল রক্তের ধারক ক্ষমতাশীন দলের দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কী করে বলেন যে;
(১) "আমার কাছে সাভারের যুবলীগের তালিকা আছে, রানা যুবলীগের কেউ নয়"
(২) "ভবনটি আগের দিনই পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে খালি করা হয়েছিল। ঘটনার সময় কিছু মানুষ তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র সরাতে ভবনে গিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে"
(৩) "বিরোধীদলীয় নেতা ঘটনাস্থল পরিদর্শণে যাওয়ায় উদ্ধার কর্মে বিঘ্ন ঘটেছে"।
-তবু ভাল, বিরোধীদলীয় নেতা এবারে একটি কাজ ভাল করেছেন যে; কথাটার পাল্টা জবাবে মেয়েলী ঝগড়াটা করেননি!
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে এই দূর্ঘটনা নিয়ে কেমন অমানবিক মশকরা করেছেন সে বিষয়ে তো আপনি নিজেই অন্যত্র লিখেছেন! দেখলাম অনেকদিন পর আপনার প্রিয়দলের খেলোয়ারদের ত্রুটি আপনার নজরে এসেছে, একটু গালমন্দও করেছেন? সেই লেখাতে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমি ধন্যবাদও জানিয়েছিলাম!
রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পরদিন জাতীয় শোকদিবস ঘোষনা করে জাতীয় পতাকা অর্ধঃনমিত রাখার মধ্যেই ক্ষমতাশীনরা রাষ্ট্রীয় দায় শোধ করেছেন। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও শোকের প্রতীক ‘কাল ব্যাজ’ ধারণ করতে দেখা যায়নি। শোকের এমন বিভীষিকাময় দিনেও যথারীতি কোরাম পূর্ণ হওয়া স্বাপেক্ষেই জাতীয় সংসদের অধিবেশন হয়েছে, নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও হয়েছে। তাতে সরকারী দলের কোন এমপি মন্ত্রী অনুপস্থিত ছিলেন এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই! কারণ, সংসদ অধিবেশনে গর-হাজির হলে ক্ষতি নেই কিন্তু রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান তো আর প্রতিদিন হয়না! এমন জেল্লাদার রাজকীয় অনুষ্ঠানে গর-হাজির থাকা মানে তো ক্ষমতাশীন দলের একজন মন্ত্রী এমপির জন্য বিরাট ক্ষতি!
তাই জনগনের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে; রাষ্ট্রযন্ত্র সত্যি সাভারের দূর্গতদের বিষয়ে কতটা সহানুভূতিশীল ও আন্তরীক? দূর্ঘটনা স্থলে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি আর ঘটনার পরপর সোহেল রানা ও ভাবন ধসে পড়া বিষয়ক মন্তব্যসমূহ থেকে জনমনে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে যে; ক্ষমতাশীন দল দলীয় অপরাধীর জন্য বিব্রত এবং রানা সহ মুরাদ জং এমপি-কে আড়াল করতে চাইছে? ঐদিনকার সংসদ অধিবেশন ও রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ক’টা দিন পরে হলে কী এমন ক্ষতি হত? সাভার বিপর্যয়ের হাজার হাজার মানুষ তখন রাষ্ট্রীয় প্রধান নির্বাহীদের উপস্থিতি পেলে আরো ভরসা পেত। অথচ একজন বিতর্কিত রাজিব হায়দার দুর্বৃত্তের হাতে খুন হলে প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন, সংসদে তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলে ঘোষনা করে বিতর্কিত ও হয়েছেন! এমনটি না হলে আজ বিরোধী দল কেন, সাধারণ মানুষও সরকারের সমালোচনা করার ইস্যূ পেত না?
শোকের সময় গন্যমান্য মরুব্বীর উপস্থিতি, তাঁদের আশ্বাস ও শান্তনার দু’টি কথা - দুঃসময়ে যে কোন মানুষের মনেই সাহস যোগায়। কোন দূর্যোগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অসহায় মানুষের পাশে মরুব্বী হয়ে দাঁড়ালে মানুষ ভরসা পায়। কিছু করুক বা না করুক পরদিন খালেদা জিয়া এরশাদ সহ বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ দূর্ঘটনা স্থান পরিদর্শণে গেছেন। হা, রানার গডফাদার মুরাদ জং এমপি সহ সরকারী দলের এমপি মন্ত্রীরাও গেছেন। তারা তো যাবেনই – তারা যে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র! কিন্তু ঘটনার ৫দিন পর সব কিছু শেষ হয়ে গেলে রাষ্ট্রের কর্ণধার সর্বোচ্য নির্বাহী ব্যক্তিদ্বয় অকূস্থলে যান। বিরোধী দলের সমালোচনার কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু এটা কি সাধারণ মানুষও ভালভাবে নিতে পারবে বলুন?
আপনার নিবন্ধে বিদেশের রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন; সেখানকার রাজনৈতিক দলেও দুর্বৃত্ত আছে কিন্তু তাদের দায় কেউ রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে চাপায় না। আপনি বিলাতে বসেও বাংলার আনাচে কানাচের খবর রাখেন আর এই খবরটা রাখেন না যে; আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো নির্লজ্জের মত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ কর্ম চালিয়েও বোকা জনগনের হাততালি কুড়ান? বিলাতে বা অন্য কোন দেশে কি এমনটি আছে?
আমাদের দেশে ক্ষমতাশীন দল বরাবরই জুলুমবাজ অত্যাচারীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় - একথা সর্বজন স্বীকৃত। তাই বিরোধীদল আর সাধারণ মানুষ কখনোই ক্ষমতাশীন দলের অনাচার সহ্য করতে পারেনা। অসহায় সাধারণ মানুষ বোবা বলেই ক্ষমতাশীন দলের অন্যায় অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে। পক্ষান্তরে বিরোধীদল সেটাকে ইস্যূ করে ক্ষমতাশীন দলের জনপ্রিয়তা নষ্ট করে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চেষ্টা করে। এরা মানুষের লাশ পেলে আরো বেশী খুশী হয়। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে ফেলে – এই যা পার্থক্য। সূতরা ক্ষমতাশীন দলই হোক আর বিরোধী দলই হোক হাতে গোনা ক’জন ব্যতিক্রম ছাড়া কেউই যে সৎ রাজনীতি করেননা একথা জনগন ভাল করেই জানে। এরা সব যে “একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ”!
ক্ষমতার সুবাদে আর নিজেদের গড়া প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে তাদের গলাটা বাঁধাহীন ভাবেই বেশী বেশী বাজে। সরকারের অঙ্গ বলে সেই বাজনায় কোন আইনি বিধি-নিষেধ থাকেনা বিধায় নির্বিবাদে একটু বেশীই বাজায়। তারো বেশী জোরে বাজে নিজেদের মহিমার কথা আর বিরোধী মহলের সমূহ ত্রুটি দূর্নীতির গল্পগাঁথা। বিশ্বাস না হলে “সাহেব বিবি গোলামের বাক্স” – বিটিভি’র দিকে তাকান!
বাংলাদেশের কোন একটি দলও নেই যারা এই নীতির উর্দ্ধে থেকে সৎ রাজনীতি করে! সূতরাং আওয়ামীলীগ তার ব্যতিক্রম হবে তেমনটি আশা করা বোকামী ছাড়া কিছু না। রানা আওয়ামীলীগ বা যুবলীগের কোন নেতা-কর্মী কিনা তা আপনি না ও জানতে পারেন, আমরাও জানতাম না! কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে মুরাদ জং এর সাথে রানার ঘনিষ্ঠতা ও রোমান্টিক সখ্যতার অসংখ্য ছবি, মুরাদ জং কর্তৃক ‘রানা প্লাজা’র উদ্বোধন এবং যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক হিসাবে সাভারের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রানার অসংখ্য পোষ্টার ব্যানার সহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির স্পষ্ট ভাষন – সবই তো আমাদের জানা হল! অথচ আপনার মত একজন বিদগ্ধ ছিদ্রান্বেষী এবং শক্তিশালী কলামিস্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত ওসবের কিছুই পড়লেন না দেখলেন না শুনলেন না – জনগন এটা কী করে বিশ্বাস করে? তবে কি পছন্দের দলটির কালিমা আপনাকেও কলুষিত করে, নাকি সত্য গোপন করছেন?
আপনার মেধা ও মননের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই – আমাদের মত অখ্যাত অজ্ঞাত পাগল ছাগল হলে কথা ছিলনা, আপনার মত ব্যক্তিত্বের এমন লেজুর বৃত্তি মানায় না। নিজেকে আর কত নিচে নামাবেন? এরপরও আদর্শের বুলি কপচাবেন – এর চে’ যে আদর্শহীনতাও ঢের ভাল? মানুষ জ্ঞানী-গুণী বিদগ্ধ জনের কাছে সততা শিখতে চায়। তাদের আদর্শে নিজেদেরকে আলোকিত করে ধন্য হতে চায়। কিন্তু মিথ্যাকে আড়াল করা আর সত্যকে বিকৃত করা কোন শুভবুদ্ধির জ্ঞানী মানুষের কাজ নয়।
সবশেষে আপনার কথা দিয়েই শেষ করছি – “রানার দলীয় পরিচয় নিয়ে বিতর্কই প্রমাণ করে সাভার ট্র্যাজেডির মত জাতীয় দূর্যোগেও রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে সুস্থ মানবিক চেতনাবোধের পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের তূলনায় সাধারণ মানুষ, পেশা-নির্বিশেষে সব বয়সের নর-নারী ত্রাণকার্যে যে ঐক্য ও মানবতারবোধের পরিচয় দেখিয়েছেন, তা এক কথায় অতূলনীয়”।
আর এতেই প্রমাণ হয় যে, দু’একজন ব্যাতিক্রম ছাড়া আমাদের রাজনীতিকবিদগণ সুবিধার রাজনীতি করেন। তারা কখনোই জনগনের বন্ধু না। জনগন কেবল ভোটের রাজনীতির হাতিয়ার মাত্র।
আরো পড়ুন -
http://www.bdtomorrow.net/videonewsdetail/detail/618
http://www.bdtomorrow.net/videonewsdetail/detail/621
বিষয়: রাজনীতি
১৩৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন