বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় কোন মত পথ ও আদর্শই যেন উন্মাদনায় রূপান্তর না হয়!
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:০৪:২৭ সকাল
স্বাধীনতা সংগ্রামের পর দেশে সংঘটিত হাজারো ঘটনা-দূর্ঘটনা সত্বেও বর্তমান অবস্থার মত এমন ক্রান্তীয় অবস্থা আর বিরাজ করেছে বলে আমার জানা নেই। দেশে আজ চরম স্থিতিশীলতার অভাব চলছে। ক্ষমতার দ্বন্দ আগেও ছিল এখনো আছে। তার উপর যোগ হয়েছে গন্ডা-গন্ডা ইস্যূ আর সমস্যা হুমকি ধমকি দাবী আন্দোলন প্রতি-আন্দোলন ইত্যাদি। এর মাঝে কোন কোনটিই সরকারের পক্ষে হলেও তা সরকারের জন্য স্বঃস্থিদায়ক নয়। গত ক’দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ ছাড়াও যে ইস্যূগুলো বিশেষভাবে উদ্ভব হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে বেশ স্পর্শকাতর রূপ ধারণ করেছে তার মধ্যে বেশ ক’টি উল্লেখযোগ্য ইস্যূ হল; যুদ্ধাপরাধীর বিচার (বিশেষ করে ফাঁসির দাবী), জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে ব্লগারদের বেঁধে দেয়া সময়সীমা, জামাত সহ বিরোধীদলের সাংঘর্ষিক আন্দোলন আর তা মোকাবেলায় সরকারের কঠোর অবস্থান জনিত কারণে উদ্ভূত সব নতুন ইস্যূ।
ক্ষমতার রাজষিক সিংহাসন অর্জন আর বহাল রাখার নিমিত্যে হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াও তো আমাদের কৃষ্টিতে মিশে গেছে বহুকাল। কিন্তু যুদ্ধংদেহী আন্দোলনকারী কর্তৃক পুলিশের উপর আঘাত, অস্ত্র লুন্ঠন ও খুন এবারে যেন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তেমনি মাত্র কয়দিনেই পুলিশের গুলিতে এত অধিক সংখ্যক মৃত্যু অতীতে আর হয়েছে কি না তাও আমার জানা নেই। এ নিয়েও চলছে নানান বিতর্ক; গনহত্যা না সন্ত্রসদমনে পুলিশের দায়িত্ব পালন? এরই মাঝে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ - যোগ হয়েছে আস্তিক-নাস্তিক ইস্যূ। তার সুত্র ধরেই ইসলামী দলগুলোর আন্দোলন (এখানেও আছে নানান ফ্যাকরা ও বিভক্তি) বিপক্ষ শক্তির আবার আছে প্রতি-আন্দোলনের মত পাল্টা-পাল্টি বিভিন্ন রকম জেদ ও গোঁয়ার্তুমি। সেই সাথে আবার মাঝে মাঝেই জেগে উঠছে সংখ্যালঘু ইস্যূ।
এক কথায় - স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এমন স্পর্শকাতর ভয়াবহ অবস্থা আর হতে দেখিনি। স্বয়ং সরকারই এখন দিশেহারা - কোনদিকে যাবে ঠিক করতে পারছেনা। ঘরের আপনজনরাই সমালোচনা শুরু করেছে। একদিকে 'আম-ছালা যাওয়া'র ভয়, তার উপর শরীকদের 'ধরি মাছ না ছুই পানি' নীতিতে নাস্তানাবুদ। শরিকরা ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভোগ করলেও সরকারের দায় গায়ে চড়াতে রাজি নয়। এদিকে বলা যায়; হুমকি ধমকি আন্দোলন হরতাল অবরোধের যেন প্রতিযোগীতা চলছে। এতসব ডামাঢোলে বড় বড় জাতীয় ইস্যূ - নির্বাচন পদ্ধতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী, হলমার্ক বিসমিল্লাদের ব্যাঙ্ক লুটপাট, ডেস্টিনির পুকুর চুরি, পদ্মাসেতুর ‘টাগ-অব-ওয়ার’ কুইক রেন্টালে দূর্নীতি ইত্যাদি সবই ঢাকা পড়ে গেছে।
কারো কারো অঘোষিত বিদ্রোহ ছাড়াও আছে 'জামাতি বিষফোঁড়া' হেফাজেতের হুমকি, ইমরানের ধমকি, অনলাইন ব্লগার এ্যক্টিভিস্টদের পক্ষে বিপক্ষে নানান উস্কানী। সরকার পড়েছে উভয় সংকটে - 'শ্যাম রাখি না কুল রাখি' না নিজের জিদ বজায় রাখি! অবশ্য বিরোধী দলকে দলাই-মলাই করলেও সরকার অন্য সবাইকে খুশী রাখতেই চেষ্টা করছে। তাতেও মনেহয় কেউই খুশী হতে পারছে না।
দেশ আজ কোন অবস্থায় গেছে ভেবে দেখুনঃ এভাবে দলাদলি - মত-অমতের যুদ্ধ, ধর্ম-অধর্মের যুদ্ধ, জাত-পাতের যুদ্ধ, আস্তিক-নাস্তিকের যুদ্ধ, চেতনার-বেদনার যুদ্ধ এমন হাজারো ইস্যূতে দেশের নিরীহ মানুষও আজ ম্যাচকাঠির মাথায় বারুদ হয়ে আছে। তাই ভয় হয়; ‘গৃহযুদ্ধ শুরু হতে আর "সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু" ইস্যূ লাগবে না। এমনিতেই না আমরা ভাই হয়ে ভাইয়ের রক্ত ঝরাতে শুরু করি!
তাই সকল দল মত ও পথের ভাই-বোনদের প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান – কেউ যেন আমরা এমন কিছু না বলি; উস্কানীমূলক কিছু না করি যা ভয়াবহ আগুনে ঘি ঢালা হয়। বরং আসুন সবাই আর একটু সমঝদারিত্বের পরিচয় দেই, একটু নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করি। আপাততঃ এটুকু ভাবি; আমাদের একটাই পরিচয় - আমরা মানুষ!
বিষয়: রাজনীতি
১০৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন