এমপি মুরাদ জং রানাকে চেনেন না!
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৪৬:৪৯ সকাল
এটা দিবালোকের মত সত্য আর এলাকাবাসী সবাই জানে যে, সাভারের এমপি মুরাদ জং এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়েই রানা এতটা বেপরোয়া হযে উঠেছিল। কথিত এমপি’র ডান হাত বলে পরিচিত রানা একের পর সন্ত্রাস হত্যা চাঁদাবাজি সহ হিন্দুসম্পত্তি দখল কী না করেছে! আর সেই হিন্দুর সম্পত্তির উপরই এই ‘রানা প্লাজা’ তৈরী হয়েছে। অথচ মুরাদ জং এখন রানাকে চেনেও না। বড় গলা করে বলছেন – রানা যুবলীগের কেউ নয়। সে অনেকদিন ধরেই সাভার পৌর যুবলীগের কমিটিতে নাম লেখাতে চেষ্টা করছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্নদিকে ঘুরাতে এবং রাজনৈতিক ইস্যূ তৈরী করতেই রানাকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর এমপি’র কথা বিশ্বাস করেই ২৫শে এপ্রিল সংসদে অনুরূপ বক্তব্য দিয়ে নিজের ইমেজটুকুও ধূলায় লুটিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনকার দু’টি বক্তব্যই জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বক্তব্য দু’টি ‘টক অব দ্য নেশনে’ পরিনত হয়। সেই প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করেই বংশবদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তড়িঘড়ি বিবিসি’তে নিজেই এই মর্মে এক বক্তব্য দেন যে – “দুর্ঘটনার আগে কিছু মৌলবাদী ও বিএনপির ভাড়াটে লোক সাভারের ভবনটির গেট ও বিভিন্ন স্তম্ভ ধরে ‘নাড়াচাড়া’ করেছিল। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে এটিকেও ‘একটি কারণ’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।“ এমন একটা উল্টা-পাল্টা বক্তব্য দিয়ে তিনি জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস নেন। যে কারণে তিনি তাই ঘরে বাইরে এত সমালোচিত ও ধিকৃত হওয়ার পরও নিজের বক্তব্যটি প্রত্যাহার করেন নি বা ক্ষমাও চান নি। বিশ্বাস; তিনি এর উপযুক্ত পুরস্কার পাবেন।
সাভারবাসী ও রানার ভাড়াটিয়াদের বক্তব্য অনুসারে; ডানপিটে রানা সন্ত্রাসী দলে মিশে গার্মেন্টস এর জুট ব্যবসায় হাত দিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়। এলাকায় তার জোর জুলুমের খুঁটি মজবুত করতেই অশিক্ষিত রানা ছাত্র না হয়েও এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নাম লেখায়। স্থানীয় এমপি ও দলের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। হয়ে উঠে ক্ষমতাসীন দলের দুই এমপি’র প্রিয়ভাজন। আর অদৃশ্য শক্তি বলে সে রাতারাতি বনে যায় টাকার কুমির। টাকা ও ক্ষমতার তেজে বলিয়ান হয়ে এলাকার জুট ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। দলীয় আশির্বাদেই রানা হয়ে উঠে বেপরোয়া; অন্যের জায়গা জবর-দখল আর একাধিক খুন করেও রানা সাভার এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলত। কলুর ছেলে রানা; একসময় সাভার এলাকায় ফেরী করে নিজের ঘানীর গোলাপ ফূল মার্কা তেল বিক্রি করত। কিন্তু রাজনৈতিক আশির্বাদে সে রাতারাতি তিনটা ৯তলা মার্কেট সহ ৫তলা বাড়ির মালিক বনে যায়। ‘রানা প্লাজা’, ‘রানা টাওয়ার’ ‘আর এস টাওয়ার’ তারই কূকর্মের ফসল। সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বর্তমানে সাভার পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহব্বায়ক। সাভার এলাকায় যত্রতত্র তার অসংখ্য ছবি এখনো দৃশ্যমান আছে।
ছবি দ্রষ্টব্যঃ
ঘটনার দিন হরতাল প্রতিরোধে পার্টির পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা ও মুরাদ জং এর নির্দেশে রানা যখন ক্যাডারদের নিয়ে ‘রানা প্লাজা’র নিচ তলায় নিজের অফিসে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই দূর্ঘটনাটি ঘটে। তাতে রানা নিজেও ভবনের নিচে আটকা পরে ও আহত হয়। ওই এমপি’র মাধ্যমেই রানা দূর্ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার পেয়ে তারই ছত্রচ্ছায়ায় আত্নগোপনে সক্ষম হয়। রানার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ভাষ্যমতে; এমপির লোকজনের পরামর্শেই রানার বাবা-মা সহ গোটা পরিবার তৎক্ষনাত বাড়ি ছেড়ে আত্নগোপনে চলে যায়। ‘রানা প্লাজা’র দোকান মালিক কর্মচারীদের সূত্রে জানা যায়; দূর্ঘটনার পর এমপি মুরাদ জং কে ফোন করলে তাঁরই ব্যবস্থাপনায় ও ছত্রচ্ছায়ায় রানা উদ্ধার পেয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। অথচ অবস্থা বেগতিক দেখে এমপি সাহেব এখন রানাকে চিনতেই পারছেন না! এবার রানার প্রতি এমপি সাহেবের আশির্বাদের ছবি দেখুন।
ছবি দ্রষ্টব্যঃ
‘রানা প্লাজা’য় কর্মরত গার্মেন্টস কর্মীদের বক্তব্য মতে; “হরতালের দিনগুলোতে রানা সাহেবের প্রশ্রয় ও প্ররোচনায়ই গার্মেন্টসগুলো চালু রাখা হতো”। তাই আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়াতে তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা সত্বেও এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পরিনামে আজকের ভয়াবহ দূর্ঘটনা। যে কলঙ্ক গার্মিন্টস শিল্প ও জাতিতে বয়ে বেড়াতে হবে আরো অনেকদিন।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন